স্বাস্থ্য টিপস

অতিরিক্ত Internet ব্যবহারের কুফল

Internet আমাদের জীবনের একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ হয়ে দাঁড়িয়েছে। আমাদের দৈনন্দিন জীবন যেন Internet ছাড়া চলছেই না। কিন্তু অতিরিক্ত Internet ব্যবহার কেবল সুবিধা নয়, একাধিক কুফলও সৃষ্টি করে। আসুন দেখি ইন্টারনেটের অতিরিক্ত ব্যবহার কীভাবে আমাদের স্বাস্থ্য, সামাজিক জীবন, এবং কর্মক্ষমতাকে নষ্ট করে।

Contents hide

অতিরিক্ত Internet ব্যবহারের স্বাস্থ্য প্রভাব

অতিরিক্ত ইন্টারনেট ব্যবহার করলে মস্তিষ্কের নিউরন কোষের কার্যক্রমে প্রভাব ফেলে। ফলে ধীরে ধীরে মানুষের দৈনন্দিন সকল কার্যক্রমগুলো যেমনঃ খাদ্যাভ্যাস, চলাফেরা, ঘুমের ধরণ, সিদ্ধান্ত নেয়ার ক্ষমতা দিন দিন কমে যায় । এ ছাড়া Internet অতিরিক্ত ব্যবহার আমাদের মানসিক এবং শারীরিক স্বাস্থ্যে (Health Impacts) নানাবিধ প্রভাব ফেলতে পারে। কিভাবে প্রভাব ফেলে চলুন বিস্তারিত জানা যাক-

মানসিক স্বাস্থ্যে Internet এর কুফল

অতিরিক্ত ইন্টারনেট ব্যবহারের ফলে এতে আসক্ত হয়ে পড়লে আমাদের ব্রেন পর্যাপ্ত বিশ্ৰাম পাবে না। এর ফলে নানা রকম উদ্বেগ ও বিষণ্ণতা, মানসিক চাপ, হতাশা সৃষ্টি হতে পারে। এতে প্রায়শই একাকিত্ব বোধ এবং আত্মবিশ্বাসের ঘাটতি দেখা দিতে পারে।

শারীরিকভাবে Internet এর কুফল

অতিরিক্ত সময় স্ক্রিনের সামনে বসে থাকার ফলে চোখের ক্লান্তি, চোখ ব্যথা, মাথা ব্যথা, এবং ঘাড় ও পিঠের ব্যথা ইত্যাদি হতে পারে। দীর্ঘ সময় Internet ব্যবহারের কারণে চোখে কম দেখা, হাড়ের ক্ষয় এবং অন্যান্য শারীরিক সমস্যাও দেখা দিতে পারে।

ঘুমের সমস্যা ও প্রযুক্তির প্রভাব

রাতের বেলা অতিরিক্ত Internet ব্যবহার করলে ঘুমের ব্যাঘাত ঘটে। ইলেকট্রনিক্স ডিভাইস এর স্কিনের দিকে আমরা যত তাঁকিয়ে থাকব, আমাদের চোখের উপর তত চাপ পরবে। স্ক্রিনের আলো মস্তিষ্কের ঘুমের প্রক্রিয়াকে বাধা দেয়, ঘুম নষ্ট করে, ফলে ঘুমের গুণমান (Sound Sleep এর হার) কমে যায় এবং স্বাস্থ্যগত বিভিন্ন সমস্যা সৃষ্টি হয়। দীর্ঘদিন এইভাবে চললে বিভিন্ন ধরণের শারীরিক সমস্যা দেখা দিতে পারে।

অতিরিক্ত Internet ব্যবহারের সামাজিক কুফল

(Social Issues) আমাদের দৈনন্দিন জীবনে ইন্টারনেট এর গুরুত্ব দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে। Internet অতিরিক্ত ব্যবহার আমাদের সামাজিক জীবনের ওপর নানারূপ প্রভাব ফেলছে। ফলে আমাদের সমাজের মানুষদের সাথে দূরত্ব বাড়ছে এবং মানুষ ক্রমশ একা হয়ে পড়ছে।

পরিবারের সাথে সম্পর্কে Internet প্রভাব

অতিরিক্ত Internet ব্যবহারের ফলে পরিবারের সদস্যদের সাথে সম্পর্ক দুর্বল হয়ে যেতে পারে। পরিবারের সদস্যরা বার বার ইন্টারনেট ব্যবহার করতে বারণ করায় তাদের সাথে দূরত্ব বেড়ে যায়। এছাড়া পরিবারের সাথে কম সময় কাটানোর কারণে যোগাযোগের ঘাটতি দেখা দেয়।

শিশুদের মধ্যে Internet আসক্তি

শিশুদের ইন্টারনেটে আসক্তি আজকের সমাজে একটি বড় সমস্যা। কারণ ইন্টারনেটের ব্যবহার ও বিভিন্ন কন্টেন্ট আসক্তির কারণে তারা বাবা-মায়ের কথা শুনতে চায় না ,পরিবারের মানুষদের সাথে মিশতে চায় না, বড়দেরকে সম্মান করে না, মুখের উপর কথা বলে। এ ছাড়াও পড়াশোনায় মনোযোগ কমে যায়, মাঠে খেলাধুলা ও শারীরিক ব্যায়াম করতে অনুসাহিত হয়, এতে তাদের শারীরিক ও মানসিক স্বাস্থ্যের ক্ষতি হয়।

ভার্চুয়াল বন্ধুত্বের কুফল

ভার্চুয়াল বন্ধুত্ব সত্যিকারের সম্পর্কের বিকল্প হতে পারে না। Internet ব্যবহারের ফলে আমরা ভার্চুয়াল মানুষদেরকে আপন মনে করি আর নিজের মানুষদেরকে পর মনে করি। কিন্তু এতে আমাদের প্রকৃত সম্পর্কগুলো দূরে সরে যায়। ফলে সামাজিক বিচ্ছিন্নতা এবং ব্যক্তিগত সম্পর্ক ও যোগাযোগ কমে যেতে পারে। আমরা আমাদের আপন মানুষ বা বন্ধুদের ভার্চুয়াল বন্ধুদের মতো ভাবা শুরু করি। আসল বন্ধুত্বের মতো গভীর সম্পর্ক ভার্চুয়াল দুনিয়ায় পাওয়া যায় না, বরং এটি অনেক সুন্দর সম্পর্ককেই ধ্বংস করে দিতে পারে।

কাজের প্রতি মনোযোগের ক্ষতি

(Productivity Concerns)অতিরিক্ত ইন্টারনেট ব্যবহারের কারণে আমাদের কাজের প্রতি অনীহা সৃষ্টি হতে পারে। কোনো কাজে মন বসতে চায় না। যে কোনো কাজ করতে গেলে মনে হয় একটু সোশ্যাল মিডিয়া থেকে ঘুরে আসি। এইগুলা করতে করতে কাজের সময় শেষ হয়ে যায় আর অন্য কোনো কাজ করতে ভালো লাগে না। ফলে অতিরিক্ত ইন্টারনেট ব্যবহারের কারণে কর্মস্থলে এবং পড়াশোনার প্রতি মনোযোগ কমে যেতে পারে।

পড়াশোনার ওপর Internet প্রভাব

আমাদের দৈনন্দিন জীবন যেন ইন্টারনেট ছাড়া চলতেই চায় না। পড়াশুনার ক্ষেত্রে যখন আমরা মোবাইল ব্যবহার করি তখন আমাদের মনোযোগ চলে যায় অন্য দিকে। আমরা আর পড়াশুনায় ফোকাস করতে পারিনা, সময়েরও অপচয় হয়। ফলে আমরা ঠিক মতো পড়াশুনা করতে পারি না। ভালোভাবে পড়াশুনা না করতে পারার কারণে ভালো রেজাল্ট ও করতে পারি না। পরিশেষে আমরা বলতে পারি পড়াশুনায় ইন্টারনেট মারাত্মক প্রভাব ফেলছে।

কাজের পরিবেশে প্রযুক্তির প্রভাব

অফিসে বা কর্মস্থলে প্রযুক্তির অতিরিক্ত ব্যবহার Productivity তে প্রভাব ফেলে। অতিরিক্ত সময় সোশ্যাল মিডিয়ায় কাটানোর কারণে কাজের দক্ষতা হ্রাস পায়। কোনো কাজে ঠিক ভাবে মনোযোগ বসে না। ফলে কর্মস্থলে আশানুরূপ ফল পাওয়া যায় না।

ইন্টারনেট আসক্তি

(Digital Addiction) আমাদের জীবনে ইন্টারনেটের অনেক ভূমিকা রয়েছে। তবে অতিরিক্ত ইন্টারনেট আসক্তি একজন মানুষের পুরো মস্তিস্ক বিকল করে দেয়। ফলে তার স্বাভাবিক চিন্তা ধারণা, ঠিক মতো ঘুম, চোখে কম দেখা, মাথা ব্যাথা ছাড়াও নানারকম সমস্যা সৃষ্টি করতে পারে। এটি তার মানসিক এবং সামাজিক জীবনের ওপর মারাত্মক প্রভাব ফেলে।

ডিজিটাল ডিটক্সের গুরুত্ব

ইন্টারনেট আসক্তি থেকে মুক্তি পেতে ডিজিটাল ডিটক্সের গুরুত্ব অপরিসীম। ডিজিটাল ডিটেক্স হলো এমন একটি পদ্ধতি, যার মাধ্যমে স্বেচ্ছায় তারা তাদের ডিজিটাল ডিভাইস ব্যবহার করা থেকে বিরত থাকেন। নির্দিষ্ট সময় ইন্টারনেট থেকে বিরত থাকলে মানসিক স্বাস্থ্য ভালো থাকে এবং কাজের প্রতি মনোযোগ বাড়ে।

সামাজিক মিডিয়া আসক্তির কুফল

সামাজিক মিডিয়াতে আসক্তির ফলে, ভার্চুয়াল বন্ধুত্বের সংখ্যা বৃদ্ধি পায়। বিভিন্ন টিকটক ভিডিও, মিমস, ইত্যাদির মাধ্যমে একজন ইউজারকে এমন ভাবে আকৃষ্ট রাখে যেন সে, একটার পর একটা ভিডিও দেখতেই থাকবে। ফলে সে এইখান থেকে বের হয়ে আসতে পারে না। এই ছাড়াও সোশ্যাল মিডিয়াগুলাতে এখন বিভিন্ন অপরিচিত মানুষদের সাথে কথা বলার সুযোগ থাকে, ফলে তারা বিভিন্ন সম্পর্কে জড়িয়ে পড়ে এবং এইখান থেকে আর বেরিয়ে আসতে পারে না। তাই বলবো সোশ্যাল মিডিয়া আমাদের জীবনে নারারূপ প্রভাব ফেলছে। এটি মানুষের আত্মমর্যাদা এবং সম্পর্কের ওপরও নেতিবাচক প্রভাব ফেলে।

ভিডিও গেম আসক্তির সমস্যা

ভিডিও গেম অতিরিক্ত খেলার ফলে বাচ্চাদের পড়াশুনার প্রতি ইচ্ছা থাকে না। তাঁরা মানুষদের সাথে মিশতে চায় না, বন্ধুদের সাথে খেলতে চায় না এবং ঠিকমত স্কুলে ও যেতে চায় না। তাঁরা ভিডিও গেমে এতটাই আসক্ত হয়ে যায় যে তাদের খাওয়ার দিকেও নজর থাকে না। ফলে শারীরিকভাবে ও মানসিকভাবে তাঁদের স্বাস্থ্যঝুঁকি বেড়ে যায়।

অতিরিক্ত ইন্টারনেট ব্যবহারের অর্থনৈতিক প্রভাব

ইন্টারনেট অতিরিক্ত ব্যবহারের ফলে অর্থনৈতিক ক্ষতিও হয়। কারণ ইন্টারনেট কিনতে অনেক টাকার প্রয়োজন হয়, ইন্টারনেট আসক্তির কারণে অনেক mb প্রয়োজন হয়, এইজন্য এতে অর্থনৈতিক ভাবে ক্ষতিও রয়েছে।

অনলাইনে সময় ব্যয়

ইন্টারনেট আমাদের দৈনন্দিন জীবনে সুবিধার চাইতে অসুবিধা বেশি সৃষ্টি করেছে। আমরা এখন একটু সময় পাইলেই অনলাইনে সময় ব্যয় করি। আমাদের নিজের জন্য কোনো সময় রাখিনা। বই আমাদের বন্ধু। আমরা পড়াশুনা করার পাশাপাশি বিভিন্ন শিক্ষণীয় বই, বিভিন্ন ভ্রমণ কেন্দ্রে যাওয়ার সময় পাই না। অথচ এইগুলা আমাদের জীবনে অনেক গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখে।

অতিরিক্ত ব্যবহারের সমাধান

(Solutions and Management) ইন্টারনেট ব্যবহারের মাত্ৰা দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে। ফলে দৈনন্দিন জীবনও ঝুঁকিতে পড়ছে। অতিরিক্ত ইন্টারনেট ব্যবহারের নেতিবাচক প্রভাব থেকে মুক্তি পেতে আমাদের অবশ্যই এ বিষয়ে পদক্ষেপ নেওয়ার সুযোগ রয়েছে।

প্রযুক্তির ব্যবহারের নিয়ন্ত্রণ

ইন্টারনেটের ব্যবহার নিয়ন্ত্রিত রাখা এবং সঠিকভাবে সময় নির্ধারণ করা অত্যন্ত জরুরি। আমরা যদি রুটিন মাফিক কাজ করি এবং সময়ের সঠিক ব্যবহার করি তাহলে অনেকটাই ইন্টারনেট আসক্তি থেকে নিজেদেরকে রক্ষা করতে পারবো। 

স্বাস্থ্যকর প্রযুক্তি অভ্যাস গঠন

আমাদের স্বাস্থ্যকর প্রযুক্তি ব্যবহারের অভ্যাস গঠন করতে হবে, যেমন ঠিক মতো ব্যায়াম করা, শরীর চর্চা করা, নিয়মিত ঘুমানো এবং রাতে ঘুমের আগে ইন্টারনেট ব্যবহার থেকে বিরত থাকা।

ইন্টারনেটের ব্যবহার জীবনকে সহজ করলেও এর অতিরিক্ত ব্যবহারে দীর্ঘমেয়াদী কুফল রয়েছে। স্বাস্থ্য, সামাজিক সম্পর্ক, অর্থনীতি, এবং কর্মক্ষেত্রে খারাপ প্রভাব ফেলতে পারে। তাই প্রযুক্তির ব্যবহারে সচেতন হওয়া এবং সঠিক পদ্ধতি মেনে চলা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।

আরো পড়ুন: ইন্টারনেট ডাটা বাঁচানোর উপায়

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button
error: Content is protected !!