দ্রুত ফ্রিল্যান্সার হবেন কিভাবে?
ফ্রিল্যান্সিং ক্যারিয়ার বর্তমান সময়ে ব্যাপক জনপ্রিয়। বিশেষ করে তরুণ প্রজন্ম চাকরির পাশাপাশি ফ্রিল্যান্সিং কে প্রাধান্য দিচ্ছে। তাছাড়া ছাত্র ছাত্রীরা লেখাপড়ার পাশাপাশি তাদের স্কিল অনুযায়ী ফ্রিল্যান্সিং এর কাজ করছে। এতে যেমন মেধার বিকাশ হচ্ছে তেমনি যুবসমাজ স্বাবলম্বী হতে পারছে।
এই সেক্টরে বিভিন্ন সুযোগ আছে যেখানে আপনি আপনার দক্ষতা কাজে লাগিয়ে উপার্জন করতে পারেন। যেমন- কন্টেন্ট রাইটিং, ওয়েব ডেভেলপমেন্ট, ওয়েব ডিজাইন, ডাটা এন্ট্রি, ডিজিটাল মার্কেটিং ইত্যাদি। আরও পড়ুন-ফ্রিল্যান্সিংয়ে কোন কাজের চাহিদা বেশি।
আজকে আপনাদের সাথে ফ্রিল্যান্সার হওয়ার কিছু টিপস শেয়ার করব।
ফ্রিল্যান্সিং এর সেক্টরসমূহ
প্রথমেই চিন্তা করে দেখুন আপনি কোন কাজে আগ্রহী এবং কমবেশি জ্ঞান আছে। মনে করুন আপনি লিখালিখি করতে পছন্দ করেন। মোবাইল বা কম্পিউটারে মোটামুটি টাইপিং করতে পারেন। তাহলে আপনি কন্টেন্ট রাইটার হিসেবে কাজ করতে পারেন। এখন আমি যে কাজগুলোর চাহিদা ব্যাপক সেগুলো নিয়ে কিছু বলব।
ওয়েব ডেভেলপমেন্ট
আমরা যে কোন বিষয়ে জানতে এমনকি কেনাবেচা করতেও এখন ইন্টারনেটের সাহায্য নেই। একারণে বিভিন্ন ইনফরমেশন নিয়ে বা পণ্য বিক্রির উদ্দেশ্যে অনেক ওয়েবসাইট তৈরি হচ্ছে। আর এই ওয়েবসাইট তৈরি করতে প্রতিষ্ঠানের প্রয়োজন অভিজ্ঞ ওয়েব ডেভেলপারের। আপনি এ কাজে দক্ষ হলে দেশে এবং দেশের বাইরে প্রচুর কাজের সুযোগ পাবেন।
ওয়েব ডিজাইন
নতুন ওয়েবসাইট যেমন তৈরি হচ্ছে তেমনি পুরাতন ওয়েবসাইটগুলোও আপডেট করা হচ্ছে। নতুন ফিচার যোগ করা হচ্ছে। এসব কাজে প্রয়োজন ওয়েব ডিজাইনারের। আপনি ওয়েব ডিজাইনিং এর কাজ পারলে অনেক সুযোগ পাবেন। দক্ষ ডিজাইনারের পারিশ্রমিকও অনেক।
ইউটিউব চ্যানেল থেকে আয়
বর্তমানে ফ্রিল্যান্সিং এর অন্যতম জনপ্রিয় কাজ হলো ইউটিউব চ্যানেলে ভিডিও তৈরি করা। তবে ইউটিউব চ্যানেল খুলে ভিডিও আপলোড করলেই আপনি ইনকাম শুরু করতে পারবেন না। এজন্যে আপনার চ্যানেলে ১০০০ সাবস্কাইবার এবং ৪০০০ ঘন্টা ওয়াচ টাইম থাকতে হবে। আপনার চ্যানেলকে এই পর্যায়ে আনতে প্রচুর পরিশ্রম করতে হবে। তবে গুগল অ্যাডসেন্স পেয়ে গেলে আপনার জন্যে ইনকামের পথ তৈরি হয়ে যাবে। অবশ্য আয় বাড়াতে আপনার ভিডিও এর মান ধরে রাখতে হবে।
কন্টেন্ট রাইটিং
কন্টেন্ট রাইটিং বা আর্টিকেল রাইটিং এর কাজের সুযোগ প্রতিনিয়ত বাড়ছে। কেননা যে কোন তথ্য জানতে আমরা ইন্টারনেটের উপর নির্ভর করি সবচেয়ে বেশি। আর এই তথ্যগুলো অবশ্যই কারো লেখা অর্থাৎ, কোন রাইটার লিখেছেন। কন্টেন্ট রাইটার হিসেবে আপনি কোন ক্লায়েন্টের আন্ডারে কাজ করতে পারেন অথবা নিজেই ওয়েবসাইট খুলে সেখানে লিখতে পারেন। ক্লায়েন্টের সাথে লিখলে চুক্তি অনুযায়ী পেমেন্ট পাবেন। আর নিজের ওয়েবসাইটে লিখলে গুগলের নিয়ম অনুযায়ী এডসেন্স পাওয়ার পর ইনকাম শুরু হবে।
গ্রাফিক্স ডিজাইন
বিভিন্ন লোগো, পোস্টার, ব্যানার তৈরির কাজ এখন গ্রাফিকস ডিজাইনাররা করে থাকে। আপনি ভালো গ্রাফিক্স ডিজাইনিং পারলে ঘরে বসেই ৩০ হাজার থেকে কয়েক লাখ টাকা পর্যন্ত ইনকাম করতে পারবেন। এখন অনলাইনেই গ্রাফিক্স ডিজাইনের প্রচুর কাজের সুযোগ আছে।
ডাটা এন্ট্রি
ফ্রিল্যান্সারদের কাছে এই কাজটিও বর্তমানে বেশ পছন্দের। খুব বেশি খুটিনাটি জ্ঞান প্রয়োজন হয়না ডাটা এন্ট্রির কাজের জন্য। মোটামুটি ইংরেজি জানা থাকলে, টাইপিং ভালো পারলে আর মাইক্রোসফট ওয়ার্ড এবং মাইক্রোসফট এক্সেলের কাজ ভালোভাবে জানা থাকলেই পারবেন এই কাজ।
ডিজিটাল মার্কেটিং
অনলাইনে ইনকামের সর্বোচ্চ পর্যায়ে আছে ডিজিটাল মার্কেটিং। ইন্টারনেটের কল্যাণে এখন ঘরে বসেই পণ্য বেচা–কেনা করতে পারবেন দেশে বা বিদেশে। ডিজিটাল মার্কেটিং হলো এসব পণ্যের ডিজিটাল উপায়ে প্রচার। অর্থাৎ কোন কোম্পানির পণ্য সম্পর্কে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে, ওয়েবসাইটে বা ভিডিও তৈরি করে প্রচার করতে পারেন। ডিজিটাল মার্কেটিং এর উপর এখন অনেক কোর্স আছে যেগুলো কমপ্লিট করে আপনিও দক্ষ ডিজিটাল মার্কেটার হয়ে উঠতে পারবেন।
সফটওয়্যার ডেভেলপমেন্ট
প্রায় বেশিরভাগ প্রতিষ্ঠানের এখন নিজস্ব সফটওয়্যার আছে যার মাধ্যমে তাদের সমস্ত কাজ করে। এই সফটওয়্যার তৈরির পরে সবসময় আপডেট করতে হয়। আপনি ঘরে বসেই কাজটি করতে পারবেন। পারিশ্রমিকও অনেক ভালো এই কাজে।
দ্রুত ফ্রিল্যান্সার হওয়ার উপায়
আপনি যদি দ্রুত ফ্রিল্যান্সার হতে চান তবে এমন কাজগুলো বেছে নিতে হবে যেগুলো আয়ত্ত্ব করা সহজ। অনেক দীর্ঘ প্রশিক্ষণ প্রয়োজন হয় না। তেমন কিছু টিপসই দিচ্ছি এখন।
১। কন্টেন্ট রাইটার হিসেবে কাজ করতে পারেন। কেননা এই কাজটি আপনি মোবাইল দিয়েও করতে পারবেন। তবে আপনার রিসার্চ করে গুছিয়ে লেখার যোগ্যতা থাকতে হবে। যে কোন বিষয়ে লিখতে সেটি নিয়ে বেশ কয়েকটি আর্টিকেল গুগল থেকে পড়ে তথ্য সংগ্রহ করে তারপর সুন্দর করে উপস্থাপন করুন। তাছাড়া গুগলের দেয়া কন্টেন্ট রাইটিং এর নিয়মগুলো আয়ত্ত্ব করা তুলনামূলক দ্রুত সময়ে করা সম্ভব।
২। দ্রুত ফ্রিল্যান্সার হওয়ার আরেকটি উপায় হতে পারে গ্রাফিক্স ডিজাইনিং। কোন কোর্স করে বা ইউটিউব ভিডিও দেখে গ্রাফিক্স ডিজাইনিং শিখে নিয়ে কাজ শুরু করতে পারেন অল্প সময়ে।
৩। প্রোগ্রামিং ল্যাংগুয়েজ শিখে শুরু করতে পারেন ওয়েব ডিজাইনের কাজ। এই কাজের বেশ চাহিদা আছে এখন। তাই মোটামুটি দক্ষ হলে অনলাইন মার্কেটপ্লেসে কাজ পাওয়া সম্ভব।
৪। ডিজিটাল মার্কেটিং এর ছোট ছোট অনেক কোর্স আছে। এর মধ্যে কোনটা করে নিয়ে ফ্রিল্যান্স ডিজিটাল মার্কেটার হিসেবে ক্যারিয়ার শুরু করতে পারেন। অনলাইনে দ্রুত কাজ শুরু করার জন্যে এটি বর্তমানে সবচেয়ে জনপ্রিয় অপশন।
৫। সিপিএ মার্কেটিং শিখে নিয়ে এফিলিয়েট মার্কেটিং এর কাজ করতে পারবেন।
৬। ইন্টারনেট থেকে ডাটা সংগ্রহ করতে পারলে এবং মাইক্রোসফট ওয়ার্ড এবং মাইক্রোসফট এক্সেলের কাজ পারলে ডাটা এন্ট্রির কাজ করতে পারবেন ঘরে বসেই।
৭। ফটোশপ এবং ভিডিও এডিটিং এর প্রচুর কাজ রয়েছে অনলাইন মার্কেটপ্লেসে। যা আপনি চাইলে ঘরে বসেই করতে পারবেন। এবং আপনার দক্ষতা অনুযায়ী পেমেন্ট পাবেন।
পরিশেষে
যত দ্রুতই ফ্রিল্যান্সার হওয়ার চেষ্টা করুন না কেন অবশ্যই আপনাকে আপনার কাজের ব্যাপারে সুস্পষ্ট জ্ঞান থাকতে হবে। সেইসাথে প্রতিনিয়ত শিখতে হবে এবং দক্ষতা বাড়াতে হবে। নয়তো প্রতিযোগিতার এই যুগে টিকে থাকা কষ্টকর হয়ে যাবে।