ইলেক্ট্রিক ওয়াটার হিটার কি? জেনে নিন বিস্তারিত
শীতকাল আসন্ন। চারিদিকে হিম শীতল হাওয়ার আনাগোনা শুরু হয়ে গিয়েছে। বাইরের ঠান্ডায় পানিও তুলনামূলক ঠান্ডা থাকে এসময়ে। যেকারণে গোসল করা এমনকি শিশু, বয়স্ক বা অসুস্থ লোকের ক্ষেত্রে হাত-মুখ ধোয়াও কষ্টকর হয়ে যায়। বারবার চুলায় পাতিলে করে পানি গরম করা যেমন সময়সাপেক্ষ তেমনি ঝামেলাপূর্ণ একটি কাজ। তাই এই সমস্যার সমাধানে প্রযুক্তিবিদদের আবিষ্কার ইলেক্ট্রিক ওয়াটার হিটার বা গিজার। এই হিটারের মাধ্যমে অল্প সময়ে বিনা পরিশ্রমে পানি গরম করা সম্ভব।
আজকে আমরা ইলেক্ট্রিক ওয়াটার হিটার সম্পর্কে বিস্তারিত জানাব আপনাদের। সেইসাথে আমাদের দেশে সহজলভ্য এরকম কয়েকটি ইলেক্ট্রিক ওয়াটার হিটারের ব্যাপারেও জানিয়ে দিব।
ইলেক্ট্রিক ওয়াটার হিটার কি?
ইলেক্ট্রিক ওয়াটার হিটার বা গিজার হলো পানির একটি ট্যাংকের মতো। এর ভেতর একটি রড থাকে যা বৈদ্যুতিক সংযোগ পেলে গরম হয়ে তাপ উৎপাদন করে। ফলে এর ভিতর থাকা পানিও সেই তাপে গরম হয়ে যায়। অনেক উচ্চ ভোল্টেজের বিদ্যুৎ প্রবাহিত হয় এই হিটারের মধ্য দিয়ে।
ইলেক্ট্রিক হিটারগুলো সাধারণত ৩০ লিটার থেকে শুরু করে ৯০ লিটার পর্যন্ত তৈরি হয় বাসাবাড়িতে ব্যবহার উপযোগী করে। আর এর চেয়ে বেশি ধারণ ক্ষমতার হিটারগুলো ইন্ডাস্ট্রিয়াল ক্ষেত্রে ব্যবহৃত হয়। একটি ইলেক্ট্রিক ওয়াটার হিটার পানি গরম করতে প্রায় ১০ থেকে ১৫ মিনিট সময় নেয়। কিন্তু বেশিরভাগ ক্ষেত্রে পানি গরম হয়ে গেলে এগুলো কোন সিগনাল দেয় না। চেক করে নিয়ে আপনাকেই সুইচ বন্ধ করে দিতে হবে। তবে হিটার চলাকালীন পানিতে হাত না দেয়াই ভালো কেননা পানি বিদ্যুৎ পরিবাহী। সময় হিসাব করে সুইচ বন্ধ করে তারপর পানিতে হাত দেয়া উচিত।
পানির লাইনে গরম এবং ঠান্ডা দুই রকম পানিরই ব্যবস্থা থাকলে এই হিটারের সর্বোচ্চ উপকার পাওয়া যায়।
ইলেক্ট্রিক ওয়াটার হিটার কিভাবে কাজ করে?
হিটারে বিদ্যুৎ সরবরাহ চালু হলে এর ভিতরে থাকা রডটি গরম হয়ে উঠে। সেই তাপে পানিও গরম হওয়া শুরু হয়। প্রথমে একদম ভিতরের দিকের অর্থাৎ রডের আশেপাশের পানি গরম হয়। এরপর সেই তাপ চারপাশে ছড়িয়ে পড়ে হিটারের ভিতরে থাকা সমস্ত পানি গরম করে। ইলেক্ট্রিক হিটার সাধারণত ঘরের নির্দিষ্ট কোন পানির লাইনের সাথে যুক্ত থাকে। ফলে হিটারের তাপ সেই লাইনের পানিকে সম্পূর্ণরূপে গরম করে তোলে। আপনি নির্দিষ্ট সেই পাইপ লাইনের সব ট্যাপের পানিই গরম অবস্থায় পাবেন।
কেন ব্যবহার করবেন ইলেক্ট্রিক ওয়াটার হিটার?
এই ওয়াটার হিটার আমাদের অনেক সুবিধা দেয় যে কারণে বাসায় একটি ইলেক্ট্রিক ওয়াটার হিটার বা গিজার লাগানো যেতেই পারে। জেনে নেই এর সুবিধাগুলো।
- শীতের সময় ঠান্ডা পানি ব্যবহারের কষ্ট থেকে মুক্তি দেয়।
- দ্রুত পানি গরম করে। চুলায় পানি গরম করতে অনেক সময় লেগে যায়। ওয়াটার হিটার সেই সময় সাশ্রয় করে।
- দীর্ঘদিন ব্যবহার করা যায়।
- সহজে ব্যবহার করা যায়। কেবলমাত্র সুইচ অন করে বিদ্যুৎ সংযোগ দিলেই গিজার চালু হয়ে যায়।
- কোন কেমিক্যাল বা ক্ষতিকর গ্যাস নিঃসরণ হয় না। ফলে এটি পরিবেশবান্ধব এবং মানবদেহের জন্যেও এতে গরম হওয়া পানি নিরাপদ।
জেনে নিনঃ রুম হিটার কি? ভালো মানের ৫ টি রুম হিটার
ইলেক্ট্রিক ওয়াটার হিটারের রক্ষণাবেক্ষণঃ
সহজে গরম পানি পেতে হিটার ইন্সটল করে ব্যবহার করলেই হবে না এর সঠিক রক্ষণাবেক্ষণও করতে হবে।
- নতুন হিটার লাগানোর সময় ইলেক্ট্রিক কানেকশন ঠিক আছে কিনা অবশ্যই চেক করতে হবে।
- হিটারে পানি গরম হতে কত সময় লাগে তা কয়েকদিন ব্যবহার করলেই বোঝা যায়। তাই পরবর্তীতে নির্দিষ্ট সময় পরে সুইচ বন্ধ করে দিন। এতে যেমন বিদ্যুৎ সাশ্রয় হবে তেমনি হিটারটিও দীর্ঘস্থায়ী হবে।
- নিয়মিত যে সময়ের মধ্যে পানি গরম হয় তাতে কোন বিঘ্ন ঘটছে কিনা লক্ষ্য রাখুন।
- যেহেতু বৈদ্যুতিক যন্ত্র তাই সবসময় এর ত্রুটি-বিচ্যুতির দিকে খেয়াল রাখতে হবে। কোন সমস্যা চোখে পড়লেই তা দ্রুত ঠিক করে নিতে হবে। তা নাহলে বড় কোন দুর্ঘটনার সম্ভাবনা থাকে।
ইলেক্ট্রিক ওয়াটার হিটার কেনার আগে মাথায় রাখুন কিছু কথাঃ
শীতের দিনে এমনকি সারাবছরই গরম পানির সহজ সরবরাহ পেতে ইলেক্ট্রিক ওয়াটার হিটার একটি দারুন সমাধান। তবে হিটার কেনার আগে বেশ কিছু বিষয় বিবেচনায় রাখতে হবে। চলুন জেনে নেই সেগুলো।
- প্রথমেই লক্ষ্য করুন আপনি যে পানির লাইনের সাথে হিটার যুক্ত করতে চাচ্ছেন সেখানে হিটারের জন্যে বৈদ্যুতিক সংযোগ আছে কিনা। না থাকলে নতুন করে সংযোগ নিতে হবে।
- পরিবারের সদস্য সংখ্যা হিসাব করে হিটার কেনা ভালো। চারজনের পরিবারে ৩০-৩৫ লিটারের একটি হিটারই যথেষ্ট।
- সাশ্রয়ী মূল্যে কিনতে গিয়ে যেকোন দোকান থেকে হিটার না কিনে ভালো কোন ব্রান্ড থেকে কেনা উচিত।
- কেনার পর সেই কোম্পানির পরবর্তী সার্ভিসের ব্যপারে জেনে নিন। কোন পার্টসে ত্রুটি দেখা দিলে সেটি বাজারে সহজলভ্য কিনা নিশ্চিত হয়ে নিন।
- বিদ্যুৎ খরচ কতটুকু হবে তা জেনে নিন।
ইলেক্ট্রিক ওয়াটার হিটারের দামঃ
আমাদের দেশে বিভিন্ন কোম্পানির ইলেক্ট্রিক ওয়াটার হিটার বা গিজার পাওয়া যায়। এগুলো বেশিরভাগই চীন থেকে আমদানিকৃত। তবে বর্তমানে দেশি ব্রান্ড ওয়ালটন এবং আরএফএল ও বাজারে ওয়াটার হিটার নিয়ে এসেছে। দাম এবং মানেও এগুলো বেশ ভালো।
বাসাবাড়িতে ব্যবহারের জন্যে বাংলাদেশে পাওয়া যায় এমন ভালো মানের ইলেক্ট্রিক ওয়াটার হিটারের দাম সাধারণত ৫ হাজার টাকা থেকে শুরু করে ২০ হাজার টাকার মধ্যে হয়ে থাকে।
কয়েকটি ইলেক্ট্রিক ওয়াটার হিটারঃ
নিচে কয়েকটি উন্নত মানের ওয়াটার হিটারের ফিচার ও মূল্য দেওয়া হলোঃ
Midea D30 20VG 30 litre water heater-
৩০ লিটার ধারণক্ষমতার এই গিজারটি পাবেন ১১ হাজার থেকে ১২ হাজার টাকার মধ্যে। এর ফিচারগুলো জেনে নেই-
- প্রায় ২৪ ঘন্টা পর্যন্ত পানি গরম থাকে।
- ৬০% বিদ্যুৎ সাশ্রয়ী।
- অতিরিক্ত গরম হয়ে যায় না।
- তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণে বালব রয়েছে।
- তিন স্তরের সুরক্ষা বিশিষ্ট এনামেল কোটিং দেয়া ট্যাংক।
- ম্যাগনেসিয়াম রড প্রোটেকশন।
Midea D30 15VH 30L overheat protection water heater-
এটিও মিডিয়ার তৈরি আরেকটি ইলেক্ট্রিক ওয়াটার হিটারের মডেল। এর বর্তমান বাজার মূল্য ১১ হাজার টাকার মতো। ফিচারগুলো দেয়া হলো-
- ৩০ লিটার পানি ধারণ ক্ষমতা সমপন্ন।
- ৬০% বিদ্যুৎ সাশ্রয়ী।
- ২৪ ঘন্টা পানি গরম রাখতে সক্ষম।
- কপার হিটিং উপাদানে তৈরি।
- পানি দ্রুত গরম হয়।
- ওয়াল মাউন্টেড গিজার এটি। তাই ঘরের যে কোন দেয়ালে লাগানো যায়।
Ariston Andris RS 30/3 30 Litre compact water heater-
দেখতে দারুন সুন্দর এই ইলেকট্রিক ওয়াটার হিটারটির বাজারমূল্য প্রায় ১৫ হাজার টাকার মতো। এর ফিচারগুলো দেখে নেয়া যাক-
- ধারণ ক্ষমতা ৩০ লিটার।
- গ্লাস টিন্টেড ট্যাংক।
- ব্যবহার তুলনামূলক সহজ।
- ওয়াল মাউন্টেড অর্থাৎ যেকোনো দেয়ালে লাগিয়ে দেয়া যায়।
- ভিতরে এনামেল কোটিং দেয়া।
- পানি দ্রুত গরম করে।
শেষ কথাঃ
শীত বা গ্রীষ্ম সব ঋতুতেই গরম পানি দিয়ে গোসল করতে, হাত-মুখ ধুতে হয় এরকম শিশু বা বৃদ্ধ ব্যক্তি কমবেশি সবার ঘরেই থাকে। তাই তাদের যত্নে এবং অল্প সময়ে, বিনা পরিশ্রমে গরম পানির ব্যবস্থা করতে আপনি ঘরে একটি বা দুটি ইলেক্ট্রিক ওয়াটার হিটার ব্যবহার করতেই পারেন। তবে হিটার বা গিজার কেনার আগে অবশ্যই উপরে উল্লেখিত বিষয়গুলো বিবেচনা করে তারপর কিনবেন। তাহলে পরবর্তীতে ঠকে যাওয়ার ভয় কম থাকবে।