ফেসবুক টিপস

ফেসবুক ব্যবহারে নিরাপত্তা অবলম্বন

বর্তমানে অনলাইনের যুগে ফেসবুক ব্যবহার করে না এমন মানুষ খুব কমই আছে। কমবেশি অনেকেই ফেসবুকের সাথে সংযুক্ত। ফেসবুক ব্যবহার করলেও, আমাদের অনেকেরই হয়তো ফেসবুক সিকিউরিটি সম্পর্কে অতটা ধারনা নেই। ফেসবুকে কিভাবে একটি নিরাপদ আইডি তৈরি করতে হয় অথবা কিভাবে ফেসবুকে নিজের একাউন্ট আরো সুরক্ষিত করা যায়।এসব নিয়ে আমরা কেউই বেশি একটা মাথাঘামায় না।

কিন্তু এটির নিরাপত্তার ব্যাপারে আমাদের একটু সতর্ক হওয়া উচিত। কেননা, তাছাড়া যে কেউ খুব সহজে আমাদের একাউন্টটি হ্যাক করতে পারে। যার ফলে আমাদের ব্যক্তিগত তথ্য গুলো তাদের দখলে চলে যাবে। আর সেই তথ্য গুলো দিয়ে তাড়া যা ইচ্ছে তাই করতে পারে। এমন কি আমাদের ক্ষতি সাধনও করতে পারে। আপনি নিশ্চয় সেটি কখনই আশা করবেন না!

ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের সাইবার ক্রাইম বিভাগের উপ-পুলিশ কমিশনার নাজমুল ইসলাম বলছেন, “প্রতিদিন ফেসবুক সম্পর্কিত গড়ে প্রায় পাঁচশো অভিযোগ আমরা পাই। এর বেশিরভাগই একাউন্ট হ্যাক হয়ে গেছে, প্রবেশ করা যাচ্ছে না এ ধরণের।”

এখন তাহলে প্রশ্ন হলো, এতে আমার কি করণীয় বা আমি কি করতে পারি? চিন্তার কিছু নেই, এই বিষয় নিয়েই আজ বিস্তারিত ভাবে আলোচনা করা হবে।

ফেসবুক আইডি নিরাপদ রাখার জন্য আপনাকে কিছু নিয়ম অনুসরণ করতে হবে। কিছু সহজ-সরল প্রক্রিয়া অবলম্বন করার মাধ্যমে আপনি অপনার ফেসবুক আইডি নিরাপদ রাখতে পারেন। হ্যাকারের হাত থেকে রক্ষা করতে পারেন আপনার গুরুত্বপূর্ণ তথ্য। আর কথা না বাড়িয়ে চলুন শুরু করা যাক। কিভাবে কি করতে হবে সে সম্পর্কে নিচে নির্দেশাবলী দেওয়া হলোঃ

ফেসবুক পাসওয়ার্ড

যেকোন সোসাল মিডিয়া সাইটের নিরাপত্তা অনেকাংশে নির্ভর করে পাসওয়ার্ডের উপর। অর্থাৎ পাসওয়ার্ড যদি শক্তিশালি হয় তবে আইডি অনেকটায় নিরাপদ হয়। তাই আমাদের মাথায় রাখতে হবে পাসওয়ার্ড ব্যবহারের দিকটি। প্রথমেই আমাদের ফেসবুক পাসওয়ার্ডের ব্যাপারে সতর্ক হতে হবে।

অনেকেই পাসওয়ার্ডে নিজের নাম, প্রিয় জনের নাম, ফোন নম্বর বা ৮ ডিজিটের কোন সংখ্যা ইত্যাদি ব্যবহার করে। কিন্তু এটি করা কোন মতেই ঠিক না। কেননা এতে করে পাসওয়ার্ডের নির্ভরযোগ্যতা থাকে না। এটি ঝুকিপূর্ণ। ফেসবুকে সহজ পাসওয়ার্ড ব্যবহার না করে তুলনা মুলক কঠিন করায় শ্রেয়। অর্থাৎ ফেসবুক পাসওয়ার্ড ব্যবহারের ক্ষেত্রে স্টোং পাসওয়ার্ড ব্যবহার নিশ্চিত করা।

নাম্বর, সিম্বল, বড় হাতের অক্ষর, ছোট হাতের অক্ষর এগুলো সব কিছুর মিশ্রণের সমন্ময়ে পাসওয়ার্ড তৈরি করতে হবে। এ ধরনের শক্তিশালী পাসওয়ার্ড আপনার ফেসবুক অ্যাকাউন্টের নিরাপত্তা বৃদ্ধি করবে। এই রকম কঠিন পাসওয়ার্ড ব্যবহারে আইডির নিরাপত্তার নির্ভর যোগ্যতা বেশি থাকে। যার ফলে হ্যাকারদের কাছে ফেসবুক এ্যাকায়ুন্টটি হ্যাক করা অনেকটায় কঠিন হয়।

লগইন  এ্যাপ্রুভালস

দ্বিতীয়ত, লগইন এ্যাপ্রুভালস ব্যবহার করতে হবে। এটি সাধারনত তিন ধরনের হয়ে থাকে। মেসেজ, কী ও সফটওয়্যার ব্যবহার। এটি চালু থাকলে পাসওয়ার্ড জানতে পারলেও হ্যাকার আইডিতে প্রবেশ করতে পারবে না। কারণ লগইন করার সাথে সাথে আইডির মালিকের মোবাইলে ফেসবুক থেকে কনফার্মেশন কোড পাঠানো হয়। আর ঐ কোড সাবমিট করার আগ পর্যন্ত প্রফাইলে প্রবেস অসম্ভব।

আবার আপনি টেক্সট মেসেজ নটিফিকেশন অ্যাকটিভ করতে পারেন। এটি করার ফলে আপনার আইডি যদি অন্য কোন ডিভাইস থেকে লগইন করা হয় তবে আপনার কাছে নটিফিকেশন চলে যাবে। আপনি তখন সহজেই বুঝতে পারবেন অন্য কেউ আপনার আইডি লগইন করছে কিনা। তৎক্ষনাত আপনি পাসওয়ার্ড পরিবর্তন করতে পারেন।

অনেক সময় দেখা যায়, একটি ডিভাইসে একাধিক ব্যাক্তি ফেসবুক ব্যবহার করে থাকে। আপনার ঘটনাও যদি কিছুটা এই রকম হয় তবে সচেতন মানুষ হিসেবে আপনার কাজ হবে ব্যবহারের পর অবশ্যই লগআউট করা।

থার্ড পার্টি অ্যাপ্লিকেশন

আমরা অনেক সময় ফেসবুকের মাধ্যমে অন্য কোনো অ্যাকাউন্ট ও অ্যাপ্লিকেশন লগইন করি। ঐ অ্যাপ্লিকেশনটি কতটুকু নিরাপদ সেটা আমাদের যাচায় করতে হবে। যদি যতেষ্ঠ নিরাপদ হয় তবে ঠিক আছে। কিন্তু যদি না হয় তবে হ্যাকার আমাদের সব তথ্য হাতিয়ে নিতে পারে।

যখন কোন তৃতীয় ব্যক্তির দ্বারা অ্যাপ্লিকেশন পরিচালনা করা হয় তখন তাকে থার্ড পার্টি এ্যাপ বলে। এসব এ্যাপ ব্যবহার না করায় শ্রেয়।এক্ষেত্রে এই অ্যাপ্লিকেশনগুলোর ব্যবহার অতি জরুরি হলে, ব্যবহারের পর সেগুলো রিমুভ করে ফেলতে পারেন। আপনাকে এগুলো ফেসবুকেরর সেটিং থেকে রিমুভ করতে হবে। এটি করার ফলে হ্যাকার আর তথ্য চুরি করতে পারবে না। তাহলে ডাটা হ্যাক হয়ে যাওয়ার ভয়ও থাকবে না।

ফ্রেন্ড রিকুয়েস্ট এক্সেপ্ট

অচেনা কারো ফ্রেন্ড রিকুয়েস্ট এক্সেপ্ট করা ঠিক না। ফেসবুকের পরামর্শ অনুযায়ি, যাকে আপনি চেনেন না তাকে বন্ধু হিসাবে গ্রহণ করবেন না। কারণ হ্যাকার মিথ্যা পরিচয় দিয়ে আপনার সাথে ফ্রেন্ডশীপ করতে পারে। তারপর আপনার টাইম লাইনে স্প্যাম, আপত্তি কর পোস্ট বা হ্যাকিং এর মেসেজ পাঠাতে পারে। এমন কি আপনার তথ্য সংগ্রহ করে আপনাকে ব্ল্যাক মেইল করতে পারে। নিশ্চয় তা আপনি কখনোই আশা করবেন না। তাই এসব সমস্যা এড়াতে অপরিচিত কারোর ফ্রেন্ড রিকুয়েস্ট এক্সেপ্ট থেকে বিরত থাকুন।

সন্দেহজনক লিংক

আমরা ফেসবুকে নানা রকমের লিংকের সাথে পরিচিত হই। তবে মাঝে মাঝে কিছু সন্দেহজনক লিংকের সম্মুখিন হই। যেগুলোতে আমাদের কখনোই প্রবেশ করা উচিত নয়। যদি কোনো বন্ধুর কোনো পোস্ট বা মেসেঞ্জারের বার্তা তার স্বাভাবিক আচরণের সাথে সামঞ্জস্য না হয়। তবে সেখানে প্রবেশ করাও ঠিক না। সবচেয়ে ভালো হয় সেটাকে এড়িয়ে চলা বা সেটাতে ক্লিক না করা।

আবার মেসেঞ্জারে কোন বন্ধু যদি অহেতুক কোন লিংক পাঠায়। তবে উত্তম কাজ হবে, তার সাথে আগে আলাদা ভাবে কথা বলে তারপর সেটাতে প্রবেশ করা। আরো নানা ধরনের সন্ধেহজনক লিংক আমরা সচরাচর দেখতে পাই। এক্ষেত্রে ফেসবুকের পরামর্শ হলো যেখানে এরকম সন্ধেহমূলক কিছু দেখা যায় সেই আইডিতে রিপর্ট করা। যাতে করে ফেসবুক উপযুক্ত ব্যবস্থা নিতে পারে।

ইদানিং হাজার হাজার মানুষ নিজস্ব তথ্য চুরি বা হ্যাক হ্যাক হয়ে যাওয়ার সম্মুখিন হচ্ছে। বিশেষ করে ফেসবুকের তথ্য বা ফেসবুক আইডি হ্যাক হওয়ার কথা বেশি শোনা যায়। নিরাপত্তা জনীত অসাবধানতা এর প্রধান কারণ। এটি আমাদের সাথেও ঘটতে পারে। আপনার সাথেও ঘটতে পারে। এক্ষেত্রে আপনার ফেসবুক নিরাপত্তা সংক্রান্ত কতোগুলো নিয়ম অনুসরণ করা একান্ত প্রয়োজন। উপরের নিয়মগুলো পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে অনুসরণ করার মাধ্যমে আপনি আপনার আইডিকে নিরাপদ রাখতে পারেন। আপনার প্রয়োজনীয় তথ্য গুলোকে হ্যাক হওয়ার হাত থেকে রক্ষা করতে পারেন।

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button
error: Content is protected !!