গুগলের Quantum Computing: পরবর্তী প্রজন্মের কম্পিউটিং কিভাবে বদলাবে?

আজকের বিশ্ব প্রযুক্তির বিস্ময়কর অগ্রগতির পথে দ্রুত এগিয়ে যাচ্ছে। আমাদের প্রতিদিনের জীবনকে সহজ, দ্রুত এবং উন্নত করার জন্য কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (Artificial Intelligence), মেশিন লার্নিং,(Machine Learning) বিগ ডেটা, এবং ইন্টারনেট অফ থিংস (Internet of Things) প্রযুক্তি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে। কিন্তু এই প্রযুক্তিগুলোর সবকিছুর পেছনে এক শক্তিশালী উপাদান কাজ করছে তা হলো কম্পিউটিং পাওয়ার (Computing Power)।
তবে, বর্তমান কম্পিউটারগুলো যেভাবে কাজ করছে, তাতে তাদের কিছু সীমাবদ্ধতা আছে। যখন অত্যন্ত জটিল বা বিশাল তথ্য বিশ্লেষণ করতে হয়, তখন অনেক সময় এগুলো ধীরগতিতে কাজ করে। এই সমস্যা সমাধানের জন্য Quantum Computing, সামনে এসেছে এক নতুন যুগের প্রযুক্তি যা কম্পিউটিংয়ের ধারণাকেই পাল্টে দিচ্ছে। Quantum Computing কিভাবে ভবিষ্যতে প্রযুক্তির পরবর্তী সীমানায় পৌঁছাবে, সে সম্পর্কে আজকে আমরা আলোচনায় করব।
Quantum Computing কীভাবে নতুন যুগের সূচনা করতে পারে?
Quantum Computing বা কোয়ান্টাম কম্পিউটিং এমন একটি প্রযুক্তি, যা সাধারণ কম্পিউটারগুলোর বদলে কিউবিট (Qubits) ব্যবহার করে। এতে একসাথে একাধিক তথ্য একসঙ্গে কাজ করতে পারে, যা বর্তমান কম্পিউটারের তুলনায় অনেক দ্রুত এবং শক্তিশালী। এর ফলে বিভিন্ন ক্ষেত্রে বড় পরিবর্তন আসতে পারে:
-
ওষুধ আবিষ্কার হবে দ্রুত ও সঠিকভাবে
কোয়ান্টাম কম্পিউটিং (Quantum Computing) এর মাধ্যমে নতুন ওষুধ আবিষ্কার করা অনেক দ্রুত এবং সঠিকভাবে হবে, কারণ এটি জটিল অণু সহজে বিশ্লেষণ করতে পারে।
-
জলবায়ু পরিবর্তন সহজে বিশ্লেষণ করা যাবে
কোয়ান্টাম কম্পিউটিং (Quantum Computing) খুব দ্রুত ও সঠিকভাবে জলবায়ু পরিবর্তনের তথ্য বিশ্লেষণ করতে পারে যার ফলে পরিবেশ নিয়ে সিদ্ধান্ত নেয়া সহজ হয়।
-
সাইবার সিকিউরিটি হবে আরও শক্তিশালী
কোয়ান্টাম কম্পিউটিং (Quantum Computing) সাইবার নিরাপত্তা আরোও শক্তিশালী করে,যার মাধ্যমে আমরা আমাদের তথ্য ও ডাটা আরও সুরক্ষিত রাখতে পারি।
-
আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্সে বিপ্লব আসবে
কোয়ান্টাম কম্পিউটিং (Quantum Computing) কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তাকে আরও শক্তিশালী করে, যা আমাদের দৈনন্দিন জীবনকে আরও সহজ ও স্মার্ট করে তোলে।
Quantum Computing কী? (What is Quantum Computing?)
Quantum Computing হলো একটি নতুন ধরনের প্রযুক্তি, যা কোয়ান্টাম পদার্থবিজ্ঞানের (Quantum Mechanics) নিয়ম অনুসারে কাজ করে। এই প্রযুক্তি প্রচলিত কম্পিউটারগুলোর সীমাবদ্ধতা পেরিয়ে অনেক দ্রুত এবং জটিল সমস্যাগুলোর সমাধান করতে পারে।
Bits vs Qubits
প্রচলিত কম্পিউটারের কাজের মূল একক হলো বিট (Bit), যা কেবল দুটি মান ধারণ করতে পারে ০ বা ১। কিন্তু কোয়ান্টাম কম্পিউটার ব্যবহার করে কিউবিট (Qubit), যা একই সময়ে ০ এবং ১ এই দুটি অবস্থাতেই থাকতে পারে। একে বলা হয় Superposition।
এছাড়া, একাধিক কিউবিট একে অপরের সাথে Entanglement নামে এক বিশেষভাবে যুক্ত থাকতে পারে। এতে একটির অবস্থা অন্যটির উপর নির্ভর করে, যা তথ্য প্রক্রিয়াকরণে দ্রুততা আনে। আর Interference ব্যবহার করে বিভিন্ন কিউবিটের অবস্থা একে অপরকে প্রভাবিত করে, যা সঠিক ফলাফল পেতে সাহায্য করে।
Quantum principles:
- Superposition:
কিউবিট একই সময়ে একাধিক মান ধারণ করতে পারে। অর্থাৎ, এক সময় একাধিক সম্ভাবনা একসাথে পরীক্ষা করা যায়, যা প্রচলিত কম্পিউটারগুলোর পক্ষে সম্ভব নয়। - Entanglement:
দুই বা ততোধিক কিউবিট একে অপরের সাথে এমনভাবে যুক্ত থাকে, যাতে একটির অবস্থা অন্যটির অবস্থার উপর নির্ভর করে। এটি সমান্তরালভাবে কাজ করতে সাহায্য করে, ফলে দ্রুত ফলাফল পাওয়া যায়। - Interference:
কিউবিটগুলোর অবস্থা একে অপরকে প্রভাবিত করে এবং ভুল ফলাফল বাদ দিয়ে সঠিক ফলাফল দেয়।
প্রচলিত কম্পিউটার (Classical Computer):
প্রচলিত কম্পিউটারগুলো বিট ব্যবহার করে এবং এক সময় একটিই কাজ করে। এটি সাধারণত ধারাবাহিকভাবে (Sequentially) কাজ করে। যেমন ওয়েব ব্রাউজিং,(Web Browsing) গেম খেলা বা অফিসের কাজ। তবে এই কম্পিউটারগুলো কিছু সীমাবদ্ধতার মধ্যে কাজ করে এবং গতি কিছুটা কম হতে পারে।
কোয়ান্টাম কম্পিউটার (Quantum Computer):
কোয়ান্টাম কম্পিউটার কিউবিট ব্যবহার করে, যা একসাথে ০ এবং ১ এই দুটি অবস্থায় থাকতে পারে। এটি Superposition, Entanglement এবং Interference নামের কোয়ান্টাম বৈশিষ্ট্যগুলো ব্যবহার করে এবং সমান্তরালভাবে (Parallel) কাজ করতে পারে। এর ফলে এটি অনেক দ্রুত এবং জটিল গাণিতিক সমস্যা সমাধান করতে পারে। কোয়ান্টাম কম্পিউটার কম শক্তিতে কাজ করতে সক্ষম এবং ভবিষ্যতে বিভিন্ন ক্ষেত্রে, যেমন সাইবার সিকিউরিটি, স্বাস্থ্য এবং মডেলিং-এ ব্যবহৃত হবে।
গুগলের ভূমিকায় যুগান্তকারী পদক্ষেপ
গুগল কোয়ান্টাম কম্পিউটিং প্রযুক্তির ক্ষেত্রে অনেক বড় অবদান রেখেছে। তাদের Google Sycamore প্রোসেসর এবং কোয়ান্টাম গবেষণার মাধ্যমে, তারা কোয়ান্টাম প্রযুক্তির দুনিয়ায় নতুন এক চমক দেখিয়েছে।
Google Sycamore প্রোসেসরের পরিচিতি?
Google Sycamore হলো একটি ৪২ কিউবিট কোয়ান্টাম প্রোসেসর, যা গুগলের Quantum AI ডিভিশন দ্বারা তৈরি। এটি গুগলের কোয়ান্টাম কম্পিউটিং প্ল্যাটফর্মের একটি অত্যাধুনিক উদাহরণ এবং Quantum Supremacy অর্জনের জন্য একটি বড় পদক্ষেপ হিসেবে চিহ্নিত হয়েছে।
Sycamore কোয়ান্টাম সার্কিট ব্যবহার করে এবং এর লক্ষ্য ছিল প্রচলিত সুপারকম্পিউটারগুলোর থেকে দ্রুত গণনা সম্পন্ন করা। গুগল ২০১৯ সালে দাবি করেছে যে, তারা Quantum Supremacy অর্জন করেছে, অর্থাৎ এটি এমন একটি সমস্যা সমাধান করেছে যা পৃথিবীর সেরা সুপারকম্পিউটারও করতে পারত না।
২০১৯ সালের Quantum Supremacy অর্জনের ঘোষণা
২০১৯ সালে গুগল তাদের তৈরি কোয়ান্টাম প্রসেসর Sycamore দিয়ে এক যুগান্তকারী সাফল্যের ঘোষণা দেয়। এই প্রসেসর মাত্র ২০০ সেকেন্ডে (প্রায় ৩ মিনিটে) এমন একটি জটিল গাণিতিক সমস্যা সমাধান করে, যেটা বিশ্বের সবচেয়ে শক্তিশালী সুপারকম্পিউটারের হাজার বছর সময় লাগত।
এই ঘটনাকে বলা হয় Quantum Supremacy অর্থাৎ, যখন কোয়ান্টাম কম্পিউটার এমন কিছু করতে পারে, যা সাধারণ কম্পিউটারের পক্ষে প্রায় অসম্ভব।
গুগলের লক্ষ্য ২০২৯ সালের মধ্যে এমন একটি ব্যবহারযোগ্য কোয়ান্টাম কম্পিউটার তৈরি করা, যা বাস্তব জীবনের জটিল সমস্যা সমাধানে ব্যবহার করা যাবে। এজন্য তারা ব্যাপক বিনিয়োগ করছে এবং বিশ্বমানের গবেষক দল নিয়ে কাজ করছে। যেমন: ওষুধ তৈরি, আবহাওয়ার পূর্বাভাস, জটিল হিসাব-নিকাশ ইত্যাদি।
গুগলের গবেষণা ও ইনভেস্টমেন্ট
গুগল তাদের Quantum AI ডিভিশনের মাধ্যমে কোয়ান্টাম কম্পিউটিংয়ের উন্নয়নে ব্যাপক গবেষণা এবং উন্নয়ন কাজ করছে। তারা কোয়ান্টাম সফটওয়্যার, হার্ডওয়্যার এবং অ্যাপ্লিকেশন তৈরির জন্য বিভিন্ন পদক্ষেপ নিচ্ছে। গুগল নিয়মিত তাদের কোয়ান্টাম কম্পিউটারগুলোর কার্যকারিতা উন্নত করার জন্য হাজার হাজার কিউবিট বিশিষ্ট প্রোসেসর তৈরির পরিকল্পনা করছে।
গুগল বিলিয়ন ডলার ইনভেস্টমেন্ট করেছে এবং বর্তমানে এটি বিশ্বের শীর্ষস্থানীয় কোয়ান্টাম গবেষণা প্রতিষ্ঠানগুলির মধ্যে অন্যতম। তারা এমন কিছু গবেষণা প্রকল্পে কাজ করছে, যা জীববিজ্ঞান, রাসায়নিক গবেষণা, সাইবার নিরাপত্তা এবং এআই-এর মতো গুরুত্বপূর্ণ ক্ষেত্রগুলোতে বিপ্লব ঘটাতে পারে।
গুগলের ভবিষ্যৎ গবেষণা এবং পরিকল্পনা
গুগল এখন Quantum Machine Learning এবং Quantum Cryptography এর মতো নতুন ক্ষেত্রগুলিতে গবেষণা করছে, যা ভবিষ্যতের সাইবার নিরাপত্তা এবং এআই উন্নয়নের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। তারা Quantum Computing as a Service (QCaaS) এর মাধ্যমে কোয়ান্টাম কম্পিউটিং প্ল্যাটফর্ম সরবরাহেরও পরিকল্পনা করেছে, যাতে অন্যান্য প্রতিষ্ঠানও কোয়ান্টাম প্রযুক্তি ব্যবহার করতে পারে।
Quantum Computing কীভাবে বদলে দেবে আমাদের জীবন?
১. স্বাস্থ্য ও চিকিৎসা
- নতুন ওষুধ আবিষ্কার আরও দ্রুত হবে
আজকের কম্পিউটার দিয়ে একেকটা ওষুধ পরীক্ষা করতে অনেক বছর সময় লাগে। কোয়ান্টাম কম্পিউটার দিয়ে অণুর ভেতরের গঠন খুব দ্রুত বিশ্লেষণ করা যায়। এতে ক্যান্সার, ভাইরাস, বা জেনেটিক রোগের নতুন ওষুধ সহজেই আবিষ্কার করা যাবে। - জিন (DNA) বিশ্লেষণ করে রোগ শনাক্ত করা যাবে
জেনেটিক কোড বিশ্লেষণ করা যাবে অনেক দ্রুত ও গভীরভাবে। ফলে ক্যান্সার বা জন্মগত রোগগুলো আগেভাগে ধরা পড়বে এবং চিকিৎসাও উন্নত হবে।
২. জলবায়ু ও আবহাওয়া
- আবহাওয়ার আরও সঠিক পূর্বাভাস
কোয়ান্টাম কম্পিউটার বিশাল পরিমাণ ডেটা বিশ্লেষণ করতে পারে। এর ফলে, কোথায় কখন বৃষ্টি হবে বা ঘূর্ণিঝড় আসবে, তা আরও আগে ও নির্ভুলভাবে জানা যাবে। - প্রাকৃতিক দুর্যোগের প্রস্তুতি
বন্যা, ঘূর্ণিঝড় বা খরা এসবের আগাম তথ্য দিয়ে মানুষকে প্রস্তুত হতে সাহায্য করবে কোয়ান্টাম প্রযুক্তি।
৩. কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (AI)
- এআই অনেক দ্রুত শিখবে
এআই মডেল তৈরি করতে এখন অনেক সময় লাগে। কোয়ান্টাম কম্পিউটার সেই সময় অনেক কমিয়ে দেবে। যেমন, ছবি চিনতে বা ভয়েস রিকগনিশনে এআই আরও বুদ্ধিমান হবে। - জটিল সমস্যায় এআই আরও কার্যকর হবে
বড় ডেটা ও কঠিন এলগরিদম হ্যান্ডল করতে পারবে সহজে, যা রোবটিক্স, অটোমেশন, বা চ্যাটবটের পারফরম্যান্স বাড়াবে।
৪. সাইবার নিরাপত্তা
- বর্তমান নিরাপত্তা ব্যবস্থা ঝুঁকিতে পড়বে
যেমন RSA বা Elliptic Curve Cryptography এই ধরনের নিরাপত্তা কোয়ান্টাম কম্পিউটার সহজেই ভেঙে ফেলতে পারে। এতে ব্যাংক, গোপন ডেটা বা অনলাইন অ্যাকাউন্ট ঝুঁকিতে থাকবে। - নতুন ধরনের নিরাপত্তা দরকার হবে
এজন্য বিজ্ঞানীরা Post-quantum Cryptography তৈরি করছেন, যা এমনভাবে ডিজাইন করা হবে যেন কোয়ান্টাম কম্পিউটার দিয়েও ভাঙা না যায়।
কোয়ান্টাম কম্পিউটিংয়ের চ্যালেঞ্জ ও সীমাবদ্ধতা
কোয়ান্টাম কম্পিউটার খুব শক্তিশালী হতে পারে, কিন্তু এখনও এই প্রযুক্তি পুরোপুরি প্রস্তুত নয়। বাস্তবে কাজ করার জন্য অনেক সমস্যা ও চ্যালেঞ্জ রয়েছে। চলুন সহজভাবে বুঝে নিই কোন কোন সমস্যাগুলো সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ:
১. কিউবিট (Qubit) খুবই স্পর্শকাতর
- কোয়ান্টাম কম্পিউটারে যে কিউবিট ব্যবহার হয়, তা খুবই অস্থির। এটি তাপমাত্রা, শব্দ বা আলো সবকিছুর প্রতিক্রিয়ায় দ্রুত ভেঙে যায়।
- কিউবিটকে কাজ করাতে গেলে অত্যন্ত ঠান্ডা পরিবেশ দরকার, প্রায় -২৭৩ ডিগ্রি সেলসিয়াস (Absolute Zero)! এই ঠান্ডা রাখতে লাগে দামি কুলিং সিস্টেম।
যেমন: গুগল বা IBM-এর কোয়ান্টাম কম্পিউটারগুলো বিশাল রেফ্রিজারেটরের মতো যন্ত্রে রাখা হয়।
২. প্রযুক্তি অনেক জটিল এবং ব্যয়বহুল
- কোয়ান্টাম কম্পিউটার বানাতে যে যন্ত্রপাতি লাগে, তা খুবই উন্নত এবং দামি।
- শুধু যন্ত্র না, এই প্রযুক্তি চালাতে হলে বিশেষজ্ঞ বিজ্ঞানী, ইঞ্জিনিয়ার, ও গবেষক দরকার যারা খুব অভিজ্ঞ।
তাই এই ধরনের কম্পিউটার তৈরি ও রক্ষণাবেক্ষণ করা সাধারণ প্রতিষ্ঠান বা মানুষের পক্ষে সম্ভব নয়।
৩. বড় আকারে বানানো কঠিন (স্কেলিং সমস্যা)
- এখনকার কোয়ান্টাম কম্পিউটারগুলোতে ৫০ থেকে ১০০ কিউবিট থাকে। কিন্তু বাস্তব সমস্যার সমাধানে হাজার হাজার কিউবিট দরকার হবে।
- যত বেশি কিউবিট যোগ করা হয়, তত বেশি জটিলতা তৈরি হয়। সব কিউবিট একসাথে সঠিকভাবে কাজ করানো খুব কঠিন।
একে বড় স্কেলে নিয়ে যেতে এখনো অনেক গবেষণার দরকার।
৪. সাধারণ মানুষের কাছে পৌঁছানো কঠিন
- কোয়ান্টাম কম্পিউটার চালাতে যে পরিমাণ শক্তি, কুলিং সিস্টেম, ও যন্ত্রপাতি লাগে তা এত ব্যয়বহুল যে সাধারণ মানুষ বা ছোট প্রতিষ্ঠান ব্যবহার করতে পারবে না।
- ব্যবসায়িকভাবে বা কমার্শিয়ালভাবে এই প্রযুক্তিকে সহজলভ্য করতে হলে খরচ অনেক কমাতে হবে এবং প্রযুক্তি আরও সহজ করতে হবে।
ভবিষ্যতের সম্ভাবনা ও প্রস্তুতি
কোয়ান্টাম কম্পিউটিং এখনও উন্নতির পথে, তবে এর ভবিষ্যত অনেক উজ্জ্বল। এটি আমাদের পৃথিবীকে একেবারে নতুনভাবে পরিবর্তন করতে পারে। আসুন, গুগল (Google) এবং অন্য প্রযুক্তি কোম্পানির ভবিষ্যত পরিকল্পনা, Quantum Internet এবং Cloud Quantum Computing নিয়ে জানি।
গুগল ও অন্য প্রযুক্তি জায়ান্টদের ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা
গুগল, IBM, Microsoft, Intel এসব বড় কোম্পানি কোয়ান্টাম কম্পিউটিংয়ের ভবিষ্যত নিয়ে কাজ করছে। তারা কোয়ান্টাম কম্পিউটার ছাড়াও কোয়ান্টাম সফটওয়্যার এবং অ্যালগোরিদমও তৈরি করছে। তাদের পরিকল্পনা:
- কোয়ান্টাম কম্পিউটিং ক্লাউড পরিষেবা: গুগল, IBM, Microsoft কোয়ান্টাম কম্পিউটারের ক্লাউড পরিষেবা চালু করেছে এবং আরও শক্তিশালী পরিষেবা আনতে চায়।
- Quantum Supremacy: প্রথাগত কম্পিউটারকে ছাড়িয়ে কোয়ান্টাম কম্পিউটার আরও দ্রুত কাজ করবে, এই লক্ষ্যেই তারা কাজ করছে।
- Quantum Internet: ভবিষ্যতে কোয়ান্টাম কম্পিউটিংয়ের মাধ্যমে নতুন এবং নিরাপদ ইন্টারনেট তৈরি করা হবে, যা আরো দ্রুত এবং সুরক্ষিত হবে।
Quantum Internet ও Cloud Quantum Computing
- Quantum Internet: কোয়ান্টাম ইন্টারনেট কোয়ান্টাম এনক্রিপশন ব্যবহার করে তথ্য খুব দ্রুত এবং নিরাপদে পাঠানোর ব্যবস্থা করবে।
উদাহরণ: কোয়ান্টাম ইন্টারনেটের মাধ্যমে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান তাদের তথ্য একে অপরের সাথে দ্রুত ও নিরাপদে শেয়ার করতে পারবে। - Cloud Quantum Computing: ক্লাউড কম্পিউটিংয়ের মাধ্যমে কোয়ান্টাম কম্পিউটিংয়ের শক্তি আরও সহজে ব্যবহার করা যাবে। গুগল এবং IBM এর মতো কোম্পানি ক্লাউডে কোয়ান্টাম কম্পিউটিং সেবা দিচ্ছে।
উদাহরণ: IBM Quantum Experience এবং Google Quantum AI ইতোমধ্যে কোয়ান্টাম কম্পিউটিং ক্লাউড পরিষেবা দিচ্ছে।
গবেষণা ও বিশ্ববিদ্যালয়ের ভূমিকা
গবেষণা প্রতিষ্ঠানগুলি কোয়ান্টাম কম্পিউটিংয়ের উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে। তারা নতুন কিউবিট প্রযুক্তি, কোয়ান্টাম অ্যালগোরিদম এবং নিরাপত্তা ব্যবস্থা নিয়ে কাজ করছে।
- নতুন কিউবিট প্রযুক্তি: বিশ্ববিদ্যালয়গুলো নতুন কিউবিট প্রযুক্তি তৈরি করছে, যেমন সুপারকন্ডাক্টিং কিউবিট ও ফটনিক কিউবিট।
- Quantum Algorithms & Cryptography: গবেষকরা কোয়ান্টাম অ্যালগোরিদম এবং Post-Quantum Cryptography উন্নত করছে, যা ভবিষ্যতে সাইবার নিরাপত্তায় সাহায্য করবে।
গুগল ও অন্যান্য কোম্পানি কোয়ান্টাম কম্পিউটিংয়ের মাধ্যমে নতুন দিগন্ত খুলতে কাজ করছে এবং গবেষণা প্রতিষ্ঠানগুলো নতুন উদ্ভাবনে অবদান রাখছে। কোয়ান্টাম ইন্টারনেট এবং ক্লাউড কোয়ান্টাম কম্পিউটিংয়ের মতো নতুন প্রযুক্তি বিশ্বব্যাপী প্রযুক্তি খাতে বিপ্লব আনবে।
উপসংহার
কোয়ান্টাম কম্পিউটিং শুধু বড় প্রযুক্তি কোম্পানিগুলোর জন্য নয়, এটি আমাদের ভবিষ্যতের জন্য এক নতুন দিক খুলে দিতে যাচ্ছে। এই প্রযুক্তি কেবল নতুন ধরনের কম্পিউটিংয়ের ধারণা নয়, বরং এটি স্বাস্থ্য, পরিবেশ, সাইবার নিরাপত্তা, এবং কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার মতো বিভিন্ন ক্ষেত্রে আমাদের জীবনের গুরুত্বপূর্ণ অংশ হতে পারে।
কোয়ান্টাম কম্পিউটিংয়ের সাহায্যে প্রযুক্তি ও শিল্পের ক্ষেত্রে নতুন সুযোগ তৈরি হবে, যা আমাদের চিন্তা করার ধরন এবং সমস্যার সমাধান করার পদ্ধতিতে বিপ্লব আনতে পারে। এটি এমন একটি প্রযুক্তি যা আমাদের কাজের ধরন, তথ্য বিশ্লেষণ এবং ভবিষ্যতের সুযোগগুলিকে এক নতুন মাত্রায় নিয়ে যাবে।
তবে, এই প্রযুক্তি আসার সঙ্গে সঙ্গে আমাদেরও প্রস্তুত থাকতে হবে। কোয়ান্টাম কম্পিউটিংয়ের বিপ্লবের জন্য শুধু প্রযুক্তি নয়, আমাদের সচেতনতা, গবেষণা এবং শিক্ষার দিকে আরও মনোযোগ দেওয়া জরুরি। আমাদের সময় থাকতে এই পরিবর্তনের সঙ্গে মানিয়ে নিতে হবে, যাতে আমরা সঠিকভাবে এর সুবিধা নিতে পারি।
কোয়ান্টাম কম্পিউটিং শুধু একটি প্রযুক্তি নয়, এটি হতে চলেছে আমাদের ভবিষ্যত। সুতরাং, এর জন্য সঠিক প্রস্তুতি নেওয়া এবং সকলের অংশগ্রহণ নিশ্চিত করা গুরুত্বপূর্ণ।