অন্যান্য

পবিত্র মাহে রমজান এর পূর্ব প্রস্তুতি কিভাবে নিবেন

মুসলমানদের জন্য সবচেয়ে পবিত্র মাস রমজান। রমজান মাস রহমত, মাগফিরাত ও নাজাতের মাস। রমজান হলো সারা বছরের আমলের ঘাটতি পূরণের মাস। শাবান মাস শেষের দিকে, রমজান মাস দরজায় কড়া নাড়ছে। একজন মুমিনের জন্য প্রস্তুতি শুরু করার সময় এখনই। রমজান কেবল ভোজ, পণ্য মজুত বা ব্যবসা-বাণিজ্যের মাস নয়, বরং এটি কোরআন নাজিলের মাস, সংযম, ত্যাগ, ইবাদত-বন্দেগি, আল্লাহর রহমত, বরকত, মাগফেরাত, নাজাত ও যাবতীয় কল্যাণ লাভের মাস। তাই এ মাসের আগমনের আগে একজন মুমিনের কিছু বিশেষ প্রস্তুতি নেওয়া উচিত।

প্রস্তুতির ক্ষেত্রগুলো হলঃ

  • আধ্যাত্মিক প্রস্তুতি,
  • শারীরিক প্রস্তুতি,
  • সামাজিক প্রস্তুতি।
Contents hide

রমজান এর পূর্বে আধ্যাত্মিক প্রস্তুতি মূলক কাজঃ

 মাহে রমজান প্রাপ্তির দোয়া করতে হবে।

রমজান প্রাপ্তির দোয়াঃ
اَللَّهُمَّ بَارِكْ لَنَا فِىْ رَجَبَ وَ شَعْبَانَ وَ بَلِّغْنَا رَمَضَانَ
উচ্চারণ : ‘আল্লাহুম্মা বারিকলানা ফি রজাবা ওয়া শাবানা ওয়া বাল্লিগনা রমাদান’।

অর্থ : ‘হে আল্লাহ! আপনি রজব ও শাবান মাসকে আমাদের জন্য বরকতময় করুন এবং আমাদেরকে রমজান মাস পর্যন্ত (হায়াত দিন) পৌঁছে দিন’। (তাবারানি:৩৯৩৯; বাইহাকি:৩৫৩৪)

তাওবা ও ইস্তেগফার:

রমজানের আগে সকল গুনাহ থেকে তওবাহ ও ইস্তেগফারের মাধ্যমে নিজেকে পবিত্র করে নেওয়া একজন মুমিনের কর্তব্য। কারণ রমজানের পূর্ণ ফায়েজ ও বরকত লাভের জন্য আত্মিক পরিশুদ্ধি অপরিহার্য। তাওবাহ ও ইস্তেগফারের পাশাপাশি ভবিষ্যতে পুনরায় গুনাহ না করার দৃঢ় প্রতিজ্ঞা করতে হবে। তাওবাহ ও ইস্তেগফারের জন্য বান্দা বেশি বেশি পড়বে-

 اَللَّهُمَّ اغْفِرْلِىْ 

উচ্চারণ : আল্লাহুম্মাগফিরলি

অর্থ : হে আল্লাহ! আমাকে ক্ষমা করে দিন।

আল্লাহ তা’আলা ইরশাদ করেন, ‘তোমরা তোমাদের পালনকর্তার ক্ষমার দিকে ছুটে যাও।’ (সুরা আলে ইমরান, আয়াত : ১৩৩)

আমল কবুলের দোয়া করাঃ

ইবাদাত – আমল কবুলের দোয়া [২:১২৭-১২৮]

رَبَّنَا تَقَبَّلۡ مِنَّا ‌ؕاِنَّكَ اَنۡتَ السَّمِيۡعُ الۡعَلِيۡمُ

উচ্চারণ : ‘রব্বানা তাকাব্বাল মিন্না ইন্নাকা আংতাস সামিউল আলিম।’ (সুরা বাকারা, আয়াত : ১২৭)

অর্থ : হে আমাদের প্রতিপালক! আমাদের পক্ষ থেকে (আমল) গ্রহণ করুন, নিশ্চয়ই তুমি সর্বশ্রোতা ও সর্বজ্ঞাতা।

রমজানের আগমনে আনন্দিত হওয়াঃ

মুমিন বান্দামাত্রই আনন্দ প্রকাশ করে থাকেন। আর আনন্দিত হওয়াই যুক্তিসঙ্গত। রাসুলে করিম (স.) নিজেও অতিশয় আনন্দিত হতেন এবং বিভিন্ন সময়ে রহমত-বরকত ও কল্যাণ বর্ষণ এবং অবতরণের উপলক্ষ ও অনুষঙ্গগুলোর কারণে ব্যাকুল হতেন। সাহাবিদের বলতেন, “তোমাদের দ্বারে বরকতময় মাস রমজান এসেছে। (নাসায়ি: ২১০৬)

রমজানের ফজিলত ও মর্যাদা সম্পর্কে জ্ঞান অর্জন:

রমজানের ফজিলত ও মর্যাদা সম্পর্কে কুরআন, হাদিস এবং আলোচনা-সমালোচনা থেকে জ্ঞান অর্জন করা।

  • নিয়ত স্থির করা: রমজান মাসকে পূর্ণভাবে কাজে লাগানোর জন্য দৃঢ় নিয়ত স্থির করা।
  • রোজার নিয়ম-কানুন শেখা: রোজার নিয়ম-কানুন সম্পর্কে ভালোভাবে জেনে নেওয়া।

কাজা ওয়াজিব রোজা থেকে নিজেকে মুক্ত করা:

রমজান শুরু হওয়ার আগে বিগত জীবনে অসুস্থ হওয়ার কারণে বা সফরের কারণে রমজানের ফরজ রোজা কাজা হয়ে থাকলে তা যথাযথভাবে আদায় করে নেওয়া। বিশেষ করে মা-বোনদের ভাঙতি রোজা থাকতে পারে। তাই রমজানের আগে শাবান মাসের এ সময়ে কাজ রোজা আদায় করে নেওয়া।

আবু সালামাহ্‌ হতে বর্ণিত আছে যে, তিনি বলেন আমি আয়েশা  রাদিয়াল্লাহু আনহাকে বলতে শুনেছি যে, তিনি বলেন:

كَانَ يَكُونُ عَلَيَّ الصَّوْمُ مِنْ رَمَضَانَ فَمَا أَسْتَطِيعُ أَنْ أَقْضِيَهُ إِلا فِي شَعْبَانَ    رواه البخاري ( 1849 ) ومسلم ( 1146 )

আমার উপর বিগত রমজানের রোজা বাকি থাকলে শাবান মাসে ছাড়া আমি তা আদায় করতে পারতাম না।[ইমাম বুখারী (১৮৪৯) ও ইমাম মুসলিম (১১৪৬)]

হাফেয ইবনে হাজার রাহিমাহুল্লাহ বলেন: “আয়েশা (রাঃ) এর শাবান মাসে কাযা রোজা আদায় পালনে সচেষ্ট হওয়া থেকে বিধান গ্রহণ করা যায় যে, রমজানের কাযা রোজা পরবর্তী রমজান আসার আগেই আদায় করে নিতে হবে।” [ফাতহুল বারী (৪/১৯১)]

রোজার হুকুম-আহকাম জানাঃ

রমজান মাস আসার আগে রোজা পালনের মাসআলা-মাসায়েল তথা নিয়ম-কানুনগুলো ভালোভাবে জেনে নেওয়া জরুরি। আর তাতে রমজানের রোজা নষ্ট হওয়া থেকে বা মাকরূহ হওয়া থাকে বা অন্যান্য বিষয়গুলো জেনে নেওয়ার সর্বাত্মক চেষ্টা করা।

শাবান মাসে রোজা রেখে প্রস্তুতি নেওয়াঃ

রমজানের রোজার জন্য অভ্যাস গড়ে তোলার জন্য শাবান মাসে বেশি বেশি নফল রোজা রাখা উচিত। হজরত আয়েশা (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ (সা.) শাবান মাসের পূর্ণ মাসই রোজা রাখতেন (সুনানে তিরমিজি)।

শারীরিক প্রস্তুতিঃ

  • স্বাস্থ্য পরীক্ষা: রমজানের আগে একটি সম্পূর্ণ স্বাস্থ্য পরীক্ষা করিয়ে নেওয়া।
  • রুটিন পরিবর্তন: রমজানের রুটিনের সাথে মানিয়ে নেওয়ার জন্য ঘুম, খাওয়া-দাওয়া,কাজ ইত্যাদির রুটিন আগে থেকে পরিবর্তন করা।
  • ব্যায়াম-কষরত: রমজানে দীর্ঘ সময় রোজা রাখার জন্য শারীরিকভাবে প্রস্তুত থাকা।

সামাজিক প্রস্তুতি:

  • পার্শ্ববর্তীদের সাহায্য: রমজানে অভাবী ও দুস্থদের সাহায্য করার জন্য প্রস্তুতি নেওয়া।
  • সম্প্রীতি বৃদ্ধি: সম্প্রীতি ও সৌহার্দ্যপূর্ণ পরিবেশ তৈরি করা।
  • খারাপ অভ্যাস ত্যাগ: মিথ্যা বলা, গীবত করা, পরনিন্দা করা ইত্যাদি খারাপ অভ্যাস ত্যাগ করা।

রমজানের প্রস্তুতি আসলেই একজন মুমিনের ঈমান ও আখিরাতের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। আগে থেকে প্রস্তুতি নেওয়ার মাধ্যমে আমরা রমজানের পূর্ণ সুফল লাভ করতে পারবো।

আরও পড়ুনঃ সেরা ১০ ক্যাটাগরির ইসলামি বই বদলে দেবে আপনার জীবন

আরও কিছু প্রশ্নোত্তর

প্রশ্নঃ কাজা রোজা কখন রাখতে হবে?

উত্তরঃ মাজহাবের সব আলেমের সর্বসম্মত মত অনুসারে, রমজানের পর থেকে শুরু করে পরের রমজান আসার আগ পর্যন্ত যেকোনো সময় কাজা রোজা রাখা যাবে। আয়েশা (রা.) সাংসারিক ব্যস্ততার কারণে একদম শাবান মাসে গিয়ে বিগত রমজানের কাজা রোজা রেখেছেন এমন বর্ণনা আছে হাদিসে। (বুখারি ও মুসলিম)

প্রশ্নঃ রোজা ফরজ হওয়ার শর্ত কয়টি?

উত্তরঃ রোজা ফরজ হওয়ার শর্ত ৬টি। শর্তগুলো-

১. মুসলিম হওয়া।

২. প্রাপ্ত বয়স্ক হওয়া। অপ্রাপ্ত বয়স্ক ছেলে-মেয়ের ওপর রোজা ফরজ নয়।

৩. জ্ঞান সম্পন্ন হওয়া। অর্থাৎ মস্তিষ্ক বিকৃত (পাগল) কারো ওপর রোজা ফরজ নয়।

৪. হায়েয তথা ঋতুকাল এবং নেফাস তথা সন্তান জন্মদান পরবর্তী সময়ে পবিত্র থাকা। মহিলাদের হায়েজ ও নেফাসের সময়ে রোজা রাখা যাবে না। হায়েজ-নেফাসের কারণে যে কয়টা রোজা ভঙ্গ হবে, তা পরবর্তীতে কাজা করে নিতে হবে।

৫. রোজা পালন সামর্থবান হওয়া।

৬. মুসাফির না হওয়া। কারণ, মুসাফিরের জন্য রোজা ফরজ নয়। পরবর্তীতে কাজা করে নিতে হবে।

যারা রোজা পালনের শর্তগুলোর আওতায় থাকবে, তাদের জন্য রোজা পালন করা আবশ্যক।

প্রশ্নঃ রোজা কত প্রকার?

উত্তরঃ ইসলামের বিধি অনুযায়ী রোজা ৪ প্রকার। যেমন : ১. ফরজ, ২. ওয়াজিব ৩. সুন্নত ৪.নফল।

ফরজ রোজা : রমজানের রোজা ফরজ।

ওয়াজিব রোজা : মানত ও কাফ্ফারার রোজা ওয়াজিব।

সুন্নত রোজা : নবী করীম সা: নিজে যে রোজা পালন করেছেন এবং উম্মতকেও পালন করতে বলেছেন, সেটাই সুন্নত রোজা। এর মধ্যে রয়েছে- ১. আশুরার রোজা, মহররম মাসের ৯ ও ১০ তারিখ ২. আরাফার দিনের রোজা, ৩. আইয়্যামে বীজের রোজা। অর্থাৎ, প্রত্যেক চন্দ্র মাসের ১৩, ১৪ ও ১৫ তারিখের রোজ।

নফল রোজা : উপরোক্ত তিন প্রকার বাদে বাকি সব ইতিবাচক রোজাই নফল রোজা। যেমনঃ শাওয়াল মাসের ছয়টি ও অন্যান্য রোজা।

প্রশ্নঃ বছরের কয়দিন রোজা রাখা নিষিদ্ধ?

উত্তরঃ বছরের পাঁচ দিন রোজা পালন করা হারাম। ১. ঈদুল ফিতরের দিন, ২. ঈদুল আজহার দিন, ৩. আইয়্যামে তাশরিকের দিনসমূহ অর্থাৎ ১১, ১২, ১৩ জিলহজ।

প্রশ্নঃ মাকরুহ রোজা কী?

উত্তরঃ মাকরুহ অর্থ অপছন্দনীয়। যেসব কাজ করলে গুনাহ হয় না, তবে ইসলামে অপছন্দ করা হয়েছে সেগুলোকে মাকরুহ বলে। শুধু শনিবার কিংবা রোববার রোজা পালন করা মাকরুহ। আশুরার দিনে শুধু একটি রোজা মাকরুহ। স্বামীর অনুমতি ছাড়া নারীর নফল রোজা মাকরুহ।

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button
error: Content is protected !!