কম্পিউটার চিপস কি? বিস্তারিত জানুন
কম্পিউটার চিপস
কম্পিউটার চিপস হলো কতগুলো ইলেকট্রনিক সার্কিটের একটি সেট যেগুলো সিলিকনের তৈরি ছোট্ট একটি পাতের উপর বসানো থাকে। একে চিপ, মাইক্রোচিপ, ইন্টিগ্রেটেড সার্কিট বা IC ও বলা হয়। যেকোন ইলেকট্রনিক ডিভাইসের মূল উপাদান হলো এই চিপস, বিশেষ করে কম্পিউটারের। কম্পিউটার চিপস তৈরি করা হয় খুবই সতর্কতার সাথে এবং একদম পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন ঘরে বসে। কেননা সামান্য একটু ধুলিকণাও যদি এতে প্রবেশ করে তাতেই পরিবর্তন হয়ে যেতে পারে এর পুরো কাজের প্রক্রিয়া। এমনকি নষ্টও হয়ে যেতে পারে চিপটি।
কম্পিউটার চিপস তৈরির ইতিহাস
আধুনিক কম্পিউটার চিপস এর উদ্ভাবন শুরু হয়েছিল ১৯৫০ এর দশকে। দুইজন গবেষক পৃথক পৃথক ভাবে গবেষণা করে প্রায় একই রকম দেখতে দুইটি কম্পিউটার চিপস তৈরি করেন। একটি তৈরি করেন জ্যাক কিলবি ১৯৫৮ সালে। অন্যটিও একই বছর রবার্ট নয়েস নামক এক গবেষক তৈরি করেন। এই কম্পিউটার চিপসগুলোতে প্রায় ১০ টির মতো ট্রানজস্টর ব্যবহার করা হয়েছিল। সময়ের সাথে এই প্রযুক্তির উন্নতি হলো এবং আরো ট্রানজিস্টর যুক্ত হতে লাগলো। এর ফলে বৃদ্ধি পেল চিপস এর কার্যক্ষমতাও। প্রথমদিকের কম্পিউটার চিপসগুলোকে small scale integration চিপস বলা হতো। পরবর্তীতে অধিক ট্রানজিস্টর যুক্ত চিপস গুলোকে medium scale এবং large scale integration চিপস নামে অবিহিত করা হয়। বর্তমানে একটি কম্পিউটার চিপে হাজার হাজার ট্রানজিস্টর যুক্ত করা হচ্ছে যা উন্মুক্ত করেছে মাইক্রোপ্রসেসর উদ্ভাবনের দ্বার। ট্রানজিস্টরের সংখ্যা বাড়লেও চিপসের আকার কিন্তু আরো ক্ষুদ্র হয়েছে। আধুনিক বিজ্ঞানীদের প্রচেষ্টায় খুবই ছোট্ট একটি সিলিকন চিপেই হাজার হাজার ট্রানজিস্টর বসানো যায় এখন। একে এখন মাইক্রোপ্রসেসর বলা হয় যা কিনা কম্পিউটারসহ যেকোনো ইলেকট্রনিক ডিভাইসের মস্তিষ্ক তথা প্রধান অংশ।
কম্পিউটার চিপের ধরণ
কম্পিউটার চিপস সাধারণত তিন ধরণের হয়। যেমন– ডিজিটাল, অ্যানালগ এবং মিশ্র সিগনালের চিপস। এই বিভিন্ন ধরণের চিপসগুলোর মাধ্যমে তাদের ডাটা বা তথ্য আদান প্রদানের সিগনালের বৈশিষ্ট্য এবং কার্যক্ষমতা সম্পর্কে বোঝা যায়। এদের আকারের উপরেও নির্ভর করে কাজের মান।
ডিজিটাল কম্পিউটার চিপসগুলো সবচেয়ে ছোট আকৃতির, কার্যক্ষম, দ্রুত গতিতে কাজ করে এবং সবচেয়ে বেশি ব্যবহৃত হয়। ০ এবং ১ এর মাধ্যমে এতে কাজ সম্পন্ন হয়।
অপরদিকে অ্যনালগ এবং মিশ্র সিগনালের চিপসের কাজের গতি ও মান ডিজিটাল চিপসের তুলনায় ধীরে হওয়ায় এর ব্যবহার বর্তমানে নেই বললেই চলে।
কম্পিউটার চিপস কিভাবে কাজ করে
উপরেই বলেছি কম্পিউটার চিপস ০ এবং ১ এর সমন্বয়ে কাজ সম্পাদন করে। চিপের ট্রানজিস্টরগুলোতে ০ এবং ১ দিয়ে অন এবং অফ এই দুই অবস্থা বোঝানো হয়। ট্রানজিস্টরগুলো আমাদের দেয়া ইনপুটের জন্যে ০ এবং ১ এর বাইনারি কোড অনুসরণ করে কাজ করে। অন এবং অফের এই সামঞ্জস্যে একটি করে বিট তৈরি হয় যা ট্রানজিস্টরগুলো ধারণ করে। এই বিটগুলো প্রসেসিং করে কম্পিউটার আউটপুট দেয়।
বিট বলতে বাইনারি ডিজিট ০ এবং ১ কে বোঝায়। আমরা যাই লিখি না কেন কম্পিউটার তাকে ০ এবং ১ এ রুপান্তরিত করে নিয়ে কাজ করে। যেমন– আমরা যদি A লিখি কম্পিউটার কিন্তু A পড়তে পারে না। তাই সে তখন তার প্রোগ্রাম অনুযায়ী A এর বাইনারি ডিজিটে ডিকোড করে নেয়। বাইনারি কোড অনুযায়ী A বলতে বোঝায় ০১০০০০০১ এটি। এখানে ৮ টি বাইনারি ডিজিট আছে। এখন এই ৮ টি ডিজিট চলে যাবে ৮ টি ট্রানজিস্টরে। সেই ৮ টি ট্রানজিস্টর ০ এবং ১ অনুসারে অন ও অফ অবস্থায় থাকবে। তারপর চিপে সেট করে রাখা প্রোগ্রাম অনুসারে এই ০ এবং ১ এর গাণিতিক বিশ্লেষণের মাধ্যমে মনিটরের স্ক্রিনে আউটপুট হিসেবে আমরা দেখি A। পুরো এই প্রক্রিয়াটি সম্পন্ন হতে সময় লাগে মাত্র কয়েক ন্যানো সেকেন্ড।
শেষ কথা
কম্পিউটার চিপসের উদ্ভাবনকে আধুনিক প্রযুক্তির ইতিহাসের সবেচেয়ে বড় অর্জনগুলোর একটি মনে করা হয়। কারণ, এই চিপসের আবিষ্কারে কম্পিউটার আরো গতিশীল এবং কর্মক্ষম হয়েছে। নতুন নতুন ট্রানজিস্টর যুক্ত হওয়ার কারণে আমরা পাচ্ছি নতুন সব অ্যপ্লিকেশন যা আমাদের দৈনন্দিন কাজকে আরো সহজ করে তুলেছে। অফিস– আদালত, ব্যবসা কিংবা ঘরের কাজ সর্বত্রই এখন আমরা প্রযুক্তির উপর নির্ভরশীল। মাইক্রোচিপস বা কম্পিউটার চিপস এর কল্যাণে আমাদের কাজগুলো সহজে সম্পন্ন করার পাশাপাশি আমাদের জীবনমানেরও উন্নতি হচ্ছে দ্রুত গতিতে।