বর্তমানে ফ্রিল্যান্সিং এর চাহিদা হুহু করে বাড়ছে। চাকরি ক্ষেত্রে বিপুল প্রতিযোগিতা, নিজের পছন্দ এবং দক্কতা অনুযায়ী কাজ না পাওয়া, কাজ পেলেও কাজের স্বাধীনতা না থাকা ইত্যাদি কারণে বর্তমান প্রজন্ম ফ্রিল্যান্সিং এর দিকেই ঝুঁকছে বেশি। এই মার্কেটপ্লেসে এমন অনেক কাজের অপশন আছে যা প্রচলিত চাকিরির বাজারে পাওয়া যায় না। সেইসাথে আছে কাজবকিরার স্বাধীনতা। ফ্রিল্যান্সার হিসেবে বিশ্বের যে কোন প্রান্ত থেকে আপনি ঘরে বসেই আপনার যোগ্যতা ও দক্ষতা অনুযায়ী কাজ করতে পারবেন বিভিন্ন ক্লায়েন্টের সাথে। কেনাবেচা করতে পারবেন এক দেশের পণ্য অন্য দেশে।
তবে প্রশ্ন হলো পেমেন্ট নিবেন বা দিবেন কিভাবে? এই সমস্যা সমাধানে বেশ কয়েকটি ইন্টারন্যাশনাল পেমেন্ট সিস্টেম চালু হয়েছে। তার মধ্যে Payoneer অন্যতম। আজকের আর্টিকেলে আমরা Payoneer সম্পর্কে জানব এবং Payoneer একাউন্ট কিভাবে খুলবেন ও খুলে আপনি টাকা তুলতে পারবেন তাও জানব। চলুন শুরু করা যাক।
পেওনিয়ার একাউন্ট কি?
Payoneer কে আমরা একটি ইন্টারন্যাশনাল ব্যাংক বলতে পারি। সারাবিশ্বের লোক এখানে লেনদেন করতে পারেন। অথবা একে আমরা একটি আন্তর্জাতিক ওপেন ব্যাংকও বলতে পারি। পেওনিয়ার মূলত একটি ভার্চুয়াল ব্যাংক। আপনি অন্য কোন দেশে ব্যবসা করলে বা ফ্রিল্যান্সিং এর কাজ করলে সেই দেশের সাথে অর্থ লেনদেন করতে পারবেন এর মাধ্যমে। যেমন ইংল্যান্ড বা আমেরিকায় আপনার অর্থ লেনদেনের প্রয়োজন হলে কিভাবে করবেন? যদি সে দেশের কোন ব্যাংকে আপনার একাউন্ট থাকে তাহলে সহজেই আপনি পারবেন কাজটি করতে। কিন্তু অন্য দেশের ব্যাংকে একাউন্ট খোলা তো সহজ ব্যাপার নয়। পেওনিয়ার এক্ষেত্রে আপনাকে সাহায্য করবে। ইংল্যান্ড, আমেরিকা,কানাডা, অস্ট্রেলিয়াসহ ২০০ টির বেশি দেশে পেওনিয়ার এর ভার্চুয়াল ব্যাংকিং সিস্টেম চালু রয়েছে।
Payoneer কিভাবে কাজ করে ?
পেওনিয়ার আপনাকে বিভিন্ন দেশের কারেন্সিতে লেনদেনের সুবিধার্থে সে দেশের কোন লোকাল ব্যাংকের আদলে একটি ভার্চুয়াল একাউন্ট খুলে দিবে। এর মাধ্যমে আপনি ইউরো, ডলার, পাউন্ড, কানাডিয়ান ডলার, জাপানিজ ইয়েন, মেক্সিকান পেসো বা অস্ট্রেলিয়ান ডলারে অর্থ লেনদেন করতে পারবেন।
পেওনিয়ার একাউন্ট খোলার যোগ্যতা
বিশ্বের যে কোন প্রাপ্তবয়স্ক ব্যক্তিই পেওনিয়ার একাউন্ট খুলতে পারবেন। তবে আপনি যে এদেশের ১৮ বছর বা তার বেশি বয়সী নাগরিক সে তথ্য প্রমাণের জন্যে আপনার এন আই ডি নাম্বার অথবা পাসপোর্ট নাম্বার বা ড্রাইভিং লাইসেন্সের নাম্বার দিতে হবে একাউন্ট খোলার সময়। যে কোন একটি দিলেই হবে।
পেওনিয়ার একাউন্টের সুবিধা-অসুবিধাঃ
যদিও পেওনিয়ারকে আমরা ভার্চুয়াল ব্যাংক বা আন্তর্জাতিক ব্যাংক বলছি তাই বলে এটি কিন্তু আপনাকে প্রচলিত ব্যাংকিং ব্যবস্থার সুবিধা দিবে না। আপনি এর মাধ্যমে কেবল এক দেশে বসে অন্য দেশে আপনার কাস্টমার বা ক্লায়েন্টের সাথে অর্থ প্রদান বা গ্রহণ করতে পারবেন। বাইরের কোন দেশে আপনার ব্যবসা-বানিজ্য থাকলে বা আপনি ডিজিটাল মার্কেটিং এর কাজ করলে অথবা কন্টেন্ট রাইটিং বা এ জাতীয় ফ্রিল্যান্সিং এর কাজ করলে আপনি আপনার প্রোডাক্টের বা কাজের সেলার বা বায়ারের সাথে বিভিন্ন কারেন্সি লেনদেন করতে পারবেন। তা না হলে এখানে একাউন্ট খুলে আপনি অন্য কোন সুবিধা ভোগ করতে পারবেন না।
পেওনিয়ার একাউন্ট খুলতে কি কি লাগে ?
যেহেতু এটি একটি ভার্চুয়াল ব্যাংকিং ব্যবস্থা আর এখানে কোন নগদ অর্থ সঞ্চয় থাকেনা তাই পেওনিয়ার একাউন্ট খুলতে অনেক কাগজ পত্র বা তথ্য প্রয়োজন হয়না। আপনার জাতীয় পরিচয়পত্র বা পাসপোর্ট বা ড্রাইভিং লাইসেন্স থাকলে এর যে কোন একটির তথ্য জমা দিলেই হবে। তবে আপনি যে নিজেই একাউন্টটি খুলছেন তার সত্যতা যাচাই এর জন্যে আপনাকে একটি সেল্ফি তুলে আপলোড করতে হবে। আপনি বাসায় বসে পিসি, ল্যাপটপ বা মোবাইল দিয়ে একাউন্ট খুলতে পারবেন। তাছাড়া মোবাইলে পেওনিয়ার অ্যাপ ডাউনলোড করেও একাউন্ট খোলা যায়।
জেনে নিনঃ Upwork কি? কিভাবে Upwork একাউন্ট খুলবেন?
Payoneer একাউন্ট কিভাবে খুলবেন
পেওনিয়ারে দুই রকম একাউন্ট সিস্টেম চালু রয়েছে।
১. Individual Payoneer account
২. Company Payoneer account.
আপনি Individual একাউন্ট খুলতে চাইলে আপনার জাতীয় পরিচয় পত্র বা পাসপোর্ট বা ড্রাইভিং লাইসেন্সের যে কোন একটির তথ্য এবং একটি ব্যাংক একাউন্টের তথ্য দিতে হবে। আর Company একাউন্ট খুলতে হলে আপনার প্রতিষ্ঠানের ট্রেড লাইসেন্স এবং ইনকাম ট্যাক্সের তথ্য জমা দিতে হবে।
পেওনিয়ার একাউন্ট খুলতে আপনাকে কয়েকটি ধাপে কাজ করতে হবে।
পেওনিয়ার একাউন্ট খোলার নিয়ম বাংলাদেশ
- প্রথমে পেওনিয়ার এর অফিসিয়াল ওয়েবসাইটে যেতে হবে। ওয়েবসাইটে যেতে এখানে ক্লিক করুন।
- ওয়েবসাইট ওপেন হলে উপরে ডান পাশে sign in অপশনে ক্লিক করুন।
- Sign in এ ক্লিক করলে আপনার স্ক্রিনে নিচের ছবির মতো একটি পেইজ আসবে।
এই অপশনগুলো থেকে একটি সিলেক্ট করুন এবং register এ ক্লিক করুন।
- এরপর আপনি এরকম একটি পেইজ পাবেন। আপনি যদি ব্যক্তিগত একাউন্ট খুলতে চান তাহলে Individual অথবা আপনার কোম্পানির একাউন্ট খুলতে চাইলে Company সিলেক্ট করুন। তারপর নিচে দেয়া ফরমের তথ্যগুলো দিন। তথ্য দেয়া হলে next বাটনে ক্লিক করুন।
- এরপরের পেইজে আপনার ব্যক্তিগত কিছু তথ্য যেমন দেশের নাম, আপনার ঠিকানা, সিটি/টাউন, পোস্ট কোড, মোবাইল নাম্বার দিতে হবে। এরপরের অংশে সেন্ড কোড অপশনে ক্লিক করলে ৬ ডিজিটের একটি কোড পাবেন। কোডটি বক্সে সঠিকভাবে পূরণ করুন এবং next এ ক্লিক করুন।
- এরপর আপনার সামনে যে পেইজ আসবে সেখানে আপনার একাউন্টের নিরাপত্তার সার্থে কিছু তথ্য দিতে হবে। আপনার একটি ইউজার নেম এবং ইমেইল এড্রেস দিতে হবে। এরপর একাউন্টের পাসওয়ার্ড সেট করতে হবে, সিকিউরিটি প্রশ্নের উত্তর দিতে হবে এবং আপনার জাতীয় পরিচয় পত্রের নাম্বার দিতে হবে। এর নিচে একটি ক্যাপচা কোড থাকবে সেটি পূরণ করে next এ ক্লিক করতে হবে।
- এবার সর্বশেষ ধাপে আপনি পেমেন্ট নেয়া বা দেয়ার জন্যে যে ব্যাংক একাউন্ট ব্যবহার করতে চান সেটির তথ্য দিতে হবে। পার্সোনাল একাউন্ট/ বিজনেস একাউন্ট সিলেক্ট করে কারেন্সি সিলেক্ট করুন। এরপর ব্যাংকের নাম, যে শাখায় আপনার একাউন্ট সেই শাখার নাম, একাউন্ট হোল্ডার নাম এবং একাউন্ট নাম্বার দিয়ে I agree to the লেখা বক্সে টিক মার্ক দিয়ে submit অপশনে ক্লিক করুন।
তৈরি হয়ে গেল আপনার পেওনিয়ার একাউন্ট। আপনার দেয়া তথ্য যাচাই করে একাউন্ট ভেরিফাই করতে কয়েকদিন সময় লাগতে পারে। ভেরিফাই হয়ে একাউন্ট কনফার্ম হয়ে গেলে আপনি লেনদেন করতে পারবেন আপনার পেওনিয়ার একাউন্ট দিয়ে।
শেষকথা
এই বিরাট পৃথিবী এখন একটি ক্ষুদ্র গ্রামের অবস্থায় পরিণত হয়েছে বিজ্ঞানের অসাধারণ উন্নতির কারণে। যে কারণে পৃথিবীকে বলা হয়ে থাকে গ্লোবাল ভিলেজ। এক দেশে বসেই অন্য দেশের লোকের সাথে কাজ করে আমরা ইনকাম করতে পারি। একথা যেমন ঠিক চাকরির বাজার দিন দিন চরম প্রতিযোগিতামূলক হয়ে উঠছে তেমনি কাজের ক্ষেত্রও কিন্তু বৃদ্ধি পাচ্ছে। আপনি আপনার যোগ্যতা কাজে লাগিয়ে ঘরে বসেই আয় করতে পারবেন। চাকরির পেছনে ছুটতে হবে না। আর পেওনিয়ারের মতো আর্থিক লেনদেনের ভার্চুয়াল প্রতিষ্ঠানগুলো আপনাকে সুযোগ করে দিচ্ছে এক দেশে বসে অন্য দেশের ক্লায়েন্টের সাথে কাজ করে পেমেন্ট বুঝে নেয়ার। আজ জানলাম Payoneer একাউন্ট কিভাবে খুলবেন? ভালো লাগলে কমেন্ট বক্সে জানাতে ভুলবেন না।
One Comment