অন্যান্য

ই-কমার্স ও এফ-কমার্স এর মধ্যে পার্থক্য

আজকের এই উন্নত বিশ্বে, প্রযুক্তি আমাদের জীবনের প্রায় প্রতিটি দিকের সাথেই জড়িয়ে আছে। কেনাকাটাও এর ব্যতিক্রম নয়। অনলাইন ব্যবসা শুরু হয় ই-কমার্স এর মাধ্যমে  আর এফ-কমার্স হলো ই-কমার্স এর একটি বিশেষ অংশ। এর উত্থান আমাদের পণ্য ও পরিসেবা কেনার এবং বিক্রির ধরনকে পরিবর্তিত করেছে। আজকে আমরা জানবো ই-কমার্স ও এফ-কমার্স এর মধ্যে পার্থক্য এবং বিস্তারিত সব তথ্য। 

ই-কমার্স কি?

ই-কমার্স, যাকে ইলেকট্রনিক বা অনলাইন কমার্সও বলা হয়, এটি ইন্টারনেটে বা অনলাইনের মাধ্যমে পণ্য ও পরিসেবা কেনা-বেচার একটি প্লাটফর্ম। এটি ওয়েবসাইট, মোবাইল অ্যাপ্লিকেশন এবং সোশ্যাল মিডিয়া প্ল্যাটফর্মের মাধ্যমে এটি পরিচালিত হতে পারে। এটি শুরু হয় ৯৮২ সালে দ্যা বোস্টন কম্পিউটার এক্সচেঞ্জের মাধ্যমে যাকে অনলাইন ব্যবসা বা ই-কমার্স এর সূচনা ভাবা হয়। এরপর থেকেই ক্রমাগত এর জনপ্রিয়তা লাভ করতে করতে ইকমার্স এখন পরিণত হয়েছে একটি মাল্টি বিলিয়ন ডলার ইন্ডাস্ট্রিতে। 

এফ-কমার্স কি?

অনলাইন ব্যবসা ই-কমার্সের হাত ধরে যাত্রা শুরু হলেও  এই অগ্রযাত্রায় নতুনভাবে যুক্ত হয় এফ-কমার্স। এফ-কমার্স যাকে ফেসবুক কমার্সও বলা হয়, বিশেষ করে ফেসবুক প্ল্যাটফর্মের মাধ্যমে পণ্য ও পরিসেবা কেনা-বেচার ব্যবস্থায় হলো এফ-কমার্স। এটি ব্যক্তিগত প্রোফাইল, গ্রুপ এবং পেজের মাধ্যমে পরিচালিত হতে পারে। এছাড়াও বর্তমানে এফ-কমার্স বিজনেসকে আরও সহজে পরিচালনার জন্য ল্যান্ডিং পেইজ ব্যবহার করা হয়। । এটি মুলত ই-কমার্সের একটি বিশেষ ধরন। 

ই-কমার্স ও এফ-কমার্স: কেন আজকের দিনে গুরুত্বপূর্ণ?

বিভিন্ন কারণে ই-কমার্স ও এফ-কমার্স আজকের দিনে অতি গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছে। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য কিছু দিক হলো: ইন্টারনেটের সহজলভ্যতা ও সকলের সোশ্যাল মিডিয়া বা অনলাইন উপস্থিতি, ব্যবসার ব্যাপকতা, 24/7 প্রাপ্যতা, সর্বনিম্ন পরিচালনা খরচ, ডেটা বিশ্লেষণ ইত্যাদি। নিচে ই-কমার্স ও এফ-কমার্স এর গুরুত্বপূর্ণ দিকগুলো আলোচনা করা হলো।

  • ইন্টারনেটের সহজলভ্যতা ও সকলের সোশ্যাল মিডিয়া বা অনলাইন উপস্থিতি

বর্তমানে ইন্টারনেট ও ইন্টারনেট সমর্থিত ডিভাইসসমূহ সহজলভ্য হওয়ায় দেশের সর্বত্র মানুষদের সোশ্যাল মিডিয়া ও ইন্টারনেটে উপস্থিতি নিশ্চিত করা গেছে। একারণে ই-কমার্স ও এফ-কমার্সের মতো অনলাইন ব্যবসারও সম্ভাবনা বাড়ছে।

  • ব্যবসার ব্যাপকতা

ই-কমার্স এবং এফ-কমার্স ব্যবসায় বিক্রেতা তার পণ্য বিশ্বব্যাপী গ্রাহকদের কাছে পৌঁছে দেয়। যেকোনো স্থানের একটি ছোট্ট দোকান এখন বিশ্বের যেকোনো প্রান্তে থাকা ক্রেতাদের কাছে তার পণ্য বিক্রি করতে পারে। এর ফলে ব্যবসার নতুন বাজার এবং সম্ভাবনা উন্মোচিত হচ্ছে। 

  • 24/7 প্রাপ্যতা

ই-কমার্স এবং এফ-কমার্স ওয়েবসাইট ও সোশ্যাল মিডিয়া প্ল্যাটফর্মগুলি সার্বক্ষণিক খোলা থাকে। এর মানে হল গ্রাহকরা যেকোনো সময়, যেকোনো জায়গা থেকে পণ্য ও পরিষেবা কিনতে পারেন। যারা দৈনন্দিন কাজকর্ম, চাকুরি ও ব্যবসা-বাণিজ্য নিয়ে ব্যস্ত থাকেন তাদের জন্য এই প্লাটফর্মগুলো খুবই কার্যকর ভূমিকা রাখছে।

  • তুলনামূলকভাবে কম খরচ

ই-কমার্স এবং এফ-কমার্স ব্যবসাগুলি অন্যান্য ব্যবসার তুলনায় কম খরচেই পরিচালনা করা যায়। কারণ ব্যবসায়িকরা চাইলে দোকান ভাড়া, পণ্য সাজানো এবং কর্মী নিয়োগ ছাড়াই বাড়িতে থেকেই ই-কমার্স এবং এফ-কমার্স ব্যবসা পরিচালনা করতে পারেন। এর ফলে তারা তাদের পণ্যে দাম কম নির্ধারণ করতে পারে, যা গ্রাহকদের জন্য আকর্ষণীয় একটি সুবিধা।

  • ডেটা বিশ্লেষণ

ই-কমার্স এবং এফ-কমার্স ব্যবসাগুলিতে গ্রাহক আচরণ সম্পর্কে ডেটা বিশ্লেষণ করা যায়। এই ডেটা ব্যবহার করে বিক্রেতা তাদের কাস্টমারদেরকে আরও ভালভাবে টার্গেট করতে পারেন, তাদের ওয়েবসাইট এবং অ্যাপ্লিকেশনগুলিকে উন্নত করতে পারেন, নতুন নতুন পণ্য এবং পরিষেবা যুক্ত করতে পারে যা গ্রাহকদের চাহিদা পূরণ করতে পারে।

ই-কমার্স ও এফ-কমার্সের মধ্যে পার্থক্য:

বৈশিষ্ট্যই-কমার্সএফ-কমার্স
প্ল্যাটফর্মওয়েবসাইট, মোবাইল অ্যাপ্লিকেশন, সোশ্যাল মিডিয়াফেসবুক 
ফোকাসপণ্য ও পরিসেবার ব্যাপক পরিসর নির্দিষ্ট পণ্য ও পরিষেবা
লেনদেনপেমেন্ট গেটওয়ে, নেট ব্যাংকিং, মোবাইল ওয়ালেটফেসবুক পেমেন্ট
প্রচারের মাধ্যম
SEO, SEM, সোশ্যাল মিডিয়া মার্কেটিংফেসবুক বিজ্ঞাপন, গ্রুপ এবং পেজ
কাস্টমার সাপোর্ট
ইমেইল, মোবাইল ফোন
ফেসবুক প্রোফাইল, মোবাইল ফোন

ই-কমার্স ও এফ-কমার্স: ভবিষ্যতের সম্ভাবনা

ই-কমার্স এবং এফ-কমার্স আজকের বিশ্বে দ্রুত বর্ধনশীল শিল্প, এবং ভবিষ্যতে আরও বৃদ্ধি পাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। এই প্রবণতা বৃদ্ধির পেছনে বেশ কিছু কারণ রয়েছে, যার মধ্যে রয়েছে ইন্টারনেট ব্যবহারকারীর সংখ্যা বৃদ্ধি, স্মার্টফোন এবং মোবাইল ইন্টারনেটের ব্যবহার বৃদ্ধি, ডিজিটাল পেমেন্ট পদ্ধতির ব্যবহার বৃদ্ধি ইত্যাদি।

ইন্টারনেট ব্যবহারকারীর সংখ্যা বৃদ্ধি

বিশ্বব্যাপী ইন্টারনেট ব্যবহারকারীর সংখ্যা দ্রুত বৃদ্ধি পাচ্ছে। বিশ্ব ব্যাপী একটি পরিসংখ্যানে দেখা যায় ২০১৯ সালে, বিশ্বে 4.66 বিলিয়ন ইন্টারনেট ব্যবহারকারী ছিল। ২০২৫ সালের মধ্যে এই সংখ্যা 6.81 বিলিয়নে পৌঁছানোর পূর্বাভাস দেওয়া হয়েছে। এর মানে হলো আরও বেশি সংখ্যক মানুষ অনলাইনের মাধ্যমে কেনাকাটা করার সম্ভাবনা রয়েছে।

স্মার্টফোন এবং মোবাইল ইন্টারনেটের ব্যবহার বৃদ্ধি

বর্তমানে স্মার্টফোন ব্যবহারকারীদের সংখ্যা দ্রুতই বৃদ্ধি পাচ্ছে। ২০১৯ সালে, বিশ্বে 3.8 বিলিয়ন স্মার্টফোন ব্যবহারকারী ছিল। ২০২৫ সালের মধ্যে এই সংখ্যা 5.27 বিলিয়নে পৌঁছানোর পূর্বাভাস দেওয়া হয়েছে। স্মার্টফোন ব্যবহারকারীদের সংখ্যা বৃদ্ধি পাওয়ায় মোবাইল কমার্সের জন্য একটি বড় সুযোগ তৈরি হয়েছে।

ডিজিটাল পেমেন্ট পদ্ধতির ব্যবহার বৃদ্ধি

ডিজিটাল ওয়ালেট এবং মোবাইল পেমেন্টের মতো নিরাপদ এবং সুবিধাজনক ডিজিটাল পেমেন্ট পদ্ধতির ব্যবহার বৃদ্ধি পাচ্ছে। ২০১৯ সালে, বিশ্বব্যাপী ডিজিটাল পেমেন্ট লেনদেনের সংখ্যা 70.3 ট্রিলিয়নে পৌঁছেছে। ২০২৫ সালের মধ্যে এই সংখ্যা 135.6 ট্রিলিয়নে পৌঁছানোর পূর্বাভাস দেওয়া হয়েছে। ডিজিটাল পেমেন্ট পদ্ধতির ব্যবহারকারীদের সংখ্যা বৃদ্ধি পাওয়ায় অনলাইনে কেনাকাটা করা আরও সহজ হয়েছে।

বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে

বাংলাদেশে, ই-কমার্স এবং এফ-কমার্স একটি ক্রমবর্ধমান ক্ষাত যার বিশাল সম্ভাবনা রয়েছে। ইন্টারনেট সহজলভ্য হওয়ায় এবং স্মার্টফোন ব্যবহারকারীর সংখ্যাও বৃদ্ধি পেয়েছে। এছাড়াও, ডিজিটাল পেমেন্ট পদ্ধতির ব্যবহার বাড়ছে। এই সমস্ত কারণগুলি ই-কমার্স এবং এফ-কমার্সের জন্য একটি অনুকূল পরিবেশ তৈরি করছে।

বাংলাদেশ সরকার ই-কমার্স এবং এফ-কমার্সের বৃদ্ধিকে উৎসাহিত করার জন্য পদক্ষেপ নিচ্ছে। ২০১৮ সালে, সরকার “ডিজিটাল বাংলাদেশ অ্যাকশন প্ল্যান 2021” চালু করেছিল, যার লক্ষ্য ছিল ২০২১ সালের মধ্যে দেশকে একটি ডিজিটাল অর্থনীতিতে পরিণত করা। এই পরিকল্পনার অংশ হিসাবে, সরকার ই-কমার্স অবকাঠামো উন্নত করতে এবং অনলাইনে কেনাকাটা করতে জনগণকে উৎসাহিত করতে কাজ করছে।

আশা করি ই-কমার্স ও এফ-কমার্স সর্ম্পকে বিস্তারিত সব তথ্য কিছুটা হলেও জানাতে পেরেছি। 

Related Articles

20 Comments

  1. I simply could not go away your web site prior to suggesting that I really enjoyed the standard info a person supply on your guests Is going to be back incessantly to investigate crosscheck new posts

  2. Your writing is a true testament to your expertise and dedication to your craft. I’m continually impressed by the depth of your knowledge and the clarity of your explanations. Keep up the phenomenal work!

  3. Your blog is a beacon of light in the often murky waters of online content. Your thoughtful analysis and insightful commentary never fail to leave a lasting impression. Keep up the amazing work!

  4. Your blog is a constant source of inspiration for me. Your passion for your subject matter is palpable, and it’s clear that you pour your heart and soul into every post. Keep up the incredible work!

  5. I do agree with all the ideas you have introduced on your post They are very convincing and will definitely work Still the posts are very short for newbies May just you please prolong them a little from subsequent time Thank you for the post

  6. certainly like your website but you need to take a look at the spelling on quite a few of your posts Many of them are rife with spelling problems and I find it very troublesome to inform the reality nevertheless I will definitely come back again

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button
error: Content is protected !!