ক্রিপ্টোকারেন্সি কি? ক্রিপ্টোকারেন্সি বিস্তারিত জানুন
ক্রিপ্টোকারেন্সি (Cryptocurrency) হলো একধরনের ডিজিটাল কারেন্সি যাকে ভার্চুয়াল মুদ্রা বা গুপ্ত মুদ্রাও বলা যেতে পারে। কেননা এটি হলো এক ধরনের ওপেন সোর্স এবং অদৃশ্য মুদ্রা যার অস্তিত্ব কেবল ইন্টারনেট জগতে রয়েছে। বাস্তবে এর কোনো অস্তিত্ব নেই। আমাদের ব্যবহৃত সাধারণ মুদ্রা বা টাকার মতো ক্রিপ্টোকারেন্সি ধরা বা ছোঁয়া যায় না এবং বহনও করা যায় না।
এ ধরনের ডিজিটাল কারেন্সি কোন রাষ্ট্র বা সরকারের পক্ষ থেকে উৎপাদন করা বা সরবরাহ করা হয় না। এমনকি এসমস্ত ইলেক্ট্রনিক কারেন্সি উৎপাদন, সংরক্ষণ ও লেনদেনের উপর কোনো ব্যাংক, কোন আর্থিক প্রতিষ্ঠান বা কর্তৃপক্ষের হস্তক্ষেপ নেই।
ক্রিপ্টোকারেন্সি কি?
ক্রিপ্টো কয়েনের উৎপাদন, ব্যবহার ও লেনদেন কেবলমাত্র অনলাইন দুনিয়াতেই সম্ভব। ভার্চুয়াল জগতে যে কেউ এ ধরনের ডিজিটাল কয়েন উৎপাদন করতে পারেন, ব্যক্তিগত সম্পত্তি হিসেবে সংরক্ষণ করতে পারেন ও ব্যবহার করতে পারেন। তবে বেশিরভাগ সময় অনলাইনে বিভিন্ন প্রোডাক্ট ও সার্ভিস ক্রয়-বিক্রয় করার ক্ষেত্রে ক্রিপ্টোকারেন্সি বহুলভাবে ব্যবহৃত হয়।
ক্রিপ্টোকারেন্সি বা এ ধরনের ডিজিটাল কয়েনগুলো মূলত ব্লকচেইন প্রযুক্তির উপর ভিত্তি করে তৈরি করা হয় ও লেনদেন করা হয়। এ প্রযুক্তিটি প্রধানত ক্রিপ্টোগ্রাফি বা তথ্যগুপ্তিবিদ্যা ধারণা নিয়ে কাজ করে। এক্ষেত্রে বাইনারি সংখ্যা- শূন্য এবং এক, বিভিন্ন জটিল কোড ও অ্যালগরিদমের সাহায্যে লেনদেনের ডাটা এক একটি ব্লকে সংরক্ষণ করা হয়। এরপর এই ব্লকগুলো একটির পর একটি সাজিয়ে চেইন গঠন করা হয় এবং এভাবে যে কোড তৈরি হয় সেই কোড দিয়েই এক একটি ক্রিপ্টোকয়েন তৈরি হয়।
ক্রিপ্টোকারেন্সি ইতিহাস
সর্বপ্রথম ১৯৮৩ সালে ডেভিড চৌম নামের একজন মার্কিন গুপ্তলেখক ব্লকচেইনের মাধ্যমে তৈরি “ক্যাশ” নামক এক ধরনের বিশেষ গুপ্তমুদ্রার ব্যবহার ভার্চুয়াল জগতে মানুষের সামনে তুলে ধরেন। পরবর্তীতে এই ব্যক্তি ১৯৯৫ সাল পর্যন্ত ক্রিপ্টোকারেন্সির আধুনিকায়ন ও অনলাইনে এর লেনদেন সক্ষমতা বৃদ্ধির জন্য কাজ করে গিয়েছেন। কিন্তু সে সময় এই ধরনের অদৃশ্য মুদ্রা তেমন জনপ্রিয়তা বা পরিচিতি লাভ করতে পারেনি।
পরবর্তীতে বিভিন্ন সময় বিভিন্ন অনলাইন বিষারদ ক্রিপ্টোকারেন্সির ধারণা নিয়ে গবেষণা চালান। তবে ধারণা করা হয়, ২০০৯ সালে সাতোশি নাকামোতো নামক এক ব্যক্তি অথবা একটি সংগঠন সফলভাবে এই ডিজিটাল কারেন্সি উৎপাদন ও সরবরাহ করা শুরু করেন। আর অনলাইন জগতে এই কারেন্সির নাম দেওয়া হয় বিটকয়েন।
তবে সময়ের সাথে সাথে আরও অনেক ধরনের ও নামের ক্রিপ্টোকারেন্সির উদ্ভব ও বিনিয়োগ হলেও এখন পর্যন্ত বিটকয়েন-ই সবথেকে জনপ্রিয় এবং ব্যবহৃত ডিজিটাল টোকেন। এমনকি এই ডিজিটাল মুদ্রার মাধ্যমে এখন এটিএম থেকে টাকা তোলা যায়। তবে বর্তমানে ভার্চুয়াল জগতে আরও অনেক ক্রিপ্টোকয়েন লেনদেন ও কেনাকাটার জন্য বিশেষ জনপ্রিয়তা অর্জন করতে সক্ষম হয়েছে।
ক্রিপ্টোকারেন্সি ব্যবসা
ক্রিপ্টোকারেন্সি ব্যবসা বর্তমান সময়ের অন্যতম জনপ্রিয় একটি অনলাইন ব্যবসা। এ খাতে ইনভেস্ট করে সফল হয়েছেন এমন মানুষের সংখ্যা বিশ্বজুড়ে নিতান্তই কম নয়। বরং ক্রিপ্টোকারেন্সি ট্রেডিং এর সফলতা ও জনপ্রিয়তার দিকে চোখ রেখে মার্কেটপ্লেসের পরিধি যেমন অসামান্য হারে বাড়ছে তেমনি বিশ্বের বিভিন্ন দেশ থেকেও আইনি সাপোর্ট বাড়ছে।
অল্প সময় ও অল্প ইনভেস্টমেন্টে অধিক মুনাফা লাভের জন্য অনেকেই এখন এ খাতে বিনিয়োগের স্বপ্ন দেখছেন। তবে বিষয়টি যতটা সহজসাধ্য মনে হয় ততটাও সহজ নয়। মিনিমাম ১০০ ডলার বিনিয়োগ করে ব্যবসা শুরু করতে পারবেন ঠিকই তবে টাকার চেয়ে এক্ষেত্রে সময় ও শ্রম বিনিয়োগ করতে হবে সবথেকে বেশি।
ক্রিপ্টোতে অর্থ উপার্জন সহ সবকিছুই সঠিক ধারণা দিয়ে শুরু করতে হয়। নীচে আমরা কিছু শীর্ষস্থানীয় ক্রিপ্টো ব্যবসায়িক ধারণা তুলে ধরব যা আপনি এখনই শুরু করতে পারেন৷
Day Trading With Crypto
কিছুটা ঝুঁকিপূর্ণ ক্রিপ্টোকারেন্সি বিজনেস আইডা হলেও এটি এমন একটি উপায় যেখান থেকে যে কেউ সামান্য পরিমাণ টাকা ইনভেস্টের মাধ্যমে ব্যবসা শুরু করতে পারেন এবং লাভবান হতে পারেন। এছাড়া ক্রিপ্টো ব্যবসা শুরু করার জন্য এটি খুবই সহজ একটি উপায়।
প্রাথমিকভাবে একটি ক্রিপ্টোকারেন্সি ট্রেডিং প্লাটফর্মে সাইন আপ করার মাধ্যমেই বিজনেস শুরু করা যেতে পারে। যারা এই খাতে নতুন তাদের জন্য Coinbase একটি অসাধারণ প্লাটফর্ম। বর্তমানে বিশ্বের 100 টির অধিক দেশ থেকে প্রায় 56 মিলিয়ন ইউজার কয়েনবেজ সফটওয়্যারটির মাধ্যমে ক্রিপ্টো ট্রেডিং করে আয় করছেন।
Start a Crypto Payment Gateway
ধীরে ধীরে ক্রিপ্টোকারেন্সির চাহিদা ও ব্যবহার বাড়তে থাকায় ই-কমার্স প্রতিষ্ঠানগুলো সাধারণ মুদ্রার মতো ক্রিপ্টো মুদ্রাও এক্সেপ্ট করতে শুরু করেছে। এছাড়া শুধুমাত্র ক্রিপ্টো আর্নিং এর জন্যও অনেক নতুন নতুন ব্যবসা প্রতিষ্ঠান তৈরি হচ্ছে যারা কেবল ক্রিপ্টোর মাধ্যমে ক্রয়-বিক্রয় করে থাকে।
কিন্তু এ ধরনের লেনদেনের জন্য প্রয়োজন একটি লিগ্যাল পেমেন্ট গেটওয়ের। তবে বর্তমানে ইন্টারনেটে এধরনের পেমেন্ট গেটওয়ের সংখ্যা প্রয়োজনের তুলনায় নিতান্তই কম। তাই আপনি যদি সহজে ও নির্ভেজাল ভাবে ক্রিপ্টো ব্যবসা করতে চান তাহলে একটি নিজস্ব ক্রিপ্টো পেমেন্ট গেটওয়ে সিস্টেম চালু করতে পারেন এবং সেখান থেকে ভালো পরিমাণ অর্থ ইনকাম করতে পারেন। এ ধরনের ক্রিপ্টো ব্যবসায় লেনদেনমূলক ফি, সাবস্ক্রিপশন ফি এবং অ্যাকাউন্ট সেট আপ ফি এর মাধ্যমে সহজেই টাকা ইনকাম করা যায়।
Sell Physical Things for Cryptocurrencies Online
বিশ্বজুড়ে বর্তমানে অসংখ্য ক্রিপ্টোকারেন্সি ইউজার রয়েছেন যারা কেবল ইনভেস্টমেন্ট এর জন্যই নয় বরং দৈনন্দিন প্রয়োজনীয় পণ্য ও সার্ভিস ক্রয়ের জন্য সাধারণ টাকার মতো ক্রিপ্টো কয়েন ইউজ করতে অধিক আগ্রহী। তবে দুঃখজনক ব্যাপার হলো এখনও পর্যন্ত বেশিরভাগ ব্যবসা প্রতিষ্ঠান তাদের পণ্য কেনাবেচার ক্ষেত্রে ক্রিপ্টোকারেন্সি ব্যবহারে বৈধতা দেন না।
তাই এই ধরনের কাস্টমারদের আপনি আপনার বিজনেসের টার্গেটেড কাস্টমার বানাতে পারেন। আপনি একটি ই-কমার্স ব্যবসা শুরু করতে পারেন যেখানে পণ্যের কেনাবেচা সাধারণ মুদ্রার পরিবর্তে ভার্চুয়াল মুদ্রার মাধ্যমে হবে। এরপর এই ভার্চুয়াল মুদ্রাগুলোকে অনলাইন এক্সচেঞ্জের মাধ্যমে সাধারণ মুদ্রায় রূপান্তর করতে পারেন।
এরূপ জনপ্রিয় একটি অনলাইন এক্সচেঞ্জ ওয়েবসাইট হলো Coinbase Commerce. এই প্লাটফর্মে বর্তমানে প্রায় 8,000 এর উপরে সক্রিয় মার্চেন্ট রয়েছেন যারা নিয়মিত এখান থেকে ক্রিপ্টো এক্সচেঞ্জ করছেন। সুতরাং আপনি যদি ঝুঁকি মুক্ত ক্রিপ্টো বিজনেস করতে চান তাহলে এটি আপনার জন্য অন্যতম সেরা একটি উপায় হতে পারে অর্থ উপার্জন করার।
Crypto Freelance Writing
ক্রিপ্টো ইন্ডাস্ট্রিতে থেকে আয় করার এটি একটি পরোক্ষ উপায়। আপনি যদি ভার্চুয়াল কয়েনের ওপর আপনার মূল্যবান অর্থ বিনিয়োগ করতে অনাগ্রহী হয়ে থাকেন এবং আপনার যদি গবেষণা ও লেখালেখির বিষয়ে দক্ষতা থেকে থাকে তাহলে এই প্রসেসে আপনি ক্রিপ্টো ইন্ডাস্ট্রি থেকে ভালো পরিমাণ টাকা ইনকাম করতে পারেন।
এখানে আপনাকে কোনো টাকা ইনভেস্ট করতে হবে না। অর্থ্যাৎ কোনো কারেন্সি কিনতে বা বেচতে হবে না। ক্রিপ্টোকারেন্সি সম্বন্ধে বিভিন্ন তথ্য নির্ভর ব্লগ ও আর্টিকেল লিখে সেগুলো ওয়েবসাইটে পাবলিশ করার মাধ্যমে টাকা উপার্জন করতে পারেন। ক্রিপ্টোকারেন্সির জনপ্রিয়তা বৃদ্ধির সাথে সাথে এ বিষয়ে প্রয়োজনীয় লেখনীর চাহিদাও বৃদ্ধি পেয়েছে। তাই কোন প্রকার টাকা খরচ ছাড়াই কেবল শ্রম ও মেধার মাধ্যমে এভাবে ক্রিপ্টো থেকে আয় করতে পারেন।
ক্রিপ্টোকারেন্সি স্বিকৃতি প্রদানকারী প্রথম দেশ
ক্রিপ্টোকারেন্সি একধরনের অদৃশ্য ডিজিটাল মুদ্রা হওয়ায় এবং এর উপর কোন দেশের সরকার বা সে দেশের কোন ব্যাংকের নজরদারি না থাকায় সন্ত্রাসবাদে আর্থিক লেনদেনের ক্ষেত্রে ক্রিপ্টোকয়েনের নেতিবাচক ভূমিকা লক্ষ্য করা যায়। আর তাই এখন পর্যন্ত বিশ্বের বেশিরভাগ দেশ এই মুদ্রাকে স্বীকৃতি প্রদানে অস্বীকার করে।
তবে এর ইতিবাচক দিকগুলো বিবেচনা করে এবং কঠোর নিরাপত্তা ব্যবস্থা নিশ্চিত করে ধীরে ধীরে বিভিন্ন দেশে ক্রিপ্টোকারেন্সির লেনদেন বৈধ ঘোষণা করা হয়েছে। এরই প্রেক্ষাপটে সর্বপ্রথম সালভাদোর নামক একটি দেশ ক্রিপ্টোকারেন্সিকে স্বীকৃতি প্রদান করে। তাই সালভাদোর ক্রিপ্টোকারেন্সি স্বীকৃতি প্রদানকারী প্রথম দেশ হিসেবে সুপরিচিত।
ক্রিপ্টোকারেন্সি থেকে আয় ও বিনিয়োগের উপায়
ক্রিপ্টোকারেন্সি থেকে আয় করে মিলিয়নিয়ার হয়ে যাওয়ার গল্প আমরা অনেক শুনে থাকলেও প্রকৃতপক্ষে এই পথ পাড়ি দেওয়া স্বপ্নের মতো সহজ কিছু নয়। ইন্টারনেট ভিত্তিক অন্যান্য কাজের মতো এটিও শতভাগ ঝুঁকিমুক্ত নয়। বরং ঝুঁকির আশংকা তুলনামূলক বেশিই বলা যেতে পারে।
কেননা এখানে আপনাকে সময় ও অর্থ উভয়ই বিনিয়োগ করতে হবে এবং সেটি অবশ্যই সঠিক উপায়ে। তবেই না আপনি আশানুরূপ আয়ের মুখ দেখবেন।
ক্রিপ্টোকারেন্সি থেকে আয় করতে হলে প্রথমত আমাদের জানতে হবে কিভাবে ক্রিপ্টো মুদ্রার মাধ্যমে আয় করা যায়। তাহলে চলুন জেনে নেই ক্রিপ্টোকয়েনের মাধ্যমে আয় করার উপায়গুলো কি কি।
অ্যাফিলিয়েট মার্কেটিং
ক্রিপ্টোকারেন্সি থেকে আয় করার সবথেকে সহজ উপায়টি হলো অ্যাফিলিয়েট মার্কেটিং। ইন্টারনেটে সার্চ করলে আপনি এরূপ অনেক ই-কমার্স কোম্পানি পেয়ে যাবেন যারা মূলত বিভিন্ন ক্রিপ্টো মুদ্রা লেনদেনের মাধ্যমে অ্যাফিলিয়েট প্রোগ্রাম পরিচালনা করে থাকে। এসব প্রোগ্রামে যুক্ত হওয়ার মাধ্যমে সহজেই বিভিন্ন ডিজিটাল কারেন্সি উপার্জন করা যায়।
ক্রিপ্টোকারেন্সি ট্রেডিং
ক্রিপ্টোকারেন্সি থেকে আয় করার আরেকটি জনপ্রিয় মাধ্যম হলো ক্রিপ্টোকারেন্সি ট্রেডিং। অর্থ্যাৎ অফলাইনে যেরকম বিভিন্ন পণ্য ট্রেড করে অর্থ উপার্জন করা হয়, তেমনি অনলাইনেও ক্রিপ্টোকয়েন ট্রেড করার মাধ্যমে ইনকাম করা সম্ভব।
ক্রিপ্টোকারেন্সি ট্রেডিং মানে হলো বাজারে যখন একটি মুদ্রার দাম কম থাকে তখন সেই মুদ্রাটি ক্রয় করে পরবর্তীতে যখন ঐ মুদ্রার দাম বৃদ্ধি পায় তখন সেটি আবার বিক্রি করে দেওয়া। তবে এই কাজটিকে যতটা সহজ মনে হচ্ছে এটি কিন্তু ঠিক ততটাও সহজ নয়।
এর জন্য প্রয়োজন অনেক দক্ষতা, সময় ও শ্রম। আপনি যখন এই ফিল্ডে লেনদেন করতে কিছুটা দক্ষতা অর্জন করবেন এবং প্রফেশনালি কাজ করতে চাইবেন তখন এই পদ্ধতি আপনার জন্য অন্যতম সেরা ও লাভজনক একটি উপায় হতে পারে।
শপিং রিওয়ার্ড
ক্রিপ্টোকারেন্সি আয় করার এটি একটি জনপ্রিয় মাধ্যম। বর্তমানে বিশ্বের বড় বড় ই-কমার্স প্রতিষ্ঠানগুলো তাদের ক্রেতাদের শপিং রিওয়ার্ড দিয়ে থাকেন। সাম্প্রতিক কালের জনপ্রিয় কয়েকটি ক্রিপ্টো শপিং রিওয়ার্ড ই-কমার্স সাইটের নাম হলো Lolli, CoinCorner, Gemini, Wirex প্রভৃতি। এই শপিং রিওয়ার্ডগুলো মূলত ক্রিপ্টোকারেন্সির মাধ্যমে দেওয়া হয়ে থাকে।
এভাবে ক্রিপ্টোকারেন্সি আয় করার জন্য গ্রাহকের ব্রাউজারে একটি এক্সটেনশন ডাউনলোড করা থাকতে হবে। এরপর প্রোডাক্ট চেক আউট করার করার সময় ঐ এক্সটেনশন ব্যবহার করতে হবে। এর মাধ্যমে ক্রয়মূল্যের উপর প্রায় 30% ক্যাশব্যাক পাওয়া যায়। যার সম্পূর্ণটাই ক্রিপ্টোকারেন্সির মাধ্যমে দেওয়া হয়।
ক্রিপ্টোকারেন্সি মাইনিং
প্রফেশনালভাবে ক্রিপ্টোকারেন্সি আয় করার প্রধান উপায়টি হলো ক্রিপ্টোকারেন্সি মাইনিং। ক্রিপ্টো বিশেষজ্ঞদের ভাষায় ক্রিপ্টোকয়েন আর্নিং-কেই মূলত ক্রিপ্টোকয়েন মাইনিং বলা হয়। আর যিনি মাইনিং করে উপার্জন করেন তাকে বলা হয় মাইনার।
এক্ষেত্রে একজন মাইনারের কাজ হলো ক্রিপ্টোকারেন্সির পাবলিক লেজারে একটি লেনদেনের হিসাব আপডেট করে রাখা। অর্থ্যাৎ নতুন নতুন ব্লক তৈরি করে সেই ব্লকগুলো পূর্ববর্তী ব্লকের সঙ্গে যুক্ত করে ব্লকচেইন তৈরি করা।
ব্লকচেইন তৈরির এই কাজটি এক ধরনের বিশেষ কম্পিউটারের মাধ্যমে করা হয়ে থাকে যাকে মাইনিং রিগস বলা হয়। মাইনিং রিগ দিয়ে মাইনাররা অনেক দ্রুত বিভিন্ন ধরনের কয়েন মাইন করতে পারেন এবং এভাবে খুব কম সময়ের মধ্যে ভালো পরিমাণ কারেন্সি উৎপাদন করতে পারেন।
সার্ভে করে ক্রিপ্টোকারেন্সি আর্নিং
সহজে ও বিনামূল্যে ক্রিপ্টোকারেন্সি আয় করার অন্যতম সেরা একটি মাধ্যম হলো বিভিন্ন অনলাইন রিসার্চ কোম্পানির সার্ভেতে অংশগ্রহণ করা। এই কোম্পানিগুলো তাদের সার্ভেতে অংশগ্রহণ করা কর্মীদের ক্রিপ্টোকারেন্সির মাধ্যমে রিওয়ার্ড দিয়ে থাকে এবং এভাবে বিনামূল্যে ক্রিপ্টোকয়েন আয় করা সম্ভব।
এরূপ জনপ্রিয় কয়েকটি সার্ভে ওয়েবসাইটের নাম হলো Survey Time, Bitcoin Rewards, TimeBucks, Cointiply প্রভৃতি। প্রথমে এসব ওয়েবসাইটে ঢুকে ফ্রিতে অ্যাকাউন্ট তৈরি করে নিতে হবে। এরপর সেখান থেকে বিভিন্ন সার্ভেতে অংশগ্রহণ করে কারেন্সি উপার্জন করতে হবে। এভাবে যত বেশি সার্ভে করবেন তত বেশি কারেন্সি লাভ করতে পারবেন।
ক্রিপ্টোকারেন্সি বিনিয়োগ
সাম্প্রতিককালে ভার্চুয়াল জগতে যে কয়েকটি বিনিয়োগক্ষেত্র সারা বিশ্বজুড়ে সারা ফেলেছে তন্মধ্যে ক্রিপ্টোকারেন্সি অন্যতম। ক্রিপ্টোকারেন্সিতে বিনিয়োগ করে লাভবান হয়েছে এমনকি শূন্য থেকে মিলিয়নিয়ার বনে গিয়েছেন এমন সফলতার গল্পও নেট দুনিয়ায় কান পাতলেই শোনা যায়।
তবে এতসব সফলতার গল্পের পেছনে লুকিয়ে থাকা, অন্ধকারে ঢেকে থাকা অসফলতা ও হতাশার গল্পও নিতান্ত কম নয়। তাই এই অদৃশ্য জগতে আপনার মূল্যবান অর্থ বিনিয়োগের পূর্বে একবার নয় দশবার নয় বরং শতবার ভাববেন এবং এরপর সঠিক সিদ্ধান্তের মাধ্যমে সঠিক পথটি বেছে নিবেন। আর এক্ষেত্রে যত বেশি বিচক্ষণতার পরিচয় দেবেন তত বেশি সফল হবেন।
ক্রিপ্টোকারেন্সিতে বিনিয়োগ করতে হলে বা ক্রিপ্টোকয়েন কিনতে হলে আপনাকে কয়েকটি ধাপ অত্যন্ত বিচক্ষণতার সাথে অনুসরণ করতে হবে যেগুলো আমরা এ পর্যায়ে বিষদভাবে আলোচনা করতে চলেছি।
১. ক্রিপ্টোকারেন্সি বিনিয়োগের সর্বপ্রথম ধাপটি হলো ক্রিপ্টোকারেন্সি এক্সচেঞ্জে সাইন আপ বা রেজিস্ট্রেশন করা। ইন্টারনেটে বর্তমানে অনেক রকমের ক্রিপ্টোকারেন্সি এক্সচেঞ্জ সফ্টওয়্যার রয়েছে। আপনার পছন্দ অনুযায়ী এদের মধ্য থেকে যেকোন একটি ব্যবহার করতে পারেন।
তবে অফলাইনের তুলনায় অনলাইনে নিরাপত্তা যেহেতু অনেক বড় একটি প্রশ্ন তাই এক্ষেত্রেও একজন বিনিয়োগকারীকে অনেক সচেতন হতে হবে। যেনতেন সফটওয়্যার ব্যবহার না করে কিছুটা সময় ও ধৈর্য্য নিয়ে সবথেকে নিরাপদ, বিশ্বাসযোগ্য ও সহজে ব্যবহার করা যায় এমন একটি ক্রিপ্টোকারেন্সি এক্সচেঞ্জ বেছে নিতে হবে।
যেমন- CoinDEX, Coinbase, Coinswitch Kuber, Binance, eToro, Bitfinex, Bittrex, Kraken প্রভৃতি।
এগুলো হলো বর্তমান সময়ের অন্যতম জনপ্রিয় ও বিশ্বাসযোগ্য ক্রিপ্টো এক্সচেঞ্জ সফটওয়্যার। এছাড়া এদের নিজস্ব অ্যান্ড্রয়েড ও আইওএস অ্যাপ্লিকেশন থাকার কারণে এবং ইউজার ফ্রেন্ডলি ইন্টারফেস থাকার কারণে নতুনদের জন্য খুবই সহজে ব্যবহারযোগ্য।
এসব প্লাটফর্মে মিনিমাম 20$-50$ বিনিয়োগ করেও আপনি ব্যবসা শুরু করতে পারেন। তবে ন্যূনতম 100$ ইনভেস্ট করে ব্যবসা শুরু করাই সবথেকে ভালো। এই প্লাটফর্মগুলোর প্রত্যেকটিই নিজ নিজ জায়গা থেকে অসম্ভব ভালো।
তবে আমার ব্যক্তিগত অভিমত হলো Binance প্লাটফর্মে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করার চেষ্টা করুন। এখানে সামান্য শ্রম ও অর্থ বিনিয়োগ করেই লাভবান হতে পারেন। এছাড়া এটি খুবই বিশ্বস্ত একটি প্লাটফর্ম। পাশাপাশি এখানে বিগিনার ও এডভান্স লেভেলের কর্মীদের জন্য রয়েছে আলাদা আলাদা সেক্টর। যেটি নিঃসন্দেহে খুবই ফলদায়ক।
২. ক্রিপ্টোকারেন্সি এক্সচেঞ্জে অ্যাকাউন্ট ক্রিয়েট করা হয়ে গেলে এ পর্যায়ে এই অ্যাকাউন্টকে একটি পেমেন্ট মাধ্যমের সাথে যুক্ত করুন। সেটি হতে পারে আপনার ব্যাংক অ্যাকাউন্ট অথবা ডেবিট বা ক্রেডিট কার্ড।
৩. পেমেন্ট মেথড যুক্ত হয়ে গেলে এবার আপনি ক্রিপ্টোকয়েন কিনতে অর্থাৎ বিনিয়োগ করতে পুরোপুরি তৈরি। এবার আপনি আপনার বাছাইকৃত ক্রিপ্টোকারেন্সি এক্সচেঞ্জটির মাধ্যমে ন্যূনতম ১০০ ডলার খরচ করে ক্রিপ্টো মুদ্রা ক্রয় করতে পারেন।
কিন্তু এ ধরনের ক্রিপ্টো বা গুপ্ত মুদ্রা ক্রয় করার পরে আপনার মনে প্রশ্ন আসতে পারে যে, এগুলো আপনি কোথায় সংরক্ষণ করবেন বা জমা রাখবেন। যেহেতু এগুলো এক রকমের অদৃশ্য মুদ্রা যা আমরা দেখতে পাইনা বা স্পর্শ করতে পারিনা, সেহেতু সাধারণ টাকার মতো ক্রিপ্টো মুদ্রা ব্যাংকে অথবা ওয়ালেটে জমা রাখতে পারবো না।
তো এক্ষেত্রে সবথেকে মজার বিষয়টি হলো এগুলো যে রকম অদৃশ্য মুদ্রা তেমনি এগুলো নিরাপদে সংরক্ষণ করার জন্যও রয়েছে অদৃশ্য ওয়ালেটে। এই ওয়ালেটে অ্যাকাউন্ট ক্রিয়েট করে নিরাপদে ক্রিপ্টোকয়েন জমা রাখা যায় এবং ক্রয়-বিক্রয় করা যায়।
ক্রিপ্টোকারেন্সি তালিকা
বিটকয়েন আবিষ্কার হওয়ার পর থেকে এখন পর্যন্ত প্রায় ৪৫০০ টির বেশি সংখ্যক ক্রিপ্টোকয়েনের সন্ধান পাওয়া যায়। তবে এদের বেশিরভাগই নেট দুনিয়ায় আশানুরূপ সারা ফেলতে পারে নি। এযাবতকালের জনপ্রিয় ও শীর্ষ ১০টি ক্রিপ্টোকারেন্সি হলো:
2. Ethereum (ETH)
3. Cardano (ADA)
4. Binance Coin (BNB)
5. Dogecoin (DOGE)
6. USD Coin (USDC)
7. Ripple (XRP)
8. Solana (SOL)
9. Polkadot (DOT)
10. Tether (USDT)
ক্রিপ্টোকারেন্সি আইন
ক্রিপ্টোকারেন্সি শুরুর দিকে তেমন জনপ্রিয় না হলেও বর্তমানে নেট দুনিয়ায় এর জনপ্রিয়তা ও ব্যবহার আকাশ ছোঁয়া। অনলাইনে পণ্য কেনাবেচা ও লেনদেনের ক্ষেত্রে ক্রিপ্টোকয়েনের ব্যবহার থাকলেও, এটি একটি অদৃশ্য বা গুপ্ত মুদ্রা হওয়ায় অনলাইনে বিভিন্ন অপরাধমূলক কাজে ক্রিপ্টোকারেন্সি সহায়ক ভূমিকা পালন করছে।
এছাড়া এ ধরনের ডিজিটাল মুদ্রার উপর যেহেতু কোন দেশের সরকার বা কোন আর্থিক প্রতিষ্ঠানের খবরদারি রাখার কোনো সুযোগ নেই তাই বিশ্বের বেশিরভাগ দেশের সরকার ও সে দেশের উচ্চ আদালত ক্রিপ্টোকারেন্সির উৎপাদন ও লেনদেন আইনগত নিষিদ্ধ ঘোষণা করেন।
যেমনটি গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার ও তাঁর কেন্দ্রীয় ব্যাংক ক্রিপ্টোকারেন্সিকে স্বীকৃতি জানাতে অসম্মতি জানায় এবং বাংলাদেশে এর লেনদেন অবৈধ ও আইনগত দণ্ডনীয় অপরাধ হিসেবে ঘোষণা করা হয়। যেকোন প্রকার সাইবার ক্রাইম এবং অপরাধমূলক কাজে আর্থিক লেনদেন বন্ধ করতেই মূলত সরকারের এরূপ সিদ্ধান্ত।
তাই বাংলাদেশ কিংবা দেশের বাহিরে অন্য যেকোন দেশ থেকে ক্রিপ্টো মুদ্রা লেনদেন করার পূর্বে এ সংক্রান্ত সে দেশের আইন সম্পর্কে অবশ্যই জেনে নিতে হবে। নতুবা যে কেউ এমতাবস্থায় স্বাভাবিকভাবেই বিভিন্ন আইনি জটিলতায় জড়িয়ে পরতে পারেন।