ইউটিউব ভিডিও মার্কেটিং কি? কেন ও কিভাবে করবেন?
গুগল বর্তমান সময়ে সবচেয়ে জনপ্রিয় সার্চ ইঞ্জিন। এটা আমরা সবাই জানি। কিন্তু গুগলের ব্যাতিত সবচেয়ে বৃহৎ ও জনপ্রিয় সার্চ ইঞ্জিন কোনটি? ইউটিউব হলো বিশ্বের দ্বিতীয় সর্ববৃহত সার্চ ইঞ্জিন। ( যদিও ইউটিউবও গুগলেরই একটি প্রতিষ্টান তবুও ) এটি ভিডিও সেয়ারিং সাইট হওয়ার পাশাপাশি জনপ্রিয় একটি সার্চ ইঞ্জিন। জানুয়ারি ২০২১ এর পরিসংখ্যান অনুযায়ী সাড়া বিশ্বের প্রায় ২.৩ বিলিওন মানুষ এই সাইটের সাথে যুক্ত। অর্থাৎ, ২.৩ বিলিওন মানুষ ইউটিউব ব্যবহার করে। এটি একটি জনবহুল ভিডিও প্ল্যাটফর্ম। মার্কেটিং করার জন্য এটি একটি উপযোগী জায়গা। কেননা, যেখানে মানুষের সমাগম বেশি সেখানে তুমুল পরিমানে মার্কেটিং করা যায় এটাই স্বাভাবিক। তাই মার্কেটিং করার জন্য অনেক ডিজিটাল মার্কেটারই এই প্ল্যাটফর্ম অর্থাৎ ইউটিউবকে বেছে নিয়েছে। আপনি যদি ইউটিউব মার্কেটিং বা ভিডিও মার্কেটিং সম্পর্কে জানতে ও শিখতে আগ্রহী হন তবে এই আর্টিকেলটি আপনার জন্য। কারন, আজকে আমরা ইউটিউব মার্কেটিং বা ভিডিও মার্কেটিং নিয়ে সংক্ষিপ্ত পরিসরে আলোচনা করব। আর কথা না বাড়িয়ে চলুন শুরু করি।
ইউটিউব মার্কেটিং কি ?
কোন পণ্য, সেবা অথবা ব্যবসার প্রচার-প্রচারণার সম্পূর্ণ ব্যবস্থাকে বলা হয় মার্কেটিং। এই প্রসেসকে ইন্টারনেট বা অনলাইনের মাধ্যমে করাকে ডিজিটাল মার্কেটিং বলে। আর ইউটিউব মার্কেটিং ডিজিটাল মার্কেটিং সেক্টরের অন্যতম জনপ্রিয় একটি শাখা। মূলত ইউটিউব চ্যানেলে ইউটিউব ভিডিওর মাধ্যমে মার্কেটিং করাকে ইউটিউব মার্কেটিং বা ভিডিও মার্কেটিং বলে। অর্থাৎ, ইউটিউবকে ব্যবহার করে কোন পণ্য, সেবা অথবা ব্যবসার প্রচার প্রচারণার সম্পূর্ন প্রসেসকেই বলা হয় ইউটিউব মার্কেটিং। এছাড়াও ইউটিউব ভিডিওর শুরুতে, মাঝে বা শেষে আমরা যেসব অ্যাড দেখতে পাই ( যেমন গুগল অ্যাড সেন্সের অ্যাড ) সেগুলোও ইউটিউব মার্কেটিং হিসেবে গণ্য করা হয়।
ইউটিউব মার্কেটিং এর ধরন
ইউটিউব মার্কেটিং এর প্রকারভেদের কথা বলতে গেলে, ইউটিউব মার্কেটিং এর নির্দিষ্ট কোন প্রকারভেদ নেই। তবে এটি দুই ভাবে করা যায়। একটি হলো নিজের পণ্য, সেবা অথবা ব্যবসার প্রচারের জন্য ভিডিও তৈরি করা বা অন্যকে দিয়ে অর্থের বিনিময়ে গ্রাহকের প্রয়োজন অনুযায়ী ব্যবসার ভিডিও তৈরি করে প্রচারনা করা। আর অন্যটি ইউটিউবে সরাসরি অর্থ প্রদানের মাধ্যমে মার্কেটিং করা। ডিজিটাল মার্কেটিং এর এই সেক্টরে মূলত এই দুই ভাবেই মার্কেটিং করা হয়ে থাকে।
ইউটিউব মার্কেটিং কেন করবেন ?
ইদানিং ইউটিউব মার্কেটিং ডিজিটাল মার্কেটিং শাখায় সময় উপযোগি একটি মার্কেটিং ব্যবস্থায় রূপ নিয়েছে। কেননা,পূর্বের মতো মানুষ ওয়েব সাইটে ব্লগিং পড়ার জন্য আর অতটা সময় দেয় না যতটা না দেয় ইউটিউব ভিডিও দেখার পেছনে দেয়। আর এখন যেহেতু ২.9 বিলিয়ন মানুষ ইউটিউব ব্যবহার করে। এজন্য ইউটিউবে মার্কেটিং করে প্রচুর পরিমানে ট্রাফিক পাওয়া যায়। যা একটি ব্লগিং ওয়েব সাইটের ক্ষেত্রে অনেক সময় সাপেক্ষ হয়ে দাঁড়ায়।
তাছাড়াও একটি ওয়েবসাইট বানাতে হলে অর্থের বিনিময়ে ডোমেইন ও হোস্টিং ক্রয় করতে হয়। আবার, হোস্টিং এর জন্য মাসিক অথবা বাৎসরিক একটা নির্দিষ্ট পরিমান অর্থ দিতে হয়। যেখানে ইউটিউবের ক্ষেত্রে এরকম কোন ঝামেলা নেই। অর্থাৎ, ইউটিউবে কোন প্রকার অর্থ ডোমেইন বা হোস্টিং এর পেছনে খরচ করতে হয় না। এমনকি ডোমেইন ও হোস্টিং এর কোন ঝামেলাই পোহাতে হয় না। ডোমেইন ও হোস্টিং কি এ বিষয়ে যদি আপনার কিঞ্চত পরিমান ধারনাও না থাকে তবে এই আর্টিকেলটি পড়তে পাড়েন। আশা করা যায়, ডোমেইন ও হোস্টিং সম্পর্কে আপনার একটা ভালো ধারনা হবে।
এছাড়াও ইউটিউব মার্কেটিং করার ক্ষেত্রে একটি প্রডাক্টের রিভিউ গ্রাহকের কাছে সহজভাবে তুলে ধরা যায়। অর্থাৎ, ভিডিওর ভেতরে প্রডাক্টের বৈশিষ্ট্য, বৈচিত্র, দোষ-গুণ, মান ইত্যাদি খুব স্পষ্ট ভাবে তুলে ধরা যায়। যাতে করে মার্কেটার ও গ্রাহক উভয়েরই সন্তোষজনক উপকার হয়। যা ব্লগ আকারে কখনই সম্ভব নয়। কারন ব্লগে সর্বচ্চ হলে লেখার পাশাপাশি প্রডাক্টের ছবি প্রকাশ করে তুলে ধরা যায়। এর বেশি না। তবুও ভিডিও মার্কেটিং এর মতো অতটা নিখুত ভাবে গ্রাহকের চাহিদা পূরন করা সম্ভব হয় না। মোটকথা ভিডিওর মাধ্যমে যেভাবে পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে কোন প্রডাক্টের বিবরন দেওয়া যায় অন্য কোন প্রক্রিয়ায় তা করা যায় না। তাই বলা যায় ইউটিউবে মার্কেটিং করা সহজ ও কম ব্যয় বহুল।
কিভাবে ইউটিউব মার্কেটিং করবেন?
ইউটিউব মার্কেটিং শুরু করতে হলে আপনাকে প্রথমেই একটি ইউটিউব চ্যানেল খুলতে হবে। যার জন্য খুব বেশি কিছুর প্রয়োজন পরবে না। শুধু একটি জিমেইল এ্যাকাউন্ট, একটি কম্পিউটার বা স্মার্ট ফোন এবং ইন্টারনেট কানেকশন ব্যাস। এক্ষেত্রে, জিমেইল বা গুগল এ্যাকাউন্টের এই জন্য প্রয়োজন যে, ইউটিউব গুগলের একটি প্রতিষ্ঠান।
ইউটিউব চ্যানেল খুলুন এবং সেট-আপ করুন
যদি আপনি ইউটিউব চ্যানেল খুলতে না জানেন তবে এই আর্টিকেলটি পড়ার মাধ্যমে আপনি খুব সহজে ইউটিউব চ্যানেল খুলে চ্যানেলের কিছু গুরুত্বপূর্ন সেটআপ করা শিখতে পারবেন। অর্থাৎ, আপনার চ্যানেলে ভিডিও আপলোড বা মার্কেটিং করার পূর্ব পর্যন্ত যা কিছু করাতে হবে সব কিছুই আপনি আর্টিকেলটিতে জেনে যাবেন।
বিজনেস রিলেটেড ভিডিও ক্রিয়েট করুন
ইউটিউব চ্যানেল খুলে সেটি সেট আপ করার পরর্বর্তী ধাপ হচ্ছে আপনার কাঙ্ক্ষিত প্রডাক্ট, সার্ভিস অথবা বিজনেস সম্পর্কিত ভিডিও তৈরি করা। ইউটিউব মার্কেটিং এর সবচেয়ে বড় ও গুরুত্বপূর্ণ ধাপ এটি। কারণ, এই ভিডিওর মাধ্যমেই আপনার আপনার কাঙ্ক্ষিত প্রডাক্ট, সার্ভিস অথবা বিজনেস গ্রাহকের দোড়গোড়ায় পৌছাবে। কিন্তু এই ভিডিও তৈরি করার আগে আপনাকে প্যান করতে হবে যে, কিভাবে ভিডিও তৈরি করলে গ্রাহক ভিডিও থেকে আপনার প্রডাক্ট, সার্ভিস অথবা বিজনেস সম্পর্কে খুব ভালো একটা ধারনা পাবে। এছাড়াও ভিডিও কিভাবে তৈরি করলে গ্রাহকরা বোরিং হবে না, বরং ভিডিওর প্রতি আকৃষ্ট্য হবে?
আপনার ভিডিওর মাধ্যমে গ্রাহক যেন আপনার প্রডাক্ট, সার্ভিস অথবা বিজনেস সম্পর্কে খুটিনাটি সকল বৈশিষ্ট্যই জানেতে পায় এরকম ভিডিও তৈরি করতে হবে। আপনাকে ভিডিও তৈরির ক্ষেত্রে আপনার সর্বচ্চ সৃজনশীলতা কাজে লাগাতে হবে। এর পাশাপাশি আপনাকে ভিডিওর সময় সীমার দিকেও খেয়াল রাখতে হবে। যেন ভিডিও খুব বেশি বড় না হয়ে যায়। কারন, স্বল্প সময়ের ভিডিও ইউটিউব SEO এর ক্ষেত্রে যেমন ব্যাপক চাহিদা সম্পন্ন, ঠিক তেমনিও এটি গ্রাহকের কাছেও বেশ পছন্দের।
সঠিকভাবে আপনার ভিডিওর SEO করুন
SEO শব্দের পূর্ণরূপ হলো Search Engine Optimization। কোন ইউটিউব ভিডিও সার্চ করার পর সেটি যেন প্রথম সারিতে আসে অথবা প্রথম সারিতে নিয়ে আসার জন্য যে কৌশল অবলম্বন করা হয় তাই ইউটিউব SEO। কোন ভিডিওর ট্রাফিক বা ভিজিটর বাড়ানোর জন্য ইউটিউব SEO করা হয়। কোন ভিডিওতে যদি ইউটিউব SEO ঠিক-ঠাক ভাবে না করা হয় তবে সেই ভিডিও ইউটিউব র্যাক করে না। অর্থাৎ, কোন মান সম্মত ভিডিওতে ইউটিউব SEO সঠিক নিয়মে করা হলে সার্চ করার পর সেই ভিডিও প্রথম সারিতে দেখায়। যা ভিডিওতে ট্রাফিক বা ভিজিটর বাড়ানোর মূল মন্ত্র।
এখন প্রশ্ন হলো কিভাবে সঠিক নিয়মে SEO করব? তাই তো? সঠিক ভাবে টাইটেল, ডেসক্রিপশন, ক্যাটাগরি, থাম্বনেইল, ট্যাগ, কীওয়ার্ড ইত্যাদি ব্যবহার করতে পাড়লেই অটোমেটিকেলি ভিডিও SEO ফ্রেন্ডলি হয়ে যাবে। আপনাকে এসিও সম্পর্কে কিছুটা জ্ঞান অর্জন করতে হবে। তারপরেই আপনি আপনার ভিডিও SEO ফ্রেন্ডলি করতে পারবেন।
সোসাল মিডিয়ায় ভিডিওগুলো প্রমোট করুন
ইউটিউব ভিডিও মার্কেটিং এর জন্য ভিডিও প্রমোট করা একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ। বিভিন্ন ধরনের সোসাল মিডিয়া যেমন, ফেসবুক, টুইটার, ইন্সটাগ্রাম ইত্যাদি ছাড়াও আপনি সাইলে বিভিন্ন ধরনের ওয়েব সাইটেও আপনার ভিডিওর প্রমোট করতে পারেন। এসব প্ল্যাটফর্মে ভিডিও সেয়ার করেও প্রমোট করা যায়। এভাবে আপনাকে আপনার ভিডিও প্রমোট করে ভিজিটর নিয়ে আসতে হবে।
ইউটিউব অ্যাডস এর ব্যবহার করুন
আমরা ইউটিউব ভিডিও দেখার সময় ভিডিওর শুরুতে-মাঝে-শেষে ইউটিউব অ্যাডস দেখতে পাই। যেগুলো কমবেশি প্রত্যেক ইউটিউব ব্যবহার কারীর কাছেই চলে যায়। আপনি চাইলে আপনার ভিডিও গুলোকে ইউটিউব অ্যাড আকারে আপনার গ্রাহকের কাছে পৌছে দিতে পারেন। এর জন্য আপনার ইউটিউবকে নির্দিষ্ট পরিমান টাকা দিতে হবে। ইউটিউব এই নির্দিষ্ট পরিমাণ অর্থের বিনিময়ে আপনার চ্যানেল ও ভিডিওগুলো অ্যাড আকারে প্রমোট করে দেবে। যাতে করে ইউটিউবেরও কিছুটা আয় হবে আর আপনারও খুব দ্রুত আপনার পণ্য, সেবা অথবা ব্যবসা প্রচারের মাধ্যমে আপনার কাঙ্খিত গ্রাহকের কাছে পৌছে দিতে পারবেন। এই ইউটিউব অ্যাডস ব্যবহার করার ফলে আপনি খুব তাড়াতাড়ি আপনার ভিডিও মার্কেটিং প্রসেসটি সম্পন্ন করতে পারেন।
আশা করি, এই আর্টিকেলের মাধ্যমে ইউটিউব মার্কেটিং সম্পর্কে আপনাকে কিছুটা হলেও ধারনা দিতে পেড়েছি। কিংবা, আর্টিকেলটি পড়ে আপনি একটু হলেও উপকৃত হয়েছেন। ধন্যবাদ, এতক্ষন মনোযোগ সহকারে আপনার মূল্যবান সময় দিয়ে আর্টিকেলটি পড়ার জন্য। আজ এই পর্যন্তই কথা হবে অন্য এক আর্টিকেলে। আসসালামু আলাইকুম।