প্রযুক্তির খবর

ডার্ক ওয়েব কি? ডার্ক ওয়েব কিভাবে কাজ করে?

ডার্ক ওয়েব হচ্ছে জনসাধারণের কাছ থেকে একটি লুকানো নেটওয়ার্ক। ডার্ক ওয়েব হচ্ছে ডিপ ওয়েব এর একটি অংশ। গোপনীয়তা বজায় রাখতে বা অনৈতিক কাজে  আজকের ব্লগে ডার্ক ওয়েব সম্পর্কিত সকল বিষয় নিয়ে আলোচনা করা হবে।

Contents hide

ডার্ক ওয়েব কী?

‘ডার্ক ওয়েব’ হল এনক্রিপ্টেড অনলাইন কনটেন্ট, যা প্রচলিত সার্চ ইঞ্জিনের আওতায় আসে না। নির্দিষ্ট কিছু ব্রাউজার (যেমন TOR ব্রাউজার)-এ এটি ব্যবহার করা যায়। প্রথাগত ওয়েব সাইটগুলোর তুলনায় Dark Web-এ গোপনীয়তা অনেক বেশি। এখানে নামও ব্যবহার করা হয় না। এই অংশটিই ইন্টারনেটের প্রকৃত অদৃশ্য অংশ।

আরও পড়ুন-হ্যাকিং কি এবং এটি প্রতিরোধের উপায়

ইন্টারনেটের প্রকারভেদ

ইন্টারনেট কে তিন ভাগে ভাগ করা যায়। যথা-

১। সারফেস ওয়েব (Surface web)

২। ডিপ ওয়েব (Deep web)

৩। ডার্ক ওয়েব (Dark Web)

১। সারফেস ওয়েব (Surface web)

ওয়েব হচ্ছে ইন্টারনেটের খুবই অল্প একটি অংশ। আমরা যেসব ওয়েবসাইট খুব সহজে ব্যবহার করতে পারি যেমন ফেসবুক, টুইটার, ইউটিউব ইত্যাদি এই সবগুলোই সারফেস ওয়েব (Surface web) এর অন্তর্ভুক্ত। সারফেস ওয়েব (Surface web) এর ওয়েবসাইট গুলোর এক্সটেনশন .com, .org, .net, .xyz ইত্যাদি হয়ে থাকে। সারফেস ওয়েব (Surface web) একজন সাধারন ইন্টারনেট ব্যবহারকারী খুব সহজেই ব্যবহার করতে পারে।

২। ডিপ ওয়েব (Deep web)

অন্যান্য ওয়েবসাইটের মধ্যে এত ওপেন না। এগুলো অ্যাক্সেস করার জন্য স্পেশাল পারমিশন লাগে। সাধারন কোন ব্রাউজার দিয়ে ব্রাউজ করা যায়। কিছু শর্তসাপেক্ষে ডার্ক ওয়েব ব্যবহার করা গেলেও ডিপ ওয়েব সবাই ব্যবহার করতে পারে না। ডিপ ওয়েবে মূলত বড় বড় বিভিন্ন কোম্পানির ওয়েবসাইট গুলোর Backend ডাটাগুলো স্টোর করা থাকে। স্পেশাল কিছু পারমিশন নিয়ে যেগুলো Accesses করা সম্ভব হয়।

৩। ডার্ক ওয়েব (Dark Web)

ডার্ক ওয়েব হচ্ছে world-wide-web এর একটি উপাদান। যা কিনা ডার্ক নেট অর্থাৎ একটি লুকানো নেটওয়ার্কিং সিস্টেম। ডার্কওয়েবে ভিজিট করতে হলে আপনাকে সেই ওয়েবসাইটের লিঙ্ক জানতে হবে এছাড়া কিন্তু কোথাও সার্চ করে আপনি ডার্ক ওয়েবের ওয়েবসাইটে ভিজিট করতে পারবেন না। ডার্ক ওয়েবের ওয়েবসাইট গুলো সাধারণত .onion এক্সটেনশন হয়ে থাকে। আর এই ধরনের অনিয়ন (.onion) এক্সটেনশন ব্য বিশেষ কোন ব্রাউজার ব্যবহার করতে হবে। যেমনঃ TOR ব্রাউজার।

কীভাবে ডার্ক ওয়েব অ্যাক্সেস করবেন?

ডার্ক ওয়েবে সার্চ করার বিভিন্ন মাধ্যম রয়েছে। তবে তার মধ্যে অন্যতম জনপ্রিয় মাধ্যম হচ্ছে TOR ব্রাউজার। TOR ব্রাউজার একটি মার্কিন গোয়েন্দার অনলাইন যোগাযোগ রক্ষার একটি মাধ্যম। TOR ব্রাউজার ব্যবহার করে ডার্ক ওয়েবের .onion ওয়েবসাইট গুলো অ্যাক্সেস করা সম্ভব। তবে সেক্ষেত্রে আপনাকে নির্দিষ্ট ওয়েবসাইটের এড্রেস জানতে হবে।

TOR ব্রাউজার ব্যবহারের সর্তকতা

যে কোন ব্রাউজার ব্যবহার করার সময় ব্রাউজার একজন ব্যবহারকারীর কাছ থেকে বিভিন্ন ধরনের ইনফরমেশন নিয়ে থাকে। এমনকি আপনার গুগল একাউন্টের এক্সেস ও তাদের কাছে থেকে যায়। ইন্টারনেটের কোথায় কে কি ফাত পেতে বসে রয়েছে আমরা জানি না। আমরা যেহেতু ডার্ক ওয়েব ব্রাউজ করব তাই আমরা নিজেরাই সতর্ক থাকলে যে কোন বিপদের হাত থেকে বেঁচে যেতে পারি। সেগুলো হল-

  1.  ব্রাউজারকে ফুলস্ক্রীন না করা।
  2. ব্যবহারের সময় অবশ্যই ভিপিএন ব্যবহার করা।
  3. ব্যবহারের আগে Google অ্যাকাউন্ট এর দুই স্তরের নিরাপত্তা সেটিংস করে নিন।
  4. TOR ব্রাউজার টি আপডেট কিনা ক্রস চেক করে নিন। প্রয়োজনে পুনরায় আপডেট করুন।
  5. কোন কিছু ডাউনলোড করার আগে ভালোভাবে দেখে ডাউনলোড করুন।
  6. কম্পিউটারের ফায়ারওয়াল ব্যবস্থাটি অন করুন।

ডার্ক ওয়েব নিয়ে কিছু ভুল ধারনা

ডার্ক ওয়েব সম্পর্কে সাধারণ মানুষের অনেক ভুল ধারণা আছে। যেগুলো হল-

১। ডার্ক ওয়েব এবং ডিপ ওয়েব এক জিনিসঃ

এটি একটি সম্পূর্ণ ভুল ধারণা কারণ ডার্ক ওয়েব এবং ডিপ ওয়েব কখনোই একই জিনিস নয়। কারণ কিছু নির্দিষ্ট শর্তসাপেক্ষে ডার্ক ওয়েব অ্যাক্সেস করা যায়। কিন্তু ডিপ ওয়েব যে কেউ অ্যাক্সেস করতে পারবেনা। কারণ ডীপ ওয়েবের ওয়েবসাইটগুলো কোন কোম্পানির ওয়েবসাইটের Backend হয়ে থাকে। তাই এইসব ওয়েবসাইটগুলোতে প্রবেশ করতে হলে নির্দিষ্ট পাসওয়ার্ড এবং ইউজার নেম প্রয়োজন।

২। ডার্ক ওয়েব সারফেস ওয়েব এর থেকে বড়ঃ

এটি একটি ভুল ধারণা। যদি বলা হয় ডিপ ওয়েব DARK WEB থেকে বড়, তাহলে এটিকে সঠিক বলা যাবে।  মূলত প্রচুর পরিমাণে ডেটা থাকে তাই ডিপ ওয়েব অনেক অনেক বড় এমনকি সার্ফেস ওয়েব এর থেকেও বড় হতে পারে। ডার্ক ওয়েব কি আমরা থার্ড পজিশনে রাখতে পারি। কারণ ডার্ক ওয়েবসাইট তুলনামূলক কম, কিন্তু কাজগুলো হয় অনেক ভয়ানক।

৩। ডার্ক ওয়েবে শুধু বেআইনি কাজগুলো হয়ে থাকেঃ

আমাদের এই ধারণাটি ভুল। শুধু ক্রিমিনাল অ্যাক্টিভিটি জন্য তৈরি করা হয়নি। কিছু ভালো কাজ রয়েছে। যেমনঃ মিলিটারি কমিউনিকেশন, বিভিন্ন কোম্পানির সিক্রেট কাজ, যা সর্বসাধারণের জন্য না এসকল কাজ ডার্কওয়েবে হয়ে থাকে।

৪। যে কেউ ডার্ক ওয়েব ভিজিট করে বেআইনি কাজ অথবা অস্ত্র কেনাবেচা করতে পারবেঃ

আমাদের এই ধারনাটি সম্পুর্ন ভুল। কারণ যে কেউ ডার্কওয়েবে ইল্লিগ্যাল’ কাজগুলো করতে পারবে না। কারেন্ট ডার্কওয়েবের ইললিগ্যাল কাজগুলো peer-to-peer অর্থাৎ একজন থেকে আরেকজন আরেকজন থেকে আরেকজন এভাবে কাজগুলো করে থাকে। আপনি সাধারণভাবে অ্যাক্সেস করতে পারলেও আপনি ক্রিমিনাল অ্যাক্টিভিটি গুলো করতে পারবেন না।

৫। ডার্ক ওয়েব ভিজিট করলে কোন ভাবেই তাকে ট্র্যাক করা সম্ভব নয়ঃ

টেকনোলজি এত এডভান্স হয়েছে এবং এই জিনিসগুলো নিয়ে এত পরিমাণে রিসার্চ হচ্ছে যে খুব ক্ষুদ্র থেকে ক্ষুদ্রতর ভুল করেন তাহলে কিন্তু আপনাকে খুঁজে বের করা সম্ভব। আপনি যদি ব্রাউজার ইউজ করার সময় ফুলস্ক্রীন না করে ছোট করে রাখেন আপনার স্ক্রিন রেজুলেশন থেকে শুরু করে আরো কিছু ইনফরমেশন নিয়ে তারা কিন্তু আপনার লোকেশন ট্রেস করতে পারবে , আপনার আইপি ট্রেস করতে পারবে।

৬। ডার্ক ওয়েব শুধুমাত্র টর ব্রাউজার ছাড়া অন্য কোন ব্রাউজার দিয়ে অ্যাক্সেস করা যায় নাঃ

আমাদের এই ধারনাটা ভুল। টোর হচ্ছে ডার্ক ওয়েবের একটিমাত্র সার্ভিস। এছাড়াও অনেকগুলো নেটওয়ার্ক রয়েছে  যেমন: I2P ইত্যাদি।

এই ছিল কয়েকটি ডার্ক ওয়েব নিয়ে ভুল ধারণা। আশা করি ভুল ধারণাগুলো সম্পর্কে সঠিক তথ্য গুলো আপনি জানতে পেরেছেন।

ডিপ ওয়েব VS ডার্ক ওয়েব

ডার্ক ওয়েবের চেয়ে ডিপ ওয়েব অনেক অনেক বড়। কারণ  ডিপ ওয়েবে এত এত পরিমাণ ডাটা স্টোর থাকে যা কল্পনার বাইরে। যদিও ডার্ক ওয়েবে অনেক ধরনের অবৈধ কাজ হলেও, এখানে ওয়েব সাইটের পরিমান কম থাকে। কারণ ডার্ক ওয়েবের সাইটগুলো পরিচালিত হয় peer-to-peer, অর্থাৎ একজন হতে আরেকজন আরেকজন হতে আরেকজন এভাবে।অপরদিকে ডিপ ওয়েবে বিভিন্ন ধরনের কোম্পানিগুলোর ওয়েবসাইট গুলোর ডাটা সংরক্ষিত থাকে। এ কারণেই ডার্ক ওয়েব এর তুলনায় ডিপ ওয়েব কে বড় বলা যায়।

ডার্ক ওয়েবে কি কি ধরনের কাজ হয়ে থাকে

উইকিপিডিয়া বলে জানুয়ারি ২০২২ সালের জরিপ অনুযায়ী ডার্ক ওয়েবের সবচেয়ে বেশি যে কাজগুলো সংঘটিত হয়েছিল সেগুলো হলঃ-

  1. মাদক(Drugs) 
  2. মার্কেট(Market)
  3. প্রতারণা(Cheating)
  4. বিটকয়েন(Bitcoin)

এছাড়াও যে ধরনের কাজ করা হয়ে থাকে সেগুলো হচ্ছেঃ-

  1. তথ্য ফাঁস(Information leaked)
  2. নকল করা(Duplicate)
  3. ই-মেইল হ্যাকিং(Email hacking)
  4. পর্নোগ্রাফি(Pornography)
  5. অবৈধ অস্ত্র বেচাকেনা(Illegal arms sales)

পরিশেষে

ডার্ক ওয়েব থেকে দূরে থাকা উচিত। এতে বিভিন্ন ধরনের বেআইনি কার্যকলাপ হয়। কোন সাধারণ মানুষ এই সাইট ভিজিট করা মাত্রই তাকে সমস্যায় ফেলতে পারে। আজকের ব্লগে Dark Web নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করা হল। ডার্ক ওয়েব নিয়ে কোন প্রশ্ন বা মন্তব্য থাকলে কমেন্ট করুন।

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button
error: Content is protected !!