প্রযুক্তির খবর

Bitcoin কি এবং কিভাবে কাজ করে

বর্তমান সময়ের একটি জনপ্রিয় ও প্রচলিত বিষয় হলো Bitcoin। এটি এখনকার সময়ে কোন নতুন কিছু নয়। ইদানিং অনেকেই বিটকয়েন সম্পর্কে অবগত হয়ে গেছে। আর যারা এটি সম্পর্কে খুব বেশি জানে না, তারাও এই বিষয়ে জেনে নিতে আগ্রহ প্রকাশ করছেন। তাই বিটকয়েন সম্পর্কে কিছু ব্যাসিক বিষয়াদি নিয়ে আজকে আমরা আলোচনা করব। যেমন, বিটকয়েন কি, এটির সংক্ষিপ্ত ইতিহাস এবং এটি কিভাবে কাজ করে সেই বিষয়ে সংক্ষেপে আলাপ করব। আপনি হয়তো বা বিটকয়েন কি বা এ বিষয়ে কিছুটা হলেও শুনেছেন। তবে যদি আপনি এবিষয়ে না শুনে থাকেন তাহলে এই আর্টিকেলটি আপনার জন্যই তৈরি করা হয়েছে। তো আর কথা না বাড়িয়ে চলুন শুরু করা যাক,

Bitcoin কি

প্রথমেই আমাদের জানতে হবে বিটকয়েন আসলে কি। বিতকয়েন ইলেক্ট্রনিক মুদ্রা বা ক্রিপ্টকারেন্সি নামে পরিচিত। এটি একধরনের ডিজিটাল মুদ্রা। বিটকয়েন হলো এমন একটি ভার্চুয়ান কারেন্সি/ মুদ্রা যেটা যে কেউ ব্যবহার করতে পারে। কিন্তু কেবল ডিজিটালি ব্যবহার করতে পারবে। অন্যান্য মুদ্রা যেমন ডলার, রুপি, টাকা ইত্যাদির ন্যায় বিটকয়েনও এক ধরনের মুদ্রা। কিন্তু আসল মুদ্রা ও এর মধ্যে পার্থক্য হলো এটি আমরা হাত দিয়ে স্পর্শ করা তো দুরের কথা চোখ দিয়ে দেখতেও পাইনা।

কারন বিটকয়েন এমন এক ধরনের মুদ্রা যা শুধু মাত্র অনলাইনের মাধ্যমে ডিজিটাল প্রক্রিয়ায় ক্রয়-বিক্রয় করা যায়। তাই বিটকয়েনকে ডিজিটাল কারেন্সি বলা হয়। এটি কেবল অনলাইন ওয়ালেট গুলোতে জমা করা রাখা যায়। আর অনলাইনে এটি ট্রান্সফারের জন্য এসব ওয়ালেট অ্যাপ অথবা ওয়েবসাইট ব্যবহার করতে হয়।

যেহেতু এগুলো হাতে ধরা ছোয়া বা দেখা যায় না তাই এগুলো কেবল সংখ্যার মাধ্যমে প্রাকাশ করা যায়। এক্ষেত্রে প্রত্যেক দেশে যেমন সেই দেশের মুদ্রার মান ভিন্ন ভিন্ন, তেমনি বিটকয়েনের মানও বিভিন্ন দেশের প্রেক্ষিতে আলাদা আলাদা হয়ে থাকে। এখন প্রশ্ন হলো তাহলে ১ বিটকয়েন সমান বাংলাদেশের কত টাকা। আগেই বলে নিই, বিটকয়েনের মান প্রত্যেক দিন উপর-নিচে উঠতে থাকে। তাই আমি যেই সংখ্যা বলবো সেটা স্থায়িত্ব্য খুব বেশি ক্ষন নাও হতে পারে। তবে আজকের হিসেবে বিটকয়েনের বাংলাদেশি মুল্য প্রায় ৫৫৯৬৯৪৩.৬৪ টাকা। (তথ্য সূত্রঃ Google)

এমনও হতে পারে যে, কালই এটির মূল্য কমে/বেড়ে যেতে পারে। আপনার মনে হতে পারে এটি কিছুটা শেয়ার মার্কেটের মতো। কিন্তু এটির সাথে শেয়ার মার্কেটের কোন দূর-দূরান্তেরও সম্পর্ক নেই। তো আরো সহজ সরল ভাবে যদি আপনি বিটকয়েনের সংঙ্গা চান তবে বলা যায়, কোন প্রকার ব্যাংক বা গভার্নমেন্টের নিয়ন্ত্রণহীন মুদ্রাকেই বিটকয়েন বলে। এর উপর দেশের সরকারের কোন নিয়ন্ত্রণ থাকে না। তাই বলে এটি কিন্তু বেয়াইনি না। কোন দেশই এখন পর্যন্ত এটিকে নিষিদ্ধ করে নি।

Bitcoin এর সংক্ষিপ্ত ইতিহাস

এতক্ষনে হয়তো বুঝতেই পেরেছেন বিটকয়েন আসলে কি। এখন তাহলে বিটকয়েনের উৎপত্তি সম্পর্কে জেনে নেওয়া যাক। মূলত বিটকয়েন কে আবিষ্কার করেছেন তা এখন অবদি সঠিক ও নির্ভূলভাবে জানা যায় নি। তবে ২০০৮ সালের অক্টোবর মাসে একব্যক্তি ইন্টারনেটে একটি গবেষনার ফলাফল প্রকাশ করেছিলেন। তাতে তার ছদ্মনাম হিসেবে ব্যবহার করেছিলেন সাতোশি নাকামোতো। এই গবেষণায় তিনি শিরোনাম দিয়েছিলেন “Bitcoin: A Peer-to-Peer Electronic Cash System”। এটির মাধ্যমেই তিনি ধারনা দিয়েছিলেন ব্যাংক বা কোন প্রকার প্রতিষ্ঠান ব্যাতিত কিভাবে পৃথিবীর যেকোন প্রান্তে অর্থ লেনদেন করা যায়।

তার উক্ত গবেষণার ভিত্তিতেই ২০০৯ সালের জানুয়ারিতে বিটকয়েনের যাত্রা শুরু হয়। তিনিই প্রথম একটি সফটওয়্যার তৈরি করেন যাতে করে বিটকয়েনের মাইনিং করা যায়। মাইনিং হলো বিটকয়েন ট্রাঞ্জেশন ভেরিফাই করার প্রক্রিয়া। সাতোশি নাকামোতোর এই ছদ্মনাম অনুসারে বিটকয়েনের এককের নাম সাতোশি রাখা হয়। এখন প্রশ্ন হলো ১ বিটকয়েন সমান কত সাতোশি? ১০০০০০০০০(দশ কোটি) সাতোশি সমান ১ বিটকয়েন।

Bitcoin কিভাবে কাজ করে?

Bitcoin একটি ভার্চুয়াল মুদ্রা হওয়ায় এটি নিজের মূল্য নিজেই সংরক্ষন করতে পারে। আগেই বলেছি এটি সংরক্ষন করার জন্য ব্যাংক বা অন্য কোন প্রতিষ্ঠানের প্রয়োজন পরে না। এটি কিছুটা স্বর্ণের ন্যায়। অর্থাৎ, স্বর্ণ যেমন নিজের মূল্য হ্রাস বৃদ্ধি করে এটিও সেরকম নিজের মূল্য হ্রাস বৃদ্ধি করতে সক্ষম। কাজেই বিটকয়েন সঞ্চয় করে রেখে যখন এর মূল্য বৃদ্ধি হয় তখন বিক্রয় করে অনেক টাকা আয় করা যাবে এতে কোন স্বন্ধেহ নেই। কিন্তু সমস্যা হচ্ছে বিটকয়েনের মূল্য সর্বদা বৃদ্ধি পাবে এমন কোন কথা নেয়। মাঝে মাঝে এটির মূল্য অনেকটাই হ্রাস পায়।

বিটকয়েন পরিচালিত হয় এক ধরনের ব্লক চেইনের মাধ্যমে। এটি খুব সাধারন একটি সিষ্টেম। ব্লক চেইন প্রতিটি ব্যবহারকারি ও তার ব্যক্তিগত বিটকয়েন ওয়ালেটের জন্য আলাদা আলাদা হয়। বিটকয়েন জালিয়াতি এরানোর জন্য বিটকয়েন ট্রাঞ্জেকশন একটি পাবলিক খতিয়ানে লিখে রাখা হয়। এটি লেখা হয় বিটকয়েন ডিজিটাল ওয়ালেটের নাম অনুসারে। এই প্রক্রিয়াটিতে কোন প্রকার ব্যক্তিগত নামে লেখা হয় না। এজন্যই মূলত বিটকয়েন ট্রাঞ্জেকশনে ব্যক্তির পরিচয় সম্পূর্ণ গোপন থাকে। কিন্তু ব্যক্তি পরিচয় গোপন থাকলেও বিটকয়েন ওয়ালেটের ট্রাঞ্জেকশন হিস্ট্রি দেখা যায়।

বিটকয়েন কোন ওয়ালেটে পাঠাতে মডারেসনের জন্য তা পেন্ডিং অবস্থায় থাকে। কোন মাইনর (যারা মাইনিং করে) এটিকে লেনদেন করার জন্য এপ্রুভ করার পূর্বে বিটকয়েন কোন ওয়ালেটে পৌছাতে পারে না। এই এপ্রুভ করার জন্য অবশ্য মাইনর কিছু পরিমান সাতোশি পায়। আপনি যদি মাইনিং করতে চান তবে আপনার কাছে একটি শক্তিশালি কম্পিউটার থাকা আবশ্যক।

আরেকটি বিষয় বলে রাখা ভালো যে,স্বাভাবিক মুদ্রার মতো বিটকয়েন তৈরি করা যায় না। সাধারন মুদ্রা যেহেতু সরকার দ্বারা নিয়ন্ত্রিত তাই প্রয়োজন-মাফিক সরকার নতুন মুদ্রা উৎপাদন করতে পারে। কিন্তু বিটকয়েন এভাবে তৈরি করা যায় না। বিটকয়েন তৈরি করার জন্য একটি নির্দিষ্ট সীমা নির্ধারন করা আছে। সারা বিশ্ব সর্বমোট ২১ মিলিয়ন বিটকয়েন পৌছানোর পরে এটি স্বয়ংক্রিয়ভাবে এটির উৎপাদন বন্ধ করে দেয়। এর পেছনে অবশ্যই একটি নির্দিষ্ট কারন আছে। অধিক পরিমান বিটকয়েন তৈরি করা হলে এর দাম হ্রাস পেতে পারে তাই নিদিষ্ট পরিমানে পৌছে বন্ধ করা হয়েছে।

সবাইকে ধন্যবাদ ।।

 

 

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button
error: Content is protected !!