আধুনিক সময়ে প্রায় সকল কাজই কম্পিউটারের মাধ্যমে সম্পন্ন হচ্ছে। বর্তমানে সকল ইন্ডাস্ট্রি তথা প্রতিষ্ঠানে সকল তথ্য কম্পিউটারে সংরক্ষিত থাকে। তাই ফিজিক্যাল ডকুমেন্টগুলো ডিজিটালি সংরক্ষণ করতে হয়। যার কারণে দরকার হয় ডাটা এন্ট্রি অপারেটরের। যার ফলে ডাটা এন্ট্রি অপারেটরের প্রয়োজন বাড়ছে। তার সাথে বাড়ছে ডাটা এন্ট্রি করে আয়ের সুযোগ। সাধারণত কম্পিউটার ব্যবহার ও টাইপিং এর মোটামুটি দক্ষতা থাকলে যে কেউ ডাটা এন্ট্রি করতে পারবে।
ডাটা এন্ট্রি কি?
ডাটা অর্থ তথ্য, এন্ট্রি অর্থ লেখা বা প্রবেশ করানো। ডাটা এন্ট্রি হলো মূলত কোন তথ্যকে এক স্থান থেকে অন্য স্থানে লেখা বা প্রবেশ করানো। অর্থাৎ, এক সোর্স থেকে অন্য সোর্সে কিছু লেখা বা কপি করাকে ডাটা এন্ট্রি বলে। এই ডাটা হতে পারে যেকোনো ধরনের মিডিয়া, ফাইল, ইনফরমেশন ইত্যাদি।
যে ব্যক্তি ডাটা এন্ট্রির কাজ করেন তাকে ডাটা এন্ট্রি অপারেটর বলা হয়। অপারেটরকে মাইক্রোসফট অফিস অ্যাপগুলোর পাশাপাশি কিছু বাড়তি সফটওয়্যার ব্যবহার জানতে হবে। তবে ডাটা এন্ট্রির ক্ষেত্রে সবচেয়ে বেশি কাজে লাগে দ্রুত টাইপ করার দক্ষতা।
আরও পড়ুন- আউটসোর্সিং কী? কিভাবে আউটসোরসিং করা যায়?
Data Entry তে কাজের ধরন
দুই ভাবে ডাটা এন্ট্রির কাজ করা যায়। (১) অনলাইন বা রিমোট ভাবে, (২) অফলাইন বা ফুলটাইম ভাবে।
১। রিমোট (ফ্রিল্যান্স)
একজন রিমোট ওয়ার্কার কিংবা ফ্রিল্যান্সার হিসেবে ঘরে বসে কিংবা যেকোনো জায়গা থেকে কাজ করতে পারে। এ ক্ষেত্রে পছন্দমতো সময়ে কাজ করতে পারে। সাধারণত রিমোট কাজে কীস্ট্রোক অনুযায়ী বা প্রজেক্ট অনুযায়ী পে করা হয়। এ ক্ষেত্রে নির্ভরযোগ্যতা, কাজের দক্ষতা ও নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে কাজ শেষ করার প্রবণতাকে গুরুত্ব দেওয়া হয়। একাডেমিক পড়াশোনা অথবা ফুলটাইম চাকরির পাশাপাশি রিমোটলি ডাটা এন্ট্রি করে আরও বেশি উপার্জন করা যায়।
২। ফুলটাইম চাকরি
বিভিন্ন অফিসে ডাটা এন্ট্রি অপারেটর পোষ্ট থাকে। সাধারণত ঘণ্টা হিসেবে পে করা হয়। এক্ষেত্রে বোনাস, ছুটি, স্বাস্থ্য সুবিধাসহ বিভিন্ন সুযোগ সুবিধা পাওয়া যায়। কাজের গতি, নির্ভরযোগ্যতা ও নির্ভুলতাকে বেশি গুরুত্ব দেওয়া হয়।
Data Entry এর ধরণ
ডাটা এন্ট্রি বিভিন্ন ধরনের হতে পারে। সবচেয়ে অধিক প্রচলিত ডাটা এন্ট্রির কাজ হলো মাইক্রোসফট এক্সেল সফটওয়্যারে ডাটা এন্ট্রির কাজ। এছাড়া স্পেল চেকিং, জব পোস্টিং, পেপার ডকুমেন্টেশন, ইত্যাদিও বেশ জনপ্রিয় ডাটা এন্ট্রির কাজ। নিচে কিছু ডাটা এন্ট্রি জব নিয়ে আলোচনা করা হল-
১। সাধারণ ডাটা এন্ট্রি
এই ধরনের ডাটা এন্ট্রি মূলত বিভিন্ন ধরনের ডাটা সোর্স ফাইল নিয়ে। যেমন- কাগজ বা অন্য কোনো কিছু থেকে ডিজিটাল ফরম্যাটে লিপিবদ্ধ করার কাজ হয়ে থাকে।
২। প্রোডাক্ট ডাটা এন্ট্রি
প্রোডাক্টের তথ্যের রেকর্ড রাখার প্রয়োজন হয়। তাই কোম্পানি প্রোডাক্টের তথ্যের রেকর্ড রাখার জন্য অপারেটর হায়ার করে। অথবা ডাটা এন্ট্রি অপারেটর আউটসোর্স করে থাকে। এই কাজের ক্ষেত্রে মূলত প্রোডাক্ট ও এর তথ্যকে সঠিক ফরম্যাটে সাজাতে হয়।
৩। একাউন্টিং ডাটা এন্ট্রিঃ
অনেক সময় অফিসের বিভিন্ন একাউন্টিং সম্পর্কিত তথ্য পুনরায় চেক করার প্রয়োজন হয়। যা করতে ফ্রিল্যান্সার হায়ার করে থাকে কোম্পানিগুলো। এই ক্ষেত্রে সাধারণত অফিসের বিভিন্ন তথ্য স্প্রেডশিট বা যেকোনো সুবিধাজনক ফরম্যাটে আনার কাজ করতে হয়।
৪। ডাটা ক্যাপচারিং এন্ড রেন্ডারিং
হার্ড কপি থেকে সফট কপি হিসেবে ডাটাকে একত্র করে বিশাল ডাটাবেস তৈরি করতে হয়। এই ধরনের কাজে ডাটা এন্ট্রি অপারেটর প্রয়োজন হয়।
৫। অনলাইন ডাটা এন্ট্রি
যেসব ডাটা এন্ট্রির কাজ বিভিন্ন পোর্টাল বা ওয়েবসাইটের মাধ্যমে করা হয় সেগুলোকে এই ক্যাটাগরিতে ফেলা হয়। এখানে মূলত রিসোর্স ফাইল থেকে কোনো ওয়েবসাইটে তথ্য অন্তর্ভুক্ত করতে হয়।
৬। অফলাইন ডাটা এন্ট্রি
হার্ড কপি ডাটাকে ডিজিটাল ফরম্যাটে করার কাজ অফলাইনেও করা হয়ে থাকে। এক্ষেত্রে ডাটাকে কম্পিউটারের কোনো সফটওয়্যারে লিপিবদ্ধ করা হয়ে থাকে।
৭। ডাটা মাইনিং
বিভিন্ন ওয়েবসাইট থেকে গুরুত্বপূর্ণ তথ্য সংগ্রহ করে সেগুলোকে এনালাইজ করাকে ডাটা মাইনিং বলা হয়। এর মাধ্যমে বিভিন্ন ধরনের ব্যবসায়িক ডিসিশন সহজে নেওয়া যায়।
৮। নিউমেরিক ও টেক্সট এন্ট্রি
ব্যবসার বিভিন্ন ডকুমেন্ট ঠিকভাবে সাজানো ও প্রয়োজন অনুসারে নাম্বারিং করার কাজ। এর মাধ্যমে ডাটাবেসে প্রফেশনাল লুক দেওয়া হয়।
৯। মেইলিং লিস্ট কম্পাইলেশন
কোনো কোম্পানির ক্লায়েন্টের ইমেইল লিস্ট সঠিকভাবে গুছিয়ে দেওয়ার কাজ ডাটা এন্ট্রির অংশ যা থেকে বড় মাপের আয় সম্ভব।
এছাড়া আরও
আরও পড়ুন- দ্রুত ফ্রিল্যান্সার হবেন কিভাবে?
ডাটা এন্ট্রি কিভাবে শেখা যায়?
ডাটা এন্ট্রি একটি অপেক্ষাকৃত দ্রুত প্রক্রিয়া। কম্পিউটারের মৌলিক দক্ষতা এবং ডেটা এন্ট্রি সরঞ্জাম এবং সফ্টওয়্যারের সাথে দক্ষ হয়ে উঠতে হবে সবার আগে। আরও কিছু দক্ষতা-
১। কম্পিউটার দক্ষতা
ডাটা এন্ট্রি শেখার ক্ষেত্রে কম্পিউটারের উপর বেসিক দক্ষতা অর্জন হল প্রথম ধাপ। কীবোর্ড শর্টকাট, টাইপিং গতি এবং সাধারণ কম্পিউটার নেভিগেশন পরিচিতি থাকতে হবে।
২। প্রশিক্ষণ এবং টিউটোরিয়াল
অনেক অনলাইন টিউটোরিয়াল, কোর্স এবং সংস্থান উপলব্ধ রয়েছে। যা আপনাকে ডাটা এন্ট্রি শিখতে সাহায্য করতে পারে।কোর্স গুলো নিদিষ্ট সময়ের মধ্যে শেখায়। কোর্স ভেদে কয়েক সপ্তাহ বা মাস সময় লাগতে পারে।
৩। অনুশীলন
ডাটা এন্ট্রিতে দক্ষ হওয়ার চাবিকাঠি হল অনুশীলন। যে যত বেশি অনুশীলন করবে, সে তত দ্রুত দক্ষ হয়ে উপার্জন বাড়াতে পারবে। দক্ষতা উন্নত করতে নমুনা ডেটা বা বাস্তব-বিশ্বের ডেটা সেট ব্যবহার করে ডেটা এন্ট্রি অনুশীলন করতে পারেন।
৪। গতি এবং নির্ভুলতা
ডাটা এন্ট্রি শুধুমাত্র দ্রুত টাইপ করার জন্য নয়। টাইপ হতে হবে নির্ভুল। গতি এবং নির্ভুলতার মধ্যে ভারসাম্য অর্জন করা গুরুত্বপূর্ণ। কিছু ব্যক্তি স্বাভাবিকভাবেই অন্যদের তুলনায় দ্রুত টাইপ করতে পারে, কিন্তু তথ্যে ত্রুটি এড়াতে নির্ভুলতা অপরিহার্য।
৫। বিশেষায়িত ডেটা এন্ট্রি
একটি নির্দিষ্ট শিল্পে ডেটা এন্ট্রি করতে সে বিষয়ে রিসার্চ করতে হবে। প্রতিষ্ঠান বিশেষ সফ্টওয়্যার ব্যবহার করলে সফ্টওয়্যার সরঞ্জামগুলি শিখতে সময়ের প্রয়োজন হতে পারে।
৬। অন-দ্য-জব ট্রেনিং
নির্দিষ্ট কাজের জন্য ডেটা এন্ট্রি করতে তাদের সিস্টেম এবং প্রক্রিয়াগুলোতে দক্ষতা নিশ্চিত করতে চাকরির সময় প্রশিক্ষণ প্রদান করতে পারে। সাধারণত, ধারাবাহিক অনুশীলন এবং প্রশিক্ষণের মাধ্যমে কয়েক সপ্তাহ থেকে কয়েক মাসের মধ্যে মৌলিক ডাটা এন্ট্রিতে দক্ষ হয়ে উঠতে পারবেন। ব্যতিক্রমীভাবে দ্রুত এবং নির্ভুল হতে আরও সময় এবং অভিজ্ঞতা নিতে হবে।
ডাটা এন্ট্রি অপারেটর হবেন কিভাবে?
এই সেক্টরে ভালো অবস্থান পেতে অবশ্যই দক্ষ হতে হবে। কম্পিউটার বিষয়ক দক্ষতাকে বেশি গুরুত্ব দিতে হবে। প্রায় সকল ডাটা এন্ট্রি কাজের ক্ষেত্রে ইংরেজি ভাষা ব্যবহৃত হয়। তাই ইংরেজিতে দক্ষ হতে হবে। এর পরে আসে ভালো টাইপিং পারার প্রয়োজনীয়তা। প্রচুর ডাটা নিয়ে কাজ করতে হয়, তাই টাইপিং-এ দক্ষ হতে হবে।
মোবাইল দিয়ে ডাটা এন্ট্রি
মোবাইল ডিভাইসে ডেটা এন্ট্রি করার কিছু উপায় এখানে দেওয়া হল:
১। স্প্রেডশীট: মাইক্রোসফ্ট এক্সেল বা গুগল শীটগুলির মতো স্প্রেডশীট অ্যাপ্লিকেশনগুলোর মোবাইল ভার্সন রয়েছে। যা মোবাইল ডিভাইসে ডেটা প্রবেশ এবং ম্যানিপুলেট করার অনুমতি দেয়। এগুলো সংখ্যাসূচক ডেটা এন্ট্রি এবং মৌলিক গণনার জন্য বিশেষভাবে উপযোগী।
২। মোবাইল অ্যাপস: বিভিন্ন প্ল্যাটফর্মের মোবাইল অ্যাপ উপলব্ধ রয়েছে। যা বিশেষভাবে ডেটা এন্ট্রির জন্য ডিজাইন করা হয়েছে। এই অ্যাপ ডেটা এন্ট্রি টুল, ফর্ম তৈরি এবং ডেটা যাচাইকরণের মতো বৈশিষ্ট্যও থাকে।
৩। ক্লাউড-ভিত্তিক ফর্ম: ক্লাউড-ভিত্তিক ফর্ম নির্মাতা যেমন Google ফর্ম বা সার্ভেমঙ্কি মোবাইল ডিভাইসগুলোতে অ্যাক্সেস এবং পূরণ করা যেতে পারে। এই ফর্মগুলি প্রায়শই জরিপ, প্রতিক্রিয়া সংগ্রহ এবং ডেটা সংগ্রহের জন্য ব্যবহৃত হয়।
৪। OCR অ্যাপস: অপটিক্যাল ক্যারেক্টার রিকগনিশন অ্যাপ ব্যবহার করে ছবি, ডকুমেন্ট বা রসিদ থেকে টেক্সট ক্যাপচার করা যায়। এটিকে ডিজিটাল টেক্সটে রূপান্তর করা যায়, যা পরে সম্পাদনা ও সংগঠিত করা যায়।
৫। টেক্সট এডিটর: মোবাইল টেক্সট এডিটর, যেমন নোটপ্যাড অ্যাপস বা মাইক্রোসফট ওয়ার্ডের মতো ওয়ার্ড প্রসেসর, বেসিক টেক্সট-ভিত্তিক ডেটা এন্ট্রির জন্য ব্যবহার করা যেতে পারে।
৬। ডাটাবেস অ্যাপস: কিছু মোবাইল ডাটাবেস অ্যাপ এবং ম্যানেজমেন্ট টুল সরাসরি মোবাইল ডিভাইসে স্ট্রাকচার্ড ডেটা প্রবেশ করতে এবং ম্যানিপুলেট করতে দেয়। এগুলো ইনভেন্টরি ম্যানেজমেন্ট বা কাস্টমার রিলেশনশিপ ম্যানেজমেন্ট (CRM) এর মতো কাজের জন্য উপযোগী।
৭। দূরবর্তী ডেস্কটপ অ্যাক্সেস: কিছু ক্ষেত্রে, ব্যক্তিরা মোবাইল অ্যাপ ব্যবহার করে দূরবর্তীভাবে তাদের ডেস্কটপ বা কম্পিউটার অ্যাক্সেস করতে পারে। তাদের মোবাইল ডিভাইসটিকে রিমোট কন্ট্রোল হিসেবে ব্যবহার করার সময় তাদের কম্পিউটারে ডেটা এন্ট্রি করার অনুমতি দেয়।
ভয়েস রিকগনিশন এবং টাচস্ক্রিন ইনপুটের মতো কাজ মোবাইলে করা সহজ। ডেটা এন্ট্রির জন্য মোবাইল ডিভাইস ব্যবহার করার সময় ডেটা নিরাপত্তা এবং নির্ভুলতা নিশ্চিত করা অপরিহার্য।
ডাটা এন্ট্রির কাজগুলো কোথায় পাবেন?
অনলাইনে অনেক ধরনের মার্কেট প্লেস আছে। যেমন- ফাইবার, ফ্রিল্যান্সার ডট কমে,আপ-ওয়ার্ক, এই মার্কেটপ্লেস গুলো বেশি জনপ্রিয়। এই সবগুলো মার্কেট প্লেসেই আপনি ডাটা এন্ট্রি রিলেটেড অনেক কাজ পাবেন। সবথেকে বেশি ডাটা এন্ট্রি রিলেটেড কাজ পাবেন ফাইবারে। এছাড়াও ফ্রিল্যান্সার ডট কমে গিয়েও অ্যাকাউন্ট তৈরি করতে পারেন। এবং ডাটা এন্ট্রির কাজ করতে পারেন।
শেষকথা
ডাটা এন্ট্রি বেশ সহজলভ্য কাজ হওয়ায় প্রতিযোগিতাও বেশি। তাই নিজের দক্ষতে বাড়াতে হবে। এই ব্লগে ডাটা এন্ট্রি সম্পর্কে বিস্তারিত জানানোর চেষ্টা করেছি। এরপরও কোনো কিছু জানার থাকলে কমেন্ট করুন।