অন্যান্যসেরা ১০

ভিপিএন কি এবং ভিপিএন কিভাবে কাজ করে

আমরা অনেকে ভিপিএন শব্দের সাথে বেশ পরিচিত তবে এটি সম্পর্কে তেমন কিছু জানি না? এবং আমরা চিন্তাও করতে পারি না যে মাঝেমধ্যে ভিপিএন ব্যবহার করা কিংবা না করার মধ্যে ফল কিরূপ হতে পারে। তাই আজকের আমাদের এই পোষ্টের মাধ্যমে ডিটেলসে আলোচনা করা হবে, ভিপিএন কি? এবং ভিপিএন কিভাবে কাজ করে সেই ব্যাপারে।

ভিপিএন কি?

ভিপিএন হল একটি ভার্চুয়াল প্রাইভেট নেটওয়ার্ক। এ কি বলতে সাধারণত একটি কাল্পনিক নেটওয়ার্ক সম্পর্কে বোঝানো হয়। ভিপিএন হল একটি কাল্পনিক টানেল, যেটির মাধ্যমে নিরাপদে তথ্য আদান প্রদান করা যায়।

এই টানেল বা সুরঙ্গের বাস্তবে কোন অস্তিত্ব নেই, এটি দিয়ে মূলত একটি কাল্পনিক প্রাইভেট নেটওয়ার্ক বোঝানো হচ্ছে। যেটির দ্বারা ইন্টারনেটে নিরাপদে তথ্য আদান-প্রদান করা যায়।

ভি পি এন এর ইতিহাস

ভিপিএন এর ইতিহাস মূলত ১৯৯৬ সালে শুরু হয়, যখন একজন মাইক্রোসফট কর্মজীবী বেশিরভাগ সূত্র বলে গুরুদেব সিং পাল প্রথম প্রিয়ার টু পিয়াল আর টারনিং বা পিটুপি শুরু করে।

কার্যকর ভাবে ভিপিএন এর অগ্রদূত হিসাবে পি পি টি পি একটি কম্পিউটার এর মধ্যে আরও নিরাপদ এবং এবং ব্যক্তিগত সংযোগ তৈরি করে।

ভি পি এন এর ইতিহাস

ভি পি এন কেন ব্যবহার করা হয় আর কারাইবা ভিপিএন ইউজ করে?

ভিপিএন ইউজ করে আমরা খুব সহজে কোন নিষিদ্ধ ওয়েবসাইট ব্লক ওয়েবসাইট বা মোবাইল অ্যাপ্লিকেশন নিজেদের মোবাইল বা কম্পিউটারে ব্যবহার করতে পারি। বেশিরভাগ লোকেরাই ফ্রি ভিপিএন ব্যবহার করে ব্লক ওয়েবসাইট গুলোতে প্রবেশ করে। আপনার নিজের নেটওয়ার্কের আইপি এড্রেস খুব সহজে বদল করে অন্য একটা কান্ট্রির আইপি এড্রেসের রূপান্তর করতে পারবেন ভিপিএন এর সাহায্যে।

আসলে ইন্টারনেটে এমন কিছু ওয়েবসাইট রয়েছে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে বন্ধ রয়েছে, মূলত সেই ওয়েবসাইটগুলোতে প্রবেশ করার জন্য ভিপিএন ব্যবহার করা হয়।

উদাহরণস্বরূপ বলতে পারি-চায়নাতে ফেসবুক ইউটিউব twitter এসব বড় বড় ওয়েবসাইট গুলো ব্লক করা আছে। এটি বুঝতে একটি উদাহরণের সাহায্য নেয়া যাক-ধরুন আপনি আপনার বাড়ি ফেরা ফ্লাইট এর জন্য বিমানবন্দরে অপেক্ষা করছেন, আপনার মনে আছে আপনি একটু গুরুত্বপূর্ণ ব্যাংক পেমেন্ট মিস করেছেন তাই আপনি আপনার বিমানবন্দরের পাবলিক ওয়াইফাই এর সাথে সংযুক্ত করে লেনদেন করা শুরু করেন। সবকিছু ঠিকঠাক হয় এবং লেনদেন সম্পূর্ণ হয়।

কিছু কিছুদিন পর আপনি হত বন্ধ হয়ে লক্ষ্য করলেন, আপনার ব্যাংক একাউন্ট সাইবার আক্রমণের শিকার হয়েছে। এবং আপনার একাউন্ট থেকে মোটা অংকের টাকা সরিয়ে ফেলা হয়েছে।

ব্যাংক কর্তৃপক্ষের সাথে যোগাযোগ করে জানতে পারলেন যে বিমানবন্দরে আপনার অ্যাকাউন্ট হ্যাক হয়েছে, তখন আপনি বুঝতে পারলেন যে আপনি যে পাবলিক ওয়াইফাই ব্যবহার করছিলেন তারা হয়তো আপনার এই সমস্যার সৃষ্টি করেছে। এই মুহূর্তে আপনি ভাবছেন আপনার ব্যাঙ্ক ট্রান্সফার যদি কোন ভাবে হ্যাকারের চোখ এড়াতে পারতো, তাহলে হয়তো বা সাইবার আক্রমণের শিকার হতেন না আপনি?

তাই ব্যাংক কর্মকর্তারা ভবিষ্যতে লেনদেনের জন্য একটি ভিপিএন ব্যবহার করার পরামর্শ দেন। বিশেষ করে একটি ওপেন বা পাবলিক নেটওয়ার্কের সাথে সংযোগ স্থাপন করা হয়।

আসুন বোঝার চেষ্টা করি হ্যাকার কিভাবে কাজে লাগিয়েছিল ওই ব্যক্তির ব্যাংক অ্যাকাউন্ট হ্যাক করার জন্য। এ প্রক্রিয়াই আপনার কম্পিউটার ইন্টারনেট সার্ভিস প্রোভাইডারের সাথে সংযোগ স্থাপন করে। যা ইন্টারনেটের এক্সেস প্রদান করে, আপনি আপনার আইপি ঠিকানা ব্যবহার করে ব্যাংকের সার্ভারে তথ্য পাঠান।

ভি পি এন কিভাবে কাজ করে?

ইন্টারনেট প্রটোকল এড্রেস বা আইপি অ্যাড্রেস একটি অনন্য অ্যাড্রেস, যা একটি নির্দিষ্ট ডিভাইসের পরিচয় বহন করে থাকে, সেটা ল্যাপটপ হোক বা ইন্টারনেটের সাথে সংযুক্ত স্মার্টফোন ই হোক।

যখন এই তথ্যগুলো পাবলিক নেটওয়ার্কের মধ্যে যাই তখন তা পরোক্ষভাবে লক্ষ্য করে এবং নেটওয়ার্ক ট্রাফিক দেখে তাতে বাধা দেয়ার চেষ্টা করে, এটি একটি সাইবার আক্রমণ যেখানে হ্যাকাররা নিজেদের পরিচয় গোপন রেখে আপনার ব্যাংকের তথ্য সংগ্রহ করে। আরো অনেক সময়ই এই ধরনের আক্রমণ এ বা অর্থ আদান-প্রদানের সময় তথ্য চুরি হয়ে যাওয়া সম্ভাবনা থাকে।

এইখানে লক্ষ্য করা যায় চুরি কৃত তথ্যগুলো ভিকটিমের ইউজারনেম কিংবা পাসওয়ার্ড, এবং অন্যান্য ব্যক্তিগত তথ্য।

এই ধরনের একটি অনিরাপদ সংযোগ আপনার আইপি অ্যাড্রেস এবং ব্যাংকের বিবরণ হ্যাকার এর কাছে প্রকাশ করে যখন এটি পাবলিক নেটওয়ার্কের মধ্য দিয়ে যাই। আর তাই আপনি ভিপিএন এর মাধ্যমে আপনার লেনদেন নিরাপদে করতে সক্ষম হবেন। এখন ধরুন আপনার ব্যাংক লেনদেন এমন একটি টানেলের মধ্যে দিয়ে ঘুরছে যা হ্যাকারের কাছে অদৃশ্য।সেক্ষেত্রে হ্যাকার এই লেনদেন শনাক্ত করতে সক্ষম হবে না, আর একটি vpn ঠিক এই কাজটি করে থাকে।

vpn আপনার ডিভাইস এবং ইন্টারনেটের মধ্য দিয়ে একটি সুরক্ষিত টানেল তৈরি করে। আসুন এক নজরে দেখি নেয়া যাক কিভাবে ভিপিএন ইউজ করতে হয়।

ভিপিএন ব্যবহার করার জন্য প্রথম ধাপ হল সফটওয়্যার ভিত্তিক প্রযুক্তি ইন্সটল করা যা ভিপিএন সফটওয়্যার নামে পরিচিত। ভিপিএন ইউজারের ল্যাপটপ বা স্মার্টফোনের ক্লাইন্ট একটি সুরক্ষিত সংযোগ স্থাপিত করে দেয়। ভিপিএন এর ক্লায়েন্ট ওয়াইফের সাথে সংযোগ করে এরপর ইউজারের তথ্য ভিপিএন ইন্ক্রিপ্ট করে। পরবর্তীতে ভিপিএন ক্লায়েন্ট পাবলিক নেটওয়ার্ক এর মধ্যে দিয়ে একটি ভিপিএন টানেল স্থাপন করে।

যা ভিপিএন সার্ভারের সাথে সংযোগ করে। ভিপিএন চ্যানেল ইউজারের তথ্য হ্যাকারের হাত থেকে রক্ষা করে একটি ব্যক্তিগত ও সুরক্ষিত সংযোগ তৈরি করতে ভিপিএন এর সার্ভারে ইউজারের আইপি অ্যাড্রেস এবং প্রকৃত স্থান পরিবর্তন করা হয়।

অবশেষে ভিপিএন সার্ভার ইউজারের ব্যাঙ্ক সার্ভার এর সাথে সংযোগ করে, শেষ ধাপে incret করা বার্তাটি একইভাবে ইনক্রিপ্ট করা হয়। ভিপিএন দ্বারা ইউজারের আইপি এড্রেস লুকানো হয় এবং ভিপিএন টেনেল তার মূল্যবান ডাটা হ্যাক হওয়া থেকে রক্ষা করে। এটি ব্যাখ্যা করে কিভাবে ভিপিএন ডেটাকে নামহীন করে এবং সুরক্ষিত রাখে যে সময় এটি পাবলিক নেটওয়ার্কের মধ্যে দিয়ে যায়।

এই বিষয়টি আমাদের কাছে প্রযোজ্য যখন আমরা কোন রিমোট জব করি বা পাবলিক ইন্টারনেটের সাথে সংযোগ করি স্মার্টফোনকে তাহলেও ভিপিএন সবচাইতে নিরাপদ প্রকল্প।

এটি নিরাপদে ইনকেটেড ডাটা ট্রান্সফার করার পাশাপাশি আমাদের অবস্থান গোপন রাখতে সাহায্য করে, আমাদের অঞ্চল ভিত্তি ওয়েবসাইট সামগ্রী তে এক্সেস দেয়ার জন্য ভিপিপিন সার্ভার গুলি অন্য একটি সার্ভারের প্রক্সি হিসেবে কাজ করে। ফলে আপনার প্রকৃত অবস্থান শনাক্ত করা যাবে না দিতেন আপনাকে অন্য একটি দেশের সার্ভারের সুইচ করতে এবং এর মাধ্যমে আপনার অবস্থান পরিবর্তন করতে সক্ষম করেন।

উদাহরণস্বরূপ আপনি ভিপিএন অন করে নেটফ্লিক্সেএ যেকোনো দেশের কনটেন্ট দেখতে পারবেন। যা আপনার দেশের জন্য এভেলেবেল না ও থাকতে পারে।

আবার ধরেন বাংলাদেশে বসে আপনি আমেরিকান কোন ওয়েবসাইটে ভিজিট করতে চাচ্ছেন যেটা বাংলাদেশে হয়তো বা ব্লক করা। তাই আপনি আমেরিকান ভার্চুয়াল লোকেশন ইউজ করে ওয়েবসাইটটি ভিজিট করতে পারবেন।

vpn কত প্রকার এবং কি কি 

ভিপিএনকে মূলত চারটি ভাগে ভাগ করা যায় সেগুলো হলো।

১। ট্রাফিক প্রটোকল টানেল।

২। টানেল টার্মিনেশন পয়েন্ট।

৩। সিকিউরিটি ডেলিভারি টানেল।

৪। রিমোট এক্সেস টানেল।

ভিপিএন ব্যবহারের সুবিধা

১। ভিপিএন ব্যবহার করার সুবিধা হল আপনি ডাটা নিরাপদে আদান প্রদান করতে পারছেন।

২। ভিপিএন ব্যবহার করলে আপনার অবস্থান কেউ ট্রাক করতে পারবে না।

৩। ভিপিএন আপনার আইপি অ্যাড্রেস হাইড করে রাখে অর্থাৎ হ্যাকারদের কবলে পড়া সম্ভব না নাই

৪। আপনার ইন্টারনেট সংযোগ প্রদানকারী আইএসপি থেকে ফুল স্পিড পাবেন ভিপিএন ব্যবহার করলে।

৫। ভিপিএন কি আপনি আইএসপিতে ব্লক করা ওয়েবসাইট ভিজিট করতে পারবেন।

এতক্ষণ আমরা আলোচনা করলাম ভিপিএন কি কিভাবে এটি কাজ করে আর কেনই বা আমরা ভিপিএন ব্যবহার করবো। তথা ভিপিএন ব্যবহার করার গুরুত্ব।

vpn এর সুবিধা

তবে ভিপিএন এর মধ্যে যে শুধু ভালো দিকগুলোই রয়েছে ব্যাপারটা কিন্তু এমন না, অনলাইনে অন্য যে সকল জিনিসের মত ভিপিএনও বেশ কিছু খারাপ দিক রয়েছে। চলুন জেনে নেয়া যাক ভিপিএন ব্যবহার করার অসুবিধা গুলো কি কি।

১। অধিকাংশ ভিপিএন সার্ভিস পেইড হওয়ার কারণে অনেকের জন্য ব্যবহার করা অসুবিধা জনক হয়ে যায়।

২। বেশ কিছু পাইরেটেড ভিপিএন অ্যাপ আপনার ডিভাইজের বিভিন্ন পারমিশন নিয়ে তথ্য হাতিয়ে নিতে পারেন

৩। আপনার ইন্টারনেটে করা যাবতীয় কাজ ভিপিএন অ্যাপ গুলো খুব সহজে ট্রাক করতে পারে।

৪। এটি সম্পূর্ণরূপে ইন্টারনেট নির্ভর ইন্টারনেট ছাড়া ভিপিএন ব্যবহার করা যায় না

৫। ভিপেন কানেক্ট করাই এডসেন্স সেবা গ্রহণ করতে সমস্যা দেখা দিতে পারে।

এবার নিশ্চয়ই আপনার মনের মধ্যে প্রশ্ন জাগছে কিভাবে আমরা সেভ থাকতে পারি ভিপিএন এর ক্ষতিকর দিকগুলো থেকে।

VPN

যেহেতু সচরাচর আমরা অন্য দেশের ব্লক ওয়েবসাইট ভিজিট করতেই ভিপিএন ব্যবহার করে থাকি সে ক্ষেত্রে নিরাপত্তা একান্তই খেয়াল রাখতে হবে। সর্বদা আপনাকে সতর্ক থাকতে হবে এবং আপনার ডিজিটাল নিরাপত্তা গুলো রক্ষা করতে হবে। যদি আপনি সাইবার অপরাধীদের থেকে আপনার কম্পিউটার ল্যাপটপকে রক্ষা করতে চান।

আই এস পি দিয়ে ব্লকের কারণেই আমরা ওই ইন্টারনেট কানেকশন ব্যবহার করে কোন ব্লক ওয়েবসাইট ভিজিট করতে পারিনা।

পাশাপাশি এটাও জেনে রাখা উচিত যে বাইরের দেশের ওয়েবসাইটগুলো শুধুমাত্র ওই দেশের মানুষের জন্যই তৈরি করা হয়ে থাকে। তবুও নানান কারণে বিভিন্ন সময় আমাদেরও সেই সব ওয়েবসাইট ভিজিট করার প্রয়োজন পড়ে, ঠিক সেই মুহূর্তে আমরা প্রয়োজনের তাগিদে ভিপিএন ব্যবহার করব। যেহেতু এখানে নিরাপত্তার ব্যাপারে বেশ কড়া প্রশ্ন রয়েছে সেহেতু আমাদের প্রয়োজন এর বাইরে গিয়ে ভিপিএন নিয়ে অতিরিক্ত মাতামাতি করা উচিত নয়।

সেরা কিছু ভিপিএন

চলুন দেখে নেয়া যাক সেরা কিছু ভিপিএন। পোষ্টের এ পর্যায়ে সেরা কিছু ভিপিএন এর নাম উল্লেখ করছি। তবে আগেই বলে রাখা ভালো এগুলোর সবগুলোই ভালো পাশাপাশি খারাপ দিক ও আছে।

১। এক্সপ্রেস vpn

২। প্রাইভেট ইন্টারনেট এক্সেস

৩। নর্দ vpn

৪। সুপার ভিপিএন

৫। সাইবার ঘোস্ট vpn

৬। এটলাস্ট ভিপিএন

৭। আইপি ভ্যানিশ

৮। প্রাইভেট ভিপিএন

৯। viber vpn

১০। টাচ vpn

একটি ভার্চুয়াল প্রাইভেট নেটওয়ার্ক আপনাকে একটি পাবলিক নেটওয়ার্ক থেকে প্রাইভেট নেটওয়ার্ক তৈরি করে অনলাইনে গোপনীয়তা রক্ষা করে। আপনার ইন্টারনেট পরিষেবা প্রদানকারীদের থেকে আপনার ওয়েবসাইট সার্ভেং লুকিয়ে রাখতে এবং ডাটা কে নিরাপদ এ রাখতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।

কিন্তু আমরা বাঙালিরা ফ্রিতে ইউজ করতে গিয়ে কোন যথাযথ গবেষণা না করেই, নিজেকে একটি অনিরপদ ভিপিএন এ যুক্ত করে ফেলি। যাক ক্রমাগত আমাদের ডেটা সংগ্রহ করে কোন সতর্কতা ছাড়াই।

তাই সাবধান থাকতে হবে যেন আপনার যথাযথভাবে রক্ষা হয়। আশা করছি ভিপিএন সম্পর্কে যে কমন প্রশ্নের উত্তর আপনারা এই পোষ্টের মাধ্যমে পেয়ে গিয়েছেন। পোস্টটি পুরো পড়ার জন্য আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ।

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button
error: Content is protected !!