Dual Currency Card কি? এটি কি ডেভিড বা ক্রেডিট কার্ডের মতোই? হ্যাঁ, তবে এটি প্রচলিত কার্ডের থেকেও অনেক বেশি সুবিধাজনক একটি ব্যাংকিং প্রোডাক্ট। যা আপনাকে একই কার্ডে দুটি ভিন্ন মুদ্রা ব্যবহার করার সুযোগ করে দেয়। এই কার্ডগুলি আন্তর্জাতিক ভ্রমণকারী, ফ্রিল্যান্সার এবং আন্তর্জাতিক লেনদেনকারী ব্যবসার জন্য বিশেষভাবে উপযোগী। এই আর্টিকেলে আমরা ডুয়েল কারেন্সি কার্ড কি, এবং এর সুবিধা ও ব্যবহারিক দিকগুলি তুলে ধরবো।
ডুয়েল কারেন্সি কার্ড কি?
ডুয়েল কারেন্সি কার্ড হলো একটি ব্যাংকিং কার্ড। এটি একই সাথে দুটি আলাদা মুদ্রায় লেনদেন করতে সক্ষম। উদাহরণস্বরূপ, একটি ডুয়েল কারেন্সি কার্ডে আপনি একসাথে বাংলাদেশি টাকা (BDT) এবং মার্কিন ডলার (USD) রাখতে পারবেন। এটি আপনাকে কোন প্রকার ঝামেলা ছাড়াই বিদেশে যেকোনো মুদ্রা বিনিময় বা লেনদেন করতে সহায়তা করে থাকে।
ডুয়েল কারেন্সি কার্ডের সুবিধাসমূহ
১. মুদ্রা বিনিময় ফি সাশ্রয়ের ক্ষেত্রে
একটি ডুয়েল কারেন্সি কার্ড ব্যবহার করে আপনি মুদ্রা বিনিময়ের সময় সাধারণত যে অতিরিক্ত ফি দিতে হয় তা থেকে রেহাই পাবেন। কেননা, আন্তর্জাতিক লেনদেনের সময় অনেক ব্যাংক এবং কার্ড প্রদানকারী সংস্থা অতিরিক্ত চার্জ করে। কিন্তু ডুয়েল কারেন্সি কার্ড ব্যবহার করলে আপনি অনায়াসে এই অতিরিক্ত খরচ থেকে বেঁচে যাবেন।
২. সহজ ও সুবিধাজনক লেনদেনের ক্ষেত্রে
ডুয়েল কারেন্সি কার্ড ব্যবহার করে আপনি বিদেশে সহজেই লেনদেন করতে পারবেন। বিদেশ ভ্রমনের সময় স্থানীয় মুদ্রা খুঁজে বের করার ঝামেলা কমবে, এবং আপনি সরাসরি আপনার কার্ড থেকে লেনদেন করতে পারবেন।
৩. নিরাপত্তার ক্ষেত্রে
ডুয়েল কারেন্সি কার্ডগুলো সাধারণত অত্যন্ত নিরাপদ। অনেক কার্ড প্রদানকারী সংস্থা এদের সাথে বিভিন্ন সিকিউরিটি ফিচার যেমন চিপ এবং পিন, ইএমভি টেকনোলজি এবং টু-ফ্যাক্টর অথেন্টিকেশন প্রদান করে। যার ফলে আপনার অর্থের নিরাপত্তার দিকটি থাকবে এক ধাপ এগিয়ে।
৪. অনলাইন শপিংয়ের ক্ষেত্রে বিশেষ সুবিধা
অনলাইন শপিংয়ের সময় ডুয়েল কারেন্সি কার্ড ব্যবহার করে আপনি সহজেই বিভিন্ন দেশের ওয়েবসাইট থেকে পণ্য কিনতে পারবেন। এতে আপনি মানি এক্সচেঞ্জের ঝামেলা ছাড়াই সরাসরি লেনদেন করতে পারবেন।
ডুয়েল কারেন্সি কার্ডের অসুবিধাসমূহ
১. বাৎসরিক ফি প্রদান করতে হবে
অনেক ডুয়েল কারেন্সি কার্ডে বাৎসরিক ফি নির্ধারণ করে থাকে। যা সাধারণ ডেবিট কিংবা ক্রেডিট কার্ডগুলির তুলনায় বেশি হয়ে থাকে। ফলশ্রুতিতে এই ফি কখনও কখনও ব্যবহারকারীর জন্য বোঝা হয়ে দাঁড়ায়।
২. সর্বত্র গ্রহণযোগ্য নয়
যদিও ডুয়েল কারেন্সি কার্ডগুলো অনেক স্থানে গ্রহণযোগ্য, তবে কিছু কিছু দেশে বা স্থানে এগুলি গ্রহণ করা হয় না। তাই আপনাকে ভ্রমণের আগে আপনার গন্তব্যস্থলে এই কার্ড গ্রহণযোগ্য কিনা তা নিশ্চিত করে নিতে হবে।
৩. কারেন্সি রূপান্তরের ঝামেলা
কখনও কখনও ডুয়েল কারেন্সি কার্ডে দুটি মুদ্রার মধ্যে রূপান্তর করতে কিছু সময় লাগে। ফলে, জরুরি লেনদেনের সময় এটি অসুবিধার কারণ হয়ে দাঁড়ায়।
ডুয়েল কারেন্সি কার্ড ব্যবহারের সঠিক নিয়ম
এতক্ষনে হয়তো জানতে পেরেছেন ডুয়েল কারেন্সি কার্ড কি। এখন প্রশ্ন হলো, কিভাবে ডুয়েল কারেন্সি কার্ড ব্যবহার করবেন? আপনার সুবিধার্থে নিচে কিছু বিষয় তুলে ধরা দেওয়া হলো যেগুলোকে অনুসরণ করে আপনি সঠিক নিয়মে কার্ডটি ব্যবহার করতে পারবেন। যদি আপনার কার্ড না থাকে তবে প্রথমে আবেদন করতে হবে। এরপর কার্ডটি আক্টিভ করতে হবে।
১. কার্ডের জন্য আবেদন
ডুয়েল কারেন্সি কার্ড পেতে প্রথমে আপনাকে একটি ব্যাংক বা আর্থিক প্রতিষ্ঠানে আবেদন করতে হবে। এক্ষেত্রে আপনি সরাসরি ব্যাংকের শাখায় গিয়ে অথবা অনলাইনে আবেদন করতে পারবেন।
২. কার্ড সক্রিয়করণ
কার্ড পাওয়ার পর, প্রথমে আপনাকে এটি সক্রিয় করতে হবে। সাধারণত, ব্যাংক থেকে একটি মেসেজ বা ইমেইল পাঠানো হয় যেখানে সক্রিয়করণের প্রক্রিয়া উল্লেখ থাকে। এটি সম্পন্ন করার পর আপনি আপনার ডুয়েল কারেন্সি কার্ড ব্যবহার শুরু করতে পারবেন।
৩. পিন সেট করা
কার্ড অ্যাক্টিভেশনের পর আপনার ব্যক্তিগত পিন নম্বর সেট করুন। এটি কার্ডের নিরাপত্তা নিশ্চিত করে।
৪. ব্যবহারকারীর নীতি ও শর্তাবলী
ব্যাংকের দ্বারা প্রদত্ত ব্যবহারকারীর নীতি ও শর্তাবলী মনোযোগ দিয়ে পড়ুন। এতে কার্ড ব্যবহারের বিভিন্ন নিয়ম ও নির্দেশনা দেওয়া থাকে।
৫. লেনদেন যাচাই করা
প্রতিবার কার্ড ব্যবহার করার পর লেনদেনের রিসিট বা এসএমএস নোটিফিকেশন যাচাই করুন। এতে আপনি নিশ্চিত হতে পারবেন যে সঠিক মুদ্রায় সঠিক পরিমাণ অর্থ কেটে নেওয়া হয়েছে কিনা।
৬. কার্ডে ফান্ড লোড
ডুয়েল কারেন্সি কার্ডে টাকা যোগ করার জন্য আগে আপনার ব্যাংক অ্যাকাউন্ট থেকে টাকা ট্রান্সফার করতে হবে। আবার, আপনি অনলাইন ব্যাংকিং, মোবাইল ব্যাংকিং বা সরাসরি ব্যাংকের শাখা থেকে এই রিচার্জ করতে পারেন।
৭. সতর্কতা ও নিরাপত্তা
কার্ডটি সবসময় নিরাপদ স্থানে রাখুন। কার্ড নম্বর বা পিন নম্বর কারও সাথে শেয়ার করবেন না। কোনো সমস্যা হলে দ্রুত ব্যাংকে যোগাযোগ করুন।
৮. কনভার্সন রেট চেক করা
বিদেশে কেনাকাটা বা লেনদেনের সময় মুদ্রার কনভার্সন রেট প্রতিনিয়ত চেক করুন। নইলে আপনি অচিরেই বিপদে পরতে পারেন। কেননা, কিছু ক্ষেত্রে ব্যাংক একটি অতিরিক্ত ফি ধার্য করে।
৯. অনলাইন লেনদেন
অনলাইন লেনদেনের সময় নির্দিষ্ট ওয়েবসাইটে অর্থাৎ, শুধুমাত্র নির্ভরযোগ্য ও নিরাপদ পোর্টালে কার্ড ব্যবহার করুন।
১০. কার্ড ব্যালেন্স চেক
নিয়মিতভাবে কার্ডের ব্যালেন্স চেক করুন। ব্যাংকের মোবাইল অ্যাপ বা অনলাইন পোর্টাল ব্যবহার করে আপনি এটি করতে পারেন।
১১. বিদেশে লেনদেন
বিদেশে ভ্রমণের সময়, কার্ড ব্যবহার করে স্থানীয় মুদ্রায় লেনদেন করতে পারবেন। তবে এটি করতে গেলে আপনাকে কার্ডটি ব্যবহার করার সময় সতর্ক থাকতে হবে যেন আপনার লেনদেন আপনার পছন্দের মুদ্রায় সম্পন্ন হয়।
বাংলাদেশে জনপ্রিয় কিছু ডুয়েল কারেন্সি কার্ড
১. স্ট্যান্ডার্ড চার্টার্ড ডুয়েল কারেন্সি কার্ড
স্ট্যান্ডার্ড চার্টার্ড ব্যাংক তাদের গ্রাহকদের জন্য একটি উন্নত মানের ডুয়েল কারেন্সি কার্ড প্রদান করে থাকেন। যা বিশেষ করে আন্তর্জাতিক ভ্রমণকারীদের জন্য তৈরি করা হয়েছে।
২. সিটি ব্যাংক ডুয়েল কারেন্সি কার্ড
সিটি ব্যাংক তাদের গ্রাহকদের জন্য একটি ডুয়েল কারেন্সি ক্রেডিট কার্ড প্রদান করে থাকেন। যেটির সাথে অতিরিক্ত কিছু সুবিধা থাকে যেমন: কেনাকাটায় বিভিন্ন অফার বা ডিসকাউন্ট পাওয়া, রিওয়ার্ডস পয়েন্ট আয় করা ইত্যাদি।
৩. এইচএসবিসি ডুয়েল কারেন্সি কার্ড
এইচএসবিসি ব্যাংকও ডুয়েল কারেন্সি কার্ড প্রদান করে থাকে। যা তাদের গ্রাহকদের আন্তর্জাতিক লেনদেনের ক্ষেত্রে বিশেষ সুযোগ সুবিধা প্রদান করে থাকে।
সর্বপরি বলা যায়, আন্তর্জাতিক লেনদেন এবং ভ্রমণের সময় মুদ্রা রূপান্তর ফি (Money Exchange Fee) এবং অন্যান্য ঝামেলা থেকে আপনাকে মুক্তি দিতে পারে একটি ডুয়েল কারেন্সি কার্ড। এটি একটি অত্যন্ত সুবিধাজনক আর্থিক পণ্য। তবে, এটি ব্যবহার করার আগে এর খরচ এবং সীমাবদ্ধতাগুলো বিবেচনা করে দেখুন। সঠিক এবং পরিকল্পনা অনুযায়ী ডুয়েল কারেন্সি কার্ডের ব্যবহার আপনার আর্থিক জীবনকে অনেক সহজ করে তুলতে পারে। আশা করি, ডুয়েল কারেন্সি কার্ড কি, এর সুবিধা অসুবিধা, ব্যবহার ইত্যাদি সম্পর্কে সুস্পষ্ট ধারণা দিতে পেরেছি।