অ্যাফিলিয়েট মার্কেটিং কি? অ্যাফিলিয়েট মার্কেটিং-এ কিভাবে আয় করা যায়?
অ্যাফিলিয়েট মার্কেটিং হলো অনলাইনে আয়ের অন্যতম জনপ্রিয় মাধ্যম। এটি একটি কর্মক্ষমতা ভিত্তিক মার্কেটিং কৌশল। যা সাম্প্রতিক বছরগুলিতে ব্যাপক জনপ্রিয়তা অর্জন করেছে। আজকের ব্লগে অ্যাফিলিয়েট মার্কেটিং কি? কিভাবে অ্যাফিলিয়েট মার্কেটিং কিভাবে করে? কিভাবে আয় করা যায় সহ অ্যাফিলিয়েট মার্কেটিং সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করা হবে।
অ্যাফিলিয়েট মার্কেটিং কি?
অন্য প্রতিষ্ঠানের প্রোডাক্ট কিংবা সার্ভিস কমিশনের বিনিময়ে প্রোমোট ও বিক্রির প্রক্রিয়াকে বলা হয় অ্যাফিলিয়েট মার্কেটিং। এটি ডিজিটাল মার্কেটিং এর একটি জনপ্রিয় শাখা। সহজ ভাষায় বলতে গেলে, অন্যের পণ্য বা সেবা বিক্রির ব্যবস্থা করে কমিশন আয় করাকেই বলা হচ্ছে এফিলিয়েট মার্কেটিং। ওয়েবসাইট, ইউটিউব চ্যানেল, ফেসবুক প্রোফাইল, এমনকি ইনস্টাগ্রামের মাধ্যমেও রেফারেল বা অ্যাফিলিয়েট ইনকাম করা সম্ভব।
এফিলিয়েট মার্কেটিং এর উদাহরণঃ অ্যামাজন অ্যাফিলিয়েট মার্কেটিং, দারাজ অ্যাফিলিয়েট মার্কেটিং, ১০ মিনিট স্কুল এফিলিয়েট মার্কেটিং।
আরও জানুন-আপওয়ার্ক কি? আপওয়ার্ক এ কিভাবে ফ্রিল্যান্সিং করা যায়?
কিভাবে অ্যাফিলিয়েট মার্কেটিং কাজ করে?
এফিলিয়েট মার্কেটিং এর ক্ষেত্রে একজন সেলার অথবা প্রোডাক্ট এর উৎপাদনকারী প্রথমে একটি অ্যাফিলিয়েট প্রোগ্রাম তৈরী করেন। এরপর প্রোডাক্ট প্রোমোট করার উদ্দেশ্যে অ্যাফিলিয়েট মার্কেটারকে ইউনিক লিংক প্রদান করেন। এই ইউনিক লিংক ব্যবহার করে প্রতি অ্যাফিলিয়েট মার্কেটার থেকে আসা সেলকে খুব সহজেই গণনা করা যায়।
অ্যাফিলিয়েট লিংক ব্যবহার করে প্রোডাক্ট ক্রয় করলে, ব্রাউজারে কুকির মাধ্যমে ডাটা সংরক্ষিত হয়। এই কুকি সেলারকে অ্যাফিলিয়েট সেল সম্পর্কে জানিয়ে দেয়। কুকি থেকে প্রাপ্ত ডাটা অনুসারে অ্যাফিলিয়েট মার্কেটারের প্রাপ্ত কমিশন বুঝিয়ে দেয় সেলার বা উৎপাদনকারী।
এফিলিয়েট মার্কেটিং এর পক্ষ
অ্যাফিলিয়েট মার্কেটিং এর ক্ষেত্রে চারজন প্রধান পক্ষ থাকে। যারা হলোঃ
- অ্যাফিলিয়েট
- সেলার
- নেটওয়ার্ক
- কনজ্যুমার
১। অ্যাফিলিয়েট
অ্যাফিলিয়েট বা পাবলিশার হলেন সে ব্যক্তি যে সেলারের প্রোডাক্ট কমিশন পাওয়ার উদ্দেশ্যে প্রোমোট করে থাকেন। একজন অ্যাফিলিয়েট সোশ্যাল মিডিয়া পোস্ট, ব্লগ, ভিডিও ও বিভিন্ন ধরনের কনটেন্টের মাধ্যমে প্রোমোশন চালিয়ে থাকেন।
২। সেলার
সেলার হলো মূলত অ্যাফিলিয়েট প্রোগ্রাম এর হোস্ট। সেলার একাধিক ব্যক্তিবর্গ থেকে শুধুমাত্র একজন ব্যক্তিও হয়ে থাকেন। মূলত নিজের তৈরি বা নিজের প্রতিষ্ঠানের তৈরী প্রোডাক্ট প্রোমোশন এর লক্ষ্যেই অ্যাফিলিয়েট কার্যক্রম পরিচালনা করে থাকেন এই সেলার।
৩। এফিলিয়েট মার্কেটিং নেটওয়ার্ক
নেটওয়ার্ক অ্যাফিলিয়েট মার্কেটিং এর আবশ্যিক উপাদান নয়। তবুও এটা অ্যাফিলিয়েট মার্কেটিংয়ের ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। সেলারগণ মূলত বিভিন্ন অ্যাফিলিয়েট নেটওয়ার্ক ব্যবহার করে অ্যাফিলিয়েট প্রোগ্রাম ম্যানেজ করে থাকেন। মূলত সেলার ও অ্যাফিলিয়েট এর মধ্যে সম্পর্ক স্থাপন করে দেওয়াই নেটওয়ার্ক এর কাজ। ক্লিকব্যাংক, শেয়ার-অ্যা-সেল, ইত্যাদি কিছু জনপ্রিয় অ্যাফিলিয়েট নেটওয়ার্ক।
৪। কনজ্যুমার
অ্যাফিলিয়েট লিংক ব্যবহার করে যারা প্রোডাক্ট ক্রয় করেন, তারা হলেন কনজ্যুমার। মূলত একজন কনজ্যুমার এর ক্রয়কৃত প্রোডাক্টের লাভের একটি অংশ কমিশন হিসেবে পাচ্ছেন একজন অ্যাফিলিয়েট।
এফিলিয়েট মার্কেটিং করে কিভাবে আয় করা যায়?
একজন কনজ্যুমারের ফর্ম সাবমিশন, ক্লিক, পারচেজ, ইত্যাদি অ্যাক্টিভিটি থেকে অ্যাফিলিয়েট আয় করতে পারে। যেমনঃ
১। পার সেলঃ
এটি অ্যাফিলিয়েট মার্কেটিং এর সবচেয়ে জনপ্রিয় মডেল। এই পেমেন্ট মডেলে একজন অ্যাফিলিয়েট দ্বারা হওয়া সেল এর উপর ভিত্তি করে কমিশন দেওয়া হয়।
২। পার ক্লিকঃ
এই পেমেন্ট মডেলের ক্ষেত্রে কমিশন পেতে সেল হওয়া লাগে না। বরং কোনো কনজ্যুমার অ্যাফিলিয়েট লিংকে ক্লিক করলেই অ্যাফিলিয়েট কমিশন দেওয়া হয়।
৩। পার লিডঃ
অ্যাফিলিয়েট মার্কেটার দ্বারা জেনারেট করা প্রতি লিড এর জন্য পেমেন্ট করা হয় এই মডেলে।
অ্যাফিলিয়েট মার্কেটিং এর উপায়
একজন অ্যাফিলিয়েট মার্কেটার একাধিক উপায়ে সেল বা ক্লিক আনার মাধ্যমে কমিশন পেতে পারেন। একেক অ্যাফিলিয়েট পদ্ধতির জনপ্রিয়তা একেক ধরনের। যে বিষয়ে অ্যাফিলিয়েট মার্কেটিং করবেন, সে বিষয়ের উপর নির্ভর করে কোন মাধ্যমে প্রোমোশন চালালে অধিক সফলতা পাবেন।
১। ব্লগিং
অ্যাফিলিয়েট মার্কেটিং এর নাম নিলে প্রথমেই আসে ব্লগিং এর কথা। সার্চ ইঞ্জিন থেকে আসা ফ্রি ট্রাফিক থেকে ব্লগ পোস্টে থাকা অ্যাফিলিয়েট লিংক থেকে আয় করা যাবে। অ্যাফিলিয়েট মার্কেটিং এর উদ্দেশ্যে একাধিক ধরনের কনটেন্ট কাজে আসতে পারে। টিউটোরিয়াল, রিভিউ থেকে শুরু করে যেকোনো শিক্ষামূলক কনটেন্ট ব্যবহার করা যেতে পারে অ্যাফিলিয়েট প্রোডাক্ট প্রোমোট করতে।
২। ইউটিউব
ইউটিউব চ্যানেল এর মাধ্যমেও এফিলিয়েট মার্কেটিং করা যাবে। ভিডিও ডেসক্রিপশনে এফিলিয়েট লিংক দিয়ে সেখান থেকে কমিশন পেতে পারেন। এছাড়া ইউটিউব থেকে আয় করার উপায় আরো অনেকগুলো রয়েছে।
৩। ইনফ্লুয়েন্সার অ্যাফিলিয়েট মার্কেটিং
ইন্সটাগ্রাম, ইউটিউব কিংবা ফেসবুকে সোশ্যাল মিডিয়া আইকন হলে, ফলোয়াররা অ্যাফিলিয়েট সেল জেনারেট করে আয়ের পথ খুলে দিতে পারে। মানুষ ইনফ্লুয়েন্সারকে মূলত ফলো করে তাদের রিকমেন্ডেশন, লাইফস্টাইল ইত্যাদি সম্পর্কে ভালো ধারণা পেতে। একটি ভালো ফলোয়ার বেস থাকলে অ্যাফিলিয়েট সেল এর মাধ্যমে ভালোই আয়ের সম্ভাবনা রয়েছে।
৪। ইমেইল এফিলিয়েট মার্কেটিং
ইমেইল মার্কেটিংয়ে ইনভেস্টমেন্ট বিবেচনায় আয়ের সুবিধা অধিক বলে প্রমাণিত। একজন অ্যাফিলিয়েট মার্কেটার এর ইমেইল লিস্ট অ্যাফিলিয়েট সেল এর ক্ষেত্রে ব্যাপক ভূমিকা রাখতে পারে। নিউজলেটার কিংবা সাধারণ মেইলে অ্যাফিলিয়েট প্রোডাক্টের লিংক যুক্ত করে দিলে তেমন শ্রম ছাড়া খুব সহজেই সেল জেনারেট করে আয় করতে পারেন।
৫। কুপন সাইট
ই-কমার্স ও অনলাইন শপিংয়ের জনপ্রিয়তার ফলে দিন দিন কুপন সাইটগুলোর জনপ্রিয়তা বেড়েই চলেছে। কুপন সাইটসমুহে আপনার অ্যাফিলিয়েট লিংক পোস্ট করার মাধ্যমে শপিং যারা ভালোবাসে তাদের সাহায্য করার পাশাপাশি ভালো অংকের আয় সম্ভব।
এফিলিয়েট মার্কেটিং এর সুবিধা
এফিলিয়েট মার্কেটিং এর সুবিধা বেশ কিছু সুবিধা রয়েছে।
১। প্যাসিভ ইনকাম জেনারেট হয়। অর্থাৎ একবার লাইনিং করে নিলে সে হিসেবে আয় আসে।
২। এই ধরনের কাজে ফ্লেক্সিবিলিটি থাকে। অধিক সময় দিতে হয় না।
৩। কম ঝুঁকির কাজ।
মোবাইল দিয়ে এফিলিয়েট মার্কেটিং
যাদের ল্যাপটপ নেই তারাও মোবাইল দিয়ে এফিলিয়েট মার্কেটিং করে ইনকাম জেনারেট করতে পারেন। এক্ষেত্রে ইউটিউব ভিডিওকে শিক্ষক হিসেবে ব্যবহার করতে পারেন। ফেইসবুক, ইউটিউব, ইনস্টাগ্রাম, টুইটার, টেলিগ্রাম এসব সোশ্যাল মিডিয়া মোবাইলের মাধ্যমেই ব্যবহার করা যায়। আপনার কাজ হবে যেকোনো একটি বিশ্বস্ত এ্যাফিলিয়েট মার্কেটিং নেটওয়ার্ক সিলেক্ট করে তার লিংক কালেক্ট করা। এবং সোশ্যাল মিডিয়া ও অন্যান্য সেক্টরে শেয়ার করে সেল জেনারেট করা।
পরিশেষে
যেই প্রোডাক্ট নিয়ে এফিলিয়েট মার্কেটিং করবেন সেই প্রোডাক্ট সম্পর্কে ভালো ভাবে জানতে হবে। প্রোডাক্ট এর চাহিদা বুঝতে হবে। এই জিনিসগুলো ভালভাবে বুঝলে আপনি খুব সহজে ইনকাম শুরু করতে পারেন। আশা করি এফিলিয়েট মার্কেটিং সম্পর্কে বুঝতে পেরেছেন। এই বিষয়ে আরও কিছু জানার থাকলে কমেন্ট করুন।