Work From Home এর প্রোডাক্টিভিটি বাড়ানোর উপায়

মূলত, ২০১৯ সালের করোনা মহামারির পর থেকেই ওয়ার্ক ফ্রম হোম (WFH) একটি গুরুত্বপূর্ণ ট্রেন্ডে পরিণত হয়েছে। আজকাল অনেক কর্মজীবী ব্যক্তিরা অফিসের বাইরে থেকেও কাজ করে উপার্জন করছেন যা অনেক ক্ষেত্রে সুবিধাজনক হলেও, প্রোডাক্টিভিটি বজায় রাখার ক্ষেত্রে বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে। ঘরের আরামদায়ক পরিবেশে বসে Time Management, মনোযোগ ধরে রাখা এবং কাজের চাপ সামলানো মটেও সহজ বিষয় নয়। তবে সঠিক কৌশল ও অভ্যাসের মাধ্যমে, বাড়ি থেকেই দক্ষতার সহিত কার্যকরীভাবে কাজ করা সম্ভব। এই ব্লগে আমরা “ওয়ার্ক ফ্রম হোম এর প্রোডাক্টিভিটি বাড়ানোর উপায়” নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করবো-
ওয়ার্ক ফ্রম হোম বলতে কি বোঝায়?
Work From Home (WFH) বলতে এমন একটি কাজের পরিবেশকে বুঝায় যেখানে কর্মচারীরা তাদের অফিসে না গিয়ে, নিজের বাড়ি বা অন্য কোনো নির্দিষ্ট জায়গা থেকে কাজ করেন। এই পদ্ধতিতে কর্মীরা সাধারণত টেলিকমিউনিকেশন টুলস, ভিডিও কনফারেন্স, ইমেইল, এবং অন্যান্য ডিজিটাল প্রযুক্তি ব্যবহার করে তাদের দায়িত্ব পালন করেন।
বিশ্বব্যাপী মহামারি কোভিড-১৯ এর পর থেকেই মূলত ওয়ার্ক ফ্রম হোম একটি ব্যাপক ট্রেন্ডে পরিণত হয় এবং বিশ্বের বহু প্রতিষ্ঠান এই পদ্ধতি অনুসরণ করে তাদের কর্মচারীদের স্বাস্থ্য ও নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে সাহায্য করেছেন। বর্তমানে, অনেক প্রতিষ্ঠান কর্মীদের জন্য ফ্লেক্সিবল ওয়ার্ক পলিসি চালু করেছে, যেখানে তারা অফিসে কিংবা বাড়ি থেকেই কাজ করার সুযোগ পেয়ে থাকেন।
Work From Home এর প্রোডাক্টিভিটি বাড়ানোর উপায়
বর্তমানে কর্পোরেট পরিবেশে, Work From Home (WFH) একটি বহুল ব্যবহৃত এবং জনপ্রিয় পদ্ধতি হয়ে উঠেছে। তবে ঘরে বসে কাজ করার সময় প্রোডাক্টিভিটি বজায় রাখা এবং সময়ের সঠিক ব্যবহার নিশ্চিত করা বেশ চ্যালেঞ্জিং হতে পারে। সঠিক কৌশল এবং পরিকল্পনা ছাড়া, ঘরে বসে কাজের সময় প্রোডাক্টিভিটি কমে যেতে পারে। এখন, আমরা আলোচনা করব এমন কিছু পরীক্ষিত কৌশল সম্পর্কে, যা আপনাকে ওয়ার্ক ফ্রম হোমের প্রোডাক্টিভিটি বাড়াতে এবং সঠিক কর্মপরিকল্পনা গ্রহণ করতে সাহায্য করবে।
একটি সুসংগঠিত কাজের পরিকল্পনা তৈরি করা
ওয়ার্ক ফ্রম হোমের প্রোডাক্টিভিটি বজায় রাখার জন্য একটি সুসংগঠিত কর্মপরিকল্পনা গ্রহণ করা অপরিহার্য। কাজের প্রতিটি সময়কে অর্থপূর্ণ করতে, দিনের শুরুতে আপনার কাজের একটি পরিকল্পনা তৈরি করুন। এটি আপনাকে আপনার কাজের অগ্রগতি সহজে ট্র্যাক করতে সাহায্য করবে এবং মনোযোগ বজায় রাখতে সহায়ক হবে।
- টাস্ক ম্যানেজমেন্ট টুল যেমন “Trello”, “Asana”, বা “Todoist” ব্যবহার করুন, যা আপনাকে আপনার কাজের অগ্রগতি মনিটর করতে সহায়তা করবে এবং সময়ের সঠিক ব্যবহার নিশ্চিত করবে।
নির্দিষ্ট কাজের স্থান তৈরি করুন
ঘরে বসে কাজ করার ক্ষেত্রে, একটি নির্দিষ্ট স্থান নির্বাচন করা ও তা নিরিবিলি হওয়া অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এটি আপনার কাজে মনোযোগ বাড়াবে এবং কাজের প্রতি ফোকাস থাকতে সাহায্য করবে। আপনাকে এমন একটি স্থান নির্বাচন করতে হবে যা শান্ত এবং কোলাহল মুক্ত, যেখানে আপনি কাজের জন্য প্রয়োজনীয় সমস্ত উপকরণ পাবেন।
প্রযুক্তির সঠিক ব্যবহার করা
আধুনিক প্রযুক্তি ও AI এর সঠিক ব্যবহারের মাধ্যমে আপনি আপনার কাজকে আরো সুসংগঠিত এবং সহজ করতে পারবেন। টাইম ট্র্যাকিং অ্যাপ, টাস্ক ম্যানেজমেন্ট সফটওয়্যার এবং ভিডিও কল প্ল্যাটফর্মগুলি আপনার কাজের গতি বৃদ্ধি করতে সহায়তা করবে। আধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহার করে আপনি এক সাথে অনেকগুলো কাজ (Multi Tasking) করতে পারবেন এবং আপনার সময় সাশ্রয়ী হবে।
- প্রো টিপ: “Slack” বা “Microsoft Teams”-এর মতো Communication Platform ব্যবহারের মাধ্যমে আপনার টিমের সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগ রাখা এবং কাজের অগ্রগতি শেয়ার করা।
কাজের ফাঁকে বিরতি নিন
একটানা দীর্ঘ সময় কাজ করার ফলে মনোযোগ নষ্ট হয়ে যেতে পারে। কাজের ফাঁকে ফাঁকে বিরতি নেওয়ার মাধ্যমে কাজের প্রতি নতুন করে উদ্দীপনা জন্মে। প্রতি এক ঘণ্টায় ৫-১০ মিনিটের বিরতি নিন, এটি আপনার মস্তিষ্ককে সতেজ করে এবং কাজের প্রতি মনোযোগ ফেরাতে সহায়তা করে।
- প্রো টিপ: “Pomodoro Technique” ব্যবহার করুন, যেখানে ২৫ মিনিট কাজ করার পর ৫ মিনিট বিরতি নেওয়া হয়। এটি আপনার Time Management এ সহায়ক হবে।
অতিরিক্ত ইন্টারনেটের ব্যবহার বর্জন করা
ওয়ার্ক ফ্রম হোমে সোশ্যাল মিডিয়া এবং অনলাইন বিভ্রান্তির প্রতি আকর্ষণ জন্ম নেওয়া খুবই সাধারণ ব্যাপার। কিন্তু, অপ্রয়োজনীয় ওয়েবসাইট এবং সোশ্যাল মিডিয়া ব্যবহার প্রোডাক্টিভিটি কমিয়ে দিতে পারে। অফিসের কাজের সময় এগুলোর ব্যবহার সীমিত করুন এবং মনোযোগী থাকতে চেষ্টা করুন।
শারীরিক ও মানসিক স্বাস্থ্যের যত্ন নিন
আপনার শারীরিক ও মানসিক সুস্থতা কাজের প্রতি আপনার মনোযোগ এবং প্রোডাক্টিভিটি নিশ্চিত করতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। শারীরিক ব্যায়াম, হালকা স্ট্রেচিং এবং Proper Diet আপনার শারীরিক ও মানসিক স্বাস্থ্য ভালো রাখতে সাহায্য করবে। এটি আপনার কাজে আরো কার্যকরী এবং মনোযোগী হতে সহায়ক হবে।
- প্রো টিপ: প্রতি ঘণ্টায় কিছু সময় দাঁড়িয়ে স্ট্রেচিং করুন বা শরীরচর্চা করুন, এটি আপনাকে সতেজ রাখবে।
টিমের সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগ রাখুন
ওয়ার্ক ফ্রম হোমে একা কাজ করতে হতে পারে, তবে টিমের সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগ রাখা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। টিমের সঙ্গে আলোচনা এবং সুপারভাইজারের পরামর্শের মাধ্যমে আপনার কাজের মান যাচাই এবং অগ্রগতি নিশ্চিত করতে পারবেন। ভিডিও কনফারেন্স, ইমেইল, এবং চ্যাট মেসেজিং প্ল্যাটফর্মগুলির মাধ্যমে যোগাযোগ বজায় রাখুন।
প্রতিদিনের লক্ষ্য নির্ধারণ করুন
এটি একটি গুরুত্বপূর্ণ কৌশল, যা আপনার কাজের গতি এবং মনোযোগ বজায় রাখতে সহায়ক। দিনের শুরুতে, আপনার কাজের সুনির্দিষ্ট লক্ষ্য নির্ধারণ করুন এবং সেগুলোর উপর কাজ করুন। এই লক্ষ্যের মাধ্যমে আপনি আপনার কাজের অগ্রগতি মাপতে পারবেন এবং সময়ের সঠিক ব্যবহার নিশ্চিত করতে পারবেন।
Work From Home এর প্রয়োজনীয়তা
ওয়ার্ক ফ্রম হোম (WFH) এর প্রয়োজনীয়তা বর্তমান যুগে বিভিন্ন কারণে বেড়ে গেছে। এর কিছু গুরুত্বপূর্ণ কারণ হলো:
- স্বাস্থ্য ও নিরাপত্তা: COVID-19 মহামারির পর, স্বাস্থ্য ও নিরাপত্তা নিশ্চিত করার জন্য অনেক প্রতিষ্ঠান কর্মীদেরকে অফিসে আসার পরিবর্তে বাড়ি থেকে কাজ করার সুযোগ দিয়েছে। এতে সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখা এবং সংক্রমণের ঝুঁকি কমানো সম্ভব হয়েছে।
- ফ্লেক্সিবিলিটি: Work From Home এ কর্মীদের যে কোন সময় এবং যে কোন স্থান থেকে কাজ করার সুবিধা রয়েছে। এটি তাদের ব্যক্তিগত জীবন এবং কাজের মধ্যে ভারসাম্য বজায় রাখতে সহায়তা করে।
- কর্মস্থলে যাতায়াত খরচ কমানো: অফিসে প্রতিদিন যাতায়াত করার সময় এবং খরচ কমিয়ে আনার মাধ্যমে কর্মীরা তাদের সময়কে আরও Effective ভাবে ব্যয় করতে পারেন। এটি পরিবেশগতভাবেও ইতিবাচক প্রভাব ফেলে।
- প্রোডাক্টিভিটি বৃদ্ধি: অনেক সময় কর্মীরা বাড়িতে বসে কাজ করার মধ্য দিয়ে আরও বেশি মনোযোগী ও Effective ভাবে কাজ করতে পারেন, কারণ অফিসের ব্যস্ততা বা বিভ্রান্তির পাশাপাশি বাড়ির আরামদায়ক পরিবেশ তাদের কাজের মনোযোগ ও দক্ষতা বৃদ্ধি করতে সহায়ক।
- অফিসের খরচ কমানো: অনেক প্রতিষ্ঠান অফিসের জায়গা, বিদ্যুৎ, পানীয় এবং অন্যান্য আনুষঙ্গিক খরচ কমাতে সক্ষম হয়, কারণ কর্মীরা বাড়ি থেকে কাজ করতে পারছেন।
- প্রতিভাবান ও দক্ষ কর্মী পাওয়ার সুযোগ: প্রতিষ্ঠানগুলো তাদের কর্মীদের জন্য বৈশ্বিক পর্যায়ে প্রতিভাবান ও দক্ষ কর্মী পাওয়ার সুযোগ পায়, কারণ Remote Job/ Work From Home কর্মীদের জন্য এখন আর কোনো ভৌগলিক বাধা নেই। যেকোনো স্থানে বসবাসকারী ব্যক্তিকে তারা তাদের টিমে যুক্ত করতে পারেন।
উপসংহার
ওয়ার্ক ফ্রম হোমের প্রোডাক্টিভিটি বাড়ানোর কৌশলগুলোকে ধীরে ধীরে Practice এর মাধ্যমে আপনাকে এটি অভ্যাসে পরিণত করতে হবে। সঠিক পরিকল্পনা, মনোযোগ এবং প্রযুক্তির ব্যবহারই আপনাকে কাজের প্রতি আরো প্রোডাক্টিভ এবং কার্যকরী করে তুলবে। আপনি যদি এই কৌশলগুলো অনুসরণ করেন, তবে খুব দ্রুত আপনার প্রোডাক্টিভিটি বাড়বে এবং আপনি ঘরে বসেই অফিসের সকল কাজ দক্ষতা ও একাগ্রতার সাথে সম্পন্ন করতে সক্ষম হবেন।
আরও পড়ুন: ডিজিটাল নোম্যাড হওয়ার কৌশল