কানাডা পার্মানেন্ট রেসিডেন্সির জন্য করণীয়
একটি সুন্দর জীবনের প্রত্যাশী হয়ে স্থায়ীভাবে বসবাস করার জন্য অনেক মানুষের আগমন হয়ে থাকে কানাডায়। ‘অভিবাসীদের দেশ’ বলা হয়ে থাকে কানাডাকে। শতকরা ৪.৯ ভাগ মানুষ হচ্ছে ফার্স্ট নেশন আর বাকি ৯৫ ভাগই হচ্ছে ইমিগ্রেন্ট মানুষ। দেশটি নিজেদের অর্থনৈতিক চাকা সচল রাখার জন্য বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে প্রায় প্রতিবছর ৩ লাখের বেশি ইমিগ্রেশনের অনুমোদন দিয়ে থাকে। তাই খুব সহজে অভিবাসীদের একটি স্থায়ী আবাসনের জন্য কানাডা অন্যতম। একজন মানুষের স্বপ্ন হতে পারে, কানাডায় প্রিয়জন, পরিবার নিয়ে একটি নতুন জীবন শুরু করা। কানাডার স্থায়ীভাবে বসবাস করার জন্য চেষ্টাকারীদের সংখ্যা দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে। দক্ষ, আধা-দক্ষ, অদক্ষ যেমনই হোক না কেন প্রতিটি মানুষের জন্যই বিশাল কর্মসংস্থানের সুযোগ রয়েছে। যারা কানাডায় পার্মানেন্ট রেসিডেন্সির জন্য করণীয় কি জানার জন্য সার্চ করেছেন এই লিখাটি তাদের জন্য।
পার্মানেন্ট রেসিডেন্সির জন্য কানাডাকে বেছে নেওয়ার কারণঃ
–বিশাল চাকরির বাজার
–উন্নত জীবন মান
–উন্নত শিক্ষা ব্যবস্থা
–বিশেষ চিকিৎসা ব্যবস্থা
–নতুনদের জন্য ট্যাক্স ফ্রি
–বৈষম্যহীন দৃষ্টিভঙ্গি
–আন্তর্জাতিক ভ্রমণ সুবিধা
–পারিবারিকভাবে সেটেলের সুবিধা
কানাডায় পার্মানেন্ট রেসিডেন্সির জন্য প্রয়োজনীয় কাগজপত্র
- IELTS, CanTESt, TOEFL, SAT ইত্যাদি ভাষা পরীক্ষার জন্য
- নির্দিষ্ট পরিমাণ আর্থিক তহবিল
- শিক্ষাগত যোগ্যতার কাগজপত্র
- বয়স প্রমাণের জন্য জন্ম নিবন্ধন কার্ড
- আন্তর্জাতিক পাসপোর্ট
- মেডিকেল ক্লিয়ারেন্স সার্টিফিকেট
- পুলিশ ক্লিয়ারেন্স সার্টিফিকেট
- চাকরির প্রমাণের জন্য প্রয়োজনীয় কাগজ যেমম- পে- স্লিপ, সুপারিশের চিঠি ইত্যাদি।
পার্মানেন্ট কানাডায় রেসিডেন্সির জন্য করণীয়ঃ
কানাডায় পার্মানেন্ট রেসিডেন্সির জন্য ৫ বছরের মধ্যে ৩ বছর অবস্থান করলেই আবেদন করতে পারা যায়। অন্যদিকে যারা অস্থায়ী ছিল যেমন- ওয়ার্ক এবং স্টাডি পারমিট এর আওতায় ছিলো তারাও তাদের এই পুরো সময়টাকে ওই ৩ বছরের মধ্যে গণনা করে পরবর্তীতে পার্মানেন্ট রেসিডেন্সির জন্য আবেদন করতে পারবে। বিভিন্ন পেশাজীবী লোকজন তাদের দক্ষতা অনুযায়ী নির্দিষ্ট যেকোনো একটি ক্যাটাগরিতে আবেদন করতে পারবে। নিচে কয়েকটা ক্যাটাগরি উল্লেখ করা হলোঃ-
এট্রাক্টিভ সেল্ফ ইমপ্লয়েড পার্সন প্রোগ্রামঃ
বিভিন্ন খেলোয়াড়, কোচ, ট্রেইনার, সাংস্কৃতিক পার্সন যেমন- মডেল, নাচ, গানের শিল্পী, কৌতুক অভিনেতা, ক্যালিওগ্রাফার, মেকআপ ম্যান, পরিচালক, প্রযোজক, ফ্যাশন ডিজাইনার, এনিমেশন স্পেশালিস্ট, পত্রিকার লেখক, কলামিস্ট, সম্পাদক, সাংবাদিক, ব্রডকাস্ট টেকনিশিয়ান, গ্রাফিক্স ডিজাইনার, চারুকলা শিল্পী ইত্যাদি বিভিন্ন পেশার লোকজন পরিবার সহ কানাডায় পার্মানেন্ট রেসিডেন্সির জন্য আবেদন করতে পারবে।
যোগ্যতা হিসেবে ২ বছরের আন্তর্জাতিক মানের কাজের অভিজ্ঞতা অথবা ২ বছরের সেল্ফ এমপ্লয়েড হিসেবে কাজ করার অভিজ্ঞতা অথবা দুই বছরের ফার্ম ম্যানেজমেন্টের অভিজ্ঞতা থাকতে হবে। সাথে এক লক্ষ কানাডিয়ান ডলার ইনভেস্টমেন্টের ব্যবস্থা থাকতে হবে।
কুইবেক স্কিল্ড ওয়ার্কার্স পোগ্রামঃ
সবচেয়ে দ্রুত ও কম সময়ে পরিবারসহ পার্মানেন্ট রেসিডেন্সের জন্য সুযোগ আছে এই প্রোগ্রামের আওতায়।
৮ লক্ষ কানাডিয়ান ডলার ইনভেস্টমেন্ট করতে হবে যোগ্যতা হিসেবে যদিও তা ৫ বছর পর বিনা সুদে ফেরত পাবে। শিক্ষাগত যোগ্যতা ও IELTS এর প্রয়োজন হয়না।
এন্টারপ্রিনিউয়ার প্রোগ্রামঃ
এখানে কৃষি, ইন্ডাস্ট্রিয়াল ও কমার্শিয়াল কাজে জড়িত ব্যবসায়ীরা পার্মানেন্ট রেসিডেন্সর জন্য আবেদন করতে পারবে। ফেডারেল ও প্রভিন্সিয়াল সরকারের আন্ডারে এই এন্টারপ্রিনিউয়ার প্রোগ্রাম চলমান।
৩ লক্ষ কানাডিয়ান ডলার ইনভেস্টমেন্ট করতে হবে যোগ্যতা হিসেবে। মিনিমাম তিন বছরের অভিজ্ঞতা থাকতে হবে।
স্কিল্ড ইমিগ্রেশন প্রোগ্রামঃ
(এক্সপ্রেস এন্ট্রি) বিপুল সংখ্যক দক্ষ ও যোগ্য পেশাজীবীদের মাইগ্রেশনের জন্য অন্যতম ভরসা হল এই এক্সপ্রেস এন্ট্রি। এই প্রোগ্রামে নিয়মমাফিক কোন পেশা নির্ধারণ করা নেই বা কোন কোটাও নেই। আইটি প্রফেশনাল, সব ধরনের ইঞ্জিনিয়ার, অডিটর, ব্যাংকার, ডাক্তার, নার্স, ফিজিওথেরাপিস্ট, রেডিওলজিস্ট, ফার্মাসিস্ট, সোনোগ্রাফার ইত্যাদি যে কোন পেশাজীবী নিজেদের যোগ্যতা অনুযায়ী পার্মানেন্ট রেসিডেন্সির জন্য আবেদন করতে পারবে।
যোগ্যতা হিসেবে বয়স অবশ্যই ৫৩ বছরের নিচে হতে হবে। গ্রেজুয়েশন কমপ্লিট অথবা সমমান ডিগ্রী অথবা ডিপ্লোমা ডিগ্রীধারী হতে হবে। ১ বছর, ক্ষেত্র বিশেষে ২ বছর কাজের অভিজ্ঞতা থাকতে হবে। IELTS এ রিডিং, রাইটিং ও স্পিকিং এ ৬.৫ পয়েন্ট এবং এভারেজ ৭.০+ থাকতে হবে। ফরাসী ভাষা জানা থাকলে ইমিগ্রেশনে অগ্রাধিকার পাওয়া যায়।
এই প্রোগ্রামটি আরো কিছু ক্যাটাগরিতে বিভক্ত
ফেডারেল স্কিল্ড ওয়ার্কার্স পোগ্রামঃ
একটি নির্দিষ্ট ক্ষেত্রে একজন বিশেষজ্ঞের আন্ডারে একজন দক্ষ কর্মী হলে পার্মানেন্ট রেসিডেন্সির জন্য এই প্রোগ্রামের জন্য আবেদন করা যাবে। এক বছরের অভিজ্ঞতা এবং সার্টিফিকেট থাকাটা জরুরি।
ফেডারেল স্কিল্ড ট্রেড প্রোগ্রামঃ
একটি নির্দিষ্ট ব্যবসায় এক বছরের অভিজ্ঞতা থাকলে এবং তার প্রমান থাকলে এই প্রোগ্রামে আবেদন করা যাবে।
কানাডিয়ান এক্সপেরিয়েন্স ক্লাসঃ
কানাডায় অস্থায়ী ওয়ার্কার্স এবং স্টাডি পার্মিটে যারা আসে তাদের কানাডায় কাজের এক বছরের অভিজ্ঞতা থাকলে পার্মানেন্ট রেসিডেন্সির সুযোগ পেতে পারে।
বিনিয়োগকারী উদ্যোক্তা ও স্ব-নিযুক্ত ব্যবসায়ীঃ
যারা কানাডায় অভিজ্ঞতা বিনিয়োগ করতে চায় এবং আর্থিক তহবিল গঠন করতে চায় তাদের জন্য কানাডায় পার্মানেন্ট রেসিডেন্সির সুযোগ আছে তবে তাদেরকে পূর্বের সফল ব্যবসায়ের প্রমাণ অবশ্যই দেখাতে হবে।
প্রাদেশিক মনোনীত প্রোগ্রাম/ প্রভিন্সিয়াল নমিনি প্রোগ্রামঃ(PNP)
কানাডা 11 টি প্রদেশের মধ্যে আলাদা আলাদা ভাবে আবেদনকারীদের রেসিডেন্সির সুযোগ দেওয়া যেতে পারে। বিভিন্ন সময় বিভিন্ন প্রদেশে ইমিগ্রেশনের জন্য সুযোগ দেওয়া হয়। তবে প্রত্যেক প্রদেশের রিকোয়ারমেন্টস গুলি আলাদা আলাদা। আবেদনকারীর যোগ্যতা অনুযায়ী নির্দিষ্ট সময়ের প্রতি লক্ষ্য রেখে শর্ত অনুযায়ী আবেদন করতে হবে। শর্তগুলি সময়ে সময়ে পরিবর্তন হতে পারে।
ব্রিটিশ কলম্বিয়া প্রভিন্সিয়াল প্রোগ্রামঃ
IELTS এ ৫.৫ অর্জনকারী, স্নাতক ডিগ্রিধারী ও ২ বছরের কাজের অভিজ্ঞতা সম্পন্ন ব্যক্তি এখানে সুযোগ পাবে।
সাসকাচুয়ান ইমিগ্রেন্ট নমিনি প্রোগ্রামঃ
বিশেষ পেশাজীবীর মানুষ এখানে আবেদন করতে পারবে। যেমন-
- সিভিল ইঞ্জিনিয়ার
- মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ার
- কম্পিউটার বা ইনফরমেশন ইঞ্জিনিয়ার
- এনজিও কর্মকর্তা
- এগ্রিকালচার ম্যানেজার
- সাপ্লাই চেইন বা পারচেজ ম্যানেজার
- ম্যাথমেটিশিয়ান বা স্ট্যাটিসটিশিয়ান
- অন্টারিও ইমিগ্রেন্ট নমিনি প্রোগ্রামঃ কানাডায় যারা স্টাডি করছে, চাকরির যোগ্যতা আছে, চাকরির প্রস্তাব পেয়েছে বা ব্যবসা করতে চায় তারাই এখানে আবেদন করে স্থায়ী হতে পারে।
- নোভা স্কটিয়া নমিনি প্রোগ্রামঃ ফিন্যান্সিয়াল একাউন্ট, এডমিন অফিসার, কম্পিউটারে দক্ষ, নার্স, এনজিও কর্মী সহ বিভিন্ন পেশার মানুষ এখানে আবেদন করতে পারে।
কুইবেক ইমিগ্রেশনঃ
স্বতন্ত্র আবেদন প্রক্রিয়ায় বছরের নির্দিষ্ট সময় আবেদনের সুযোগ দেওয়া হয়। এখানে ৩ ক্যাটাগরিতে মানুষ নেওয়া হয়। যেমন-
- দ্য কুইবেক স্কিল্ড ওয়ার্কার্স পোগ্রাম।
- এন্টারপ্রিনিউয়ার প্রোগ্রাম।
- কুইবেক এক্সপেরিয়েন্স ক্লাস।
- ফেডারেল স্কিল্ড ট্রেডার্স প্রোগ্রামঃ কার্পেন্টার, প্লাম্বার, ইলেকট্রিশিয়ান, ওয়েলডার সহ বিশেষ চাকরিজীবীরা এখানে চাকরিসহ পার্মানেন্ট রেসিডেন্সির জন্য আবেদন করতে পারবে। বিদেশি অনুমোদিত প্রতিষ্ঠান থেকে ‘ট্রেড স্কিল সার্টিফিকেট’ থাকতে হবে। এছাড়াও কৃষি, চিপ কুক, বেকার, ফিস প্রসেসিং ইলেক্ট্রিক্যাল, ইন্ডাস্ট্রিয়াল যন্ত্রপাতি রক্ষণাবেক্ষন, দেখাশোনা ইত্যাদি কাজেরও চাহিদা রয়েছে। ১৮-৪৫ বছরের মধ্যে দক্ষ কর্মী আবেদন করতে পারবে।
- ফ্যামিলি ইমিগ্রেশনঃ যাদের ফ্যামিলি মেম্বার কানাডায় আছে তারা ফ্যামিলি স্পন্সরশীপের মাধ্যমে কানাডায় আবেদন করেত পারবে। ইমিগ্রেশন পাওয়ার সবচেয়ে সহজ মাধ্যম এটি। তবে পরিবারের কেউ একজন অবশ্যই কানাডায় থাকতে হবে।
- কেয়ার গিভার প্রোগ্রামঃ শুধুমাত্র সনদপ্রাপ্ত নার্সরা এখানে আবেদন করতে পারবে। নার্সিং এ ডিপ্লোমা, বিএসসি পাস IELTS এ ৫ পয়েন্ট হলেই আবেদন করতে পারবে। শিশু শিক্ষা ও যত্ন, বয়স্কদের যত্ন, পেডিয়াট্রিক কেয়ার ইত্যাদি হল এদের প্রধান কাজ।
উপরোক্ত প্রোগ্রাম গুলো থেকে যোগ্যতা অনুযায়ী যে কোনো একটি ক্যাটাগরিতে আবেদন করতে পারেন।সম্পূর্ণ কানাডা কয়েকটি প্রদেশ হিসেবে বিভক্ত। কানাডায় মোট ১৩ টি প্রদেশ রয়েছে। এবং প্রতিটি প্রদেশ উপজাতীয় সরকার দ্বারা পরিচালিত হয়ে থাকে। কানাডা পারমানেন্ট রেসিডেন্সির জন্য আপনার যোগ্যতা অনুযায়ী একাধিক প্রদেশ এবং প্রোগ্রামে আবেদন করতে পারেন । তাহলেই সাকসেসের সম্ভাবনা বেশি। শুধুমাত্র একটি প্রোগ্রামে আবেদন করে সফলতার সম্ভাবনা খুবই কম।
শেষ কথা
মানুষ উন্নত জীবন যাপনের লক্ষ্যে কানাডায় পাড়ি জমাতে চায়। পূর্বে কানাডায় ইমিগ্রেশন নেওয়া অনেক সহজ ছিল। কিন্তু বর্তমানে কিছুটা কঠিন করে ফেলেছে দেশটি। বিভিন্ন শ্রেণি পেশার মানুষের জন্য কানাডা নিজেদের দ্বার উন্মোচিত করে রেখেছে। তাই নিজের দক্ষতা যাচাই করে নির্দিষ্ট প্রোগ্রামের জন্য অতি দ্রুত আবেদন করে নেওয়া উচিত।