আপওয়ার্ক তার প্রফেশনাল নিয়ম এবং গোছানো ম্যানেজমেন্টের জন্য বিখ্যাত। যতগুলো ফ্রিল্যান্স মার্কেটপ্লেস আছে তাদের মধ্যে র্যাঙ্কিং এ সবার প্রথমে আছে এই কোম্পানি। সাম্প্রতিক বছরগুলোতে গড়ে এখানে প্রায় তিন মিলিয়ন জব পোস্ট করা হয়েছে এখানে। যার অর্থমূল্য এক বিলিয়ন ইউএস ডলারের বেশি। এটি একটি যুক্তরাষ্ট্র (USA) ভিত্তিক ফ্রিল্যান্সিং প্ল্যাটফর্ম। এখন পর্যন্ত আপওয়ার্কে সারা বিশ্বের ৫ মিলিয়নেরও অধিক রেজিস্টার্ড ক্লায়েন্ট এবং ১২ মিলিয়নেরও অধিক রেজিস্টার্ড ফ্রিল্যান্সার রয়েছেন।
আপওয়ার্ক কি?
ফ্রিল্যান্সিং হলো জনপ্রিয় একটি অনলাইন আয়ের মাধ্যম। আর আপওয়ার্ক হলো একটি অনলাইন ফ্রিল্যান্সিং মার্কেটপ্লেস। এখানে উদ্যোক্তা এবং সেবাদানকারী নিজ নিজ ব্যবসা পরিচালনার উদ্দেশ্যে একে অপরের শরণাপন্ন হন। ফ্রিল্যান্সার এবং বায়ারদের কাছে আস্থার অন্যতম প্রতীক এই আপওয়ার্ক। প্রতিষ্ঠাকালে আপওয়ার্কের নাম ছিল ওডেস্ক। ২০০৩ সালে ক্যালিফোর্নিয়ার ক্যাম্পবেলে তৎকালীন ওডেস্ক প্রতিষ্ঠা করা হয়। এই কোম্পানির উদ্দেশ্য ছিল বিশ্বব্যাপি ছড়িয়ে থাকা ফ্রিলেন্সারদের দিয়ে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের কাজ করিয়ে নেওয়া। ২০১৫ সালে চূড়ান্তভাবে ওডেস্ক নাম পরিবর্তন করে আপওয়ার্ক করা হয়।
আপওয়ার্ক এ কাজের প্রকারভেদ
ফ্রিল্যান্সিং এর উপর ভিত্তি করে আপওয়ার্ক এ বিভিন্ন ধরনের কাজ আছে। মূলত শিল্প এবং দক্ষতাভিত্তিক কাজই এখানে গুরুত্ব পায়। আপওয়ার্ক এ উল্লেখযোগ্য মূল ক্যাটেগরিগুলো নিম্নরূপঃ
- ফটোগ্রাফি এবং এডিটিং
- ভিডিও প্রোডাকশন
- ওয়েব ডিজাইন
- সার্চ ইঞ্জিন অপটিমাইজেশন (এসইও)
- মার্কেটিং
- সোস্যাল মিডিয়া ম্যানেজমেন্ট
- গ্রাফিক ডিজাইন
- প্রোগ্রামিং
- সফটওয়্যার ডেভলপমেন্ট
- লিটারেচার (লেখা ও এডিটিং)
- কপিরাইটিং
- এডভার্টাইজিং
- টিচিং
- অনুবাদ করা
- কন্ঠ প্রদান (ভয়েস ওভার)
- আর্ট ডিরেকশন
- সাপোর্ট, ভার্চুয়াল এসিস্ট্যান্ট
Upwork এ কাজের ধরণ
এখানে ফিক্সড এবং আওয়ারলি দুই ধরনের প্রোজেক্ট পাওয়া যায়। যে যার সুবিধা অনুযায়ী কাজ করতে পারবে। নিচে ফিক্সড এবং আওয়ারলি কাজের বর্ণনা করা হল-
ফিক্সড প্রাইস কাজ
নির্দিষ্ট ডলারের বিনিময়ে যে কাজগুলো করিয়ে নেওয়া হয় সেগুলোই মূলত ফিক্সড প্রাইসের কাজ। কাজের টাইটেলের পাশে বা নিচে উল্লেখ করা থাকে কাজটির জন্যে কত ডলার দেওয়া হবে। তবে ফিক্সড প্রাইসের কাজ নতুনদের কিছুটা ঝুঁকিপূর্ণ। কেননা, অনেক সময় দেখা যায় বায়ারের কাজ পছন্দ না হলে তারা পেমেন্ট দেয় না। তখন সেলারের প্রোফাইলের পাশে one dispute লেখা যুক্ত হবে। যা দেখলে পরবর্তীতে অন্য বায়ার কাজ দিতে আগ্রহী হবে না। তাই ফিক্সড প্রাইস এর কাজ নেওয়ার সময়ে খুবই সতর্কতার সাথে নিতে হবে। বায়ার ঠিক কি চাচ্ছেন সেটি ভালোভাবে বুঝে নিয়ে কাজ শুরু করা উচিত।
আওয়ারলি কাজ
ঘন্টা অনুযায়ী কাজের পেমেন্ট তুলনামূলক কম। প্রতি ঘন্টা হিসেবে পেমেন্ট করা হয়। পুরাতন বা অভিজ্ঞ সেলারগণ এধরণের কাজ করতে চান না। তবে নতুনদের জন্যে ঘন্টাচুক্তির কাজ নেওয়া নিরাপদ। কারণ আপনার সময় কিছুটা বেশি লাগলেও বায়ার পেমেন্ট করবে। অভিজ্ঞদের কাজ করতে অপেক্ষাকৃত কম সময় লাগে এবং ভুলও কম হয়। তাই তারা ফিক্সড প্রাইস এর কাজ করতে স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করে। তাই Upwork এ কাজ শুরু করলে ঘন্টা হিসেবে কাজ দিয়ে শুরু করাই নিরাপদ
আপওয়ার্ক এ কিভাবে ফ্রিল্যান্সিং করা যায়?
আপওয়ার্কে ক্যারিয়ার গড়ার জন্য সর্বপ্রথম প্রয়োজন হবে অনলাইনের কাজে দক্ষ হওয়া। নিচের পদক্ষেপ গ্রহণ করলে আপনি আপওয়ার্কে ফ্রিল্যান্সিং করতে পারবেন।
১। অ্যাকাউন্ট তৈরিঃ
প্রথমে আপনার অরিজিনাল তথ্য দিয়ে Upwork অ্যাকাউন্ট তৈরি করতে হবে। অ্যাকাউন্টে অবশ্যই আপনার সত্যিকারের তথ্য ব্যবহার করবেন। কারণ এখানে সকল ডাটা ভেরিফাই করে তারপর অ্যাকাউন্ট অ্যাপ্রুভ করা হয়। দেখে নিন কিভাবে Upwork একাউন্ট খুলবেন?
২। ইন্টারভিউঃ
অ্যাকাউন্ট তৈরি করার পর ই-মেইল ভেরিফিকেশন করতে হবে। তারপর আপওয়ার্ক অ্যাকাউন্ট অ্যাক্টিভ করার জন্য ভিডিও ইন্টারভিউ দিতে হবে। সেখানে আপনার সম্পর্কে ডাটা নিয়ে তারপর অ্যাকাউন্ট ভেরিফাই করে দিবে।
৩। কমপ্লিট প্রোফাইলঃ
এবার আপনার প্রোফাইলকে সুন্দর করে সাজিয়ে প্রফেশনাল লুক দিতে হবে। কারণ প্রফেশনাল ছবি এবং প্রোফাইল দেখলে বায়ার কাজ দিতে উদ্বুদ্ধ হবে।
৪। স্কিল টেস্টঃ
স্কিল টেস্ট একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। মার্কেটপ্লেস এবং বায়ার আপনার স্কিল টেস্ট রিপোর্ট দেখে আপনাকে বিচার করবে। আপনি আপনার ক্যাটাগরির কাজের উপর স্কিল টেস্ট দিয়ে তা প্রোফাইলে দিতে পারবেন। যা আপনাকে অভিজ্ঞ প্রমাণ করতে কাজে লাগবে।
৫। বিড করাঃ
আপনি যে যে বিষয়ের উপরে অভিজ্ঞ সে সে বিষয়ের উপরে জব খুঁজে বের করতে হবে। যেখানে কম প্রপোজাল পরেছে সেখানে কানেক্টস খরচ করে বিড করতে হবে। বিড করার সময় সুন্দর করে একটি কভার লেটার পাঠাতে হবে। কভার লেটারে কাজটি কীভাবে করবেন তার একটি বর্ণনা থাকবে। এতে বায়ার আপনাকে খুঁজে বের করতে পারবে। সিলেক্টেড হওয়ার পর বায়ার আপনার ইন্টারভিউ নিবে। ইন্টারভিউয়ে ভাল ভাবে কাজ সম্পর্কে আলোচনা করতে হবে।
৬। কাজ জমা দেওয়াঃ
ইন্টারভিউ দেওয়ার পর আসে কাজ কমপ্লিটের পালা। কাজ কমপ্লিট করে তা বায়ার রিভিউয়ের জন্য সাবমিট করতে হয়। বায়ার আপনার কাজ পছন্দ করলে তা গ্রহণ করবে। রিভিউ সহ পেমেন্ট করবে।
৭। পেমেন্ট নেওয়াঃ
কাজ জমা দেওয়ার পর ক্লাইন্ট আপনার একাউন্ট এ পেমেন্ট করবে। Upwork থেকে বিভিন্ন উপায়ে পেমেন্ট নেওয়া যায়। যেমন- Payoneer, PayPal অথবা ব্যাংক একাউন্ট এর মাধ্যমে। বাংলাদেশে বেশিরভাগ ফ্রিল্যান্সার Payoneer এর মাধ্যমে পেমেন্ট নিয়ে থাকেন। অনেকে ব্যাংক একাউন্ট এর মাধ্যমেও নেন।
আরও জানুন-দ্রুত ফ্রিল্যান্সার হবেন কিভাবে?
আপওয়ার্ক এ কাজ পাওয়ার যোগ্যতা
Upwork এ কাজ করতে বিশেষ কোন শিক্ষাগত যোগ্যতার প্রয়োজন নেই। তবে আপনি যে ক্যাটাগরিতে কাজ করতে চান সে বিষয়ে অবশ্যই দক্ষ হতে হবে। মনে রাখা জরুরি এটি একটি ইন্টারন্যাশনাল প্লাটফর্ম। এখানে সারা বিশ্বের ফ্রিল্যান্সারগণ কাজ করেন। তাই কেবল দক্ষ ব্যক্তিই টিকে থাকতে পারেন এখানে। তাই Upwork এর যে ক্যাটাগরিতে কাজ করতে চান সেই ক্যাটাগরিতে বেশ ভালো দক্ষতা অর্জন করে তারপর একাউন্ট খুলে কাজ শুরু করুন।
পরিশেষে
আপওয়ার্ক এ কাজের পরিমাণ অন্যান্য ফ্রিল্যান্সিং মার্কেটপ্লেসগুলোর তুলনায় বেশি। আপওয়ার্ক আপনার আয়ের একটি ভালো অংক কেটে নিবে। কিন্তু এত বিশাল একটি ক্ষেত্রে ফ্রিল্যান্সার হিসেবে কাজ পাওয়া সহজ ব্যপার নয়। আপওয়ার্ক আপনাকে ক্লায়েন্ট খুঁজে পেতে সাহায্য করবে। এক্ষেত্রে তারা যে লভ্যাংশ গ্রহণ করছে, তা যদি আপনি মেনে নিতে পারলে আপওয়ার্ক এর মাধ্যমে কাজ করা অসুবিধার হবেনা। তাই প্রতিটি কাজের বিপরীতে আগ্রহী ফ্রিল্যান্সারের সংখ্যা ও বেশি। আপওয়ার্কে ক্যারিয়ার গড়তে চাইলে আপনাকে অনেক পরিশ্রমী হতে হবে। নিজের দক্ষতা বাড়াতে হবে। ধৈর্য ধরে কাজ শিখতে হবে এবং মনোযোগের সহিত কাজ করতে হবে।