তথ্য-প্রযুক্তি প্রতিনিয়ত আপডেটের সাথে আমরা হয়েছি প্রযুক্তি নির্ভর। তাই ডিজিটাল পরিবেশের নিরাপত্তা বা সুরক্ষার প্রতিও সচেতন হওয়া জরুরি। ডিজিটাল পরিবেশের নিরাপত্তা বা সুরক্ষাকে সাইবার নিরাপত্তা বলে। আজকের ব্লগে সাইবার নিরাপত্তা কী? এটা কত ধরনের, গুরুত্ব সহ বিস্তারিত আলোচনা করা হবে।
সাইবার নিরাপত্তা কী?
সাইবার নিরাপত্তা হলো ডিজিটাল পরিবেশের নিরাপত্তা বা সুরক্ষা। সহজ ভাষায় বলা যায়, সাইবার নিরাপত্তা বলতে তথ্য প্রযুক্তি ব্যবহারকারীদের ও ডিভাইসগুলোকে অনলাইন হুমকি থেকে রক্ষা করার ব্যবস্থা বোঝায়। এটি বিভিন্ন ডিজিটাল সংস্থা, সফ্টওয়্যার উৎপাদক, ব্যক্তি এবং সরকারী সংস্থাগুলোর জন্য গুরুত্বপূর্ণ। এর মূল লক্ষ্য হলো অনুকূল এবং নিরাপদ ডিজিটাল পরিবেশ সংরক্ষণ করা।
Cyber Security-এর ধরণ
বিভিন্ন ধরণের Cyber Security রয়েছে। যেমন:
১। নেটওয়ার্ক সিকিউরিটি
নেটওয়ার্কের প্রতিরক্ষা যেন অনুকূল এবং নিরাপদ থাকে। এটি ভাইরাস, ম্যালওয়্যার, ফিশিং, ডস অ্যাট্যাক, সাইবার স্পাইনিং, ম্যান-ইন-দ্য-মিডল (MITM) হামলা ইত্যাদি থেকে নেটওয়ার্ক রক্ষা করে।
২। ডেটা সিকিউরিটি
গোপনীয়তা এবং নিরাপত্তা সংরক্ষণের জন্য ডেটা নিরাপত্তা গুরুত্বপূর্ণ। ডেটা এনক্রিপশন, অনুমতি নিয়ন্ত্রণ, এক্সেস নিয়ন্ত্রণ, এবং অন্যান্য পদক্ষেপ নেওয়া হয় ডেটা সিকিউরিটি সংরক্ষণের জন্য।
৩। আইডেন্টিটি ম্যানেজমেন্ট
এটি ব্যবহারকারীর আইডেন্টিটি নিরাপত্তা সংরক্ষণের জন্য দায়িত্বশীল। এটি ইউজার আইডেন্টিটি ম্যানেজমেন্ট, একই ইউজারের বিভিন্ন অ্যাক্সেস নিয়ন্ত্রণ, ওয়েব অথেনটিকেশন, এবং বিভিন্ন সেন্সিটিভ তথ্যের ব্যবহার নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে।
৪। সিস্টেম সিকিউরিটি
অপারেটিং সিস্টেম এবং সফ্টওয়্যার নিরাপত্তা সংরক্ষণের জন্য প্রযুক্তি ব্যবহার করা হয়। এটি ভ্যানারেবিলিটি ম্যানেজমেন্ট, প্যাচ এবং সফটওয়্যার আপডেট, অ্যান্টিভাইরাস সফটওয়্যার, ফায়ারওয়্যাল, ইনট্রাশন ডিটেকশন সিস্টেম, ইভেন্ট লগিং এবং মনিটরিং সহ বিভিন্ন পদক্ষেপ ধরে রাখে।
সাইবার নিরাপত্তা ঝুঁকি গুলো কি কি?
Cyber Security হুমকিগুলোর মধ্যে থাকতে পারে-
- ম্যালওয়্যারঃ ভাইরাস, ট্রোজান, ওয়ার্ম, র্যানসমওয়্যার ইত্যাদি।
- হ্যাকিংঃ অননুমোদিতভাবে ডেটা বা সিস্টেম অ্যাক্সেস।
- ফিশিংঃ ব্যক্তিগত তথ্য চুরি করার জন্য তৈরি করা নকল ওয়েবসাইট বা ইমেইল।
- ডেনিয়াল-অফ-সার্ভিস আক্রমণ: ওয়েবসাইট বা সিস্টেম বন্ধ করে দেওয়ার জন্য ডিজাইন করা আক্রমণ।
- সামাজিক প্রকৌশলঃ লোকেদের প্রতারিত করে তাদের ব্যক্তিগত তথ্য বা ডিভাইস অ্যাক্সেস করার জন্য তৈরি করা কৌশল।
- সাইবার বুলিংঃ ইন্টারনেট কিংবা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে কাউকে উদ্দেশ করে কটূক্তি করা বা কাউকে মানহানিকর মন্তব্য করে হেয় প্রতিপন্ন করাকেই সাইবার বুুলিং বলা হয়। তেমনিভাবে কারো ছবি বা ভিডিও চিত্র বিকৃত ও মানহানিকরভাবে উপস্থাপন করাকেও সাইবার বুলিং বলা হয়।
সাইবার নিরাপত্তার গুরুত্ব
ব্যক্তি, ব্যবসা এবং সরকার সবার জন্যই গুরুত্বপূর্ণ নিরাপদ সাইবার জগৎ। নিচে সাইবার নিরাপত্তার গুরুত্ব উল্লেখ করা হল-
- ব্যক্তিগত তথ্য রক্ষাঃ নাম, ঠিকানা, ক্রেডিট কার্ড নম্বর ইত্যাদি।
- আর্থিক ক্ষতি রোধঃ ডেটা চুরি, সিস্টেম বন্ধ করে দেওয়া ইত্যাদির মাধ্যমে।
- গোপনীয়তা রক্ষাঃ ইন্টারনেটে ব্যবহারকারীর কার্যকলাপ ট্র্যাক করা।
- জাতীয় নিরাপত্তা রক্ষাঃ সাইবার হামলার মাধ্যমে গুরুত্বপূর্ণ অবকাঠামো বন্ধ করে দেওয়া।
সাইবার ওয়ার্ল্ডে নিরাপদ থাকার উপায়
কিছু সাধারণ Cyber Security স্টেপ ফলো করলেই আপনি নিরাপদ থাকতে পারবেন। যেমনঃ
- শক্তিশালী পাসওয়ার্ড ব্যবহারঃ অন্তত 12 অক্ষর দীর্ঘ, বড় ও ছোট হাতের অক্ষর, সংখ্যা এবং প্রতীক ব্যবহার করুন।
- সফ্টওয়্যার আপ টু ডেট রাখুনঃ অপারেটিং সিস্টেম, ওয়েব ব্রাউজার এবং অন্যান্য অ্যাপ্লিকেশনগুলোর জন্য নতুনতম আপডেট ইনস্টল করুন।
- এন্টিভাইরাস এবং অ্যান্টি-ম্যালওয়্যার সফ্টওয়্যার ব্যবহার করুনঃ আপনার ডিভাইস স্ক্যান করুন এবং ম্যালওয়্যার থেকে রক্ষা করুন।
- সাবধানে ইন্টারনেট ব্যবহার করুনঃ অপরিচিত ওয়েবসাইট থেকে ফাইল ডাউনলোড করবেন না। অপরিচিত ওয়েবসাইটে ক্লিক করবেন না এবং অপরিচিত ব্যক্তিদের সাথে ব্যক্তিগত তথ্য শেয়ার করবেন না।
- সন্দেহজনক লিংকঃ সন্দেহজনক লিংকে ক্লিক না করা। লিংকটি প্রয়োজনীয় বা জরুরই হলে ঐ লিংকে ঢোকার আগে যাচায় করে দেখা। লিংকটি যদি নিরাপদ না হয় তবে তাতে ভুল করেও ক্লিক করা যাবে না। (সিকিউর লিংক চেনার উপায়)
- সচেতন থাকুনঃ নতুন সাইবার হুমকি সম্পর্কে জানুন এবং নিজেকে রক্ষা করার জন্য পদক্ষেপ নিন।
সর্বপরি একটা কথায় বলবো, সচেতনতার কোন বিকল্প নেই। একমাত্র এটাই পারে অনেকাংশে সাইবার ক্রাইম কমিয়ে দিতে। এবং আপনার সাইবার জগতকে সিকিউর রাখতে। আর সমস্যায় পড়লে মুখ বুজে সহ্য করবেন না। আইন প্রয়োগকারী সংস্থার সরণাপন্ন হোন।