কম্পিউটার ভাইরাস কি? ভাইরাস নিয়ে যত কথা!
আসসালামু আলাইকুম। আশা করি সবাই ভালো আছেন। আজ আমরা এমন একটি বিষয় নিয়ে আলোচনা করব যেটার দ্বারা অনেক কম্পিউটার ব্যবহারকারীই ক্ষতি গ্রস্ত হয়। অর্থাৎ, যেটা কম্পিউটারের নানান ধরনের ক্ষতি করে থাকে। হ্যাঁ, আজ আমরা কম্পিউটার ভাইরাস সম্পর্কে জানব। আমরা কম্পিউটার ভাইরাস কি? কিভাবে কম্পিউটার ভাইরাস কাজ করে? কেমন করে বুঝবেন আপনার কম্পিউটার ভাইরাস দ্বারা আক্রান্ত কি না? কোন ধরনের ভাইরাস দ্বারা আপনার কম্পিউটার আক্রান্ত হয়েছে? অর্থাৎ, কোন ভাইরাসে আক্রান্ত হলে কি কি লক্ষন দেখা দেয়, এসব বিষয় নিয়ে আলোচনা করা হবে আরকি। এছাড়াও কম্পিউটার ভাইরাসে আক্রান্ত হওয়ার পূর্বে কি করতে হবে? সে বিষয়েও স্পষ্ট ধারনা দেওয়া হবে। তাই আপনি যদি এসব বিষয়ে জানতে আগ্রহী হয়ে থাকেন তবে আর্টিকেলটি সম্পূর্ণ পরুন। আশা করি, আর্টিকেলটি পড়ে আপনার কিছুটা হলেও উপকার হবে। আর কথা না বাড়িয়ে চলুন শুরু করা যাক।
কম্পিউটার ভাইরাস কি?
কম্পিউটার ভাইরাস সম্পর্কে জানতে হলে প্রথমে কম্পিউটার প্রোগ্রামিং সম্পর্কে জানতে হবে। কম্পিউটার প্রগ্রামিং কি সেটা আমরা অনেকেই জানি। আপনি না জানলে বলে দিই, কম্পিউটার প্রোগ্রাম হলো কম্পিউটারকে দেওয়া বিভিন্ন ধরনের নির্দেশনা। অর্থাৎ, আমরা যে কম্পিউটারে কোন কিছু করার জন্য কম্পিউটারকে কমান্ড দিই এবং তারপর কম্পিউটার সে অনুযায়ী কাজ করে। এই প্রোসেসটা কিন্তু মটেও আপনা-আপনি হয় না। এর পেছনে অনেক জন প্রোগ্রামারের প্রচুর প্রোগ্রামিং করতে হয়েছে। প্রোগ্রামিং মূলত এক ধরনের ল্যাঙ্গুয়েজ। যেমনঃ Python, JavaScript, C++ ইত্যাদি। কম্পিউটার এই ল্যাঙ্গুয়েজ ছাড়া অন্য কোন ল্যাঙ্গুয়েজ বোঝেনা। এগুলো মুলত কোডিং এর মাধ্যমে করতে হয়। যাই হোক ঐ দিকে কথা না বাড়ায়। কেননা, প্রোগ্রামিং সম্পর্কে বিস্তারিতভাবে বলতে গেলে সম্পূর্ণ একটা আর্টিকেল লেগে যাবে, তবুও হয়তো পুরপুরি বলা শেষ হবে না। আশা করি কম্পিউটার প্রোগ্রামিং কি সেটা বুঝতে পেরেছেন।
এখন প্রশ্ন হলো, তাহলে কম্পিউটার ভাইরাস কি? Virus শব্দের পূর্ণরূপ হলো Vital Information Resources Under Seizes। প্রথমত কম্পিউটার ভাইরাস কম্পিউটারেরই এক ধরনের প্রোগ্রাম। তবে এগুলো ক্ষতিকারক প্রোগ্রামিং বা কোডিং এর মধ্যে অন্তর্ভুক্ত। অর্থাৎ, কম্পিউটারের বিভিন্ন ধরনের ক্ষতি সাধন করে এবং নিজে নিজেই ক্রমাগত বৃদ্ধির মাধ্যমে কম্পিউটারকে সংক্রমিত করে, এমন প্রোগ্রামিংকেই কম্পিউটার ভাইরাস বলে।
কম্পিউটার ভাইরাসের সংক্ষিপ্ত ইতিহাস
১৯৭১ সালে সর্বপ্রথম কম্পিউটারের জন্য এমন একধরনের প্রোগ্রাম তৈরি করা হয়, যেটি নিজেই নিজের প্রতিরূপ বা জেরক্সকপি তৈরি করতে সক্ষম ছিল। যার নাম দেওয়া হয়েছিল ‘The Creeper Program’। ‘বব থমাস’ নামক একজন ব্যাক্তি এই ভাইরাসটি মার্কিন যুক্ত রাষ্ট্রের BBN technologies প্রতিষ্ঠানের কর্তৃক পরিক্ষামূলক ভাবে তৈরি করেছিলেন। কিন্তু এটি কম্পিউটারের কোন ক্ষতি করত না। তারপর, ১৯৮৬ সালে পাকিস্তানের দুই ভাই ‘বাসিত এবং আমজাদ ফারুক আলভী’ মিলে ফ্লোপিডিক্সের জন্য The Brain Boot Sector Virus নামে একটি কোড তৈরি করে। যা সর্বপ্রথম কম্পিউটার ভাইরাস হিসেবে চিহ্নিত করা হয়। এটিই প্রথম সক্রিয় ভাইরাস ছিল। যাতে ছিল লুকানো কপিরাইট বার্তা। তবে প্রকৃতপক্ষে এটিও কম্পিউটারের ডাটার জন্য ক্ষতিকর ছিল না। কিন্তু এটিকেই কম্পিউটার ভাইরাসের ইতিহাসে প্রথম কম্পিউটার ভাইরাস বলে আখ্যায়িত করা হয়েছে। এরপর থেকেই কম্পিউটার ভাইরাস তৈরির যাত্রাপথের উন্মোচন ও প্রসারণ ঘটে।
কয়েকটি কম্পিউটার ভাইরাসের নামঃ
কম্পিউটারের জন্য এ জাবত অনেক ভাইরাসই তৈরি করা হয়েছে। এগুলো বিভিন্ন উদ্দেশ্য তৈরি করা হয়েছে। এমন কি এখন অবদি তৈরি করা হচ্ছেই। যাই হোক, কিছু জনপ্রিয় কম্পিউটার ভাইরাসের নাম জেনে আসা যাক। কিছু জনপ্রিয় ভাইরাসের নামসমূহ নিম্নরূপঃ
- The Creeper Program,
- The Rabbit Virus,
- The First Trojan,
- The Brain Boot Sector Virus,
- The Love Letter Virus,
- The Code Red Virus,
- Heartbleed, etc.
কম্পিউটার ভাইরাস কত প্রকার ও কি কি?
জীবের জন্য ক্ষতিকারক অনুজীব বা ভাইরাস গুলোর যেমন বিভিন্ন ভেরিয়েন্ট আছে। ঠিক তেমনি কম্পিউটার ভাইরাসেরও নানান ধরনের ভেরিয়েন্ট আছে। সত্যিকারের ভাইরাসের ক্ষেত্রে যেসব শর্ত প্রযোজ্য কম্পিউটার ভাইরাসের ক্ষেত্রেও সেগুলো প্রযোজ্য। যেমন জীবাণু বা ভাইরাস বিভিন্ন মাধ্যমে সুস্থ জীব দেহে প্রবেশ করে নিজেই নিজের বংশবৃদ্ধি ঘটিয়ে দেহে নানান ধরনের ক্ষতি সাধন করে। কম্পিউটার ভাইরাসও ঠিক তেমনি। ব্রাউজার, ওয়েবসাইট, পেন্ড্রাইভ ইত্যাদির মাধ্যমে ভালো কম্পিউটারে প্রবেশ করে কম্পিউটারের বিভিন্ন ধরনের ক্ষতি সাধন করে।
কম্পিউটারে বহু ধরনের ভাইরাস আছে। এগুলো ভাইরাস সাধারনত কত প্রকার সেটা নির্দিষ্ট করে বলা সম্ভব না। এসব ভাইরাসকে কেবল এদের উৎস, আক্রমন করার প্রক্রিয়া, ক্ষতি করার ধরন ইত্যাদির উপর ভিত্তি করে নানাভাবে ভাগ করা হয়। নিচে সেগুলো সংক্ষিপ্ত পরিসরে তুলে ধরা হলোঃ
1. বুট সেক্টর ভাইরাস (Boot sector virus)
প্রথমেই বলি বুট সেক্টর ভাইরাস নিয়ে। বুট সেক্টর ভাইরাস নাম শুনেই বোঝা যাচ্ছে এই ধরনের ভাইরাস কম্পিউটারে বুট করার সাথে সম্পর্কৃত, তাই না? হ্যাঁ, বুট সেক্টর ভাইরাস হলো এমন এক ধরনের ভাইরাস যা ফ্লপি ডিস্কের বুট সেক্টর বা হার্ডডিস্কের মাস্টার বুট রেকর্ড (MBR) কে সংক্রমিত করে। কিছু সংখ্যক আবার মাস্টার বুট রেকর্ডের পরিবর্তে হার্ডডিস্কের বুট সেক্টরকে সংক্রমিত করে। এটি আর একটি উপায়ে ছড়িয়ে পড়ে। তা হলো কম্পিউটারে সংক্রমিত USB ড্রাইভ প্রবেশ করানোর মাধ্যমে।
2. ওয়েব স্ক্রিপ্টিং ভাইরাস (Web scripting virus)
এই ধরনের ভাইরাস মূলত বিভিন্ন ধরনের ওয়েবসাইট বা ওয়েবব্রাউজারের মধ্যে থাকে। এরা কোন কম্পিউটারকে সংক্রমিত করার জন্য ওয়েব ব্রাউজার এবং ওয়েব পেজের কোড ব্যবহার করে। আপনার আমার মতো যেকোন কেউ যদি এই ধরনের একটি ওয়েবপেজে ভুল ক্রমেও প্রবেশ করে, ব্যাস! এতটুকুই যথেষ্ট কম্পিউটারে এই ধরনের ভাইরাস সংক্রমন ঘটানোর জন্য। এভাবে এই ধরনের ভাইরাস যে কারোর কম্পিউটারকে সংক্রমিত করতে পারে।
3. ব্রাউজার হাইজ্যাকার ভাইরাস (Browser hijacker)
এই ধরণের ভাইরাস ওয়েবব্রাউজারের কিছু নির্দিষ্ট ফাংশন হাইজ্যাক করে। যার ফলে আপনি আপনার অনিচ্ছাসত্বেও স্বয়ংক্রিয়ভাবে একটি ওয়েবসাইটে পরিচালিত হতে পারেন। অর্থাৎ, এই ভাইরাস আমাদের অনিচ্ছা সত্বেও তাদের ইচ্ছা মতো ওয়েবসাইটে আমাদেরকে নিয়ে যায় বা পরিচালনা করে।
4. রেসিডেন্ট ভাইরাস (Resident virus)
এই ভাইরাস কম্পিউটারে প্রবেশ করার পর সাথে সাথে কম্পিউটারকে আক্রমন করে না। বরং এটি এর সুবিধা অনুযায়ী যেকোন সময় কার্যকর হয়ে উঠে। অর্থাৎ, এটি কম্পিউটারে প্রবেশ করলেও তাৎক্ষনাৎ নিস্ক্রিয় থেকে সুযোগ বুঝে সক্রিয় হয়ে ওঠে।
5. ডাইরেক্ট অ্যাকশন ভাইরাস (Direct action virus)
ডাইরেক্ট অ্যাকশন ভাইরাস তখনি সক্রিয় হয়ে ওঠে যখন ভাইরাস-ধারনকারি ফাইল চালু বা ব্যবহার করা হয়। নতুবা এটিও সুপ্তাবস্থাতেই থাকে যায়।
6. পলিমর্ফিক ভাইরাস (Polymorphic virus)
পলিমর্ফিক ভাইরাস একটু অন্যরকম ভাইরাস। কারন, এটি ক্রমাগত নিজের কোড পরিবর্তন করতে থাকে। এর পেছনের কারন হলো অ্যান্টি ভাইরাস প্রোগ্রামগুলো সকল ধরনের কার্যক্রম এড়ানো। এতে করে সকল অ্যান্টি ভাইরাস একে রোধ করতে পারে না। এই কারনবসতই এটি একটু বেশি ক্ষতিকারক ভাইরাস।
7. ফাইল ইনফেক্টেড ভাইরাস (File infector virus)
এটি একপ্রকার সাধারণ ভাইরাস। এটি একটি নির্দিষ্ট সিস্টেম ফাংশন বা অপারেশন করার জন্য এক্সিকিউটেবল (.EXE) ফাইলগুলিতে দূষিত কোড ঢোকায়। এক্সিকিউটেবল ফাইল হলো এমন এক ধরনের ফাইল যা কম্পিউটারে বিভিন্ন ফাংশন বা অপারেশন করতে ব্যবহৃত হয়। যেমনঃ .BAT, .COM, .EXE, and .BIN ইত্যাদি এ্যাক্সটেনশন যুক্ত ফাইল এক্সিকিউটেবল ফাইল এর উদাহরণ।
8. মাল্টিপার্টিট ভাইরাস (Multipartite virus)
এই ধরণের ভাইরাস একাধিক উপায়ে কম্পিউটারকে সংক্রমিত করতে সক্ষম। অনেকগুলো উপায়ে এটি ছড়িয়ে পড়তে খুব পটু। এটি একাধারে প্রোগ্রাম ফাইল এবং সিস্টেম সেক্টর উভয়কেই সংক্রমিত করতে পারে।
9. ম্যাক্রো ভাইরাস (Macro virus)
ম্যাক্রো ভাইরাস ম্যাক্রো ভাষায় লেখা একধরনের ভাইরাস। (এই ভাষা সফটওয়্যার অ্যাপ্লিকেশনের জন্য ব্যবহৃত হয়) এই ধরনের ভাইরাস তখনই ছড়িয়ে পড়ে যখন কোন ব্যবহারকারি একটি সংক্রামিত ফাইল ওপেন করে। এমন কি এটি কখনো কখনো কোন ইমেলের সাথেও সংযুক্ত থাকে। যার ফলে ইমেইলটি ওপেন করার সাথে সাথে এটি অপারেটিং সিস্টেমে ছড়িয়ে পড়ে।
এই কয়েকটা ভাইরাসের কথা বললাম বলে ভাববেন না এর বাহীরে আর কোন ভাইরাস নেই। এগুলো ছাড়াও, Worms, Trojans, Overwrite virus, Malware, Spyware, Adware virus এর মতো সুপরিচিত ভাইরাসতো আছেই। এগুলো সম্পর্কে সবাই একটু-আক্টু জানে বিধায় এগুলো নিয়ে আলোচনা করলাম না। এবার জানা যাক, কম্পিউটার ভাইরাস কিভাবে কম্পিউটারের আক্রমন করে এবং কেমন করে এক জায়গা থেকে অন্য জায়গায় ছড়ায়।
কম্পিউটার ভাইরাস কিভাবে আক্রমন করে এবং কিভাবে ছড়ায়?
বিভিন্ন কৌশল অবলম্বন করে ভাইরাস কম্পিউটারে প্রবেশ করে। অনেক মাধ্যমেই কম্পিউটারে ভাইরাস আক্রমন করে। সেক্ষেত্রে সর্বপ্রথম ও প্রধান মাধ্যম হলো ইন্টারনেট। এখন প্রশ্ন হতে পারে, কিভাবে ইন্টারনেট থেকে কম্পিউটারে ভাইরাস প্রবেশ করে, তাই না? ইন্টারনেটে বিভিন্ন ধরনের ওয়েবসাইট আছে। অনেক ওয়েবসাইটেই ক্ষতিকারক ভাইরাস বা ম্যালওয়্যার থাকে। সে রকম কোন সাইটের মধ্যে কেউ যদি ইচ্ছাকৃত বা অনিচ্ছাকৃত ভাবে প্রবেশ করে বা সেখান থেকে কোন কিছু ডাউনলোড করে তখনই কম্পিউটারে ভাইরাস প্রবেশের সরু পথটি বিস্তার লাভ করে। দেখা যায়, ইন্টারনেটের মাধ্যমেই বেশির ভাগ সময় কম্পিউটারে ভাইরাস প্রবেশ করে কম্পিউটারকে আক্রমন করে। এবং তারপর সেটি কম্পিউটারের সম্পূর্ণ অপারেটিং সিস্টেমে ছড়িয়ে পরে।
এছাড়াও, ভাইরাসে আক্রান্ত কোন পেইনড্রাইভ-সিড্রাইভ বা ম্যামরি কার্ড ইত্যাদি যেকোন মাধ্যমে যেকোন কম্পিউটারে প্রবেশ করানো হলে সেই কম্পিউটারে ভাইরাস আক্রমন করে ফেলে। তারপর আক্রান্ত কম্পিউটারের কোন ফাইল, ডকুমেন্ট বা ডাটা অন্য কোন কম্পিউটারে স্থানান্তর করা হলে ঐ কম্পিউটারেও ভাইরাস আক্রমন করে। এভাবেই কম্পিউটার ভাইরাস সুচ হয়ে ঢুকে ফাল হয়ে বের হয়। অর্থাৎ, শুক্ষ উপায়ে কম্পিউটারে ভাইরাস প্রবেশ করে এবং এক জনের কম্পিউটার থেকে অন্য জনের কম্পিউটারে ছড়িয়ে পরে বৃহৎ আকারের প্রভাব ফেলে। এরপর আরকি? কম্পিউটার গুলোর ক্ষতি স্বাধন করে। কম্পিউটারে ভাইরাস কিভাবে, কি কি ক্ষতিসাধন করে সেটা আমরা কিছুক্ষনের মধ্যেই জানতে পারব।
কম্পিউটার ভাইরাস কিভাবে কম্পিউটারের ক্ষতি করে?
কম্পিউটার ভাইরাস কম্পিউটারের নানা ভাবে ক্ষতি সাধন করে থাকে। বিভিন্ন ভাইরাস বিভিন্ন ভাবে কম্পিউটারের ক্ষতি সাধন করে থাকে। অর্থাৎ, ভাইরাসের ভিন্নতার সাথে সাথে এগুলোর ক্ষতি করার ধরনও ভিন্ন ভিন্ন হয়। নিম্নে কিভাবে ভাইরাস কম্পিউটারের ক্ষতি সাধন করে সে বিষয়ে একটা ধারনা তুলে ধরা হলোঃ
ভাইরাস মুলত বিভিন্ন প্রক্রিয়ায় প্রথমে কম্পিউটারে প্রবেশ করে এবং তারপর কম্পিউটারের ক্ষতি সাধন করে। কোন ভাইরাস কম্পিউটারের সকল ডাটা বা তথ্য ডিলিট করে ফেলে। কিংবা কম্পিউটারের তথ্যগুলো চুরি করে নিজ স্বার্থে ব্যবহার করে। এখানে নিজ স্বার্থে ব্যবহার করে বলতে, উক্ত ভাইরাসের তৈরিকারি হ্যাকার তার নিজ স্বার্থে ব্যবহার করে। হ্যাকার সেই তথ্যগুলোকে হ্যাক করে মানুষকে ব্ল্যাক মেইল করার মাধ্যমে মানুষের কাছে থেকে টাকা-পয়সা হাতিয়ে নেয়। এটা শেষ নয়। কোন কোন ভাইরাস আবার কম্পিউটারের নির্দিষ্ট কোন হার্ডওয়ারের তার উপর ক্ষতিকর প্রভাব বিস্তার করে কম্পিউটারের গতি কমিয়ে ফেলে।
যার ফলে দেখা যায় কম্পিউটারটির কাজ করার গতি হ্রাস পায় বা কম্পিউটারটি ধীর গতিতে কাজ করে। এমন কি কখনো কখনো ভাইরাস কম্পিউটারের কোন নির্দিষ্ট হার্ডওয়্যারে এমনভাবে আক্রমন করে বসে যে সংক্রমিত হার্ডওয়্যারটি ড্যামেজ বা নষ্ট পর্যন্ত হয়ে যায়। এছাড়াও কিছু ভাইরাস আবার কম্পিউটারের বিশেষ কোন ক্ষতি না করলেও কম্পিউটারে অনাকাংক্ষিত ফাইল তৈরি করে এবং ক্রমাগত সেগুলোর জেরক্সকপি তৈরি করে। যা একটা বিরক্তি বা অস্বস্থির কারন হয়ে ওঠে। এগুলো ছাড়াও ভাইরাস কম্পিউটারের আরো অনেক ধরনের ক্ষতি সাধন করে। যার ফলে কম্পিউটার ও কম্পিউটার ব্যবহারকারী উভকেই নানান ধরনের বিভ্রান্তির স্বীকার হতে হয়।
কম্পিউটার ভাইরাসে আক্রান্ত হওয়ার লক্ষন কি কি?
কম্পিউটার ভাইরাস আক্রমন করার ফলে কম্পিউটারের কার্যকলাপে অনেক ধরনের পরিবর্তন দেখা দেয়। যেগুলো দেখেই বোঝা যায় যে কম্পিউটারটি ভাইরাসে সংক্রমিত কিনা। যেগুলো দেখে বোঝা যায়, কম্পিউটার ভাইরাসে আক্রান্ত সেই লক্ষন বা উপসর্গ গুলো নিম্নরূপঃ
- যখন কম্পিউটারে কোন প্রোগ্রাম ফাইল ওপেন করা হয় তখন কম্পিউটার সেই ফাইলটি ওপেন করতে স্বাভাবিক সময়ের চেয়ে অধিক সময় নেয়। অর্থাৎ, কম্পিউটারের গতি কমে যায়।
- নতুন প্রগ্রাম ইনস্টল করার সময় পূর্বের তুলনায় অধিক সময় লাগে।
- কম্পিউটারে কাজ করার সময় কম্পিউটার হ্যাং হয়ে যায়। মাউস ও কিবোর্ড দ্বারা দেওয়া কোন প্রকার নির্দেষের প্রতিই কম্পিউটার কোন রিসপন্স করে না।
- কম্পিউটার চালু ও বন্ধ উভয় কাজ করার সময় কম্পিউটার অধিক সময় নেয়।
- কম্পিউটারে যে কাজ করা হচ্ছে না সেরকম কিছুর বার্তা বা নোটিফিকেশন আসে। অথবা কম্পিউটার কর্তৃক এরূপ কিছু প্রদর্শন করা হলে- (উদাহরনস্বরূপ,) কম্পিউটারে অ্যান্টিভাইরাস বা অন্যান্য সফটওয়্যার প্রোগ্রাম ডাউনলোড করার জন্য জোর পূর্বক অনুপ্রানিত করে।
- কম্পিউটারে যেই কাজ করা হয় সেই কাজের ফাইলটি মাত্রাতিরিক্ত জায়গা দখল করে।
- কম্পিউটার চালানোর সময় হুঠ করে বন্ধ হয়ে গেলে বা রিস্ট্রাট হয়ে গেলে।
- কম্পিউটার ফোল্ডারের মধ্যে থাকা ফাইলের নাম পরিবর্তন হয়ে গেলে।
- স্বাভাবিক হোমপেজ পরিবর্তিত হয়ে গেলে। এবং সেটা পুনারায় ঠিক করতে না পারলে।
- ভাইরাস সংক্রমিত ইমেইল আসলে এবং সেটি ওপেন করার পর কম্পিউটারে কিছু পরিবর্তন লক্ষ করলে।
- কম্পিউটারে অথবা কম্পিউটারের কোন ফাইলে ব্যবহৃত পাসওয়ার্ড পরিবর্তন হয়ে গেলে। এই লক্ষন দেখা দিলে বুঝতে হবে কম্পিউটার যে শুধু ভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছে এমন নয় বরং কম্পিউটার মারাত্রকভাবে হ্যাকিং এর স্বীকার হয়েছে। হ্যাকিং এর স্বীকার হয়েছে এটা বোঝার সবচেয়ে বড় উপসর্গ এটি।
কিভাবে বুঝবেন আপনার কম্পিউটার ভাইরাসে আক্রান্ত?
উপরিউক্ত লক্ষন বা উপসর্গগুলোর মধ্যে অধিকাংশ অথবা সব গুলোই যদি কম্পিউটারে বিদ্যমান থাকে সেক্ষেত্রে বুঝতে হবে আপনার কম্পিউটারটি ব্যাপকভাবে ভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছে। এমতাবস্থায় কিছু গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ গ্রহন করা একেবারে অপরিহার্য।
কম্পিউটারকে ভাইরাস মুক্ত রাখার সহজ কোন উপায় আছে কি?
কম্পিউটারে ভাইরাসের আক্রমন থেকে রক্ষা করার সবচেয়ে ভালো ও প্রথমিক উপায় হলো একটি এ্যান্টি ভাইরাস সফটওয়্যার ব্যবহার করা। কিন্তু বর্তমানে ICT এর উন্নয়নের ফলে সাইবার ক্রিমিনালেরাও আরো চালাকির সাথে প্রত্যকটি পদক্ষেপ গ্রহন করছে। যে কারনে শুধু একটি এন্টি ভাইরাসের উপর নির্ভর করে থাকা মটেও একজন স্মার্ট কম্পিউটার ব্যবহারকারির কাজ নয়। এক্ষেত্রে এ্যান্টি ভাইরাস এপ্লিকেশনের পাশাপাশি যে যে পদক্ষেপ গুলো গ্রহন করা মার্জনীয় সেগুলো হলোঃ
- কম্পিউটারে ব্যবহত অপারেটিং সিস্টেম ও সফটওয়্যারসমূহ সর্বদা আপডেট রাখা। অর্থাৎ, সব এ্যাপ্লিকেশনেরই আপডেট ভার্সন ব্যবহার করা।
- মুভি, ফাইল, সফটওয়্যার বা এ্যাপ্লিকেশন ইত্যাদি ডাউনলোডের ক্ষেত্রে বিস্বস্ত কোন সাইট ছাড়া ডাউনলোড না করা।
- যেকোন কিছু ডাউনলোড করার পর সেটি ওপেন বা ইনস্টল করার পূর্বে একবার হলেও সেটি স্ক্যান করা।
- সব ধরনের ওয়েবসাইটে প্রবেশ করা থেকে বিরত থাকা। বিশেষ করে সন্ধেহ জনক কোন সাইটে না ঢোকা।
- যেকোন পেইনড্রাইভ-সিড্রাইভ বা ম্যামরি কার্ড ইত্যাদি কম্পিউটারে প্রবেশ না করানো। খুব বেশি প্রয়োজন বোধ করলে স্ক্যান করে তারপর কম্পিউটারে প্রবেশ করানো যেতে পারে।
- অপরিচিত বা সন্ধেহজনক কোন সোর্স থেকে মেইল এলে সেটা ওপেন না করা। অধিক সন্ধেহজনক মনে হলে সেটা ডিলিট করা।
- পাইরেটেড এ্যাপ্লিকেশন ব্যবহার থেকে সর্বদা বিরত থাকুন। কেননা, এগুলোকে ভাইরাসের কারখানার সাথে তুলনা করা যেতে পারে।
- পাবলিক Wifi ব্যবহার থেকে আপনার ল্যাপটপ বা কম্পিউটারকে বিরত রাখুন।
উপরের নিয়মগুলো সঠিকভাবে অনুসরণ করলে আশা করা যায় কম্পিউটারে ভাইরাস আক্রান্ত হওয়ার কোন স্কোপ থাকবে না। তবুও, সচেতন কম্পিউটার ব্যবহারকারি হিসেবে আপনার একান্ত প্রয়োজনীয় ডাটা গুলো ব্যাক আপে রাখা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। যাতে করে দূর্ভাগ্যক্রমে কম্পিউটার ভাইরাসে আক্রান্ত হলেও যেন কম্পিউটারের ডাটার জন্য আপনাকে কোন প্রকার দুশ্চিন্তার স্বীকার না হয়ে হয়। আশা করি, কম্পিউটার ভাইরাস সংক্রান্ত কিছুটা জ্ঞান ভাগাভাগি করতে পেড়েছি। আজ এই পর্যন্তই। কথা হবে অন্য এক আর্টিকেল। ততদিন ভালো থাকবেন, সুস্থ থাকবেন।
উন্ডোজ ডিফেন্ডার কি এ্যান্টি ভাইরাস হিসেবে যথেষ্ট?