ই-সেবা

ডিজিটাল মার্কেটিং কি? ডিজিটাল মার্কেটিং কেন করবেন?

ডিজিটাল ডিভাইস ও টেকনোলজিকে কাজে লাগিয়ে প্রত্যেকটি কাজকে মানুষ সহজ ও সময় সাপেক্ষ করে তুলছে। আর যেটি থেমে থাকিনি ব্যবসার মার্কেটিং এর ক্ষেত্রেও। মার্কেটিং এর ক্ষেত্রেও মানুষ ডিজিটাল প্রযুক্তিকে ব্যবহার করছে। যার ফলে মার্কেটিং সেক্টরে এসেছে এক নতুন গতি পথ। একেই ডিজিটাল মার্কেটিং বলা হয়। আজকের আর্টিকেলে আমরা ডিজিটাল মার্কেটিং সম্পর্কে বিস্তারিত জানব। আর কথা না বাড়িয়ে চলুন শুরু করা যাক।

ডিজিটাল মার্কেটিং কি?

কোন পণ্য, সেবা বা ব্যবসাকে বিভিন্ন ধরনের বিজ্ঞাপনের মাধ্যমে অথবা যেকোন উপায়ে মানুষের কাছে পৌছে দেওয়াকেই মার্কেটিং বলে। আর, আধুনিক তথ্য-প্রযুক্তি ব্যবহার করে ইন্টারনেটের মাধ্যমে কোন পণ্য, সেবা বা ব্যবসাকে বিশ্ব ব্যাপি পৌছে দেওয়াকে ডিজিটাল মার্কেটিং বলে। অর্থাৎ, মার্কেটিং করার জন্য যখন ডিজিটাল টেকনোলজির সাহায্য নেওয়া হয় তখন তাকে ডিজিটাল মার্কেটিং বলা হয়। এক কথায়, ডিজিটাল প্রক্রিয়ায় মার্কেটিং এর সম্পূর্ণ ব্যবস্থাই ডিজিটাল মার্কেটিংয়ের মধ্যে পড়ে।

আরও পড়ুন-ফ্রি ডিজিটাল মার্কেটিং কোর্স ইন বাংলাদেশ ২০২৪

ডিজিটাল মার্কেটিং কেন করবেন?

ব্যবসার ক্ষেত্রে মার্কেটিং সবথেকে গুরুত্বপূর্ণ। মার্কেটিং এর ক্ষেত্রে ডিজিটাল মার্কেটিং-ই হলো সবচাইতে সহজ উপায়।বিক্রি বৃদ্ধির জন্য পণ্য বা সার্ভিসের প্রচারণা করে নিজের ব্যবসাকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়াই মার্কেটিংয়ের মূল লক্ষ্য। এই প্রচার-প্রচারনার কাজ নানান ভাবেই করা যায়। ট্রেডিশনাল মার্কেটিং সিস্টেমে সম্পূর্ণ প্রচার-প্রচারনার কাজ চালানো হয় বোর্ডকাষ্ট, নিউজপেপার, ম্যাগাজিন ও টেলিভিশন ইত্যাদিতে বিজ্ঞাপন প্রচারের মাধ্যমে। যাতে আপনাকে খরচ করতে হবে লক্ষ লক্ষ টাকা।

সব ব্যবসায় কি উদ্যোক্তার পক্ষে শুধু মার্কেটিং এর জন্য এতো অর্থ ব্যয় করা সম্ভব? এমন অবস্থাতেই সাশ্রয়ী হবে ডিজিটাল মার্কেটিং সিস্টেম। যা স্বল্প সময়ে স্বল্প খরচে অধিক পরিসরে ব্যবসার প্রচার কাজ করে থাকে। মার্কেটিংয়ের ক্ষেত্রে এই ডিজিটাল মার্কেটিং ব্যাপক ভূমিকা রাখে। ডিজিটাল মার্কেটিং সিস্টেমে শুধু মাত্র ৫ ডলার থেকে শুরু করে আপনার পছন্দ মতো বাজেটে কোটি কোটি টাকা পর্যন্ত বিজ্ঞাপন বা মার্কেটিং-এ খরচ করতে পারবেন।

Digital Marketing এর সুবিধাসমূহ

  1. Digital Marketing করতে খরচ কম হয়। ছোট, মাঝারি, বড় সব পরিসরের ব্যবসায়ীরাই নিস্বন্দেহে এই মার্কেটিংকে বেছে নিতে পারে।
  2. পণ্যের বিজ্ঞাপন স্বল্প সময়ে কাস্টমারের কাছে পৌঁছে দেয়।
  3. শুধু মাত্র একটি কম্পিউটার থাকলেই বাড়িতে বসেই মার্কেটিং করা যায়।
  4. নির্দিষ্ট এলাকার, নির্দিষ্ট কাস্টমারদের টার্গেট করে পন্যের বিপণন বা মার্কেটিং করা যায়।
  5. কাস্টমারের চাহিদা অনুযায়ী যে যেই পন্য পছন্দ করে তার কাছে সেই পন্যের বিজ্ঞাপন চলে যায়।
  6. বাড়িতে বসেই অনলাইন অর্ডার পাওয়া যায় বিধায় খুব সহজেই পণ্য বিক্রয় করা সম্ভব হয়।

Digital Marketing ক্যারিয়ার

পেশা হিসেবে ডিজিটাল মার্কেটিংকে পছন্দ করা বা বেছে নেওয়া ভালো সিদ্ধান্ত। কেননা, বর্তমান সময় উপযোগী একটি বিভাগ হলো ডিজিটাল মার্কেটিং। যেখান শুধু একটি কম্পিউটার আর ইন্টারনেট সংযোগের প্রয়োজন। তারপর চাইলে বাড়িতে বসেও এই কাজ করা যাবে। এছাড়াও ডিজিটাল মার্কেটিং এর উপর দুই ভাবে ক্যারিয়ার গড়ে তোলার সুযোগ রয়েছে। যথা- চাকরি ও ফ্রিল্যান্সিং। কেউ চাইলে একাধারে দুটো এক সাথেও করতে পারবে। যদি তার যথেষ্ট পরিমান সময় ও ধৈর্য্য থাকে।

ডিজিটাল মার্কেটিং সেক্টরে চাকরি করতে হলে প্রথমে জুনিয়র ডিজিটাল মার্কেটিং এক্সিকিউটিভ পদে জয়েন করতে হবে। এরপর কয়েকটি ধাপ পার করে মার্কেটিং ডিরেক্টরের পোস্ট পর্যন্ত পৌছাতে পারবে। যা একটি হায়ার লেভেলের সুনিশ্চিত ক্যারিয়ার তৈরি করবে। আর যদি কেউ ডিজিটাল মার্কেটিংয়ে ফ্রিল্যান্সিং করতে চায় তবেও অনেক সুবিধা পাবে। সবচেয়ে বড় সুবিধা হচ্ছে সময়-সুযোগ ও ইচ্ছানুযায়ি কাজ বাছাই করতে পারবে।

Digital Marketing কিভাবে শুরু করবেন?

ডিজিটাল মার্কেটিং অথবা যেকোন কাজই হোক, কাজের প্রতি ভালোবাসা না থাকলে কখনই সেই কাজে ভালো ফলাফল করা যায় না। ডিজিটাল মার্কেটিং শুরু করার আগে ডিজিটাল মার্কেটিং সম্পর্কে ভালোভাবে সঠিক ধারনা নিতে হবে। ডিজিটাল মার্কেটিং শেখার বেশ কিছু মাধ্যম রয়েছে। বিভিন্ন ফ্রি কোর্স ও পেইড কোর্স রয়েছে। ফ্রি ডিজিটাল মার্কেটিং কোর্স ইন বাংলাদেশ ২০২৪ এই ব্লগে তথ্য পেয়ে যাবেন।

ডিজিটাল মার্কেটিংয়ের ক্ষেত্র সমূহ

Digital Marketing এর অনেক গুলো ক্ষেত্র রয়েছে। নিচে বিস্তারিত আলোচনা করা হল-

১। SEO বা সার্চ ইঞ্জিন অপটিমাইজেশন

SEO শব্দের পূর্ণরূপ হলো সার্চ ইঞ্জিন অপটিমাইজেশন। একটি ওয়েব সাইটে ট্রাফিক বা ভিজিটর বাড়ানোর জন্যই মূলত সার্চ ইঞ্জিন অপটিমাইজেশন তথা SEO করা হয়। কোন সার্চ ইঞ্জিনে যদি একটি ওয়েবসাইটের SEO ঠিকঠাক ভাবে করা হয় তবে সেই ওয়েবসাইটকে সার্চ ইঞ্জিন প্রথমে দেখিয়ে থাকে। বর্তমান সময়ে ডিজিটাল মার্কেটিং সেক্টরে SEO এক্সপার্টদের ব্যাপক ডিমান্ড। কেননা, শুধু একজন SEO এক্সপার্টই পারে কোন ওয়েবসাইটকে সার্চ ইঞ্জিনের শীর্ষ স্থানে পৌছে দিতে।

২। সোশ্যাল মিডিয়া মার্কেটিং

ফেসবুক, টুইটার, ইনস্টাগ্রাম, লিংকডীন, পিন্টারেস্ট, ইত্যাদিকে বলা হয় সোশ্যাল মিডিয়া। আর এসব সোশ্যাল মিডিয়াতে মার্কেটিং করাকে বলা হয় সোশ্যাল মিডিয়া মার্কেটিং। ইদানিং সোশ্যাল মিডিয়া মার্কেটিং, Digital Marketing সেক্টরের সবচাইতে বড় মার্কেটপ্লেস রূপ নিয়েছে। কারন, 3.9 বিলিয়নেরও বেশি মানুষ এখন সোশ্যাল মিডিয়া ব্যবহার করে। আর আমাদের দেশে শুধু ফেসবুক ব্যবহারকারির সংখ্যা প্রায় 43 মিলিয়নের কাছাকাছি। তাই আমাদের দেশে ফেসবুক মার্কেটিং অনেক জনপ্রিয় একটি মার্কেট প্লেস।

যেকোন সোশ্যাল মিডিয়া মার্কেটিং দুই ধরনের হয়ে থাকে। যথা- ফ্রি মার্কেটিং ও পেইড মার্কেটিং। ফ্রি মার্কেটিং এর ক্ষেত্রে একটি পেইজ খুলে বা কোন গ্রুপে বিনা মূল্যে মার্কেটিং করা যায়। আর পেইড মার্কেটিং এর ক্ষেত্রে বিভিন্ন মার্কেটারদের অর্থের বিনিময়ে হায়ার করে মার্কেটিং করানো হয়। আবার, সোশ্যাল মিডিয়ায় ডলার পে করেও মার্কেটিং করা যায়। পেইড হোক বা ফ্রি উভয়ই অনেক জনপ্রিয়। সোশ্যাল মিডিয়া মার্কেটিং এ বিস্তারিত জানতে পড়ুন-সোশ্যাল মিডিয়া মার্কেটিং কি?

৩। ইউটিউব মার্কেটিং

এখন সকলেই প্রায় কমবেশী ইউটিউব ভিডিও দেখে। এজন্য মার্কেটিং এর জন্য ইউটিউব খুবই জনপ্রিয় একটি মাধ্যম। আপনাকেই যদি প্রশ্ন করা হয়, আপনি ইউটিউবে বেশী সময় দেন নাকি টেলিভিশনে? উত্তরটা অবশ্যই ইউটিউবই হবে।স্ট্যাডি রিলেটেড ভিডিও থেকে শুরু করে ইন্টারটেন্টমেন্ট সব কিছুর ভিডিওই বর্তমানে ইউটিউবে পাওয়া যায়। ইউটিউবে দুই ভাবে মার্কেটিং করা হয়ে থাকে। একটি প্রডাক্ট রিভিউ ও অন্যটি গুগল অ্যাডওয়ার্ডসের মাধ্যমে অ্যাডভেটাইসমেন্ট।

৪। গুগল অ্যাডওয়ার্ডস

আপনি হয়তো বিভিন্ন ওয়েবসাইটের ব্লগ পোস্টে অথবা, কোন ইউটিউব ভিডিওর শুরুতে মাঝে বা শেষে কোন বিজ্ঞাপন দেখেছেন। এই বিজ্ঞাপন গুলোর বেশীর ভাগই গুগল অ্যাডওয়ার্ডসের। মূলত  কোন প্রডাক্ট বা সার্ভিসের বিজ্ঞাপন প্রচার করার জন্য গুগলকে কিছু পরিমান অর্থ দিলেই গুগল নির্দিষ্ট কিওয়ার্ডস টার্গেট করে সেই প্রডাক্ট বা সার্ভিসের বিজ্ঞাপন প্রচার করে থাকে। আর এর জন্য গুগলকে বিজ্ঞাপনের ক্লিক বা ভিউের উপর নির্ভর করে টাকা পরিশোধ করতে হয়। এই ধরনের বিজ্ঞাপন প্রচারের ক্ষেত্রে গুগল অ্যাডওয়ার্ডসই সবচেয়ে বেশী জনপ্রিয়।

৫। কন্টেন্ট মার্কেটিং

কন্টেন্ট হলো সাধারন মানুষের বোধগম্য কোন তথ্য বা উপাত্তের লিখিত, ছবি, অডিও বা ভিডিও ইত্যাদি। ডিজিটাল মাধ্যমে যে যত সুন্দর ভাবে কন্টেন্ট লিখে মানুষের দৃষ্টি আকর্ষণ করতে পারবে, তার মার্কেটিং ততো ভালো হবে। বিভিন্ন ধরনের পণ্যের বিজ্ঞাপন এখন এই কন্টেন্টের মাধ্যমে প্রচার করা হয়ে থাকে। কোন পণ্যের বিজ্ঞাপন প্রচারের জন্য ব্লগিং, ছবি, অডিও বা ভিডিও ইত্যাদি অনলাইনের মাধ্যমে প্রকাশ করাকে কন্টন্ট মার্কেটিং বলা হয়। কন্টেন্ট মার্কেটিং এ বিস্তারিত জানতে পড়ুন- কন্টেন্ট মার্কেটিং কি? কেন কন্টেন্ট মার্কেটিং করবেন?

৬। মোবাইল অ্যাপস মার্কেটিং

টেকনোলজির যুগে সবার হাতে হাতে এখন স্মার্টফোন। আর এই স্মার্টফোনে যেই অ্যাপস ব্যবহার করা হয় তাতে বিজ্ঞাপন প্রচার করাকে বলা হয় মোবাইল অ্যাপস মার্কেটিং। আমরা সচরাচর স্মার্ট ফোনে অ্যাপস ইন্সটল করার জন্য গুগল প্লেস্টোর বা অ্যাপল অ্যাপস স্টোর ব্যবহার করি। এই অ্যাপসে যে কোন প্রডাক্ট বা সার্ভিস অথবা যেকোন কিছুর প্রমোট করার জন্য মাঝে মাঝে বিজ্ঞাপন দেখানো হয় তা মোবাইল অ্যাপস মার্কেটিং এর মধ্যে পরে। গুগলকে কিছু নির্দিষ্ট পরিমান অর্থ পরিশোধ করে গুগল মুবের মাধ্যমেও মোবাইল অ্যাপস মার্কেটিং করা যায়।

৭। ইমেইল মার্কেটিং

ইমেইলের মাধ্যমে কোন কিছুর বিজ্ঞাপন প্রচার করাকে ইমেইল মার্কেটিং বলা হয়। ইমেইল মার্কেটিং এর জন্য যাদের কাছে বিজ্ঞাপন পৌছাতে ইচ্ছুক তাদের ইমেইল অ্যাড্রেস সংগ্রহ করতে হয়। ইমেইল মার্কেটিং এর সবচেয়ে বড় সুবিধা হচ্ছে নির্দিষ্ট বয়সের বা নির্দিষ্ট সংখ্যক মানুষকে টার্গেট করে তাদের চাহিদার উপর ভিত্তি করে বিজ্ঞাপন প্রচার বা মার্কেটিং করা যায়। আবার, পণ্যের লিংক ইমেইলের সাথে সংযুক্ত করে দিলে, যদি উক্ত কাস্টমারের পছন্দ হয় তবে সেখান থেকেই সে ক্রয় করতে পারে। আর সেখানেই মার্কেটিং এর মাধ্যমে বিক্রয় করা যায়। আর যার ফলে মার্কেটিং করা সফল হয়। ইমেইল মার্কেটিং বিষয়ে বিস্তারিত জানতে পড়ুন- ইমেইল মার্কেটিং কি? Email Marketing কিভাবে করবেন?

৮। অ্যাফিলিয়েট মার্কেটিং

অ্যাফিলিয়েট মার্কেটিং এমন একটি সেক্টর যেখানে অন্যের প্রডাক্টকে প্রমোট করা হয়। অর্থাৎ, নিজের প্রোডাক্টকে প্রমোট না করে অন্যের প্রডাক্ট নিজের ওয়েব সাইটে বিজ্ঞাপনের মাধ্যমে প্রমোট করাই অ্যাফিলিয়েট মার্কেটিং এর অন্তর্ভুক্ত। সেক্ষেত্রে উক্ত প্রডাক্ট যদি সেল হয় তবে সেখান থেকে কিছু পরিমান অর্থ কমিশন আকারে মার্কেটারকে দেওয়া হয়। এভাবেই অ্যাফিলিয়েট মার্কেটিংয়ে একজন মার্কেটার আয় করে থাকে। মার্কেটিং বিষয়ে বিস্তারিত জানতে পড়ুন-অ্যাফিলিয়েট মার্কেটিং কি? অ্যাফিলিয়েট মার্কেটিং-এ কিভাবে আয় করা যায়?

পরিশেষে

ডিজিটাল মার্কেটিং এর মাধ্যমে অল্প খরচ ও অল্প শ্রমে দেয় ব্যাপক সুবিধা। শিক্ষার্থী থেকে শুরু করে কর্মজীবি সকলেই এই সেক্টরে তাদের ক্যারিয়ার গড়তে পারে। কারন ভবিষ্যতে ডিজিটাল মার্কেটিং হবে একটি প্রতিষ্ঠিত পেশা। ডিজিটাল মার্কেটিং বিষয়ে কিছু জানার থাকলে অথবা মতামত থাকলে কমেন্ট করুন।

Related Articles

One Comment

  1. অনেক ধন্যবাদ এত সুন্দর করে উপস্থাপনা করার জন্য। আপনার ব্লগটিতে এরম আর উৎকৃষ্ট মানের পোস্ট পাব এই আশা করলাম।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button
error: Content is protected !!