সংকেত কাকে বলে ? আণবিক, গাঠনিক, এনালগ এবং ডিজিটাল সংকেত
সংকেত কি অথবা সংকেত কাকে বলে, যৌগের রাসায়নিক সংকেত কাকে বলে, আণবিক সংকেত ও গাঠনিক সংকেত কাকে বলে, ডিজিটাল সংকেত কি এবং সংকেত এর প্রকারভেদ এসব বিষয়ে আজকের আর্টিকেলে আমরা জানবো।
সংকেত কি বা সংকেত কাকে বলে ?
কোন মৌলিক বা যৌগিক পদার্থের অণুতে কতটি মৌল আছে এবং মৌলতে কতটি পরমাণু রয়েছে সেগুলো যে প্রতীকের সাহায্যে দেখানো হয় তাকে সংকেত বলে।
যেমন: অক্সিজেনের একটি অণুকে প্রকাশ করতে 02 ব্যবহার করা হয়। যার অর্থ হলো একটি অক্সিজেনের অণুতে দুইটি অক্সিজেন (O) পরমাণু আছে।
আবার পানির একটি অণুকে প্রকাশ করতে H2O ব্যবহার করা হয়। এর অর্থ হচ্ছে পানির একটি অণুতে দুইটি হাইড্রোজেন (H) এবং একটি অক্সিজেন (O) পরমাণু থাকে।
একইভাবে কপার সালফেটের সংকেত CuSO4, ভিনেগার বা এসিটিক এসিডের সংকেত CH3-COOH এবং গ্লুকোজের সংকেত C6H12O6
যৌগের সংকেত দুই ধরনের হয়ে থাকে। যেমন:
- আণবিক সংকেত বা রাসায়নিক সংকেত এবং
- গাঠনিক সংকেত।
1) আণবিক সংকেত কাকে বলে?
কোন অণুর উপাদান পরমাণুসমূহের প্রতীক এবং পরমাণুর সংখ্যার সাহায্যে যে সংকেত প্রকাশ করা হয় তাকে আণবিক সংকেত বলে।
অথবা একটি মৌল বা যৌগের অণুতে যে যে ধরনের মৌলের পরমাণু থাকে তাদের প্রতীক এবং যে মৌলের যতটি থাকে সেই সকল সংখ্যা দিয়ে প্রকাশিত সংকেতকে আণবিক সংকেত বা রাসায়নিক সংকেত বলে।
যেমন: দুটি হাইড্রোজেন (H) পরমাণু ও একটি অক্সিজেন (O) পরমাণু মিলে পানির অণুর (H2O) একটি অণু গঠিত হয়। এখানে, H2O হলো পানির অণুর আণবিক সংকেত বা রাসায়নিক সংকেত।
সুতরাং মৌল বা যৌগমূলকের প্রতীক বা সংকেত ও তাদের সংখ্যার মাধ্যমে কোন যৌগ অণুকে প্রকাশ করাই হলো উক্ত যৌগের রাসায়নিক সংকেত। এক্ষেত্রে অণুর মধ্যে অবস্থিত মৌলের বা যৌগমূলকের সংখ্যাকে সংকেতের নিচে ডান পাশে ছোট করে লেখা হয়।
জানুনঃ আইইএলটিএস (IELTS) কি । কেন করবেন, যোগ্যতা বিস্তারিত জানুন
আণবিক সংকেত বা রাসায়নিক সংকেত লেখার নিয়ম
(a) কোন মৌলের একটি অণুতে যতগুলো পরমাণু থাকে তার সংখ্যাটি ইংরেজি হরফে মৌলটির ডান পাশে নিচে ছোট করে লিখতে হয়। যেমন: ওজন গ্যাসের একটি অণুতে তিনটি অক্সিজেন পরমাণু থাকে তাই ওজন অণুর সংকেত 03।
যে মৌলগুলো অণু গঠন করে না তাদেরকে শুধু প্রতীক দিয়ে বোঝানো হয়। যেমন: সোডিয়াম (Na) একটি ধাতু এবং এটি অণু গঠন করে না। তাই সোডিয়ামকে বোঝাতে শুধু এর প্রতীক Na লিখতে হয়। একইভাবে আয়রনের সংকেত Fe, ক্যালসিয়াম এর সংকেত Ca, ম্যাগনেসিয়ামের সংকেত Mg।
(b) কখনো কখনো কোন যৌগের অনু দুটি ভিন্ন মৌলের পরমাণুর দিয়ে গঠিত হয়। তাদের যোজনী যদি কোনো সাধারণ সংখ্যা দ্বারা বিভাজ্য না হয় তাহলে দুটি মৌলের প্রতীক পাশাপাশি লিখে একটি মৌলের প্রতীক এর পাশে অন্যটির যোজনী লিখতে হয়।
যেমন: ক্যালসিয়ামের যোজনী 2 এবং ক্লোরিনের যোজনী 1।
যেহেতু যোজনী দুটি কোন সাধারণ সংখ্যা দ্বারা বিভাজ্য নয় তাই যদি ক্যালসিয়াম এবং ক্লোরিন দ্বারা গঠিত কোন যৌগের সংকেত লিখতে হয় তাহলে ক্যালসিয়ামের প্রতীক Ca এর ডান পাশে নিচে ছোট করে ক্লোরিনের যোজনী লিখতে হবে এবং ক্লোরিনের প্রতীক Cl এর ডান পাশে নিচে ছোট করে ক্যালসিয়ামের যোজনী লিখতে হবে। অর্থাৎ ক্যালসিয়াম এবং ক্লোরিন এর সমন্বয়ে গঠিত ক্যালসিয়াম ক্লোরাইড অণুর সংকেত হবে CaCl2।
(c) যদি দুটি মৌলের যোজনী কোন সাধারণ সংখ্যা দ্বারা বিভাজ্য হয় তাহলে যোজনীগুলো সেই সাধারণ সংখ্যা দিয়ে ভাগ দিয়ে মৌলের পাশে পুর্বের নিয়মে ভাগফলটি লিখতে হয়।
যেমন: কার্বন এবং অক্সিজেন দিয়ে গঠিত যৌগ হলো কার্বন ডাই অক্সাইড। কার্বনের যোজনী 4 এবং অক্সিজেনের যোজনী 2। কার্বনের যোজনীকে 2 দিয়ে ভাগ করলে 2 পাওয়া যায় আবার অক্সিজেনের যোজনীকে 2 দিয়ে ভাগ করলে 1 পাওয়া যায়।
এখন প্রথন নিয়ম অনুযায়ী কার্বনের সংকেত C এর ডান পাশে নিচে ছোট করে 1 এবং অক্সিজেনের নিচে 2 লিখতে হয়৷ কিন্তু সংকেত লেখার সময় যেহেতু 1 সংখ্যাটি লেখার প্রয়োজন নেই তাই কার্বন ডাই-অক্সাইড এর সংকেত CO2।
2) গাঠনিক সংকেত কাকে বলে?
একটি অণুতে মৌলের পরমাণুগুলো যেভাবে সাজানো থাকে প্রতীক এবং বন্ধনের মাধ্যমে তা প্রকাশ করাকে গাঠনিক সংকেত বলে।
যেমন: একটি কার্বন (C) পরমাণু চারটি হাইড্রোজেন (H) পরমাণুর সাথে যুক্ত হয়ে মিথেন (CH4) অণু গঠিত হয়।
আবার মিথেন অণুতে একটি কার্বন পরমাণুর সাথে চারটি হাইড্রোজেন পরমাণু শিকল আকারে যুক্ত হয়ে কার্বনের যোজনীগুলো পূর্ণ করে। নিচে মিথেনের গাঠনিক সংকেত দেখানো হলো:
অডিও সংকেত, ভিডিও সংকেত, এনালগ সংকেত এবং ডিজিটাল সংকেত
সংকেত কী: সংকেত হলো কোনো চিহ্ন বা কার্য বা শব্দ যা নির্দিষ্ট বার্তা বহন করে। কোনো তড়িৎ বা রেডিওর বেলায় সংকেত হলো কোনো ঘাত বা শব্দ তরঙ্গ, যা প্রেরণ করা হয়। অথবা সংকেত হতে পারে কোনো স্যাটেলাইট (কৃত্রিম উপগ্রহ) থেকে পাঠানো বেতার তরঙ্গ।
- উৎস অনুসারে বিবেচনা করলে সংকেত দুই প্রকার। যথা (১) অডিও সংকেত এবং (২) ভিডিও সংকেত।
- ইলেকট্রনিক যোগাযোগের সংকেতকে অন্যভাবেও প্রকারভেদ করা যায়। সংকেত প্রেরণের দিক দিয়ে বিবেচনা করলে সংকেত সাধারণত দুই প্রকার (১) এনালগ সংকেত ও (২) ডিজিটাল সংকেত।
অডিও সংকেত:
অডিও সংকেতের উৎস হলো শব্দ। কোনো বক্তা বা উপস্থাপকের কথা বা কন্ঠস্বর বা যে কোনো শব্দ তরঙ্গকে মাইক্রোফোনের সাহায্যে তড়িৎ সংকেতে রূপান্তরিত করা হয়। এর নাম অডিও সংকেত। এ অডিও সংকেতের কম্পাঙ্ক বা শক্তি এত কম যে একে দূর দূরান্তে প্রেরণ করা যায় না।
ভিডিও সংকেত:
ভিডিও সংকেতের উৎস হলো কোনো ছবি বা দৃশ্য। টেলিভিশন ক্যামেরা কোনো দৃশ্যকে ধারণ করে। স্ক্যানিং প্রক্রিয়ায় একে তড়িৎ সংকেতে রূপান্তরিত করা হয়। এ সংকেতের নাম ভিডিও সংকেত। কোনো দৃশ্যকে দৃশ্য হিসেবে সরাসরি প্রেরণ করা যায় না। তাই একে তড়িৎ সংকেত বা ভিডিও সংকেতে রূপান্তরিত করে পাঠানো হয়।
এনালগ সংকেত:
যেসব প্রতিভাস বা ঘটনার মান নিরবচ্ছিন্নভাবে পরিবর্তিত হয় , তাদের বলা হয় এনালগ। শব্দ, আলো, তাপমাত্রা, চাপের মান কোনো নির্দিষ্ট পাল্লা বা রেঞ্জের মধ্যে যে কোনো মান হতে পারে। এনালগ উপাত্ত নিরবচ্ছিন্নভাবে প্রেরিত হয়। টেলিফোন, রেডিও, টিভি সম্প্রচার ও কেবল টিভি সাধারণত এনালগ ডেটা বা উপরে প্রেরণ করে থাকে। সুতরাং এনালগ সংকেত হলো নিরবচ্ছিন্নভাবে পরিবর্তনশীল ভোল্টেজ বা কারেন্ট। অডিও ও জিনিস ভোল্টেজ হলো এনালগ সংকেতের উদাহরণ।
ডিজিটাল সংকেত:
সাধারণভাবে ডিজিট কথাটির অর্থ সংখ্যা। ডিজিটাল কথাটি এসেছে ডিজিট বা সংখ্যা কথাটি থেকে। ডিজিটাল সংকেত বলতে এখন বোঝায় সেই যোগাযোগ সংকেতকে, যাদের প্রত্যেককে পৃথকভাবে চেনা যায়। এ ব্যবস্থায় বাইনারি কোড অর্থাৎ 0 ও 1 এর সাহায্য নিয়ে যে কোনো তথ্য, সংখ্যা, অক্ষর, বিশেষ সংকেত ইত্যাদি বোঝানো এবং প্রেরিত হয়।
সুতরাং ডিজিটাল সংকেত বলতে সেই সংকেত বোঝায়, যাদের প্রত্যেককে স্বতন্ত্রভাবে চেনা যায়। কম্পিউটার যে কোনো উপাত্ত (ডেটা) সংরক্ষণ , প্রক্রিয়াকরণ এবং প্রেরণ করে থাকে ডিজিটাল ডেটা হিসেবে। মোডেমের সাহায্যে এনালগ ডেটাকে ডিজিটাল এবং ডিজিটাল ডেটাকে এনালগ ডেটায় রূপান্তরিত করা যায়।
ঘড়িতে এনালগ ঘড়ির কাটা অবিরত ঘুরে সময় দেয়, আর ডিজিটাল ঘড়িতে এক মিনিট পর পর সংখ্যা পরিবর্তিত হয়ে সময় দেয়।
এনালগ ও ডিজিটাল সংকেতের সুবিধা ও অসুবিধা
এনালগ প্রযুক্তি সাধারণত একটু পুরনো যোগাযোগ ব্যবস্থা। এই ব্যবস্থা টেলিফোন, রেডিও, ভিডিও ইত্যাদি যোগাযোগের ক্ষেত্রে ব্যবহৃত হয়। সাম্প্রতিককালের যোগাযোগব্যবস্থা, যেমন কম্পিউটার ব্যবস্থায় ডিজিটাল প্রযুক্তি বেশি ব্যবহৃত হয়। এনালগ ও ডিজিটাল সংকেতের মধ্যে কোনটি উত্তম তা তিনটি বিষয় দিয়ে বিচার করা যায়। এগুলো হল সংকেতের গুণগত মান, মাল মশলা ও দাম বা ব্যয়।
দূরত্ব বেশি হলে এনালগ সংকেতের ক্ষমতা ধীরে ধীরে কমতে কমতে এক সময় হারিয়েও যেতে পারে। একে বাঁচিয়ে রাখতে পুনবিবর্ধন করতে হয়, কিন্তু এতে নয়েজ (Noise) বেড়ে যায়। ফলে সংকেতের মান হ্রাস পায় বা সংকেত বিকৃত হয়। কিন্তু ডিজিটাল সিগন্যাল যেতে যেতে বিবর্ধিত হয়। ফলে সংকেত একই রকম থাকে।
স্বল্পসংখ্যক কম্পিউটার নেটওয়ার্কের জন্য এনালগ সংকেতে ব্যয় অনুযায়ী প্রাপ্তি বেশি, কিন্তু বেশি সংখ্যক কম্পিউটার নেটওয়ার্কের বেলায় ডিজিটাল সংকেতের ব্যয় অনুযায়ী প্রাপ্তি বেশি। এনালগ ডিভাইসের চেয়ে ডিজিটাল ডিভাইস ব্যয়বহুল হলেও। সার্ভিসের বেলায় সর্বসমেত ব্যয় কম। এনালগ ডিভাইসে ব্রুস কানেকশন হতে পারে, ডিজিটালে তা হয় না।
উপসংহার
চিহ্ন ও সংকেত কাকে বলে, সংকেত এর প্রকারভেদ, যৌগের রাসায়নিক সংকেত কাকে বলে, আণবিক সংকেত ও গাঠনিক সংকেত কি, অডিও, ভিডিও, এনালগ এবং ডিজিটাল সংকেত কি এসব বিষয়ে আশা করি আজকের আর্টিকেলে আপনারা জানতে পেরেছেন।