ভূমিকম্প কী? ভূমিকম্প কেন হয়?
ভূমিকম্প কী?
ভূমিকম্প হচ্ছে ভূমির কম্পন। ভূ অভ্যন্তরে একটি শিলা যখন অন্য একটি শিলার উপরে উঠে আসে তখন প্রচণ্ড শক্তির সৃষ্টি হয়, যা ঢেউয়ের মতো ছড়িয়ে পরে। একেই ভূমিকম্প বলে।
অন্যভাবে বলা যায়, পৃথিবী পৃষ্ঠের অংশবিশেষের হঠাৎ অবস্থান পরিবর্তন বা আন্দোলনই ভূমিকম্পন। বিভিন্ন প্রাকৃতিক দূর্যোগের মধ্যে এর ভয়াবহতা এবং ধ্বংসাত্মকতা বেশি।
ভূমিকম্প কেন হয়?
ভূ-অভ্যন্তরের গ্যাস, ভূ-পৃষ্ঠের ফাটল বা আগ্নেয়গিরির মুখ দিয়ে বেরিয়ে আসলে গ্যাসের স্থানটি ফাঁকা হয়। আর পৃথিবী পৃষ্ঠের তলের চাপ ওই ফাঁকা স্থানে দেবে গিয়ে ভারসাম্য বজায় রাখে। তখনই ভূ-পৃষ্ঠে প্রবল কম্পনের অনুভব হয় যা ভূমিকম্প নামে পরিচিত। ভূমিকম্পের প্রধান কিছু কারণঃ
- ভূ-পৃষ্ঠের হঠাৎ পরিবর্তন,
- আগ্নেয়গিরি সংঘটিত হওয়া,
- শিলাচ্যুতি,
- খনিজ সম্পদের খনন,
- ভূমিধ্বস,
- বিস্ফোরণ, ভূগর্ভস্থ পরীক্ষা.
ভূমিকম্প কত প্রকার?
সারা পৃথিবীতে বছরে গড়ে ৬ হাজার ভূমিকম্প হয়। এগুলোর বেশিরভাগই মৃদু, যেগুলো আমরা টের পাই না। স্থায়িত্বের উপর ভিত্তি করে ৩ ধরনের ভূমিকম্প হয়ে থাকে। যথা- ১। মৃদু, ২। মাঝারি ও ৩। প্রচণ্ড।
আবার, উৎসের গভীরতা অনুসারে ভূমিকম্পকে ৩ ভাগে ভাগ করা যায়। যথা-
১। অগভীরঃ ভূমিকম্পের কেন্দ্রস্থল ভূ-পৃষ্ঠের ৭০ কিলোমিটারের মধ্যে হলে অগভীর।
২। মধ্যবর্তীঃ ৭০ থেকে ৩০০ কিলোমিটারের মধ্যে হলে মধ্যবর্তী।
৩। গভীরঃ ৩০০ কিলোমিটারের নিচে হলে তাকে গভীর ভূমিকম্প হিসেবে চিহ্নিত করা হয়।
আরও পড়ুন- HAARP টেকনোলজি কী?
ভূমিকম্পের স্থায়িত্ব
ভূমিকম্পের গভীরতা ও স্থায়িত্বের মাত্রা অনুযায়ী ক্ষয়ক্ষতি হয়। ভূমিকম্পের স্থায়িত্ব সাধারণত কয়েক সেকেন্ড হয়ে থাকে। ভূমিকম্পের মাত্রা নির্ণয়ের জন্য রিখটার স্কেল ব্যবহৃত হয়।
রিখটার স্কেলে সাধারণত ভূমিকম্পকে ১ থেকে ১২ মাত্রা পর্যন্ত নির্ধারণ করা হয়। ৩ থেকে ৪ মাত্রার ভূমিকম্প বোঝা গেলেও ক্ষয়ক্ষতি তেমন হয় না। তবে ৫ কিংবা ৬ পর্যন্ত পৌঁছে গেলেই সেগুলোকে উচ্চ মাত্রার ভূমিকম্প হিসেবে ধরা হয়। রিখটার স্কেলের ১ মাত্রা পার্থক্যের অর্থ হচ্ছে আগেরটির চেয়ে পরেরটি ভূত্বকের ভেতর ৩২ গুন বেশি শক্তিশালী। তবে ভূপৃষ্ঠে এই তীব্রতার পরিমাণ হয় ১০গুন বেশি।
রিখটার স্কেলে ভূমিকম্পের মাত্রাঃ ৫ – ৫.৯৯ মাত্রার ভূমিকম্পকে মাঝারি, ৬ – ৬.৯৯ কে তীব্র, ৭ – ৭.৯৯ কে ভয়াবহ এবং ৮-এর উপর অত্যন্ত ভয়াবহ হিসেবে ধরা হয়।
বাংলাদেশে ভূমিকম্প
বাংলাদেশ ভারতীয়, ইউরেশিয় এবং মায়ানমার টেকটনিক প্লেটের মাঝে আবদ্ধ। এই প্লেটগুলোর নাড়াচাড়ার ফলে দেশে মাঝেমাঝেই ভূমিকম্প অনুভূত হয়। টেকটনিক প্লেটের অবস্থান পর্যবেক্ষণে, বাংলাদেশে উত্তর ও পূর্বে দুটি বর্ডার বা ‘ভূ-চ্যুতি’ রয়েছে। এটিই বাংলাদেশের ভূমিকম্পের কারণ। এজন্য বাংলাদেশের উত্তরপূর্বাঞ্চল তথা সিলেট এবং ততসংলগ্ন এলাকা প্রবল ভূমিকম্প প্রবণ। এর পরের অংশগুলোও যেমন ঢাকা ও রাজশাহী শহরও ভূমিকম্প প্রবণ এলাকা।
বাংলাদেশের অভ্যন্তরে শক্তিশালী ভূমিকম্প হয় ১৮২২ ও ১৮১৮ সালে। ১৮২২ সালে সিলেটে ৭.৫ মাত্রার এবং শ্রীমঙ্গলে ৭.৬ মাত্রার ভূমিকম্প হয়েছিল। সিলেট, চট্টগ্রাম ও ঢাকায় ১৫৪৮, ১৬৪২, ১৬৬৩, ১৭৬২, ১৭৬৫, ১৮১২, ১৮৬৫, ১৮৬৯ সালে ভূমিকম্প হওয়ার উল্লেখ পাওয়া যায়। তবে মাত্রা কত ছিল তা জানা যায়নি। বাংলাদেশে গত ১২০ থেকে ১২৫ বছরে মাঝারি ও বড় মাত্রার প্রায় শতাধিক ভূমিকম্প অনুভূত হয়েছে। তবে এসবের মধ্যে ৭ বা তার চেয়ে বড় মাত্রার ভূমিকম্পের সংখ্যা খুব বেশি নয়।
অনেক আবহাওয়াবিদের মতে, ছোটছোট ভূমিকম্প বড় ভূমিকম্পের বার্তা বহন করে। সে হিসেবে বাংলাদেশে বড় ধরনের ভূমিকম্প যে কোন সময় আঘাত হানতে পারে। আর যদি সেটা ঘটে, তাহলে সেটার ভয়াবহতা হবে মারাত্মক।
ভূমিকম্পের সময়ের করণীয়?
ভূমিকম্পের সময় কিছু করণীয় বিষয় থাকে, যা অবলম্বন করলে ক্ষয়ক্ষতি কমানো সম্ভব। তাই আতঙ্কিত না হয়ে নিম্নের পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে।
১। ভূমিকম্প হচ্ছে বুঝতে পেলে বা খবর পেলে সঙ্গে সঙ্গে ফাঁকা স্থানে আশ্রয় নিন।
২। উঁচু ভবন থেকে দ্রুত নামার জন্য লিফট ব্যবহার করবেন না।
৩। আতঙ্কিত না হয়ে ধৈর্য ধরে পরিস্থিতি মোকাবেলা করুন।
৪। দ্রুত নামার জন্য ভবন থেকে লাফিয়ে পড়বেন না।
৫। একই জায়গায় অনেক মানুষ একসঙ্গে না থেকে ভাগ হয়ে আশ্রয় নিন।
৬। সম্ভব হলে মাথার ওপর শক্তকরে বালিশ অথবা অন্য কোনো শক্ত বস্তু ধরে রাখুন।
৭। গ্যাস এবং বৈদ্যুতিক সংযোগ থেকে দূরে অবস্থান নিন।
৮। উঁচু ভবন থেকে বের হতে না পারলে শক্ত কোনো বীম, টেবিলের নিচে অবস্থান নিন।
৯। এ সময় গাড়িতে থাকলে গাড়ি খোলা জায়গায় থামিয়ে গাড়িতেই থাকুন।
১০। একটি ভূমিকম্পের পরপরই আরেকটি ছোট ভূমিকম্প হয়, যাকে ‘আফটার শক’ বলে। তাই অন্তত একঘণ্টা নিরাপদে থাকুন।
ভূমিকম্পের পর করণীয়:
- ক্ষতিগ্রস্ত এলাকা পরিদর্শন করবেন না।
- বিদ্যুৎ, গ্যাস, এবং জলের লাইন বন্ধ করে দিন।
- রেডিও টেলিভিশন থেকে জরুরি নির্দেশা শুনে তা মেনে চলতে হবে।
- সরকারি সংস্থাগুলোকে আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় সহযোগিতা করতে হবে।
- ভূমিকম্প-পরবর্তী উদ্ধার ও ত্রাণ কর্মসূচি নিশ্চিত করতে হবে।
আজকের ব্লগে ভূমিকম্প সম্পর্কীয় বিষয়াদি আলোচনা করা হল। করণীয় এবং বর্জনীয় বিষয় মেনে চলুন, নিরাপদ থাকুন।