লিনাক্স কী? লিনাক্স অপারেটিং সিস্টেমের সুবিধাসমূহ
বাংলাদেশে বহুল ব্যবহৃত এবং জনপ্রিয় কম্পিউটারের অপারেটিং সিস্টেম হলো উইন্ডোজ। তবে, বহির্বিশ্বে লিনাক্স কার্নেল অপারেটিং সিস্টেমেবিশব্জনপ্রিয়তা রয়েছে। ইউজার চাইলেই লিনাক্স কে প্রয়োজন অনুযায়ী কাস্টোমাইজ করে নিতে পারে। এছাড়াও লিনাক্স এর বেশ কিছু সুবিধা রয়েছে। লিনাক্স কী? লিনাক্স এর ইতিহাস, কাঠামো, সুবিধা সহ বিস্তারিত আলোচোনা থাকছে আজকের ব্লগে।
লিনাক্স কী?
লিনাক্স হলো কার্নেল ভিত্তিক ওপেন সোর্স অপারেটিং সিস্টেম। একে বিনামূল্যে ব্যবহার এবং প্রয়োজন অনুযায়ী কাস্টোমাইজ করা যায়। এটি মূলত ইউনিক্স অপারেটিং সিস্টেমের অন্যতম জনপ্রিয় এবং বহুল ব্যবহৃত ভার্শন। Linux, GPL v2 লাইসেন্সের অধীনে সাধারণ ইউজারদের জন্য ইন্টারনেটে পাওয়া যায়।
Linux শুধুমাত্র পার্সোনাল কম্পিউটারে ব্যবহার করার জন্য তৈরি করা হয়েছিল। পরবর্তীতে সার্ভার, মেইনফ্রেম কম্পিউটার এবং সুপার কম্পিউটারেও ব্যবহার করা হয়।
আরও পড়ুন-প্রটোকল কি? প্রটোকলের কাজ কি?
Linux এর ইতিহাস
লিনাস টোরভাল্ডস ১৯৯১ সালে লিনাক্স তৈরী করেন। তিনি ইউনিক্স ৩৮৬ ইন্টেল কম্পিউটার কিনতে চেয়েছিলেন। আর সেই কম্পিউটারের জন্যই লিনাক্স কার্নেল বানিয়েছিলেন। Linux কে UNIX এর ক্লোন বলা হলেও বর্তমান লিনাক্সের সাথে এর মিল নেই।
লিনাস ১৯৯১ সালের সেপ্টেম্বরে লিনাক্সের প্রথম ভার্সন ০.০১ ইন্টারনেটে রিলিজ করেন। ১৯৯৬ সালে ইনফোওয়ার্ল্ড ট্রেড ম্যাগাজিন থেকে রেডহ্যাট সফটওয়্যারের Linux সেরা অপারেটিং সিস্টেমের পুরস্কার লাভ করে। Linux ডেভেলপের পেছনে অনেক ডেভেলপার রয়েছে। এটি ডেভেলপ করতে অনেক বছর সময় লেগেছে। এত মানুষের সাথে পৃথকভাবে যোগাযোগ করা সম্ভব না হওয়ায়, লিনাক্সের লাইসেন্সটি GPL v2 এর অধীনে রাখা হয়েছে।
Linux এর ভার্সন
নতুন ইউজার থেকে শুরু করে অ্যাডভান্স ইউজার পর্যন্ত সবার জন্য বিভিন্ন ভার্সন লিনাক্সে এভেইলেবল। Linux এর প্রধান কিছু ভার্সন হলো –
- উবুন্টু লিনাক্স
- লিনাক্স মিন্ট
- কালি লিনাক্স
- আর্ক লিনাক্স
- ফেডোরা
- OpenSUSE
- মাঞ্জারো
- এন্টারগোস
Linux এর কাঠামো
Linux মোট ৫ টি অংশ নিয়ে গঠিত। অংশ গুলো হলো-
- কার্নেল
- সিস্টেম লাইব্রেরি
- শেল
- হার্ডওয়্যার
- ইউটিলিটিস
লিনাক্স কিভাবে কাজ করে?
লিনাক্স এর কার্নেল, অ্যাপ্লিকেশন সফটওয়্যারকে হার্ডওয়্যার অ্যাক্সেস করতে দেয়। লিনাক্স কার্নেলের, হার্ডওয়্যারের উপর সম্পূর্ণ অধিকার থাকে। যখন কোন সফটওয়্যার ইউজের জন্য কোন হার্ডওয়্যারের প্রয়োজন হয়, তখন এটি অপারেটিং সিস্টেমে তার রিকোয়েস্ট পাঠায়। অপারেটিং সিস্টেমের সাহায্যে কার্নেল সেই অ্যাপ্লিকেশনটি রান করার জন্য প্রয়োজনীয় হার্ডওয়্যার সরবরাহ করে।
লিনাক্স এর সুবিধা
লিনাক্স অপারেটিং সিস্টেমের সুবিধাগুলো নিচে দেওয়া হল –
১। লিনাক্স অপারেটিং সিস্টেমের সবচেয়ে বড় সুবিধা হল এটি একটি ওপেন সোর্স অপারেটিং সিস্টেম। যার কারণে এর সোর্স কোড সহজেই ইন্টারনেটে পাওয়া যায়।
২। লিনাক্স বর্ণভিত্তিক ও চিত্রভিত্তিক অপারেটিং সিস্টেম।
৩। প্রয়োজন মতো কাস্টমাইজ করা যায়।
৪। লিনাক্সের নিরাপত্তা ব্যবস্থা অন্যান্য অপারেটিং সিস্টেমের তুলনায় অনেক ভালো। কারণ ইউজারের এটিতে অ্যাক্সেস করার জন্য একটি লগইন আইডি এবং পাসওয়ার্ডের প্রয়োজন হয়। এছাড়াও নিরাপত্তার জন্য লিনাক্স অপারেটিং সিস্টেমের কোনো ধরনের অ্যান্টিভাইরাসের প্রয়োজন পরে না।
৫। লিনাক্সের আরেকটি বড় সুবিধা হল, যে কোন ইউজার সহজেই সম্পূর্ণ ফ্রিতে ইন্টারনেট থেকে এটি ডাউনলোড করে ইউজ করতে পারে । লিনাক্সের প্রায় সব ভার্শন বিনামূল্যে অর্থাৎ ব্যবহারকারীকে এটি ইউজ করতে কোন টাকা খরচ করতে হয় না ।
৬। ইন্টারনেট হতে সহজেই লিনাক্স অপারেটিং সিস্টেম ডাউনলোড করা যায়।
৭। নেটওয়ার্ক সাপোর্ট সার্ভিস উইন্ডোজ অপারেটিং সিস্টেমের তুলনায় অধিকতর শক্তিশালী।
৮। এটির সিকিউরিটি ও গ্রাফিক্স অত্যন্ত শক্তিশালী।
৯। লিনাক্সে যেকোনো সফটওয়্যার খুব দ্রুত এবং সহজে আপডেট করা যায়।
১০। এটি সব ধরনের প্রোগ্রামিং ল্যাঙ্গুয়েজ সাপোর্ট করে যেমন- C, C++, Java, Python, এবং Ruby ইত্যাদি।
১১। এতে ব্যবহারকারীর ডেটা পার্সোনাল থাকে।
১২। লিনাক্সের কাজ করার ক্ষমতা অনেক বেশী । এতে অনেক লোক এক সাথে কাজ করতে পারে এবং এটি সহজে হ্যাং হয়ে যায় না
১৩। অন্যান্য অপারেটিং সিস্টেমের তুলনায় লিনাক্স অনেক বেশী স্থিতিশীল। অর্থাৎ কম্পিউটার সিস্টেম চালানোর সময় বারবার রিবুট করার প্রয়োজন হয় না।
Linux এর অসুবিধা
লিনাক্স অপারেটিং সিস্টেমের অসুবিধাগুলো নিচে দেওয়া হল –
১। লিনাক্স অপারেটিং সিস্টেম শেখা বেশ কঠিন। ইউজ করা সহজ নয়, কারণ এটি ইউজ করার জন্য টেকনিক্যাল নলেজ থাকা প্রয়োজন।
২। হাই রেজুলেশনের গেম চালানোর ক্ষেত্রে লিনাক্সে সমস্যা হয়।
৩। লিনাক্স কোন ধরনের কাস্টমার সাপোর্ট দেয় না।
৪। লিনেক্সে হাইবারনেশন ফিচার নেই।
৫। লিনাক্সে যে কোন ধরনের বাগ এবং ত্রুটি খুঁজে বের করা অনেক কঠিন।
৬। সব ড্রাইভার লিনাক্স OS সাপোর্ট করে না।
Linux Vs Windows
লিনাক্স ও উইন্ডোজ অপারেটিং সিস্টেমের তুলনামূলক বৈশিষ্ট্যসমূহ হলো :
১। উইন্ডোজ একটি গ্রাফিক্যাল ইন্টারফেস অপারেটিং সিস্টেম। অন্যদিকে লিনাক্স একটি বর্ণভিত্তিক ও চিত্রভিত্তিক অপারেটিং সিস্টেম।
২। লিনাক্স ওপেন সোর্স কোডভিত্তিক একটি অপারেটিং সিস্টেম। কিন্তু উইন্ডোজ ওপেন সোর্স নয়।
৩। যে কেউ লিনাক্সের পরিবর্তন আনতে পারবে। কিন্তু উইন্ডোজে তা নয়।
৪। ইন্টারনেট থেকে লিনাক্স অপারেটিং সিস্টেম বিনামূল্যে ডাউনলোড করা যায়। অন্যদিকে উইন্ডোজ বা অন্য কোনো অপারেটিং সিস্টেমের ক্ষেত্রে যা সম্ভব নয়।
৫। লিনাক্সের নেটওয়ার্ক সাপোর্ট সার্ভিস উইন্ডোজ অপারেটিং সিস্টেমের তুলনায় অধিকতর শক্তিশালী।
৬। উইন্ডোজ অপারেটিং সিস্টেমের চেয়ে লিনাক্স অপারেটিং সিস্টেমের সিকিউরিটি ও গ্রাফিক্স অত্যন্ত শক্তিশালী।
পরিশেষে
বর্তমান বিশ্বে জনপ্রিয়তার দিকে এগিয়ে চলা একটি অপারেটিং সিস্টেম হচ্ছে লিনাক্স। লিনাক্স নিয়ে কোন প্রশ্ন অথবা মতামত থাকলে কমেন্ট করুন।
প্রশ্নোত্তর
১। লিনাক্স কী?
উত্তরঃ লিনাক্স হলো কার্নেল ভিত্তিক ওপেন সোর্স অপারেটিং সিস্টেম।
২। লিনাক্স এর জনক বা আবিষ্কারক কে?
উত্তরঃ লিনাক্স এর জনক বা আবিষ্কারক লিনাস টোরভাল্ডস।
৩। কার্নেল কী?
উত্তরঃ কার্নেল কে লিনাক্সের হার্ট বলে। কারণ সব ধরনের প্রধান কাজ এই কার্নেলের মাধ্যমে সম্পন্ন হয়।
৪। সিস্টেম লাইব্রেরি কী?
উত্তরঃ সিস্টেম লাইব্রেরি মূলত অপারেটিং সিস্টেমের কার্যকারিতা বাস্তবায়নে ব্যবহৃত হয়। বর্তমানে লিনাক্সের সবচেয়ে বেশি ব্যবহৃত সিস্টেম লাইব্রেরিটি হল Glibc (GNU C লাইব্রেরি)।
৫। হার্ডওয়্যার কী?
উত্তরঃ যে সমস্ত ডিভাইস দ্বারা কম্পিউটার সিস্টেম কাজ করে সেগুলোকে হার্ডওয়্যার বলা হয়। উদাহরণ- RAM, ROM, হার্ড ডিস্ক ড্রাইভ, প্রিন্টার, স্ক্যানার ইত্যাদি।
৬। শেল কী?
উত্তরঃ শেল হল কমান্ড ইন্টারপ্রেটার। শেল প্রথমে কমান্ডটি পড়ে এবং পরে প্রোগ্রাম চালানোর রিকোয়েস্ট পাঠায়।
৭। ইউটিলিটিস কী?
উত্তরঃ ইউটিলিটি হল এমন একটি প্রোগ্রাম, যা ইউজারকে একটি অপারেটিং সিস্টেমের সর্বাধিক কার্যকারিতা প্রদান করে।
৮। হাইবারনেশন ফিচার কী?
উত্তরঃ হাইবারনেশন কাজের গতিকে ত্বরান্বিত করে। যার ফলে ব্যবহারকারীর সময় অপচয় কম হয়।