অন্যান্য

ই-কমার্স নিবন্ধন বা ট্রেড লাইসেন্স কি? DBID রেজিস্ট্রেশন নিয়ম

ই-কমার্স প্রতিষ্ঠানের রেজিস্ট্রেশন প্রক্রিয়া ২০২২ সালের ফেব্রুয়ারিতে বাংলাদেশে আনুষ্ঠানিকভাবে উদ্বোধন করা হয়েছে। ই-কমার্স প্রতিষ্ঠান চালাতে হলে সকল কোম্পানিকে নিবন্ধনের মাধ্যমে একটি ব্যবসায়িক পরিচিতি নম্বর নিতে হবে। ই-কমার্স খাতে জবাবদিহিতা প্রতিষ্ঠা ও প্রতারণা ঠেকাতে নিয়ন্ত্রণকারী কর্তৃপক্ষ গঠনের সিদ্ধান্ত নিয়েছে। সেসময়ই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয় যে এ খাতের উদ্যোক্তাদের রেজিস্ট্রেশনের ব্যবস্থা করা হবে।

এমনকি যারা সামাজিক মাধ্যম ফেসবুক ব্যবসায়ীদেরও আইডি লাগবে বৈধভাবে ব্যবসা করার জন্য। এর নাম দেওয়া হয়েছে ডিজিটাল-কমার্স বিজনেস আইডেন্টিফিকেশন নম্বর বা ডিবিআইডি। এজন্য ডিবিআইডি নামে একটি অ্যাপ চালু করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন বাণিজ্য মন্ত্রণালয়। ডিবিআইডি ওয়েবপেইজে গিয়ে নিবন্ধন করতে হবে। যা বিনামূল্যে করা যাবে। 

ট্রেড লাইসেন্স কি?

ট্রেড লাইসেন্স হলো দেশে বৈধভাবে ব্যবসা পরিচালনার জন্য সরকারের সংশ্লিষ্ট পক্ষ থেকে গৃহীত অনুমতিপত্র। এটি কোনো ব্যবসায়ের কর্মকান্ড বৈধতা প্রদান করে।

ইউনিয়ন পরিষদ কিংবা পৌর এলাকায় ব্যবসায় প্রতিষ্ঠান দিতে স্থানীয় সরকারের কাছ থেকে এই অনুমতিপত্র সংগ্রহ করতে হয়। এজন্য নির্ধারিত নিয়ম মেনে ফি জমাদানের মাধ্যমে আবেদন করতে হয়। এরপর আবেদন যাচাই-বাছাই করে সবকিছু সঠিক মনে হলে নিবন্ধক তার বইতে ওই প্রতিষ্ঠানের নাম লিপিবদ্ধ করে এবং আবেদনকারীকে ট্রেড লাইসেন্স সরবরাহ করে।

ই-কমার্স ট্রেড লাইসেন্স কি?

বর্তমানে বেশিরভাগ ব্যবসাই হয়ে পড়েছে অনলাইন ভিত্তিক। যেটিকে ই-কমার্স বলে। ই-কমার্স প্রতিষ্ঠান চালাতে হলে সকল কোম্পানিকে নিবন্ধনের মাধ্যমে একটি ব্যবসায়িক পরিচিতি নম্বর নিতে হবে। এর নাম দেয়া হয়েছে ডিজিটাল-কমার্স বিজনেস আইডেন্টিফিকেশন নম্বর বা ডিবিআইডি।

অনেক সময় ট্রেড লাইসেন্স না থাকার কারণে অনেক কাজ কঠিন হয়ে পড়ে আমাদের জন্য। এছাড়াও ট্রেড লাইসেন্স আপনার ব্যবসার একটি নিজস্ব পরিচয় দিবে। আবার আপনার ব্যবসাকে করবে বৈধ।

ই-কমার্স নিবন্ধন কেন বাধ্যতামূলক করা হয়েছে?

বাংলাদেশে প্রায় এক যুগ ধরে অনলাইনে ব্যবসার প্রসার ঘটেছে। কিন্তু গত বছর দুয়েক ধরে ই-কমার্স খাতে নানা ধরণের অনিয়মের অভিযোগ শোনা যেতে থাকে। এর মধ্যে ২০২১ সালে কাছাকাছি সময়ে ই-ভ্যালি এবং ই-অরেঞ্জসহ কয়েকটি ই-কমার্স প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে শত শত কোটি টাকা আত্মসাৎ এবং গ্রাহক ও মার্চেন্টদের সাথে প্রতারণার অভিযোগ ওঠে। ব্যাপক সংখ্যক অভিযোগের প্রেক্ষাপটে সরকার বিষয়টির দিকে মনোযোগ দিতে বাধ্য হয়। সে সময় দেখা যায়, দেশে ই-কমার্স পরিচালনার কোন নীতিমালা ছিল না। ই-কমার্স উদ্যোক্তাদের নিবন্ধনের ব্যবস্থাও ছিল না।

এমন অবস্থায় জুলাই মাসে বাণিজ্য মন্ত্রণালয় জাতীয় ডিজিটাল কমার্স পলিসি-২০২০ নামে একটি নির্দেশিকা প্রণয়ন করে। যাতে অর্ডার নেওয়া, ডেলিভারি এবং অর্থ পরিশোধ সংক্রান্ত নীতিমালা তুলে ধরা হয়। ই-কমার্স খাতে জবাবদিহিতা প্রতিষ্ঠা ও প্রতারণা ঠেকাতে সেপ্টেম্বর মাসে সরকার একটি নিয়ন্ত্রণকারী কর্তৃপক্ষ গঠনের সিদ্ধান্ত নেয়। সেসময়ই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয় এ খাতের উদ্যোক্তাদের নিবন্ধনের ব্যবস্থা করা হবে।

বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব এএইচএম সফিকুজ্জামান বলেছেন, “এই নিবন্ধনের উদ্দেশ্য হচ্ছে, এর মাধ্যমে পরিচিতি নম্বর ধরে সরকার উদ্যোক্তার কর্মকাণ্ড ‘ট্র্যাক’ করতে পারবে”।

আবেদন করতে যা লাগবেঃ

১। আবেদন করার জন্য মাই-ইনফোতে ভেরিফাইড একাউন্ট প্রয়োজন।

২। যে মোবাইল নাম্বারটি এন আই ডি কার্ডের সাথে সংশ্লিষ্ট সেই নাম্বার দিয়ে একাউন্ট তৈরী করুন।

প্রয়োজনীয় কাগজপত্রঃ

১। ছবি,

২। স্বাক্ষর,

৩। আবেদনকারীর জাতীয় পরিচয়পত্রের নম্বর,

৪। প্রতিষ্ঠানের চেয়ারম্যানের জাতীয় পরিচয়পত্রের নম্বর (প্রযোজ্যক্ষেত্রে),

৫। পরিচালকগণের জাতীয় পরিচয়পত্রের নম্বর (প্রযোজ্যক্ষেত্রে),

৬। বাড়ির মালিকের জাতীয় পরিচয়পত্র নম্বর / ইউটিলিটি বিলের কপি (ইলেকট্রিসিটি) / অফিস ভাড়া চুক্তির অনুলিপি (প্রযোজ্যক্ষেত্রে),

৭। ট্রেড লাইসেন্সের কপি (যদি থাকে),

৮। কোম্পানি রেজিস্ট্রেশন নম্বর (যদি থাকে),

৯। ভ্যাট নিবন্ধন নম্বর (যদি থাকে),

১০। আয়কর নিবন্ধন নম্বর (যদি থাকে),

১১। স্থানীয় চেয়ারম্যান / ওয়ার্ড কমিশনার / গণ্যমান্য ব্যক্তির সুপারিশ (যদি থাকে)।

আবেদন ফরম পূরণের নিয়মাবলীঃ  

১। আবেদন ফরমের লাল তারকা চিহ্নিত ঘরগুলো অবশ্যই পূরণ করতে হবে। অন্যান্য ঘরগুলো পূরণ ঐচ্ছিক।

২। আবেদন প্রক্রিয়া সম্পন্ন হওয়ার আগ পর্যন্ত কোনো প্রকার তথ্য পরিবর্তন করার সুযোগ নেই।

৩। আবেদন দাখিলের পর প্রতিটি আবেদনের জন্য একটা স্বতন্ত্র ট্র্যাকিং নম্বর প্রদান করা হবে। যেটা ব্যবহার করে আবেদন ট্র্যাক করা যাবে।

৪। আবেদন প্রক্রিয়া সম্পন্ন হওয়ার পূর্ব পর্যন্ত “পরবর্তী” বাটনে ক্লিক করতে হবে। আবেদন ফর্মের পূর্ববর্তী সকল তথ্য সংরক্ষিত হবে (শুধুমাত্র সংযুক্তি সমূহ ব্যতিত)। পরবর্তীতে আবেদন প্রক্রিয়া পুনরায় শুরু করতে আবেদন প্রক্রিয়াতে প্রবেশ করে সংরক্ষিত তথ্য সমূহ দেখা যাবে। এবং বাকি তথ্য পূরণ করে আবেদনটি সম্পন্ন করতে পারবেন।

আবেদনের নির্দেশিকাঃ

১। ওয়েবলিংক বা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের পেইজ লিংক সহ DBID এর জন্য আবেদন করতে হবে। DBID ব্যতীত ডিজিটাল প্লাটফর্মে ব্যবসা করা যাবেনা।

২। DBID এর আবেদনে কোন ভুল বা মিথ্যা তথ্য প্রদান করা যাবে না, করলে DBID স্থগিত বা বাতিল হবে।

৩। তথ্য গোপন করে DBID গ্রহণ করলে, তা জানামাত্র ইস্যুকৃত উক্ত DBID বাতিল করা হবে।

৪। মিথ্যা বা ভুল তথ্য প্রদান করলে ইস্যুকৃত DBID স্থগিত বা বাতিল করার পাশাপাশি তার বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করবে।

৫। প্রতিটি ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের জন্য ভিন্ন ভিন্ন DBID গ্রহণ করতে হবে।

৬। একটি ডিজিটাল কমার্স প্রতিষ্ঠানের একাধিক শাখা থাকলেও সকল শাখার জন্য একটিমাত্র DBID প্রদান করা হবে।

৭। কোন অবস্থাতেই একটি প্রতিষ্ঠানের একাধিক DBID অথবা একই DBID একাধিক প্রতিষ্ঠানের নামে করা ইস্যু হবে না।

৮। ডিজিটাল কমার্স প্রতিষ্ঠান সক্রিয় ওয়েবসাইট বা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে সক্রিয় পেইজ থাকতে হবে।

৯। ওয়েবসাইটে বা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বাংলায় লিপিবদ্ধ ক্রয়-বিক্রয় এবং অন্যান্য শর্তাবলী সংযুক্ত থাকতে হবে। যেখানে সুস্পষ্টভাবে ডেলিভারির সময়সীমা, মূল্যফেরত, পণ্যফেরত, বিক্রয়োত্তর সেবা ইত্যাদি বিষয় সুস্পষ্ট ভাবে লিপিবদ্ধ থাকতে হবে।

১০। DBID প্রাপ্তরা ওয়েবসাইটে বা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের পেইজে বাধ্যতামূলকভাবে DBID প্রদর্শন করতে হবে।

১১। আবেদনকারী কর্তৃক কোন তথ্য সংশোধনের আবেদন করা হইলে যাচাই বাছাই ক্রমে কর্তৃপক্ষ তা সংশোধন করিবেন।

১২। কোন ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানের তথ্য পরিবর্তিত হলে, সংশোধন করার জন্য আবেদন করতে হবে।

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button
error: Content is protected !!