অন্যান্যশিক্ষা

কিভাবে ওয়াইজ Wise একাউন্ট খুলবেন?

বিশ্বায়নের এই যুগে এই বিরাট পৃথিবী এখন একটি ছোট্ট গ্রামে রূপ নিয়েছে পৃথিবীর এক প্রান্ত থেকে অন্য প্রান্তে যোগাযোগ করা যায় মুহূর্তের মধ্যে এই যোগাযোগ ব্যবস্থার সুবিধাকে কাজে  লাগিয়ে গড়ে উঠেছে বিশ্ববাজার যার পরিধি দিন দিন বাড়ছে সেইসাথে বাড়ছে মানুষের আয়ের সুযোগ ঘরে বসেই আপনি কাজ করে ইনকাম করতে পারবেন আর পেমেন্ট নেয়ার জন্যে ব্যবহার করতে পারবেন বিভিন্ন আন্তর্জাতিক মানি ট্রান্সফার একাউন্টের মাধ্যমেআজ আমরা সেরকমই একটি মানি ট্রান্সফার সার্ভিসের সাথে আপনাদের পরিচয় করিয়ে দিব সার্ভিসটির নাম ওয়াইজ (Wise)

ওয়াইজ কি?

ওয়াইজ একটি আন্তর্জাতিক মানি ট্রান্সফার সার্ভিস যার মাধ্যমে আপনি এক দেশ থেকে অন্য দেশে কারেন্সি  ট্রান্সফার করতে পারেনপূর্বে এর নাম ছিল ট্রান্সফারওয়াইজ্২০১১ সালে প্রতিষ্ঠিত হয় এই প্রতিষ্ঠানখুব সহজেই টাকা বা অন্য কারেন্সি লেনদেন করা যায় এর মাধ্যমে

ওয়াইজের সুবিধা-অসুবিধা

এক দেশ থেকে অন্য দেশে টাকা ট্রান্সফার করতে বা কেনাকাটা করতে ওয়াইজ এর সার্ভিস অসাধারণতবে সব কিছুরই সুবিধা এবং অসুবিধা দুটো দিকই আছেওয়াইজও ব্যতিক্রম নয়চলুন এর সুবিধা অসুবিধাগুলো একনজরে দেখে আসি

ওয়াইজ (Wise) এর সুবিধাসমূহ

বড় পরিধির সেবা

ওয়াইজের সার্ভিস এরিয়া অনেক বিশালপ্রায় ৮০ টির অধিক দেশে ৫০ টির বেশি কারেন্সি ট্রান্সফারের সুযোগ রয়েছে ওয়াইজের মাধ্যমেএত বড় পরিসরে মানি ট্রান্সফার সার্ভিস এখন পর্যন্ত অন্য কোন কোম্পানি দেয়নি। 

দ্রুত এবং স্বচ্ছ লেনদেন

ওয়াইজের মাধ্যমে টাকা পাঠালে সাধারণত ১-২ কার্যদিবসের মধ্যেই তারা নির্দিষ্ট একাউন্টে টাকা পাঠিয়ে দেয়আর বিকাশ বা এধরণের মোবাইল অ্যাপে পাঠালে কয়েক মিনিটের মধ্যেই গ্রাহক টাকা পেয়ে যান তাছাড়া যারা ওয়াইজ অ্যাপ ইউজ করেন তারা দেখতে পান কতক্ষণ সময় লাগবে টাকা যেতে

নিরাপদ লেনদেন

 যে মানি ট্রান্সফার সার্ভিস   থেকেই টাকা পাঠানো হোক না কেন নিরাপত্তা এবং বিশ্বস্ততা সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণএক্ষেত্রে ওয়াইজকে একদম চোখ বুজে বিশ্বাস করা যায়ওয়াইজ গ্রাহকের টাকা এবং তাদের কোম্পানির নিজস্ব টাকা আলাদা ফান্ডে রাখেতাই তাদের প্রতিষ্ঠানের কোন আর্থিক সমস্যা হলেও গ্রাহকের টাকার কোন ক্ষতি হবে 

কারেন্সির মূল রেট প্রদর্শন

যে কোন কারেন্সির বাজারদর সবসময় উঠানামা করেঅনেক প্রতিষ্ঠানই আসল রেট প্রদর্শন না করে আসল রেটের সাথে নিজেদের প্রফিট যোগ করে গ্রাহকের সামনে প্রদর্শন করেকিন্তু ওয়াইজ যে কোন কারেন্সির মূল রেট প্রদর্শন করে গ্রাহকের কাছে

সাশ্রয়ী

প্রচলিত ব্যাংকিং সিস্টেম অনুযায়ী সব ব্যাংকেই অতিরিক্ত কিছু ফি দিতে হয় গ্রাহকেরআবার % এর মতো হিডেন ফি থাকেকিন্তু ওয়াইজ এব্যাপারে বেশ স্বচ্ছতাদের সমস্ত ফি আগে থেকেই গ্রাহককে জানিয়ে দেয় এবং সেটিও খুব বেশি পরিমাণ নয়তাই ব্যাংকের মাধ্যমে টাকা ট্রান্সফারের চেয়ে ওয়াইজের মাধ্যমে টাকা ট্রান্সফার তুলনামূলক সাশ্রয়ী। 

ওয়াইজ (Wise) এর অসুবিধাসমূহ

টাকা ট্রান্সফারে অনেক সুযোগ সুবিধা থাকা সত্ত্বেও ওয়াইজ এর কিন্তু কিছু সীমাবদ্ধতাও আছে। 

ডেবিট কার্ডের সীমিত পরিসর

ওয়াইজ তাদের গ্রাহকদের ডেবিট কার্ড এবং মাস্টারকার্ড দেয় তবে এই সুযোগ কেবলমাত্র অল্প কয়েকটি দেশের গ্রাহকগণই পানওয়াইজের পুরো নেটওয়ার্কে এই কার্ড এখনো চালু হয়নিবাংলাদেশেও ওয়াইজ ব্যবহার করা গেলেও ডেবিট বা মাস্টারকার্ড চালু হয়নি এখনো। 

কাস্টমার সাপোর্ট সীমিত

গ্রাহকদের যে কোন সমস্যা সমাধানে ওয়াইজের আছে কাস্টমার সাপোর্ট সিস্টেমতবে কেবলমাত্র অফিস টাইমে এবং ফোনকলের মাধ্যমে তাদের সাথে যোগাযোগ করা যায়২৪ ঘন্টা/ দিন এই ব্যবস্থা নেই। 

ওয়াইজের ডলার রেট

 ওয়াইজ সবসময় তার গ্রাহকদের সামনে কারেন্সির আসল বাজারদর বা রিয়েল কারেন্সি রেট প্রদর্শন করে তাই ব্যাংক বা অন্যান্য আর্থিক প্রতিষ্ঠানের তুলনায় ওয়াইজের চার্জ কম থাকে তাছাড়া ওয়াইজে কোন লুকানো বা হিডেন ফি নেই ওয়াইজ ব্যবহার করে করে টাকা ট্রান্সফার করতে আপনাকে কারেন্সি এবং একাউন্ট ভেদে % থেকে .% চার্জ দিতে হয়

ওয়াইজ ব্যবহার করতে পারবেন কারা

ফ্রিল্যান্সার হিসেবে যারা কাজ করেন তারা ওয়াইজের মাধ্যমে পেমেন্ট নিতে বা দিতে পারবেন এছাড়া কোন কোম্পানির লেনদেনও করা সম্ভববিদেশ থেকে বাংলাদেশে ওয়াইজের মাধ্যমে পরিবার বা বন্ধুদের কাছে টাকা পাঠাতে পারেন প্রবাসীরা আরও একটি সুখবর হলো ওয়াইজ ব্যবহার করে বাংলাদেশি প্রবাসীগণ দেশে রেমিট্যান্স পাঠালে সরকারিভাবে .% প্রোণদনা পাবেন

জানুনঃ ফ্রিল্যান্সিং এ কোন কাজের চাহিদা বেশি

কিভাবে ওয়াইজ একাউন্ট খুলতে হয়

ওয়াইজ একাউন্ট খুলতে নিচের ধাপগুলো অনুসরণ করুন

  • প্রথমে ওয়াজের ওয়েবসাইটে যেতে হবেওয়েবসাইটে যেতে এখানে ক্লিক করুন। 
  • এরপর Register বাটনে ক্লিক করুন
  • আপনার ইমেইল এড্রেস দিন এবং next ক্লিক করুন
  • Personal/ business যে ধরনের একাউন্ট খুলতে চাচ্ছেন সেটি সিলেক্ট করুন। 

How to open wise account

  • Business একাউন্ট হলে আপনার কোম্পানির কিছু তথ্য দিতে হবে আর personal একাউন্ট হলে নিচের তথ্যগুলো দিলেই হবে
  • আপনি যে দেশ থেকে একাউন্ট খুলবেন সেই দেশের নাম সিলেক্ট করুন। 
  • কিছু ব্যক্তিগত তথ্য দিতে হবে
  • পাসপোর্ট অথবা এন আই ডি কার্ডের স্ক্যান কপি দিতে হবে আই ডি ভেরিফিকেশনের জন্যে
  • একাউন্ট ভেরিফাইড হয়ে গেলে আপনাকে একাউন্টে ২০ ইউরো বা সমপরিমান ডলার জমা দিতে হবেএটি আপনি পরবর্তীতে ব্যবহার করতে পারবেন। 

জেনে নিনঃ Payoneer একাউন্ট কি? Payoneer একাউন্ট কিভাবে খুলবেন?

উপরের নিয়ম অনুসরণ করে আপনি ওয়াইজের পার্সোনাল একাউন্ট খুলতে পারবেনতবে বিজনেস একাউন্ট খোলার নিয়ম একটু ভিন্নআপনি যদি ফ্রিল্যান্সার বা ডিজিটাল মার্কেটার হোন এবং বিভিন্ন কোম্পানি থেকে আপনার একাউন্টে টাকা আসে তাহলে আপনি পার্সোনাল একাউন্ট থেকে লেনদেন করতে পারবেন নাসেক্ষেত্রে আপনাকে বিজনেস একাউন্ট খুলতে হবে। 

  • ওয়াইজের ওয়েবসাইটে গিয়ে Register অপশনে ক্লিক করলে একটি ফর্ম আসবে কি ধরণের একাউন্ট খুলতে চাচ্ছেন সে বিষয়েউপরে আমরা স্ক্রিনশট দিয়েছি

কিভাবে Wise Business একাউন্ট খুলতে হয়?

কিভাবে Wise Business একাউন্ট খুলতে হয়?

  • যেহেতু আপনি business একাউন্ট খুলবেন তাই business অপশন সিলেক্ট করুননিচের ছবির মতো একটি ফর্ম আসবে। 

বিজনেস একাউন্ট খোলার নিয়ম প্রায় পুরোটাই পার্সোনাল একাউন্টের মতোই তবে ভেরিফিকেশিনের জন্য আপনাকে একটি লিমিটেড বা রেজিস্টার্ড কোম্পানির তথ্য দিতে হবে তবে বাংলাদেশের কোন কোম্পানির ট্রেড লাইসেন্স এখনো ওয়াইজ এলাউ করেনা তাই আপনি UK বা US এর এড্রেসে কোন লিমিটেড  কোম্পানি তৈরি করবেন এবং সেই কোম্পানির তথ্য দিয়ে একাউন্ট খুলবেন ফেসবুকেই এমন অনেক প্রতিষ্ঠান আছে যারা আপনাকে ব্যাপারে সাহায্য করতে পারবে নির্দিষ্ট চার্জ নিয়ে। UK LTD কোম্পানি তৈরি করাই সহজসাধারণত ৪-৫ দিনে একটি কোম্পানি তৈরি হয়ে যায়এরপর আপনাকে নিচের তথ্যগুলো দিতে হবে

  • UK এর এড্রেসে তৈরি কোম্পানির রেজিস্ট্রেশন। 
  • পাসপোর্ট 
  • একটি ডুয়েল কারেন্সি কার্ড
  • আপনার ব্যাংকের স্টেটমেন্ট। 

বিজিনেস একাউন্ট করতে আপনি পার্সোনাল ইমেইল এড্রেস ব্যবহার করতে পারেন অথবা নতুন করে ইমেইল একাউন্ট খুলতে পারেনসব ঠিক থাকলে দিনেই আপনার বিজনেস একাউন্ট অ্যাপ্রুভ হয়ে যাবেএরপর আপনি বাংলাদেশের ঠিকানায়ই আপনার পেমেন্ট আনার ব্যবস্থা করতে পারবেন

উপরে দেওয়া নিয়ম ছাড়াও আপনি গুগল একাউন্ট, অ্যাপল আই ডি বা ফেসবুক আই ডি ব্যবহার করেও ওয়াইজ একাউন্ট খুলতে পারবেন। 

ওয়াইজের মতো এতো সুযোগ এবং এত বড় নেটওয়ার্ক এখন পর্যন্ত অন্য কোন মানি ট্রান্সফার সার্ভিস প্রোভাইডার দেয়নিকিছু সীমাবদ্ধতা থাকলেও এক দেশ থেকে অন্য দেশে কারেন্সি ট্রান্সফারে ওয়াইজই হতে পারে সবচেয়ে বিশ্বস্ত মাধ্যম

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button
error: Content is protected !!