প্রযুক্তির খবর

ডার্ক ওয়েব কি?

ডার্ক ওয়েব হচ্ছে world-wide-web এর একটি উপাদান যা কিনা ডার্ক নেট অর্থাৎ একটি লুকানো নেটওয়ার্কিং সিস্টেম বিদ্যমান। এটি জনসাধারণের  কাছ থেকে একটি লুকানো নেটওয়ার্ক, যে নেটওয়ার্ক সাধারণ মানুষের ধরাছোঁয়ার বাইরে। ডার্ক ওয়েব হচ্ছে ডিপ ওয়েব এর একটি অংশ।

Contents hide

আমরা যদি ইন্টারনেট কে ভাগ করতে চাই তাহলে আমরা ইন্টারনেট কে তিনটি ভাগে ভাগ করতে পারিঃ-

 

  • সারফেস ওয়েব (Surface web)
  • ডিপ ওয়েব (Deep web)
  • ডার্ক ওয়েব (Dark Web)

সারফেস ওয়েব (Surface web):

ওয়েব হচ্ছে ইন্টারনেটের খুবই অল্প একটি অংশ। আমরা যেসব ওয়েবসাইট খুব সহজে ব্যবহার করতে পারি যেমন ফেসবুক, টুইটার, ইউটিউব ইত্যাদি এই সবগুলোই সারফেস ওয়েব (Surface web) এর অন্তর্ভুক্ত।

সারফেস ওয়েব (Surface web) এর ওয়েবসাইট গুলোর এক্সটেনশন .com, .org, .net, .xyz ইত্যাদি হয়ে থাকে। সারফেস ওয়েব (Surface web) একজন সাধারন ইন্টারনেট ব্যবহারকারী খুব সহজেই ব্যবহার করতে পারে।

ডিপ ওয়েব (Deep web):

অন্যান্য ওয়েবসাইটের মধ্যে এত ওপেন না, এগুলো অ্যাক্সেস করার জন্য স্পেশাল পারমিশন লাগে। সাধারন কোন ব্রাউজার দিয়ে ব্রাউজ করা যায়। কিছু শর্তসাপেক্ষে ডার্ক ওয়েব ব্যবহার করা গেলেও ডিপ ওয়েব সবাই ব্যবহার করতে পারে না।

ডিপ ওয়েবে মূলত বড় বড় বিভিন্ন কোম্পানির ওয়েবসাইট গুলোর Backend ডাটাগুলো স্টোর করা থাকে। স্পেশাল কিছু পারমিশন নিয়ে যেগুলো Accesses করা সম্ভব হয়। 

এই ধরুন আপনার একটি ওয়েবসাইট রয়েছে এবং আপনার ওয়েবসাইটের Backend ডাটাগুলোকে সাধারণ কোন মানুষ ব্যবহার করতে পারে না।  কিন্তু কেউ যদি আপনার ওয়েবসাইটের পাসওয়ার্ড ইউজার NAME পেয়ে থাকে তাহলে সেই ব্যক্তি আপনার Backend ডাটাগুলোকে Access করতে পারবে।

ডার্ক ওয়েব (Dark Web):

ডার্ক ওয়েব হচ্ছে world-wide-web এর একটি উপাদান যা কিনা ডার্ক নেট অর্থাৎ একটি লুকানো নেটওয়ার্কিং সিস্টেম বিদ্যমান।

ডার্কওয়েবে ভিজিট করতে হলে আপনাকে সেই ওয়েবসাইটের লিঙ্ক জানতে হবে এছাড়া কিন্তু কোথাও সার্চ করে আপনি ডার্ক ওয়েবের ওয়েবসাইটে ভিজিট করতে পারবেন না।

ডার্ক ওয়েবের ওয়েবসাইট গুলো সাধারণত .onion এক্সটেনশন হয়ে থাকে। আর এই ধরনের অনিয়ন(.onion) এক্সটেনশন ব্যবহৃত ওয়েবসাইটগুলো অ্যাক্সেস করতে হলে আপনাকে বিশেষ কোন ব্রাউজার ব্যবহার করতে হবে। যেমনঃ TOR ব্রাউজার

কীভাবে ডার্ক ওয়েব অ্যাক্সেস করবেন:

ডার্ক ওয়েবে সার্চ করার বিভিন্ন মাধ্যম রয়েছে। তবে তার মধ্যে অন্যতম জনপ্রিয় মাধ্যম হচ্ছে TOR ব্রাউজার। TOR ব্রাউজার একটি মার্কিন গোয়েন্দার অনলাইন যোগাযোগ রক্ষার একটি মাধ্যম।

TOR ব্রাউজার ব্যবহার করে ডার্ক ওয়েবের .onion ওয়েবসাইট গুলো অ্যাক্সেস করা সম্ভব। তবে সেক্ষেত্রে আপনাকে নির্দিষ্ট ওয়েবসাইটের এড্রেস জানতে হবে।

TOR ব্রাউজার ব্যবহারের কয়েকটি সর্তকতাঃ-

যে কোন ব্রাউজার ব্যবহার করার সময় ব্রাউজার একজন ব্যবহারকারীর কাছ থেকে বিভিন্ন ধরনের ইনফরমেশন নিয়ে থাকে। এমনকি আপনার গুগল একাউন্টের এক্সেস ও তাদের কাছে থেকে যায়।  ইন্টারনেটের কোথায় কে কি ফাত পেতে বসে রয়েছে আমরা জানি না। আমরা যেহেতু ডার্ক ওয়েব ব্রাউজ করব তাই আমরা নিজেরাই সতর্ক থাকলে যে কোন বিপদের হাত থেকে বেঁচে যেতে পারি।

  1. TOR ব্রাউজার ব্যবহার করার সময় ব্রাউজারকে ফুলস্ক্রীন না করা।
  2. TOR ব্রাউজার ব্যবহারের সময় অবশ্যই ভিপিএন ব্যবহার করা।
  3. TOR ব্রাউজার ব্যবহারের আগে আপনার Google অ্যাকাউন্ট এর দুই স্তরের নিরাপত্তা সেটিংস করে নিন।
  4. আপনার TOR ব্রাউজার টি আপডেট কিনা ক্রস চেক করে নিন,প্রয়োজনে পুনরায় আপডেট করুন।
  5. কোন কিছু ডাউনলোড করার আগে ভালোভাবে দেখে ডাউনলোড করুন।
  6. কম্পিউটারের ফায়ারওয়াল ব্যবস্থাটি অন করুন।

ডার্ক ওয়েব নিয়ে কিছু ভুল ধারনা, যে ভুল ধারণা গুলো আমরা প্রত্যেকে করে থাকি।

১। ডার্ক ওয়েব এবং ডিপ ওয়েব এক জিনিসঃ-

এটি একটি সম্পূর্ণ ভুল ধারণা কারণ ডার্ক ওয়েব এবং ডিপ ওয়েব কখনোই একই জিনিস নয়।কারণ কিছু নির্দিষ্ট শর্তসাপেক্ষে ডার্ক ওয়েব অ্যাক্সেস করা যায়।  কিন্তু ডিপ ওয়েব যে কেউ অ্যাক্সেস করতে পারবেনা। কারণ ডীপ ওয়েবের ওয়েবসাইটগুলো কোন কোম্পানির ওয়েবসাইটের Backend হয়ে থাকে।  তাই এইসব ওয়েবসাইটগুলোতে প্রবেশ করতে হলে নির্দিষ্ট পাসওয়ার্ড এবং ইউজার নেম প্রয়োজন পড়বে।

২। অনেকে বলে থাকে ডার্ক ওয়েব সারফেস ওয়েব এর থেকে বড়ঃ

এটি একটি ভুল ধারণা। যদি বলা হয় ডিপ ওয়েব ডার্ক ওয়েবে (DARK WEB) থেকে বড়, তাহলে এটিকে সঠিক বলা যাবে।  মূলত প্রচুর পরিমাণে ডেটা থাকে তাই ডিপ ওয়েব অনেক অনেক বড় এমনকি সার্ফেস ওয়েব এর থেকেও বড় হতে পারে। ডার্ক ওয়েব কি আমরা থার্ড পজিশনে রাখতে পারি। কারণ ডার্ক ওয়েবসাইট তুলনামূলক কম, কিন্তু কাজগুলো হয় অনেক ভয়ানক।

৩। ডার্ক ওয়েবে শুধু ইল্লিগ্যাল’ কাজগুলো হয়ে থাকেঃ

আমাদের এই ধারণাটি ভুল। শুধু ক্রিমিনাল অ্যাক্টিভিটি জন্য তৈরি করা হয়নি। কিছু ভালো কাজ রয়েছে। যেমনঃ মিলিটারি কমিউনিকেশন, বিভিন্ন কোম্পানির সিক্রেট কাজগুলো যেগুলো সাধারণ মানুষের জানার কোন প্রয়োজন নেই এই ধরনের কাজ করলো ডার্কওয়েবে হয়ে থাকে।

৪। যে কেউ ডার্ক ওয়েব ভিজিট করে ইল্লিগ্যাল’  কাজ অথবা অস্ত্র কেনাবেচা করতে পারবেঃ

আমাদের এই ধারনাটি সম্পুর্ন ভুল। কারণ যে কেউ ডার্কওয়েবে ইল্লিগ্যাল’ কাজগুলো করতে পারবে না। কারেন্ট ডার্কওয়েবের ইললিগ্যাল কাজগুলো peer-to-peer অর্থাৎ একজন থেকে আরেকজন আরেকজন থেকে আরেকজন এভাবে কাজগুলো করে থাকে। আপনি সাধারণভাবে অ্যাক্সেস করতে পারলেও আপনি ক্রিমিনাল অ্যাক্টিভিটি গুলো করতে পারবেন না।

৫। অনেকেই মনে করে ডার্ক ওয়েব ভিজিট করলে কোন ভাবেই তাকে ট্র্যাক করা সম্ভব নয়ঃ

টেকনোলজি এত এডভান্স হয়েছে এবং এই জিনিসগুলো নিয়ে এত পরিমাণে রিসার্চ হচ্ছে যে খুব ক্ষুদ্র থেকে ক্ষুদ্রতর ভুল করেন তাহলে কিন্তু আপনাকে খুঁজে বের করা সম্ভব। আপনি যদি ব্রাউজার ইউজ করার সময় ফুলস্ক্রীন না করে ছোট করে রাখেন আপনার স্ক্রিন রেজুলেশন থেকে শুরু করে আরো কিছু ইনফরমেশন নিয়ে তারা কিন্তু আপনার লোকেশন ট্রেস করতে পারবে , আপনার আইপি ট্রেস করতে পারবে।

৬। ডার্ক ওয়েব ব্যবহার করতে হলে শুধুমাত্র টর ব্রাউজার ব্যবহার করতে হয়, অন্য কোন ব্রাউজার দিয়ে ডার্ক ওয়েব অ্যাক্সেস করা যায় নাঃ

আমাদের এই ধারনাটা ভুল। টোর হচ্ছে ডার্ক ওয়েবের একটিমাত্র সার্ভিস। এছাড়াও অনেকগুলো নেটওয়ার্ক রয়েছে  যেমন: I2P ইত্যাদি।

এই ছিল কয়েকটি ডার্ক ওয়েব নিয়ে ভুল ধারণা। আশা করি ভুল ধারণাগুলো সম্পর্কে সঠিক তথ্য গুলো আপনি জানতে পেরেছেন।

ডিপ ওয়েব VS ডার্ক ওয়েব

ডিপ ওয়েব এর সঙ্গে ডার্ক ওয়েবের তুলনা করতে গেলে বলতে হয় ডার্ক ওয়েব এর চেয়ে ডিপ ওয়েব অনেক অনেক বড়। কারণ  ডিপ ওয়েবে এত এত পরিমাণ ডাটা স্টোর থাকে যা কল্পনার বাইরে।

যদিও ডার্ক ওয়েবে অনেক ধরনের অবৈধ কাজ হয়ে থাকে, কিন্তু এখানে ওয়েবসাইট এর পরিমান কম থাকে। কারণ আমরা জানি ডার্ক ওয়েবের ওয়েবসাইটগুলো পরিচালিত হয় peer-to-peer  অর্থাৎ একজন হতে আরেকজন আরেকজন হতে আরেকজন এভাবে।

অপরদিকে ডিপ ওয়েব  হলো সেই জায়গা যেখানে বিভিন্ন ধরনের কোম্পানিগুলোর  ওয়েবসাইট গুলোর  ডাটাগুলো সংরক্ষিত থাকে।

এ কারণেই ডার্ক ওয়েব এর তুলনায় ডিপ ওয়েব কে বড় বলা যায়।

ডার্ক ওয়েবে কি কি ধরনের কাজ হয়ে থাকে-

উইকিপিডিয়া বলে জানুয়ারি ২০১৫ সালের জরিপ অনুযায়ী ডার্ক ওয়েবের সবচেয়ে বেশি যে কাজগুলো সংঘটিত হয়েছিল সেগুলো হলঃ-

  1. মাদক(Drugs) 
  2. মার্কেট(Market)
  3. প্রতারণা(Cheating)
  4. বিটকয়েন(Bitcoin)

এছাড়াও যে ধরনের কাজ করা হয়ে থাকে সেগুলো হচ্ছেঃ-

  1. তথ্য ফাঁস(Information leaked)
  2. নকল করা(Duplicate)
  3. ই-মেইল হ্যাকিং(Email hacking)
  4. পর্নোগ্রাফি(Pornography)
  5. অবৈধ অস্ত্র বেচাকেনা(Illegal arms sales)

বন্ধুরা এই ছিল  ডার্ক ওয়েব নিয়ে সহজ কিছু আইডিয়া। আর্টিকেলটি পড়ে যদি আপনার ভাল লাগে অবশ্যই আপনাদের বন্ধুদের সঙ্গে শেয়ার করবেন এবং কমেন্ট এ আপনার মতামত জানাতে পারেন।

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button
error: Content is protected !!