ইসলাম শিক্ষাস্বাস্থ্য টিপস

খেজুরের পুষ্টিগুণ, স্বাস্থ্য উপকারিতা ও ইসলামিক গুরুত্ব

খেজুর ইংরেজি কি? খেজুরের ইংরেজি: Date. খেজুর গাছের (Date Palm) বৈজ্ঞানিক নাম: Phoenix dactylifera. মানব সভ্যতার ইতিহাসে সুমিষ্ট ফল হিসেবে এর গ্রহণযোগ্যতা পাওয়ায় অনেক বৎসর পূর্ব থেকেই এর চাষাবাদ হয়ে আসছে। খেজুর গাছ প্রধানতঃ মরু এলাকায় ভাল জন্মে। খেজুর গাছের ফলকে খেজুররূপে আখ্যায়িত করা হয়। খেজুর একটি পুষ্টিকর ও সুস্বাদু ফল, যা সুস্থ জীবনের জন্য অত্যন্ত উপকারী। প্রাচীনকাল থেকেই এটি মানুষের খাদ্যাভ্যাসের অংশ এবং বিশেষভাবে ইসলাম ধর্মে এক গুরুত্বপূর্ণ স্থান দখল করে আছে। পুষ্টিগুণের কারণে এটি আজকাল ‘সুপারফুড’ হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে। আমাদের দেশে খেজুরের লালী, খেজুরের গুড়, খেজুরের চিনি ইত্যাদি উৎপাদন করা হচ্ছে, খেজুর গুড়ের উপকারিতা ও এসব খাদ্যের কার্যকারীতাও ব্যাপক।

খেজুরের ইসলামিক গুরুত্ব

খেজুর কুরআন ও হাদিসে বিশেষভাবে উল্লেখিত একটি ফল। এটি নবী মুহাম্মদ (সা.)-এর প্রিয় খাদ্যের মধ্যে অন্যতম ছিল এবং একে সুন্নাত হিসেবে গ্রহণ করার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে।

নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ
“যে ব্যক্তি সকালে কয়েকটি আজওয়া খেজুর খাবে,
সেদিন তাকে কোনো বিষ বা জাদু ক্ষতি করতে পারবে না।”
(সহীহ বুখারী, ৫৭৬৮)

রমজানে ইফতার করার সময় প্রথমে খেজুর খাওয়ার সুন্নাত রয়েছে। এছাড়াও কুরআনের সূরা মারিয়ামে উল্লেখ আছে যে, মা মরিয়াম (আ.)-কে ঈসা (আ.) জন্মদানের সময় খেজুর খেতে বলা হয়েছিল, যা তার জন্য উপকারী ছিল।

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (WHO)-এর প্রতিবেদনে খেজুরের গুরুত্ব

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (WHO) এবং অন্যান্য স্বাস্থ্য সংস্থাগুলো খেজুরের পুষ্টিগুণ ও স্বাস্থ্য উপকারিতার বিষয়ে ইতিবাচক মতামত প্রকাশ করেছে। WHO-এর মতে:

প্রাকৃতিক পুষ্টি উৎস: খেজুরে থাকা প্রাকৃতিক শর্করা, ফাইবার ও ভিটামিন শরীরের জন্য অত্যন্ত উপকারী। অনেকের মনে প্রশ্ন থেকেই যায় খেজুর খেলে কি ওজন বাড়ে? আসলে খেজুর খেলে ওজন বাড়ে না বরং শরীরের মাংসপেশি সবল ও দৈহিক শক্তি বৃদ্ধি পায়।

রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধিকারী: এতে থাকা অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট বিভিন্ন সংক্রমণ ও রোগ প্রতিরোধে সাহায্য করে।

শিশুদের জন্য উপকারী: WHO শিশুদের জন্য প্রাকৃতিক ও স্বাস্থ্যকর খাবার হিসেবে খেজুরের গুরুত্ব তুলে ধরেছে।

ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণ: সীমিত পরিমাণে খেজুর খাওয়া ডায়াবেটিস রোগীদের জন্যও উপকারী হতে পারে, তবে চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া উচিত।

খেজুরের পুষ্টিগুণ, স্বাস্থ্য উপকারিতা ও ইসলামিক গুরুত্ব

খেজুর খাওয়ার উপকারিতা

১. তাৎক্ষণিক শক্তি প্রদান করে: খেজুর প্রাকৃতিক শর্করার উৎকৃষ্ট উৎস। এতে থাকা গ্লুকোজ, ফ্রুকটোজ ও সুক্রোজ শরীরে দ্রুত শক্তি জোগায় এবং ক্লান্তি দূর করে।

২. হজমশক্তি উন্নত করে: উচ্চমাত্রার ফাইবার থাকায় এটি হজমশক্তি বাড়ায় এবং কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করতে সাহায্য করে।

৩. হৃদযন্ত্রের জন্য উপকারী: পটাসিয়াম ও অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট থাকায় খেজুর রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে রাখে ও হৃদরোগের ঝুঁকি কমায়।

৪. রক্তশূন্যতা প্রতিরোধ করে: আয়রনসমৃদ্ধ খেজুর হিমোগ্লোবিন বাড়িয়ে রক্তশূন্যতা দূর করতে সাহায্য করে।

৫. মস্তিষ্কের কার্যকারিতা বৃদ্ধি করে: ভিটামিন বি৬ ও অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট থাকায় খেজুর স্মৃতিশক্তি ও মানসিক স্বাস্থ্যের উন্নতি ঘটায়।

৬. রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়: এতে থাকা ভিটামিন ও অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট শরীরের প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে এবং বিভিন্ন রোগের ঝুঁকি কমায়।

৭. হাড় ও দাঁতের জন্য উপকারী: খেজুরে ক্যালসিয়াম, ম্যাগনেসিয়াম ও ফসফরাস থাকায় এটি হাড় ও দাঁত মজবুত করতে সাহায্য করে।

৮. ত্বকের উজ্জ্বলতা বাড়ায়: ভিটামিন সি ও ডি সমৃদ্ধ খেজুর ত্বকের উজ্জ্বলতা বৃদ্ধি করে এবং বলিরেখা বা চামড়ার ভাঁজ প্রতিরোধ করে।

৯. ওজন নিয়ন্ত্রণে সহায়ক: খেজুর উচ্চ ফাইবারযুক্ত হওয়ায় ক্ষুধা কমায় ও দীর্ঘক্ষণ পেট ভরা রাখে, যা ওজন নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে।

১০. চোখের দৃষ্টিশক্তি ভালো রাখে: ভিটামিন ’এ’ সমৃদ্ধ খেজুর চোখের জন্য উপকারী এবং রাতকানা রোগ প্রতিরোধে সাহায্য করে।

১১. কোলেস্টেরল কমায়: খেজুরে কোনো কোলেস্টেরল নেই, বরং এটি ভালো কোলেস্টেরলের মাত্রা বাড়িয়ে খারাপ কোলেস্টেরল কমাতে সাহায্য করে।

১২. লিভার সুস্থ রাখে: অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট সমৃদ্ধ হওয়ায় খেজুর লিভারের কার্যকারিতা বৃদ্ধি করে এবং লিভারের বিভিন্ন সমস্যা প্রতিরোধে সাহায্য করে।

১৩. স্ট্রেস ও ডিপ্রেশন কমায়: খেজুরে থাকা ভিটামিন ’বি৬’ ও ম্যাগনেসিয়াম মস্তিষ্কে সেরোটোনিন এবং নোরএপিনেফ্রিন উৎপাদনে সাহায্য করে, যা মানসিক চাপ ও বিষণ্ণতা কমাতে কার্যকর।

১৪. যৌন স্বাস্থ্য উন্নত করে: খেজুরে থাকা অ্যামিনো অ্যাসিড ও প্রাকৃতিক শর্করা শরীরে শক্তি বৃদ্ধি করে, যা যৌন স্বাস্থ্যের জন্য উপকারী।

গর্ভবতী ও স্তন্যদানকারী মায়েদের জন্য উপকারী

খেজুর গর্ভবতী নারীদের জন্য অত্যন্ত উপকারী। এটি প্রসব-প্রক্রিয়া সহজ করে ও শক্তি জোগায়। স্তন্যদানকারী মায়েদের জন্যও এটি কার্যকর, কারণ এতে থাকা পুষ্টি উপাদান শিশুর সুস্থ বিকাশে সহায়তা করে।

সঠিকভাবে খেজুর খাওয়ার নিয়ম

  • প্রতিদিন সকালে ২-৪টি খেজুর খেলে শরীরের শক্তি বৃদ্ধি পায়।
  • রাতে দুধের সাথে খেলে এটি আরও উপকারী হয়।
  • ডায়াবেটিস রোগীদের চিকিৎসকের পরামর্শ নিয়ে পরিমাণমতো খেতে হবে।
  • ইফতারে খেজুর খাওয়া সুন্নাত ও স্বাস্থ্যকর।
  • ক্যালসিয়াম শোষণে সাহায্য করতে খেজুর খাওয়ার পর পর্যাপ্ত পানি পান করা উচিত।

উপসংহার

খেজুর শুধুমাত্র একটি সুস্বাদু ফলই নয়, এটি পুষ্টিগুণেও ভরপুর। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (WHO) সহ বিভিন্ন সংস্থার মতে, এটি সুস্থ জীবনের জন্য অপরিহার্য একটি খাদ্য। এছাড়া Food and Agriculture Organization (FAO) এর উপরে বিভিন্ন প্রতিবেদন করেছে। তাই শরীর সুস্থ রাখতে নিয়মিত খেজুর খাওয়ার অভ্যাস গড়ে তুলুন এবং প্রাকৃতিক এই সুপারফুডের উপকারিতা উপভোগ করুন।

আরও পড়ুন: সুস্থভাবে রোজা রাখার টিপস

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button
error: Content is protected !!