শিক্ষা

শারীরিক ও মানসিকভাবে সুস্থ থাকার উপায় (Ways to Stay Healthy)

শারীরিক ও মানসিকভাবে সুস্থ থাকার উপায় (Ways to Stay Healthy) আমাদের সকলেরই জানা দরকার। আমাদের জীবনধারায় পরিবর্তন এবং খারাপ অভ্যাসগুলো ত্যাগ করে নতুন বছরের শুরুটা হোক আনন্দময় এবং সৌন্দর্যমন্ডিত। যদিও বেশিরভাগ মানুষ তাঁদের খারাপ অভ্যাস পরিবর্তন করতে পরিকল্পনা করলেও দেখা যায় অনেকই তাদের পরিকল্পনায় অটুট থাকতে পারেন না, তবুও নতুন বছরে সুস্বাস্থ্য ও সুস্থতার জন্য নেওয়া যেতে পারে বেশ কিছু পরিকল্পনা।

শারীরিকভাবে সুস্থ থাকার উপায়

নিয়মিত ব্যায়াম করা

আপনি যদি আপনার শরীরের সঠিক ব্যবহার না করেন তাহলে তা ক্ষয় হবে এবং আপনার পেশি হয়ে যাবে নিস্তেজ ও দুর্বল। আপনার শরীরের গুরুত্বপূর্ণ অংশগুলো ঠিকমতো কাজ করবেনা এবং অকেজো হয়ে যাবে যেমন হার্ট, ফুসফুস, লিভার ইত্যাদি। শরীরকে যদি আপনি ঠিকমতো ব্যবহার না করেন তাহলে এইটা ইঞ্জিন ছাড়া মেশিন চালানোর মতো হয়ে যাবে। আপনি যদি নিয়মিত ব্যায়াম করেন তাহলে আপনার শরীরের সবগুলা অংশ সচল হবে। একটা প্রবাদ আছে, সোনা ফেলে রাখলে, মরিচা ধরে। আমাদের প্রত্যেককে নিয়মিত ফিটনেস বজায় রাখতে এবং মানসিক চাপ কমাতে ব্যায়াম করতে হবে।

ব্যায়াম করার সুবিধা

    • ওজন নিয়ন্ত্রণে থাকে
    • ফিটনেস ভালো থাকে
    • হৃদরোগের ঝুঁকি কমে যায় 
    • মানসিক চাপ হ্রাস পায় 

স্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাস গড়ে তোলা 

সুষম খাদ্যগ্রহণ নিশ্চিত করে সঠিক পুষ্টি। খাবার গ্রহণের সময় আমাদের ২ টি বিষয় লক্ষ্য রাখতে হবে। আমরা কি খাচ্ছি এবং কিভাবে খাচ্ছি। স্বাস্থ্যকর খাবার অভ্যাস গড়ে তোলা অনেক গুরুত্বপূর্ণ। প্রতিদিনের খাদ্য তালিকায় যদি আমরা পুষ্টিকর খাবার না রাখি তাহলে আমাদের শরীরের অনেক ক্ষতি হতে পারে। নিচে পুষ্টিকর খাবারের একটি তালিকা দেওয়া হলো- 

   খাবারের তালিকা:

    • ফল ও শাক-সবজি
    • শস্যদানা  
    • প্রোটিনের উৎস- (মাছ, মাংস, ডিম, ডাল)
  • হ্রাস করতে হবে:

    • অতিরিক্ত চিনি খাওয়া
    • প্রক্রিয়াজাত খাবার (প্রসেসড ফুড) খাওয়া
    • তেলে ভাঁজা জিনিস কম খাওয়া 

প্রথমত সুস্থ থাকতে হলে নিয়মিত শাকসবজি ও ফলমূল বেশি বেশি খেতে হবে, কারণ ফল ও শাকসবজিতে চর্বি ও প্রোটিন কম থাকে এবং ফাইবার বেশি থাকে। ফাইবারযুক্ত খাবার ওজন কমাতে সাহায্য করে। খাবার খাওয়ার সময় খুব দ্রুত খাওয়া যাবে না, কারণ দ্রুত খাবার খাওয়া ওজন বাড়ানোর কারণ হতে পারে। তাই ধীরে ধীরে, সময় নিয়ে খাবার খান এবং যখন মনে হবে পেট ভরে গেছে তখন খওয়া বন্ধ করুন।  

উল্লেখ্য, স্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাস বজায় রাখলে প্রাণঘাতী রোগের ঝুঁকি ২০-৩০% পর্যন্ত কমানো যায়।

মানসিক সুস্থতার উপায়

মানসিক প্রশান্তির কৌশল

মানসিকভাবে চাপ হ্রাস করতে ধ্যান (ইয়োগা/ সৃষ্টিকর্তার কাছে প্রার্থনা) এবং শ্বাস-প্রশ্বাসের কৌশল কার্যকর ভুমিকা রাখে। মানসিক প্রশান্তির জন্য সর্বোত্তম উপায় হলো যোগ ব্যায়াম করা বা ধ্যান করা। আপনি যদি কখনোই মেডিটেশন বা যোগ ব্যায়াম না করে থাকেন তাহলে একবার হলেও করে দেখুন, তাহলে নিজেই প্রমাণ পেয়ে যাবেন যে কিভাবে মেডিটেশন মানসিকভাবে শান্তি দেয়। 

  • যোগ ব্যায়াম বা ধ্যান  করা :

    • দৈনিক ১০-১৫ মিনিট ধ্যান করতে হবে।
    • বিভিন্ন যোগাভ্যাস গরে তুলতে হবে।
  • সুবিধাসমূহ হলো:

    • দুশ্চিন্তা কমায়।
    • মনোযোগ বৃদ্ধি করে।
    • মনকে স্থির রাখে।

সামাজিক সম্পর্ক 

সামাজিক সম্পর্ক বজায় রাখা মানসিক সুস্থতার জন্য অপরিহার্য। সামাজিক সম্পর্ক ভালো থাকলে সমাজে ভালো সম্মান পাওয়া যায় এবং ভালভাবে সমাজে বসবাস করা যায়। এছাড়াও সামাজিক সম্পর্ক ভালো থাকলে মানসিক ভাবে সুস্থ বা শান্তি পাওয়া যায়।   

  • পারস্পারিক সহযোগিতা:

    • পরিবার ও বন্ধুদের সাথে সময় কাটানো যায়।  
    • সামাজিক ইভেন্টে অংশগ্রহণ করা যায়।

গবেষণায় দেখা গেছে, সামাজিক সম্পর্কের অভাব মানসিকভাবে অসুস্থতার ঝুঁকি বাড়ায়।

পর্যাপ্ত ঘুম

ঘুম হলো সুস্থতার একটি গুরুত্বপূর্ণ উপাদান। ঘুম শরীরের জন্য অনেক বড় একটা নিয়ামত। আপনি যদি ঠিকমতো খাবারের পাশাপাশি পর্যাপ্ত পরিমাণে না ঘুমান তাহলে দেখবেন আপনার কোন না কোন রোগ লেগেই থাকবে। কারণ ঘুমের ফলে মস্তিস্কের বিকাশ, কর্মক্ষমতা, মনোযোগের মাত্রা, এবং জ্ঞানের ক্ষমতা বৃদ্ধি পায়। সকলের জন্যই উত্তম ঘুমের (সাউন্ড স্লিপ) প্রয়োজন, যাতে তাঁরা তাঁদের শরীরকে সঠিকভাবে কাজে লাগানোর জন্য শক্তি জোগাতে পারে।

পর্যাপ্ত ঘুমের সময়ঃ

  • শিশুদের জন্য: ৯-১২ ঘণ্টা
  • বয়স্কদের জন্য: ৭-৯ ঘণ্টা 

স্ট্যাটিসটিকে বলা হয়: পর্যাপ্ত ঘুম না হলে মানসিক উদ্বেগের ঝুঁকি ৫০% পর্যন্ত বেড়ে যেতে পারে । 

স্ট্রেস ম্যানেজমেন্ট 

স্ট্রেস ম্যানেজমেন্টের মূল লক্ষ্য হলো, একজন মানুষের মানসিক চাপের মাত্ৰা নিয়ন্ত্রণ করা। একটা মানুষের স্ট্রেস যদি স্বাভাবিক না থাকে তাহলে তাঁর শারীরিক বা মানসিক অনেক উপসর্গ তৈরি হয় , যার কারণে সে তাঁর দৈনন্দিন কাজকর্ম সঠিকভাবে করতে পারে না। আমাদের স্ট্রেস ম্যানেজমেন্টের কৌশল সম্পর্কে জানতে হবে তাহলে খুব সহজে আমরা আমাদের মানসিক চাপগুলা কাটিয়ে উঠতে পারবো। স্ট্রেস ম্যানেজমেন্টের কৌশলকে সমাজে সুখী ও সফল জীবনের অন্যতম চাবিকাঠি হিসাবে মনে করা হয়।

  • স্ট্রেস ম্যানেজমেন্টের কৌশলসমূহ:

    • লেখালেখি করা
    • প্রকৃতির সাথে বেশি বেশি সময় কাটানো
    • সৃষ্টিশীল কার্যকলাপে অংশগ্রহণ (যেমন ছবি আঁকা, গান গাওয়া, কবিতা আবৃতি করা ইত্যাদি)

পরিসংখ্যানে দেখা যায়, স্ট্রেস ম্যানেজমেন্ট কৌশল অবলম্বন করলে মানসিক সুস্থতার হার ৩০% পর্যন্ত উন্নত হয়।

স্বাস্থ্যকর অভ্যাস গঠন

স্বাস্থ্য সকল সুখের মূল। কথায় আছে সুস্থ শরীরে সুন্দর মন। আপনি যদি আপনার স্বাস্থ্যের বিষয়ে গুরুত্ব না দেন তাহলে আপনার স্বাস্থ্য খারাপ হবে, স্বাস্থ্য খারাপ হলে শরীরে বিভিন্ন রোগ হবে, আর যদি স্বাস্থ্য ভালো থাকে তাহলে দৈনন্দিন জীবন অনেক সহজ হয়ে যাবে। শরীরে সহজে কোনো রোগ আক্রমণ করবে না।  

নিয়মিতভাবে স্বাস্থ্যকর অভ্যাস গঠন করতে চাইলে আমাদের সঠিক পরিকল্পনা করতে হবে :

  1. সারাদিনের কাজের একটি পরিকল্পনা তৈরি করুন
  2. বদ অভ্যাসগুলো পরিত্যাগ করুন।
  3. নতুন অভ্যাসগুলো ধীরে ধীরে আয়ত্ব করুন
  4. এই পরিকল্পনা কতটুকু ফলপ্রসূ হলো তা মনিটর করুন

সাধারণ স্বাস্থ্য চেকআপ

আপনি যদিও সুস্থও থাকেন তবুও আপনার নিয়মিত স্বাস্থ্য পরীক্ষা করা উচিত। আপনি যদি স্বাস্থ্য সম্পর্কে সচেতন না হন তাহলে আপনি বুজবেনও না যে, আপনার শরীরে কোনো রোগ আছে কি না, হয়তো রোগটির লক্ষণ দেখা দিয়েছে না, আপনি যদি সঠিক সময়ে চিকিৎসা না করেন তাহলে হয়তো অনেক বড় কোনো রোগ আপনার শরীরে বাসা বাঁধবে। আমরা যদি নিয়মিত স্বাস্থ্য পরীক্ষা করি, তাহলে অনেক রোগ থেকে রক্ষা পাবো। কারণ এটি প্রাথমিক অবস্থাতেই রোগ সনাক্ত করা সম্ভব হবে এবং আপনার স্বাস্থ্যগত পরিস্থিতির উন্নতির জন্য গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে। 

  • নিয়মিত যে স্বাস্থ্য চেকআপগুলো করা উচিত:

    • রক্তচাপ পরীক্ষা
    • প্রসাব পরীক্ষা
    • লিভার ফাংশন পরীক্ষা
    • ডায়াবেটিস/ গ্লুকোজ পরীক্ষা
    • কিডনি পরীক্ষা

আপনার দৈনন্দিন জীবনে শারীরিক ও মানসিকভাবে সুস্থ থাকার জন্য সঠিক পরিকল্পনা প্রয়োজন। আমরা আশাবাদী যে আপনার প্রয়োজন অনুযায়ী আপনি আপনার পছন্দের পরিকল্পনা বেঁচে নিতে আমাদের ছোট্টো এই প্রচেষ্টাটি কাৰ্যকর ভূমিকা পালন করবে। স্বাস্থ্যবিধিগুলো অনুসরণ করুন এবং আপনার স্বাস্থ্যের প্রতি সবসময় সচেতন থাকুন। আপনার সুস্থতাই আমাদের কাম্য। আপনার দিন সুন্দর হোক।

আরও পড়ুন: তৈলাক্ত ত্বকের জন্য Sunscreen ব্যবহারের সঠিক পদ্ধতি

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button
error: Content is protected !!