শিক্ষা

ক্ষতিকর সফটওয়্যার কী? ম্যালওয়্যার কিভাবে প্রবেশ করে?

ক্ষতিকর সফটওয়্যার ডিভাইসের জন্য হুমকি। এটি আমাদের ডিভাইস এবং ডিভাইসের তথ্য কে নষ্ট করতে পারে। আমাদের অসতর্কতার কারণেই ম্যালওয়্যার আমাদের ডিভাইসে ঢুকতে পারে। ক্ষতিকারক সফটওয়্যার থেকে রক্ষা পেতে কিছু পদক্ষেপ গ্রহণ করা জরুরি। আজকের ব্লগে ক্ষতিকর সফটওয়্যার বা ম্যালওয়্যার নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করা হবে।

ক্ষতিকর সফটওয়্যার কী?

ক্ষতিকর সফটওয়্যার এমন এক ধরনের প্রোগ্রাম বা সফটওয়্যার, যা ডিভাইসের অন্যান্য সফটওয়্যার বা ডিভাইসের ক্ষতিসাধন করে। ক্ষতিকর সফটওয়্যারকে ‘Malicious Software’ বলে। Malicious Software এর সংক্ষিপ্ত রূপ ম্যালওয়্যার (Malware)। কয়েকটি ক্ষতিকর সফটওয়্যারের নাম হলো– কম্পিউটার ভাইরাস, ওয়ার্ম, ট্রোজান হর্স, রুটকিটস, স্পাইওয়্যার, র‌্যানসমওয়্যার ইত্যাদি।

যেসব কম্পিউটারে সিস্টেম সফটওয়্যার নিরাপত্তা ব্যবস্থায় ত্রুটি থাকে, সেসব ক্ষেত্রে ম্যালওয়্যার তৈরির সুযোগ সৃষ্টি হয়। কেবল নিরাপত্তা ত্রুটি নয়, ডিজাইনে ভুল থাকলেও ম্যালওয়্যার তৈরি করা সম্ভব। অনেক সময় ব্যবহারকারীর অজান্তে তার কম্পিউটারের মধ্যে প্রবেশাধিকার লাভ করে তথ্য চুরি করে। ম্যালওয়্যার প্রোগ্রামিং কোড, স্ক্রিপ্ট, সক্রিয় তথ্যাধার কিংবা অন্যান্য সফটওয়্যারের মতো প্রকাশিত হতে পারে। ইন্টারনেট বিকাশের ফলে ম্যালওয়্যার ব্যাপক আকারে ছড়িয়ে পড়ছে।

আরও পড়ুন-কম্পিউটার ভাইরাস প্রতিরোধের উপায়

কিছু ক্ষতিকর সফটওয়্যার 

বিভিন্ন ধরনের ক্ষতিকর সফটওয়্যার বা ম্যালওয়্যার আছে। নিম্নে কয়েকটি ক্ষতিকর সফটওয়্যার নিয়ে আলোচনা করা হল-

১। ভাইরাস

ভাইরাসগুলি এমন প্রোগ্রাম যা নিজেদের অনুলিপি তৈরি করে এবং অন্যান্য ফাইলগুলিতে ছড়িয়ে পড়ে। এগুলি আপনার কম্পিউটারের ফাইলগুলি মুছে ফেলতে পারে, আপনার ডেটা নষ্ট করতে পারে বা এমনকি আপনার অপারেটিং সিস্টেমকে ক্র্যাশ করতে পারে।

২। ওয়ার্ম

ওয়ার্মগুলি ভাইরাসের মতোই, তবে সেগুলি নিজেদের অনুলিপি তৈরি করতে নেটওয়ার্ক সংযোগ ব্যবহার করে। এগুলি আপনার নেটওয়ার্ক ব্যান্ডউইথ ব্যবহার করতে পারে এবং আপনার কম্পিউটারকে ধীর করে দিতে পারে।

৩। ট্রোজান হর্স

ট্রোজান হর্সগুলি এমন প্রোগ্রাম যা দুর্নীতিপূর্ণ উদ্দেশ্যে ডিজাইন করা হয়েছে তবে এগুলি বৈধ সফটওয়্যারের মতো দেখায়। একবার আপনি একটি ট্রোজান হর্স ইনস্টল করলে, এটি হ্যাকারদের আপনার কম্পিউটারে অ্যাক্সেস দিতে পারে, আপনার ডেটা চুরি করতে পারে বা অন্যান্য ম্যালওয়্যার ইনস্টল করতে পারে।

৪। স্পাইওয়্যার

স্পাইওয়্যার এমন সফটওয়্যার যা আপনার জ্ঞান বা সম্মতি ছাড়াই আপনার সম্পর্কে তথ্য সংগ্রহ করে। এটি আপনার ব্রাউজিং অভ্যাস, কীস্ট্রোক বা এমনকি আপনার পাসওয়ার্ড ট্র্যাক করতে ব্যবহার করা যেতে পারে।

৫। র‌্যানসমওয়্যার

র‌্যানসমওয়্যার এমন সফটওয়্যার যা আপনার ফাইলগুলি এনক্রিপ্ট করে এবং তারপরে সেগুলি ডিক্রিপ্ট করার জন্য মুক্তিপণের দাবি করে। এটি ব্যক্তি এবং ব্যবসার জন্য একটি গুরুতর হুমকি হতে পারে।

ম্যালওয়্যার যেসব ক্ষতি করে

ম্যালওয়্যার বা ক্ষতিকর সফটওয়্যার বিভিন্ন উপায়ে কম্পিউটারে ক্ষতি করতে পারে। এটি নিম্নলিখিত উপায়ে ক্ষতি করতে পারে:

১। ম্যালওয়্যার ব্যবহারকারীর ব্যক্তিগত তথ্য চুরি করতে পারে। যেমন ব্যক্তিগত তথ্য, ব্যাংকিং তথ্য, ইমেইল ইত্যাদি।

২। ম্যালওয়্যার ক্রাইপ্টোকারেন্সি মাইনিংয়ের জন্য কম্পিউটারের সংগ্রহকৃত সম্পদ এবং সাধারণ সিস্টেম সম্পূর্ণ অপব্যবহার করে সহযোগিতা করতে পারে।

৩। এটি কম্পিউটারের ফাইল ও ডেটা এনক্রিপ্ট করে এবং সেগুলির মুক্তিযোগ্যতা ফেরত দেওয়ার আগে মূল্য পরিশোধ করার জন্য ব্যবহারকারীর প্রতি অতিরিক্ত টাকা চায়।

৪। ম্যালওয়্যার কম্পিউটারের সিস্টেমের ফাইল বা মৌলিক অ্যাপ্লিকেশন ধ্বংস করতে পারে, যা সিস্টেমে আক্রমণ করে।

৫। ম্যালওয়্যার কম্পিউটারে নির্দিষ্ট অবস্থানে আক্রমণ করে এবং সেটির সম্পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ নিতে পারে।

৬। ম্যালওয়্যার সিস্টেমের সম্পূর্ণ পরিসর অস্থিতিশীল করতে পারে, যা সিস্টেমের কার্যক্ষমতা হ্রাস করে।

ম্যালওয়্যার যেভাবে প্রবেশ করে

ক্ষতিকারক সফটওয়্যার ডিভাইসে বিভিন্ন উপায়ে প্রবেশ করতে পারে। এর মধ্যে কিছু সাধারণ পদ্ধতি নিম্নরূপ:

১। অপরিচিত ব্যক্তি বা সন্দেহজনক উৎস থেকে ইমেইল ওপেন করা যাবে না।

২।  সন্দেহজনক লিঙ্ক ক্লিক করা যাবে না।

৩। কিছু পপ-আপ বিজ্ঞাপন ম্যালওয়্যার দিয়ে সংক্রামিত হতে পারে। তাই পপ-আপ বিজ্ঞাপন ক্লিক করা এড়িয়ে চলতে হবে।

৪। শুধুমাত্র বিশ্বস্ত উৎস থেকে ফাইল ডাউনলোড করুন এবং P2P নেটওয়ার্ক ব্যবহার করার সময় সতর্কতা অবলম্বন করুন।

৫। অপরিচিত উৎস থেকে USB ড্রাইভ ব্যবহার করা এড়িয়ে চলতে হবে।

৬। শক্তিশালী পাসওয়ার্ড ব্যবহার করতে হবে।

৭। সফটওয়্যারকে নিয়মিত আপডেট করতে হবে।

৮। কম্পিউটারে ফায়ারওয়াল রাখতে হবে।

ম্যালওয়্যার থেকে ডিভাইস রক্ষায় করণীয়

বর্তমান সময়ে ম্যালওয়্যার আসলেই একটি ভয়ের কারণ হিসেবে দাঁড়িয়েছে। বড় বড় টেক কোম্পানি থেকে শুরু করে ছোট ছোট কোম্পানিগুলো, এমনকি ব্যক্তিগতভাবে ব্যবহার করা কম্পিউটার, স্মার্টফোনগুলোও ম্যালওয়্যারের আক্রমণ থেকে রক্ষা পাচ্ছে না। তবে হ্যাঁ, আমরা সচেতন হলেই কোনো ম্যালওয়্যার বা হ্যাকার আমাদের ডিভাইস বা ডাটার কোনো ক্ষতি করতে পারবে না। নিম্নের পদক্ষেপ গুলো গ্রহণ করতে হবে-

  1. একটি ফায়ারওয়াল ব্যবহার করতে হবে।
  2. সফটওয়্যার আপডেটগুলি স্বয়ংক্রিয়ভাবে ইনস্টল করতে হবে।
  3. সন্দেহজনক ওয়েবসাইট এড়িয়ে চলুতে হবে।
  4. শুধুমাত্র বিশ্বস্ত উৎস থেকে সফ্টওয়্যার ডাউনলোড করতে হবে।
  5. আপনার পাসওয়ার্ড গোপন রাখতে হবে।
  6. একটি অ্যান্টি-ভাইরাস এবং অ্যান্টি-ম্যালওয়্যার স্ক্যানার দিয়ে কম্পিউটার স্ক্যান করতে হবে। যেকোনো ম্যালওয়্যার সনাক্ত করলে তা অপসারণ করতে হবে।

পরিশেষে

ক্ষতিকারক সফটওয়্যার বা ম্যালওয়্যার আমাদের ডিভাইস এবং ডিভাইসের তথ্য কে নষ্ট করতে পারে। আমাদের অসতর্কতার কারণেই ম্যালওয়্যার আমাদের ডিভাইসে ঢুকতে পারে। তাই আমাদের সতর্ক থাকতে হবে। ক্ষতিকারক সফটওয়্যার বা ম্যালওয়্যার নিয়ে কোন প্রশ্ন বা মন্তব্য থাকলে কমেন্ট করুন।

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button
error: Content is protected !!