ই-সেবাপ্রযুক্তির খবরশিক্ষা

আউটসোর্সিং কী? কিভাবে আউটসোরসিং করা যায়?

সম্পূর্ণ ব্লগটি পড়লে আউটসোর্সিং নিয়ে পূর্ণ ধারণা পাবেন। এই ব্লগে থাকছে, আউটসোর্সিং কী? আউটসোর্সিং করতে কী কী বিষয়ে জানতে হবে? আউটসোর্সিং কিভাবে শিখবেন? কিভাবে করবেন? এর উদ্দেশ্য, কাজের সুযোগ, সুবিধা, অসুবিধা এবং টাকা উত্তোলনের মাধ্যম।

আউটসোর্সিং কী?

আউটসোর্সিং শব্দটি ‘আউটসাইড’ এবং ‘রিসোর্সিং’  শব্দের সমন্বয়ে গঠিত। যার অর্থ বাইরে থেকে রিসোর্স ব্যবহার করে কাজ করিয়ে নেওয়া।

অন্যভাবে বলা যায়, আউটসোর্সিং হলো এক ধরণের ব্যবসায়িক পদ্ধতি যেখানে কোন প্রতিষ্ঠান তাদের কাজের কিছু অংশ বা সম্পূর্ণ কাজ চুক্তির মাধ্যমে বাইরের কোন ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানকে দিয়ে করিয়ে নেয়

আইবিএমের মতে, আউটসোর্সিং এর এই ধারণাটা শুরু হয় ১৯৮৯ সালে। এরপর থেকে পুরো ৯০ এর দশক জুড়েই এটি বাস্তবায়িত হয়। বর্তমানে আউটসোর্সিং অনেক বেশি প্রচলিত এবং জনপ্রিয় একটি বিজনেস পদ্ধতিআউটসোর্সিং এর উদাহরণঃ

একটি সফটওয়্যার কোম্পানি তাদের ওয়েবসাইট ডেভেলপমেন্টের কাজ ফ্রিল্যান্সারদের দিয়ে করিয়েছে। এখানে কোম্পানি ফ্রিল্যান্সারদের দিয়ে আউটসোর্সিং এর মাধ্যমে তাদের কাজ করিয়েছে।

আউটসোর্সিং এর মূল উদ্দেশ্য

আউটসোর্সিং এর অনেক গুলো উদ্দেশ্য বা কারণ থাকে। মানুষ বা প্রতিষ্ঠান ভেদে উদ্দেশ্য ভিন্ন ভিন্ন হয়। নিম্নে কিছু উদ্দেশ্য বা কারণ উল্লেখ করা হলোঃ

১। খরচ কমানোঃ আউটসোর্সিং করার মাধ্যমে প্রতিষ্ঠান কর্মচারী নিয়োগ, প্রশিক্ষণ এবং অফিসের জায়গার খরচ কমাতে পারে।

২। দক্ষতা বৃদ্ধিঃ আউটসোর্সিং করার মাধ্যমে প্রতিষ্ঠান নির্দিষ্ট কাজের জন্য দক্ষ কর্মীদের সহায়তা নিতে পারে।

৩। দ্রুত কাজ সম্পন্নঃ আউটসোর্সিং করার মাধ্যমে প্রতিষ্ঠান দ্রুত কাজ সম্পন্ন করতে পারে।

৪। কাজের উপর মনোযোগ বৃদ্ধিঃ আউটসোর্সিং করার মাধ্যমে প্রতিষ্ঠান তাদের মূল কাজের উপর মনোযোগ দিতে পারে।

কী কী জানতে হবে?

আউটসোর্সিং করতে হলে বেশ কিছু বিষয়ে জানতে এবং বুঝতে হবে। সেগুলো হলঃ

  • নির্দিষ্ট বিষয়ে ভাল দক্ষতা থাকতে হবে,
  • নির্দিষ্ট প্লাটফর্মে আবেদন করার যোগ্যতা থাকতে হবে,
  • আবেদনে সাড়া পেলে নির্ধারিত সময়ের মধ্যে কাজ শেষ করতে হবে,
  • কাজ শেষে ক্লায়েন্ট এপ্রুভালের পরেই শুধু পারিশ্রমিক পাওয়া যাবে। তাই নিখুঁত ভাবে কাজ করার মানুষীকতা রাখতে হবে।
  • নতুন নতুন প্রযুক্তি সম্পর্কে নিজেকে আরো বেশি দক্ষ করে তুলতে হবে।

আউটসোর্সিং-এ নতুনদের যে দক্ষতাগুলো থাকতেই হবে তার মধ্যে অন্যতম হচ্ছে ধৈর্য্য। নতুন কাজ শেখতে হবে। অথবা সে যে বিষয়ে দক্ষ, সে বিষয়ে নিজের জ্ঞানকে আরও উন্নত করতে পরিশ্রম করতে হবে।

কিভাবে শিখবেন?

নিম্নলিখিত পদক্ষেপগুলো মেনে চললে আউটসোর্সিং শেখা যাবেঃ

১। আউটসোর্সিং সম্পর্কে প্রাথমিক জ্ঞান অর্জন করতে হবে।

২। প্রযুক্তিগত দক্ষতা অর্জন করতে হবে। যেমন- ওয়েব ডেভেলপমেন্ট, গ্রাফিক্স ডিজাইন, ডেটা এন্ট্রি, ওয়ার্ডপ্রেস ডেভেলপমেন্ট ইত্যাদি যেকোনো ক্ষেত্রে দক্ষতা অর্জন করতে হবে।

৩। অনলাইন কোর্স এবং টিউটরিয়াল থেকে প্রোগ্রামিং, ডিজাইন, ওয়েব ডেভেলপমেন্ট ইত্যাদি শেখা যাবে।

৪। ফ্রিল্যান্সিং প্ল্যাটফর্ম যেমন- Upwork, Freelancer, Fiverr ইত্যাদি তে রেজিস্ট্রেশন করতে হবে।

৫। ইংরেজি ভাষা, টেকনোলজি বা দক্ষতা শেখার জন্য একটি কোর্স বা ওয়ার্কশপ করা যেতে পারে।

৬। ছোট প্রকল্পে অংশগ্রহণ করে আউটসোর্সিং কাজে অভিজ্ঞতা অর্জন করা যেতে পারে।

৭। সামাজিক যোগাযোগ সাইটে যোগ দিতে এবং আউটসোর্সিং সম্পর্কে অভিজ্ঞতা অর্জন করতে একটি ক্যারিয়ার নেটওয়ার্ক তৈরি করুন।

কোথায় এবং কিভাবে করবেন?

বর্তমানে ইন্টারনেটে অনেক আউটসোর্সিং প্লাটফর্ম আছে যেখানে ফ্রিল্যান্সাররা কাজ করছেন। নিচে কিছু স্বনামধন্য আউটসোর্সিং প্ল্যাটফর্মের নাম উল্লেখ করা হলঃ


Upwork কি? কিভাবে Upwork একাউন্ট খুলবেন?


 

এই প্রতিষ্ঠান বা সাইট গুলো তে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান বা ব্যক্তি  তাদের প্রয়োজন অনুযায়ী বিভিন্ন কাজ এই সব মার্কেট প্লেসে দিয়ে থাকে। ফ্রিল্যান্সাররা এই কাজ গুলো ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানের নিয়ম বা শর্ত অনুযায়ী করে দিয়ে আয় করেন।

কী কী কাজের সুযোগ আছে?

জনপ্রিয়তার দিক থেকে কিছু কাজ আছে যেগুলো অনেক বেশি বিক্রি হয়। নিচের তালিকায় সবচেয়ে সম্ভাবনাময় কিছু কাজের নাম উল্লেখ করা হলঃ

  • কাস্টমার সার্ভিস
  • ডিজিটাল মার্কেটিং
  • কপিরাইটিং
  • ওয়েব ডেভেলপমেন্ট
  • ক্রিয়েটিভ ডিজাইন
  • এডমিনিস্ট্রেটিভ সার্ভিস
  • ওয়েবসাইট মেইন্টেইনেন্স
  • গ্রাফিক্স ডিজাইন
  • রিমোট অফিস এসিস্ট্যান্ট
  • সেলস এন্ড মার্কেটিং

চাহিদা কেমন?

আউটসোর্সিং কাজের চাহিদা দিন দিন বেড়ে চলেছে। বিশেষ করে মানুষ এখন যেভাবে সবকিছুর জন্যে অনলাইনের ওপর নির্ভরশীল হয়ে পড়ছে তাতে সামনের দিনগুলোতে দেখা যাবে সবকিছুই অনলাইনে পাওয়া যাচ্ছে।

বাংলাদেশ আউটসোর্সিং-এ পূর্বের থেকে বর্তমানে অনেক ভাল করছে। বিভিন্ন সরকারি উদ্যোগ এবং এই স্বাধীন পেশার প্রতি মানুষের আগ্রহ এই সেক্টরে একটি বড় পরিবর্তন নিয়ে এসেছে। বাংলাদেশে বর্তমানে এমন অনেক ফ্রিল্যান্সার আছেন যারা প্রতি মাসে কয়েক লক্ষ টাকা আয় করে থাকেন। সরকার যদি ফ্রিল্যান্সারদের পারিশ্রমিক পাওয়ার ক্ষেত্রে ভাল উদ্যোগ নিতে পারে তাহলে বাংলাদেশের ফ্রিল্যান্সাররা অনেক ভাল করবে সামনের দিকে।

সুবিধা

আউটসোর্সিং এর মাধ্যমে কাজ করিয়ে নেওয়ার অনেকগুলো সুবিধা আছে। সুবিধা গুলো হলঃ

১। দক্ষ মানুষঃ

ফ্রিল্যান্সাররা স্বাভাবিকভাবেই একটু বেশি দক্ষ হয়। কারণ তারা একই কাজ বিভিন্ন ক্লায়েন্টের জন্যে বার বার করে থাকে। এতে তাদের কাজের দক্ষতা সময়ের সাথে সাথে বাড়তে থাকে।

২। কাজের ব্যয়ঃ

আউটসোর্সিং করে কাজ করিয়ে নিতে আপনার কোন অফিস কিংবা আলাদা নির্ধারিত লোকবলের প্রয়োজনে হয় না তাই এই কাজের ব্যয়ও তুলনামূলকভাবে অনেক কম।

৩। অবকাঠামোগত ও প্রযুক্তিগত সুবিধাঃ

একটা নির্দিষ্ট কাজে দক্ষ একজন ফ্রিল্যান্সারের ওই কাজের জন্য সেটাপ থাকে। নিজের সেটাপ দিয়েই ফ্রিল্যান্সার কাজটি করে থাকেন। ফলে আউটসোর্সারের আলাদা করে প্রযুক্তি কেনার জন্য খরচ করতে হয়না। যেহেতু বাইরে থেকেই অনলাইনে ফ্রিল্যান্সাররা কাজ করতে পারেন, তাই মেইন্টেইনেন্স খরচও বাঁচে।

৪। দ্রুত কাজ করিয়ে নেওয়াঃ

ফ্রিল্যান্সাররা সব সময়ই নির্ধারিত সময়সীমা মেনে কাজ করার চেষ্টা করে। কারণ, দক্ষ লোকেরা কাজ পেয়ে থাকে নিয়মিত। তাই তারা যত দ্রুত একটি কাজ শেষ করতে পারবে ততদ্রুত অন্য ক্লায়েন্টের কাজ শুরু করতে পারবে।

৫। বিরতিহীন কাজঃ

আউটসোর্সিং করে কাজ করিয়ে নেওয়ার আরেকটি সুবিধা হচ্ছে, ফ্রিল্যান্সাররা যেকোন সময় কাজ করে। অন্যদিকে অফিসে কর্মচারিদেরকে সরকারি ছুটির দিনে ছুটি দিতে হয়। কিন্তু ফ্রিল্যান্সারদেরকে কোন ছুটি দিতে হয় না।

অসুবিধা

অন্যদিকে Outsourcing এর কিছু অসুবিধাও আছে। আউটসোর্সিং এর কিছু অসুবিধা নিচে উল্লেখ করা হলঃ

১। গোপনীয়তা ভঙ্গঃ

যেহেতু ফ্রিল্যান্সাররা নিয়োগ করা কর্মচারী নয়, তাই তাদের কাছে কোম্পানীর গোপন বিষয় সম্পর্কে তথ্য থাকতে পারে। আর সেই তথ্য অন্য কোথাও চলে যেতে পারে।

২। দক্ষ ফ্রিল্যান্সার খুঁজে পেতে ব্যর্থ হওয়াঃ

ভাল মানের ফ্রিল্যান্সার খুঁজে নিতে ব্যর্থ হলে খারাপ কোয়ালিটির কাজ পাবেন। তাই কিভাবে ভাল ফ্রিল্যান্সার খুঁজে পাওয়া যাবে তা বুঝে নিতে হবে।

৩। ব্যবসায়িক নিয়ন্ত্রণের ক্ষেত্রে সমস্যাঃ

এই ধরনের ক্ষেত্রে ব্যবসায়িক নিয়ন্ত্রণের ক্ষেত্রে সমস্যা হতে পারে। কারণ কর্মচারীরা স্বাধীনভাবে কাজ করে। তারা তাদের ইচ্ছা মত কাজ করে এবং নিজেদের জীবন নিজেদের মত করে চালায়।

অর্থ উত্তোলনের মাধ্যম

তথ্য ও প্রযুক্তির উন্নত এই যুগে, Outsourcing বা ফ্রিল্যান্সিং এর মাধ্যমে আয় করা টাকা উত্তোলন নিয়ে চিন্তিত হওয়ার কারণ নেই। টাকা উত্তোলনের কয়েকটি উপায় নিয়ে আলোচনা করা হলঃ

  • কোন প্লাটফর্মে কোন মাধ্যমে ফ্রিল্যান্সাররা টাকা উত্তোলন করতে পারবে তার একটি সুনির্দিষ্ট নীতিমালা থাকে। সেটা সবগুলো প্ল্যাটফর্মের জন্যে আলাদা। যেমনঃ আপওয়ার্কের ক্ষেত্রে সরাসরি বাংলাদেশের ব্যাংক একাউন্টে টাকা উত্তোলন করতে পারবেন। তবে এক্ষেত্রে লিমিট একটু কম, আর ফি কিছুটা বেশি। সর্বোচ্চ ৮০০০ ডলার উত্তোলন করতে পারবেন।
  • এছাড়া পেওনিয়ারের মাধ্যমে আপওয়ার্ক থেকে টাকা উত্তোলন করা যায়। ব্যাংক কিংবা পেওনিয়ারের, দুই ক্ষেত্রেই কিছু খরচ বা ফি গুনতে হবে, আপওয়ার্ক একটি ফি কাটবে এবং ব্যাংক ও পেওনিয়ারের ফি কাটবে। ফ্রিল্যান্সার ডট কম থেকে টাকা তুলতে শুধুমাত্র এক্সপ্রেস উইথড্র সিস্টেমের মাধ্যমে উঠান যায়। এছাড়া বাংলাদেশে সাপোর্ট করে এমন কোন পেমেন্ট-প্রক্রিয়া এই প্লাটফর্মটি সাপোর্ট করে না।
  • অন্য যে প্লাটফর্মে ফ্রিল্যান্সার হিসাবে কাজ করছেন, সেই প্লাটফর্মের পেমেন্ট-প্রক্রিয়া সম্পর্কে ভালভাবে পড়ে নিবেন। আর দেখে নিবেন, বাংলাদেশ সাপোর্ট করে এমন পেমেন্ট-প্রক্রিয়া আছে কিনা। তা না হলে হয়ত আপনি আপনার টাকা তুলতে গিয়ে অনেক ঝামেলার মধ্যে পড়বেন কিংবা দেখা যাচ্ছে আপনি নিতেই পারছেন না কষ্টার্জিত টাকা।

পরিশেষে বলা যায়, আউটসোর্সিং একটি সম্ভাবনাময় ক্ষেত্র। দিন দিন এর চাহিদা বাড়ছে। তাই নিজেকে দক্ষ করে গড়ে তুলুন, নিজের কর্মসংস্থান গড়ুন।

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button
error: Content is protected !!