অন্যান্য

ট্রেড লাইসেন্স কি ? ট্রেড লাইসেন্স তৈরির নিয়মাবলী

সভ্যতার যত অগ্রগতি হচ্ছে ততই অগ্রগতি হচ্ছে ব্যবসায়। প্রতিদিন তৈরি হচ্ছে নানা নতুন নতুন ব্যবসা। ব্যবসার জন্য ব্যবসায়ীদের অনেক বেশি গুরুত্বপূর্ণ একটি ডকুমেন্ট হলো ট্রেড লাইসেন্স। ব্যবসায়ীরা আবেদন করার পরে সরকার কর্তৃক প্রদান করা হয়ে থাকে এই ট্রেড লাইসেন্স। ১৯৮৩ সালে সর্বপ্রথম ট্রেড লাইসেন্স ব্যবহার প্রচলন শুরু হয়।

যদি আপনি একটি ব্যবসা পরিচালনা করতে হলে অবশ্যই জানতে হবে ট্রেড লাইসেন্স কি? কিভাবে করবেন? কি কি দরকার এসব ইত্যাদি তথ্য। এমন অনেক ব্যবসায়ী আছে যারা ট্রেড লাইসেন্স ছাড়াই তাদের ব্যবসা পরিচালনা করছে। কিন্তু ট্রেড লাইসেন্স ছাড়া ব্যবসা করলে কোন প্রকার ব্যবসায়ী জটিলতায় আইনী কোন সহায়তা পাওয়া যায় না। তার কারন হচ্ছে ট্রেড লাইসেন্স ছাড়া সকল ব্যবসাকে রাষ্ট্র অবৈধ দাবি করে। আপনার ব্যবসাকে বৈধ করার জন্য অবশ্যই ট্রেড লাইসেন্স থাকতে হবে।

ট্রেড লাইসেন্স কি? (What is a trade license?)

ট্রেড লাইসেন্স মানে মূলত বুঝানো হয় কোন ব্যবসাকে সরকার কর্তৃক অনুমোদন দেওয়া৷ যদি কোন ব্যবসার ট্রেড লাইসেন্স না থাকে তাহলে সেই ব্যবসা রাষ্ট্র অবৈধ দাবি করে। ছোট খাটো ব্যবসা যেমন মুদি দোকান, কাঠ মিস্ত্রি, পাইপ ফিডার, পানের দোকান ইত্যাদি ব্যবসা যেগুলোতে কোন অফিস দরকার হয় না সেগুলোতে ট্রেড লাইসেন্স না থাকলে তেমন বড় কোন সমস্যা হয় না।

তবে যদি কোন বড় কোম্পানি করতে চান তাহলে আপনাকে ট্রেড লাইসেন্স করতেই হবে না হলে ভবিষ্যতে অনেক সমস্যা ফেইস করবেন। যদিও নৈতিক দিক থেকে বিবেচনা করলে নিজের ব্যবসার শতভাগ বৈধতা নিশ্চিত করতে ট্রেড লাইসেন্স বানিয়ে রাখা উচিত। শুধু ব্যবসার বৈধতাই নয়, ট্রেড লাইসেন্স আরো অনেক গুরুত্বপূর্ণ কাজে ভূমিকা রাখে।

যেমন আপনি কখনো ব্যবসায়িক লেনদেন গুলো নিজের পার্সোনাল ব্যাংক একাউন্ট দিয়ে করতে পারবেন না। সেক্ষেত্রে আপনাকে সিডি একাউন্ট বা কারেন্ট একাউন্ট খুলতে হবে যেটা ট্রেড লাইসেন্স ছাড়া খোলা সম্ভব না।

কেন ট্রেড লাইসেন্স করা উচিত?

১। কোন ব্যবসার উদ্দেশ্যে ব্যাংক থেকে লোন নিলে আপনাকে ট্রেড লাইসেন্স দেখাতে হবে। কারন আপনাকে প্রথমেই ব্যাংককে প্রমাণ দিতে হবে যে আপনার একটি ব্যাবসা আছে এবং সে ব্যাবসা বৈধ যার জন্য আপনি ব্যাংক লোন নিচ্ছেন।

২। আর ব্যাবসার বৈধতা প্রমাণের জন্য ট্রেড লাইসেন্স ছাড়া কোন উপায় নেই। এছাড়া সরকারি এবং বেসরকারি ব্যাংক গুলো ব্যবসায়ীদের জন্য নানা রকম সুযোগ সুবিধা দিয়ে থাকেন। আপনি তখনই সেই সুযোগ গুলো ভোগ করতে পারবেন যখন আপনার কাছে ট্রেড লাইসেন্স থাকবে।

৩। আমদানি এবং রপ্তানি স্থে জড়িত সকল ব্যাবসারই ট্রেড লাইসেন্স থাকা দরকার তা না হলে যে কোন সময়ই আইনী জটিলতাই পড়তে পারেন।

৪। ট্রেড লাইসেন্স আপনার ব্যবসার মালিকানা নির্ধারণ করতে সাহায্য করে। ভবিষ্যতে মালিকানা জনিত কোন সমস্যার সমাধান না হওয়ার জন্য অবশ্যই ট্রেড লাইসেন্স করা উচিত। এছাড়াও ট্রেড লাইসেন্সের হাজার হাজার ভালো দিক রয়েছে।

চলুন এবার ট্রেড লাইসেন্সের কারণে আপনি কি কি সুবিধাভোগ করতে পারবেন সেগুলো একটু দেখে আসি।

ট্রেড লাইসেন্স কি কি সুবিধা দিবে? (What are the benefits of trade license?)

১। সরকারি এবং বেসরকারি নানা প্রতিষ্ঠানগুলো উদ্দোক্তাদের নানা ঋণ সেবা দিয়ে থাকেন। এসব সেবা পাওয়ার জন্য আপনাকে অবশ্যই ট্রেড লাইসেন্স বানাতে হবে।

২। বিদেশের বাজারে ব্যবসা করতে কর নিয়ে নানা ঝামেলা পোহাতে হবে, পড়তে হবে আইনী জটিলতায়। এসব থেকে বাঁচতে ট্রেড লাইসেন্স এর বিকল্প নেই। বিদেশের বাজারে যেকোন কিছু করতেই আপনার ট্রেড লাইসেন্স দরকার হবে। একটি ট্রেড লাইসেন্স যদি থাকে আপনার কাছে আপনি সহজেই যেকোন পণ্য আমদানি বা রপ্তানি করতে পারবেন।

৩। এটি আপনার ব্যবসার একটি পরিচয় নির্ধারণ করবে। ব্যবসার মালিকানা নির্ধারণ করবে। যা আপনাকে ব্যবসার প্রতি আরো বেশি অনুপ্রেরিত এবং মনোযোগী করবেন।

৪। একটি ট্রেড লাইসেন্স থাকলে আপনি আপনার ব্যবসার জন্য ইনভেস্টর নিতে পারবেন। শেয়ারে ব্যবসা বা ইনভেস্টর নিলে ট্রেড লাইসেন্স বানিয়ে নিন। তাহলে ভবিষ্যতের যেকোন জটিলতা এড়াতে পারবেন।

ট্রেড লাইসেন্স না করলে কি হবে? (What if I don’t have a trade license?)

১। আপনি যদি ট্রেড লাইসেন্স না করেন তাহলে আপনার ব্যবসাটি হবে অবৈধ। আপনি যদি কোন পণ্য উৎপাদন করে থাকেন তাহলে সে পণ্যটি হবে অবৈধ। আপনার পণ্য বাজারজাত করা নিয়ে যেকোন মূহুর্তে আপনাকে পরতে হবে জটিলতায়।

২। ব্যবসায়ী সমস্যায়  আইনের আশ্রয় নিতে পারবেন না। কারণ আইনের দৃষ্টিতে আপনি একটি অবৈধ ব্যবসার সাথে জড়িত।

৩। কোন প্রকারের ঋণ বা আর্থিক সাহায্য নিতে পারবেন না।

৪। বিদেশী বাজারে ব্যবসা করতে হলে আপনাকে পড়তে হবে ব্যাপক জটিলতায়। কিছু কিছু ক্ষেত্রে দিতে হবে মোটা অংকের ফি শুধু মাত্র ট্রেড লাইসেন্স না থাকার জন্য।

৫। আইনীভাবে আপনি কোন রকম ইনভেস্টর নিতে পারবেন না আপনার ব্যবসার জন্য। যদি নেন এবং পরবর্তীতে কোন প্রকার আর্থিক সমস্যাও হয় সেক্ষেত্রে পাবেন না কোন আইনী সহায়তা।

৬। স্থানীয় সরকার আইন ২০০৯-এ ৯২ ধারায় বলা হয়েছে ৫ম তফসিল অনুযায়ী যদি কোন ব্যাক্তি অপরাধ করে থাকে তাকে সাজা পেতে হবে। ৫ম তফসিলে কর ফাঁকি দেওয়া ও ট্রেড লাইসেন্স না করাকে অপরাধ হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে।

স্থানীয় সরকার আইন ২০০৯-এ ৯৩ ধারা অনুযায়ী কোন ব্যাক্তি ট্রেড লাইসেন্স না নিয়ে বা রিনিউ না করে ব্যবসা পরিচালনা করলে তাকে প্রথমবার ৫০০০ টাকা এবং পরবর্তী বার ৫০০ টাকা করে জরিমানা করা হবে৷ আর জরিমানা প্রদান না করলে তার নামে মামলাও হতে পারে৷

ট্রেড লাইসেন্সের খরচ কেমন? (How much does it cost to get a trade license?)

ট্রেড লাইসেন্স করার আগে আপনাকে অবশ্যই এর খরচ সম্পর্কে আইডিয়া নিতে হবে। আসলে ব্যবসার ধরণ অনুযায়ী ট্রেড লাইসেন্সের খরচে ভিন্নতা দেখা যায়। সাধারণত ঢাকা সিটি কর্পোরেশনের অধীনে ট্রেড লাইসেন্স করতে সর্বনিম্ন ৫০০ টাকা থেকে শুরু করে সর্বোচ্চ ৫০ হাজার টাকা পর্যন্ত খরচ হতে পারে।

লিমিটেড কোম্পানির ক্ষেত্রে ব্যবসার দাম যদি ১ লাখ টাকা পর্যন্ত হয় তাহলে প্রতি বছ ১৫০০ টাকা ফি প্রদান করতে হবে। যদি পাঁচ লাখ টাকার ব্যবসা হয়ে থাকে তাহলে ২০০০ টাকা পর্যন্ত ফি প্রদান করতে হয়৷

অনলাইন ভিত্তিক বা ই-কমার্সের নতুন কোন ক্যাটাগরি নেই তাই সফটওয়্যার বা জেনারার সাপ্লায়ার হিসেবে লাইসেন্স নিতে হবে। এটির জন্য সরকারি চার্জ ৮৫০-১৭০০ টাকা হলেও আপনার মোটামুটি ৪০০০ টাকার মতো খরচ হতে পারে।

এই বিষয় নিয়ে আরো জানতে আপনার এলাকার ইউনিয়ন পরিষদ বা সিটি কর্পোরেশন অফিসে যোগাযোগ করে বিস্তারিত জেনে নিতে পারেন।

ট্রেড লাইসেন্স করতে কি কি লাগবে?

ট্রেড লাইসেন্স করতে আপনার কিছু ডকুমেন্টস সাবমিট করতে হবে। কিন্তু কি কি ডকুমেন্টস সাবমিট করতে হবে তা ডিপেন্ড করে আপনার ব্যবসার ধরণ অনুযায়ী। চলুন দেখে আসি কোন কোন ব্যবসার ক্ষেত্রে কি কি ডকুমেন্টস সাবমিট করতে হয়।

প্রোপাইটরশিপ ব্যবসার ক্ষেত্রে :-

  • দোকান ভাড়ার চুক্তি পত্রের একটি সত্যায়িত ফটোকপি। যদি নিজের দোকান হয় তাহলে ইউটিলিটি বিল ও হালনাগাদ হোল্ডিং কর পরিশোধের একটি ফটোকপি।
  • জাতীয় পরিচয়পত্র।
  • আবেদনকারীর পাসপোর্ট সাইজের ৩ কপি ছবি

পার্টনারশিপ ব্যবসার ক্ষেত্রে :-

  • ৩০০ টাকার একটি স্ট্যাম্পে অংশীদার কারবারের চুক্তিপত্র।
  • দোকান ভাড়ার চুক্তি পত্রের একটি সত্যায়িত ফটোকপি। যদি নিজের দোকান হয় তাহলে ইউটিলিটি বিল ও হালনাগাদ হোল্ডিং কর পরিশোধের একটি ফটোকপি।
  • পার্টনারের ৩ কপি ছবি এবং জাতীয় পরিচয়পত্র।

কোম্পানির ক্ষেত্রে:- 

  • কোম্পানির সার্টিফিকেট অফ ইন কর্পোরেশন।
  • ম্যানেজিঙ ডিরেক্টরের জাতীয় পরিচয়পত্রের ফটোকপি এবং ৩ কপি ছবি।
  • আর্টিকেল অফ এসোসিয়েশন ও মেমরেন্ডাম।
  • দোকান ভাড়ার চুক্তি পত্রের একটি সত্যায়িত ফটোকপি। যদি নিজের দোকান হয় তাহলে ইউটিলিটি বিল ও হালনাগাদ হোল্ডিং কর পরিশোধের একটি ফটোকপি।

কারখানার ক্ষেত্রে:- 

  • পরিবেশ ছাড়পত্রের কপি।
  • ফায়ার সার্ভিসের ছাড়পত্র।
  • পার্টনারসিপ/ প্রোভাইডারশিপ/ কোম্পানির ডকুমেন্ট।
  • কারখানার পার্শ্ববর্তী অবস্থান বা স্থাপনার মালিকের অনাপত্তিনামা।
  • কারখানার পার্শ্ববর্তী অবস্থান বিবরণসহ লোকেমন ম্যাপ।
  • ৩০০ টাকার জুডিশিয়াল স্ট্যাম্প এ স্বাক্ষরিত ঢাকা সিটি কর্পোরেশন নিয়ম কানুন মেনে চলার অঙ্গীকার নামা।

শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ক্ষেত্রে:- 

  • প্রতিষ্ঠানের অবস্থান সহ মানচিত্র।
  • অগ্নিনির্বাপণ প্রন্তুতি সংক্রান্ত প্রতায়ণ পত্র।
  • ১৫০ টাকার জুডিশিয়াল স্ট্যাম্পে ডি.সি.সি.র নিয়ম কানুন মেনে চলার অঙ্গীকার নামা।
  • পরিবেশ সংক্রান্ত অনাপত্তি নামা।
  • প্রোপাইডারশিপ / পার্টনারশিপ/ কোম্পানির ডকুমেন্টস।
  •  পাসপোর্ট সাইজের ১ কপি ছবি।

অন্যান্য ব্যবসার ক্ষেত্রে:- 

আপনার ব্যবসা যদি প্রোপাইডারশিপ / পার্টনারশিপ বা কোম্পানি হয় তা হলে সে অনুযায়ী যাবতীয় ডকুমেন্টস  প্রস্তুত রাখবেন। তা পরে নিম্নলিখিত আরো কিছু ডকুমেন্টস দরকার হবে।

  • হাসপাতালের ক্ষেত্রে: স্বাস্থ্য অধিদপ্তর মহাপরিচালকের অনুমোদন। 
  • ছাপাখানা এবং আবাসিক হোটেলের ক্ষেত্রে: ডি.সি এর অনুমতি। 
  • রিক্রুটিং এজেন্সির ক্ষেত্রে: মানব সম্পদ রপ্তানি ব্যাুরো কর্তৃক লাইসেন্স। 
  • গোলাবারুদ এবং অস্ত্রের ক্ষেত্রে: অস্ত্রের লাইসেন্স। 
  • মানকদ্রব্য বা ওষুধের ক্ষেত্রে : ড্রাগ লাইসেন্স। 

কিভাবে তৈরি করবেন ট্রেড লাইসেন্স? (How to create a trade license?)

মানুষ চিন্তা করে ট্রেড লাইসেন্স তৈরি করা অনেক কষ্ট এবং সময় সাপেক্ষ ব্যাপার। আসলে একটি সম্পূর্ণ ভুল ধারণা। সঠিক উপায় জেনে যদি আপনি ট্রেড লাইসেন্স তৈরি করেন তাহলে আপনি খুব সহজেই পারবেন।

এছাড়া বর্তমানে অনেক এজেন্সি আছে যারা ট্রেড লাইসেন্স বানানোর সার্ভিস দিয়ে থাকে। তাদের সাহায্যও নিতে পারেন। যাই হোক চলুন দেখে আসি কিভাবে নিজে নিজে আপনি আপনার ট্রেড লাইসেন্স তৈরি করবেন।

১) প্রথমে আপনি যে জায়গায় ব্যবসা করবেন সে জারগার স্থানীয় সরকার কোন অফিসের আওতায় পরেছে তা জানতে হবে।

২) এবার আপনাকে ফরম ফিল আপ করতে হবে। ফরম ফিল আপের ক্ষেত্রে দেখবেন দুই ধরনের ফরম আছে কে ফরম এবং আই ফরম। যদি আপনার ব্যবসা বড় হয় তাহলে কে ফরম এবং যদি ছোট ব্যবসা হয় তাহলে আই ফরম নিতে হবে। প্রতিটি ফরমের মূল্য ১০ টাকা। আপনার ব্যবসা প্রতিষ্ঠান যে অঞ্চলের আওতায় পড়েছে সেখানের স্থানীয় সরকার অফিস থেকে এই ফরম সংগ্রহ করতে হবে।

৩) এবার আপনার ব্যবসার ধরণ অনুযায়ী প্রয়োজনীয় তথ্য, দলিল ইত্যাদি জমা দিতে হবে।

৪) এবার আপনাকে সংশ্লিষ্ট ব্যাংকে ফি এবং ভ্যাট জমা দিতে হবে।

৫) উপরোক্ত স্টেপ গুলোর পরে স্থানীয় সরকারের কোন অফিসার বা প্রতিনিধি ব্যবসা প্রতিষ্ঠানটি পর্যবেক্ষণ করতে আসবেন। আপনার প্রতিষ্ঠান সংশ্লিষ্ট যাবতীয় তথ্য তিনি যাচাই করবেন।

৬) সব কিছু যদি ঠিক থাকে এবার আপনি ট্রেড লাইসেন্স পেয়ে যাবেন।

একটি ম্যানুফ্যাকচারিং সংস্থার জন্য ট্রেড লাইসেন্স:

১) ডিসিসির জোনাল অফিস থেকে ফর্ম কালেক্ট করুন তারপর সেখানে আপনার সংস্থার প্রয়োজনীয় সকল ডকুমেন্টস জমা দিন।

২) স্থানীয় ওয়ার্ড কমিটি থেকে সাটিফিকেট নিন। ওয়ার্ড কমিসনারকে অবশ্যই সম্পূর্ণ ফরমটি যাচাই করে দেখতে হবে।

৩) এবার আপনার আবেদন জমা দিন।

সাইনবোর্ড ফি

ট্রেড লাইসেন্স নেওয়ার সময় আপনাকে একটি সাইনবোর্ড ফি দিতে হবে। সমস্ত ব্যবসার জন্যই সাইনবোর্ড ফি দিতে হবে।সাইনবোর্ড ফি’র জন্য লাইসেন্সের ৩০ শতাংশ চার্জ দিতে হবে।

দেখতে পারেনঃ নিজেই নিজের জাতীয় ভোটার আইডি কার্ড ডাউনলোড করুন

ট্রেড লাইসেন্স রিনিউ

ট্রেড লাইসেন্স শুধু একবার করলেই হয় না, প্রতি বছর এটি রিনিউ করতে হয়। প্রতি বছর জুলাই মাসে আপনাকে ট্রেড  লাইসেন্স রিনিউ বা নবায়ন করতে হবে। এক্ষেত্রে আপনি যে সময়েই ট্রেড লাইসেন্স তৈরি করুন না কেন জুলাই মাসে রিনিউ করতেই হবে।

রিনিউ করার জন্যও আগের মতো একই খরচ পড়বে সাথে যোগ হবে এক্সট্রা ৩০০০ টাকা উৎস ফি।

অনলাইনে ট্রেড লাইসেন্স কিভাবে করবেন?

বর্তমানে যেহেতু সব কিছুই অনলাই ভিত্তিক তাই এখন অনলাইনেই ট্রেড লাইসেন্সের জন্য আবেদন করতে পারবেন। যেটিকে বলা হয় ই-ট্রেড লাইসেন্স। চলুন এই ব্যাপারে বিস্তারিত আলোচনা করি।

ই-ট্রেড লাইসেন্স কি?

আপনি যে ট্রেড লাইসেন্সের আবেদনটি অফিসে গিয়ে করতেন সেটি অনলাইনে করাই হলো ই-ট্রেড লাইসেন্স। যেভাবে করতে হয়ঃ

১। ই-ট্রেড লাইসেন্সের জন্য আপনাকে প্রথমে গুগলে সার্চ করতে হবে ই-ট্রেড।

২। তারপরে আপনি ই-ট্রেডের সরকারী সাইটটি খুজে পাবেন। সেখানে গিয়ে আবেদন পূরণ করবেন এবং যাবতীয় সকল তথ্যের স্ক্যান কপি জমা দিবেন।

৩। তারপরে আপনার ফোন নম্বরে লাইসেন্স নেওয়ার একটি সময় জানিয়ে দেবে। সেদিন সংশ্লিষ্ট অফিসে গিয়ে লাইসেন্স সংগ্রহ করবেন।

ট্রেড লাইসেন্স বাতিল করার নিয়ম

আপনি যদি ব্যবসায় পরিচালনা স্থগিত রাখতে চান তাহলে ট্রেড লাইসেন্স বাতিল করতে পারেন। এক মালিকানা ব্যবসায়ের ট্রেড লাইসেন্স বাতিল করা তেমন ঝামেলাপূর্ণ কাজ না।

  • মেয়াদ শেষে নবায়ন না করলে একমালিকানা ব্যবসায়ের ট্রেড লাইসেন্স বাতিল হয়ে যায়। তবে যে অফিস থেকে এটি রেজিস্ট্রেশন করেছিলেন সেখানে আবেদন করে বাতিল করা উত্তম কাজ।
  • অংশীদারি ব্যবসায়ের ট্রেড লাইসেন্স বাতিল করার নিয়ম হল প্রথমে কোর্ট থেকে ব্যবসায়টির অবসায়নের অনুমতি নিতে হয়। এরপর স্থানীয় সরকারের ট্রেড লাইসেন্স ইস্যুকারী বিভাগের নিকট আবেদন জমা দিতে হয়।

বহুল জিজ্ঞেসিত প্রশ্ন এবং উত্তর:

কারা ট্রেড লাইসেন্স ব্যবহার করতে পারবে? 

উত্তরঃ নারী পুরুষ উভয়ি পারবে তবে তাকে অবশ্যই কোন না কোন ব্যবসার সাথে জরিত থাকতে হবে এবং বয়স কমপক্ষে ১৮ হতে হবে।

একটি ট্রেড লাইসেন্স দিয়ে কি একাধিক ব্যবসা পরিচালনা করা যাবে?

উত্তর: না একটি ট্রেড লাইসেন্স দিয়ে শুধু মাত্র একটি ব্যবসাই পরিচালনা করা যাবে। যে ব্যবসার জন্য লাইসেন্সর আবেদন করবেন শুধু সেটিই পরিচালনা করা যাবে। যদি অন্য কোন ব্যবসা শুরু করেন তাহলে নতুন করে আবেদন করে আরেকটি লাইসেন্স তৈরি করতে হবে।

একটি ট্রেড লাইসেন্স কি একাধিক ব্যাক্তি ব্যবহার করতে পারবে?

উত্তরঃ না, একটি ট্রেড লাইসেন্স শুধু মাত্র একটি ব্যাক্তি বা উদ্দোক্তাই ব্যবহার করতে পারবেন। অর্থাৎ যার নামে রেজিসট্রেশন করা হবে সেই শুধু ব্যবহার করতে পারবেন।

ট্রেড লাইসেন্স কোথা থেকে রিনিউ করা হয়?

উত্তর: যেখান থেকে আপনি ট্রেড লাইসেন্স ইস্যু করবেন সেখান থেকেই আপনি রিনিউ করবেন। সাধারণত ১ বছর পর পর আপনাকে নতুন ভাবে ট্রেড লাইসেন্স নবায়ন করতে হবে।

ট্রেড লাইসেন্স করতে কত টাকা (ফি) লাগে?

উত্তরঃ স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রনালয় এর স্থানীয় সরকার বিভাগ, পৌর- ১ শাখা হতে বিশেষ প্রজ্ঞাপন এর মাধ্যমে ট্রেড লাইসেন্স এর ফি নির্ধারণ করা হয়। ব্যবসার ধরণ এর উপর ভিত্তি করে ট্রেড লাইসেন্স এর ফি নির্ধারণ করা হয়ে থাকে। স্থানীয় কর্তৃপক্ষের কাছ থেকে এ বিষয়ে তথ্য জানা যাবে।

কারা ট্রেড লাইসেন্স করতে পারবেন?

উত্তরঃ নারী, পুরুষ উভয়ই ট্রেড লাইসেন্স করতে হবে তবে অবশ্যই তাকে কোন না কোন ব্যবসার সাথে জড়িত থাকতে হবে। বয়স ১৮ বছর এর উপরে হতে হবে।

একটি ট্রেড লাইসেন্স কি একাধিক ব্যবসায় ব্যবহার করা যায়?

উত্তরঃ না একটি ট্রেড লাইসেন্স শুধু মাত্র একটি ব্যবসার জন্যই প্রযোজ্য অর্থাৎ যে ব্যবসা পরিচালনার জন্য ট্রেড লাইসেন্সটি করা হয় শুধু সেই ব্যবসা পরিচালনার জন্য ব্যবহার করা যাবে অন্য কোন ধরনের ব্যবসার জন্য ব্যবহার করা যাবে না। নতুন কোন ব্যবসা শুরু করলে তার জন্য নতুন ট্রেড লাইসেন্স করতে হবে।

একটি ট্রেড লাইসেন্স কি একাধিক ব্যক্তি ব্যবহার করতে পারবেন?

উত্তরঃ না একটি ট্রেড লাইসেন্স শুধু মাত্র একজন ব্যবসায়ী/উদ্যোক্তা ব্যবহার করতে পারবেন অর্থাৎ যে ব্যবসায়ী/উদ্যোক্তার নামে ট্রেড লাইসেন্সটি করা হয়েছে এটি শুধু তার জন্যই প্রযোজ্য। এটা কোনভাবেই হস্তান্তর যোগ্য নয়।

ট্রেড লাইসেন্স কিভাবে এবং কোথা থেকে নবায়ন করতে হয়?

উত্তরঃ যে অফিস থেকে ট্রেড লাইসেন্স ইস্যু করা হয়, সেখান থেকেই ট্রেড লাইসেন্স নবায়ন করা হয়। ট্রেড লাইসেন্স সাধারণত ১ বছরের জন্য ইস্যু করা হয়। প্রতি বছর ট্রেড লাইসেন্স নবায়ন করতে হয়। পুরানো ট্রেড লাইসেন্স দেখিয়ে নতুন করে ট্রেড লাইসেন্স নবায়ন করতে হয়।

শেষ কথা

আজকের এই পোস্টে আপনাদের ট্রেড লাইসেন্স নিয়ে সম্পূর্ণ ধারণা দেওয়ার চেষ্টা করেছি জানি না কতটুকু পেরেছি তবে চেষ্টা করেছি সর্বোচ্চ দিয়ে বুঝানোর। যদি কোন প্রশ্ন থাকে কমেন্টে জানাবেন। ধন্যবাদ সাথে থাকার জন্য৷

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button
error: Content is protected !!