কম্পিউটারের বিভিন্ন অংশের নাম ও ছবি: হার্ডওয়্যার পরিচিতি ও তাদের কাজ
আধুনিক প্রযুক্তির এই যুগে কম্পিউটার আমাদের জীবনের এক অপরিহার্য অংশ হয়ে উঠেছে। অফিস, শিক্ষা, ব্যবসা থেকে শুরু করে বিনোদন পর্যন্ত সর্বত্র এর ব্যবহার লক্ষণীয়। কিন্তু আপনি কি জানেন কম্পিউটার আসলে কী এবং এর বিভিন্ন অংশ কীভাবে কাজ করে?
বিশ্বখ্যাত কম্পিউটার হার্ডওয়্যার বিশেষজ্ঞ ও টেক বিশ্লেষক ড. মার্ক পেপারমাস্টার (CTO, AMD) তার গবেষণায় বলেছেন, আধুনিক কম্পিউটিংয়ের কার্যকারিতা সম্পূর্ণভাবে নির্ভর করে প্রতিটি হার্ডওয়্যার অংশের সঠিক সমন্বয়ের উপর। এই আর্টিকেলে আমি কম্পিউটারের বিভিন্ন অংশের নাম ও ছবি, কাজ ও বাস্তব ব্যবহার বিস্তারিতভাবে ব্যাখ্যা করব, যাতে আপনি কম্পিউটার সম্পর্কে আরও পরিষ্কার এবং গভীর ধারণা পেতে পারেন।
কম্পিউটার কি এবং কম্পিউটার কাকে বলে?
কম্পিউটার কি? এই প্রশ্নের উত্তর অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। কম্পিউটার হলো একটি ইলেকট্রনিক যন্ত্র, যা দ্রুত ও নির্ভুলভাবে বিভিন্ন ধরনের গাণিতিক ও যৌগিক সমাধান করতে পারে এবং তথ্য গ্রহণ করে বিভিন্ন প্রক্রিয়ার মাধ্যমে তা বিশ্লেষণ ও উপস্থাপন করে।
Computer শব্দটি এসেছে গ্রিক শব্দ “Compute” থেকে, যার বাংলা অর্থ হলো গণনা করা। কম্পিউটার শব্দের অর্থ গণনাকারী বা হিসাবকারী যন্ত্র। তবে বর্তমানে কম্পিউটার শুধুমাত্র গণনার কাজেই সীমাবদ্ধ নয়, বরং প্রায় সকল ধরনের কাজে এটি ব্যবহৃত হয়।
কম্পিউটারের জনক কে?
কম্পিউটারের জনক হলেন ইংরেজ গণিতবিদ, যন্ত্র প্রকৌশলী ও দার্শনিক চার্লস ব্যাবেজ (১৭৯১-১৮৭১), যিনি আধুনিক কম্পিউটারের জনক হিসেবে স্বীকৃত। তিনি ডিফারেন্স ইঞ্জিন ও অ্যানালিটিক্যাল ইঞ্জিন নামে দুইটি যান্ত্রিক কম্পিউটার তৈরির পরিকল্পনা করেছিলেন, যার বৈশিষ্ট্য আজকের কম্পিউটারের ডিজাইনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।
কম্পিউটার কে আবিষ্কার করেন?
চার্লস ব্যাবেজ সর্বপ্রথম ১৮৩০ সালে যান্ত্রিক কম্পিউটারের ধারণা নিয়ে এসেছিলেন এবং তার আবিষ্কৃত যন্ত্রটিকে আধুনিক কম্পিউটারের প্রথম সংস্করণ হিসেবে গণ্য করা হয়। যদিও তিনি তার জীবদ্দশায় সম্পূর্ণ করতে পারেননি, তার উদ্ভাবন করা ডিজিটাল প্রোগ্রামেবল কম্পিউটারের ধারণার ওপর ভিত্তি করেই পরবর্তী সময়ে আধুনিক কম্পিউটার তৈরি করা হয়।

কম্পিউটার কত প্রকার ও কি কি?
কম্পিউটার কত প্রকার? এই প্রশ্নের উত্তর বিভিন্ন দৃষ্টিকোণ থেকে দেওয়া যায়। যুক্তিগত দিক দিয়ে কম্পিউটারকে তিন ভাগে ভাগ করা হয়েছে – অ্যানালগ কম্পিউটার, ডিজিটাল কম্পিউটার এবং হাইব্রিড কম্পিউটার।
ডিজিটাল কম্পিউটার কাকে বলে কত প্রকার ও কি কি?
ডিজিটাল শব্দের উৎপত্তি ডিজিট শব্দ থেকে এবং যে কম্পিউটার সংখ্যা ব্যবহারের মাধ্যমে সমস্যার সমাধান করে তাকে ডিজিটাল কম্পিউটার বলে।
আকার, সক্ষমতা, গতি ইত্যাদির উপর ভিত্তি করে ডিজিটাল কম্পিউটারকে চার প্রকারে ভাগ করা যায়:
- সুপার কম্পিউটার (Super Computer): এটি সবচেয়ে শক্তিশালী, দ্রুতগতিসম্পন্ন এবং ব্যয়বহুল কম্পিউটার যা প্রতি সেকেন্ডে বিলিয়ন বিলিয়ন হিসাব করতে পারে। বৈজ্ঞানিক গবেষণা, পরমাণু গবেষণা, মহাকাশ গবেষণায় ব্যবহৃত হয়।
- মেইনফ্রেম কম্পিউটার (Mainframe Computer): বৃহদাকার মেইনফ্রেম কম্পিউটারের সঙ্গে সহস্রাধিক টার্মিনাল ব্যবহার করা হয় এবং বড় প্রতিষ্ঠান যেমন ব্যাংক, বীমা কোম্পানিতে ব্যবহার করা হয়।
- মিনি কম্পিউটার (Mini Computer): মেইনফ্রেম কম্পিউটারের চেয়ে ছোট আকারের এ কম্পিউটার টার্মিনালের মাধ্যমে একসঙ্গে অনেক ব্যবহারকারী ব্যবহার করতে পারে।
- মাইক্রো কম্পিউটার বা পার্সোনাল কম্পিউটার (Micro/Personal Computer): মাইক্রো কম্পিউটারকে পার্সোনাল কম্পিউটার বা পিসি বলেও অভিহিত করা হয় এবং দৈনন্দিন জীবনের সর্বক্ষেত্রে এর ব্যবহার দেখা যায়।
কম্পিউটারের কয়টি অংশ ও কি কি?
কম্পিউটার সিস্টেমের প্রধান অংশ দুটি – হার্ডওয়্যার ও সফটওয়্যার। সফটওয়্যার ছাড়া কম্পিউটার হার্ডওয়্যার কাজ করে না।
কম্পিউটার হার্ডওয়্যার কাকে বলে?
কম্পিউটার হার্ডওয়্যার হল কম্পিউটারের সেইসব অংশ যেগুলো স্পর্শ করা যায় ও দেখা যায় যেমন মনিটর, মাউস, কিবোর্ড, মাদারবোর্ড, সিপিইউ ইত্যাদি।
হার্ডওয়্যার ছাড়া কম্পিউটারের কোন অস্তিত্ব নেই এবং এই সমস্ত হার্ডওয়্যার এর সাহায্যে কম্পিউটার বিভিন্ন কাজ করতে পারে।
হার্ডওয়্যার কত প্রকার ও কি কি?
একটি কম্পিউটারের হার্ডওয়্যার মূলত চারটি ভাগে বিভক্ত:
- ইনপুট ডিভাইস (Input Device): যার মাধ্যমে ব্যবহারকারী কম্পিউটারে তথ্য প্রবেশ করায়
- প্রসেসিং ডিভাইস (Processing Device): যার মাধ্যমে কম্পিউটার কাজ সম্পন্ন করে
- আউটপুট ডিভাইস (Output Device): যার মাধ্যমে কাজের ফলাফল দেখা যায়
- স্টোরেজ ডিভাইস (Storage Device): যেখানে ডেটা সংরক্ষণ করা হয়
কম্পিউটারের বিভিন্ন অংশের নাম ও ছবি: প্রসেসিং ডিভাইস
এবার আসুন কম্পিউটারের বিভিন্ন অংশের নাম ও ছবি সহ তাদের কাজ বিস্তারিত জানি:
১. মাদারবোর্ড (Motherboard) – কম্পিউটারের হৃদয়
মাদারবোর্ড হল কম্পিউটারের মূল সার্কিট বোর্ড যার মাধ্যমে কম্পিউটারের সকল যন্ত্রাংশকে একে অপরের সাথে সংযুক্ত করা হয়। মাদারবোর্ড ছাড়া কম্পিউটার সম্পূর্ণ অচল এবং একটা কম্পিউটারের স্ট্রাকচারাল গঠনের মধ্যে সবচেয়ে ইম্পর্ট্যান্ট রোল প্লে করে এই মাদারবোর্ড।
মাদারবোর্ডের প্রধান কাজ:
- কম্পিউটারে র্যাম, হার্ডডিস্ক সহ যাবতীয় সব যন্ত্রাংশ মূলত মাদারবোর্ডের সাথে সংযুক্ত থাকে
- সিপিইউ, হার্ডডিস্ক, র্যাম, পাওয়ার সাপ্লাই, মনিটর, কীবোর্ড, মাউস ইত্যাদি সমস্ত কম্পিউটার পার্ট মাদারবোর্ডের সঙ্গে সংযুক্ত থাকে
২. সিপিইউ (CPU) – কম্পিউটারের মস্তিষ্ক
কেন্দ্রীয় প্রক্রিয়াজাতকরণ ইউনিট বা সিপিইউ কম্পিউটার পরিচালনা ও বিভিন্ন প্রকার কাজ করতে প্রয়োজনীয় হিসাব-নিকাশের সিংহভাগ সম্পাদন করে। CPU কম্পিউটারের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ অংশ যা সকল কাজের নির্দেশনা প্রসেস করে।
৩. র্যাম (RAM) – অস্থায়ী মেমরি
র্যামের পূর্ণরূপ হলো Random Access Memory এবং মাদারবোর্ডের সঙ্গে র্যাম সাধারণত সংযুক্ত থাকে। র্যামকে সুপার ফাস্ট অস্থায়ী মেমরিও বলা হয় কারণ কম্পিউটার বন্ধ করলে র্যামের মধ্যে থাকা সব তথ্য মুছে যায়।
র্যামের কাজ: র্যামের কাজ হচ্ছে যে সফটওয়্যার ব্যবহার করতে চান তা হার্ডডিস্ক থেকে এনে নির্দেশ অনুযায়ী রান করা।
৪. হার্ডডিস্ক বা হার্ড ড্রাইভ (Hard Disk/Hard Drive)
কম্পিউটারে যেকোনো ডেটা সংরক্ষণ করে রাখার জন্যে হার্ডডিস্কের প্রয়োজন এবং কম্পিউটারে যে অপারেটিং সিস্টেমটি ইনস্টল করা সেটাও হার্ডডিস্কের মধ্যে অবস্থান করে। এটি স্থায়ীভাবে ডেটা সংরক্ষণ করে।

কম্পিউটারের বিভিন্ন অংশের নাম ও ছবি: ইনপুট ডিভাইস
ইনপুট ডিভাইস হলো একটি হার্ডওয়্যার ডিভাইস যেটার মাধ্যমে কম্পিউটার ব্যবহারকারীরা কম্পিউটারে ডাটা বা নির্দেশাবলি সেন্ট্রাল প্রসেসিং এর মাধ্যমে ইনপুট করতে পারে।
১. কিবোর্ড (Keyboard)
কিবোর্ড হল কম্পিউটারে বিভিন্ন ধরনের লেখালেখি করার জন্য ব্যবহৃত সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ইনপুট ডিভাইস। কিবোর্ডের অনেকগুলো কি রয়েছে যেমন ফাংশন কি, নাম্বার কি, অ্যারো কী, অ্যালফাবেট কি, স্পেশাল কি ইত্যাদি।
২. মাউস (Mouse)
মাউসের কাজ হলো বিভিন্ন ধরণের নির্দেশ প্রদান করা এবং কম্পিউটার ব্যবহারে সুবিধা থাকায় মাউস খুব জনপ্রিয় ইনপুট ডিভাইস। মাউস ছাড়া কম্পিউটার দিয়ে বিভিন্ন রকম কাজ করা অনেকটা কষ্টকর।
৩. স্ক্যানার (Scanner)
স্ক্যানার দিয়ে কোনো ডকুমেন্ট বা ছবি কম্পিউটারে ডিজিটাল ফরম্যাটে নেওয়া হয়।
৪. মাইক্রোফোন (Microphone)
মাইক্রোফোন অডিও ইনপুট দেওয়ার জন্য ব্যবহৃত হয়।
৫. ওয়েবক্যাম (Webcam)
ওয়েবক্যাম ভিডিও ইনপুট এবং ভিডিও কনফারেন্সিংয়ের জন্য ব্যবহৃত হয়।
কম্পিউটারের বিভিন্ন অংশের নাম ও ছবি: আউটপুট ডিভাইস
যে ডিভাইসের মাধ্যমে আমরা কম্পিউটার থেকে কাজের ফলাফল পায় তাকে আউটপুট ডিভাইস বলে।
১. মনিটর (Monitor)
মনিটর হলো একটি আউটপুট ডিভাইস যার মাধ্যমে বিভিন্ন ধরনের ইনপুট দেওয়া নির্দেশনা প্রদর্শিত হয় এবং এটি সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ আউটপুট ডিভাইস। মনিটরের সাহায্যে লেখা, গ্রাফ, ছবি, ভিডিও ইত্যাদি দেখা যায়।
২. প্রিন্টার (Printer)
প্রিন্টার লেখালেখি বা ছবি মুদ্রণের কাজ করে এবং কম্পিউটারে টাইপ করা কোন টেক্সট ডকুমেন্ট ছাপাতে এই আউটপুট ডিভাইস প্রয়োজন হয়। যেকোন সাদা-কালো বা রঙিন ছবি প্রিন্ট করা যায়।
৩. স্পিকার (Speaker)
স্পিকার অডিও আউটপুট দেওয়ার জন্য ব্যবহৃত হয়। এর মাধ্যমে শব্দ ও সংগীত শোনা যায়।
৪. প্রজেক্টর (Projector)
প্রজেক্টর বড় পর্দায় কম্পিউটারের আউটপুট প্রদর্শনের জন্য ব্যবহৃত হয়।
কম্পিউটারের বিভিন্ন অংশের নাম ও ছবি: স্টোরেজ ডিভাইস
স্টোরেজ ডিভাইস হচ্ছে কম্পিউটার হার্ডওয়্যারের একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ যেখানে ডেটা স্থায়ীভাবে বা সাময়িকভাবে স্টোর করে রাখা যায়।
প্রধান স্টোরেজ ডিভাইস:
- হার্ড ডিস্ক (HDD): ঐতিহ্যবাহী স্টোরেজ ডিভাইস
- সলিড স্টেট ড্রাইভ (SSD): দ্রুতগতির আধুনিক স্টোরেজ
- পেনড্রাইভ/USB ফ্ল্যাশ ড্রাইভ: বহনযোগ্য স্টোরেজ
- মেমরি কার্ড: ছোট আকারের স্টোরেজ
- অপটিক্যাল ডিস্ক (CD/DVD): পুরনো ধরনের স্টোরেজ মাধ্যম

কম্পিউটার সফটওয়্যার কি?
সফটওয়্যার হচ্ছে কম্পিউটারের প্রোগ্রাম এবং এই কম্পিউটারের হার্ডওয়্যারকে কাজে লাগিয়ে সফটওয়্যার প্রোগ্রামগুলো কম্পিউটারে চলে। হার্ডওয়্যার হচ্ছে কম্পিউটারের বাহ্যিক কাঠামো যা আমরা স্পর্শ করতে পারি এবং হার্ডওয়্যারকে কার্যক্ষম ও ব্যবহার উপযোগী করার জন্য প্রয়োজন উপযুক্ত সফটওয়্যার।
কম্পিউটার সিস্টেমের প্রধান অংশ দুটি – হার্ডওয়্যার ও সফটওয়্যার। সফটওয়্যার ছাড়া কম্পিউটার হার্ডওয়্যার কাজ করে না। হার্ডওয়্যার ও সফটওয়্যারের পার্থক্য আরও বিস্তারিত জানুন।
সফটওয়্যার দুই প্রকার:
- সিস্টেম সফটওয়্যার: অপারেটিং সিস্টেম (উইন্ডোজ, ম্যাকওএস, লিনাক্স)
- অ্যাপ্লিকেশন সফটওয়্যার: বিভিন্ন কাজের জন্য ব্যবহৃত প্রোগ্রাম
কম্পিউটারের সঠিক রক্ষণাবেক্ষণ – বিশেষজ্ঞ পরামর্শ
আমার ১০ বছরের অভিজ্ঞতা থেকে কিছু গুরুত্বপূর্ণ টিপস:
- নিয়মিত পরিষ্কার করুন: মাদারবোর্ড এবং অন্যান্য অংশে ধুলো জমা হলে কর্মক্ষমতা কমে যায়
- ভাল ভোল্টেজ রেগুলেটর ব্যবহার করুন: এটি আপনার হার্ডওয়্যার রক্ষা করবে
- নিয়মিত ব্যাকআপ নিন: হার্ডডিস্ক যেকোনো সময় নষ্ট হতে পারে
- তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণ করুন: অতিরিক্ত গরম হার্ডওয়্যারের জন্য ক্ষতিকর
- সফটওয়্যার আপডেট রাখুন: নিরাপত্তা ও কর্মক্ষমতার জন্য গুরুত্বপূর্ণ
উপসংহার
কম্পিউটার আমাদের জীবনে এক অপরিহার্য প্রযুক্তি হয়ে উঠেছে এবং এর বিভিন্ন অংশের নাম ও কাজ সম্পর্কে সঠিক জ্ঞান থাকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। মাদারবোর্ড, সিপিইউ, র্যাম, হার্ডডিস্ক থেকে শুরু করে কিবোর্ড, মাউস, মনিটর, প্রিন্টার – প্রতিটি হার্ডওয়্যার এর নিজস্ব গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রয়েছে।
কম্পিউটারের জনক চার্লস ব্যাবেজ এর উদ্ভাবিত ধারণা থেকে আজকের আধুনিক কম্পিউটার পর্যন্ত এসেছে দীর্ঘ পথ। আজকের দিনে সুপার কম্পিউটার থেকে শুরু করে পার্সোনাল কম্পিউটার – সব ধরনের কম্পিউটারের মূল কাঠামো প্রায় একই।
আমার পেশাগত অভিজ্ঞতা থেকে বলতে পারি, কম্পিউটার সম্পর্কে ভালো ধারণা থাকলে আপনি শুধু ব্যবহারকারীই নন, একজন দক্ষ সমস্যা সমাধানকারীও হতে পারবেন। নিয়মিত রক্ষণাবেক্ষণ ও সঠিক পরিচর্যার মাধ্যমে আপনার কম্পিউটারের আয়ু বাড়ানো সম্ভব।
কম্পিউটারের বিভিন্ন অংশ নিয়ে আরও প্রশ্ন থাকলে মন্তব্য করুন এবং এই তথ্যবহুল আর্টিকেলটি শেয়ার করুন যাতে অন্যরাও কম্পিউটার হার্ডওয়্যার সম্পর্কে সঠিক জ্ঞান অর্জন করতে পারেন।
বিশেষ দ্রষ্টব্য: এই আর্টিকেলে প্রদত্ত সকল তথ্য বিশ্বস্ত সূত্র থেকে সংগৃহীত এবং যাচাই করা। কম্পিউটার প্রযুক্তি দ্রুত পরিবর্তনশীল, তাই সর্বশেষ আপডেট তথ্যের জন্য নিয়মিত আমাদের সাথে থাকুন।
সচরাচর জিজ্ঞাসিত প্রশ্ন (FAQs)
কম্পিউটারের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ অংশ কোনটি?
কম্পিউটারের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ অংশ হলো সিপিইউ (CPU) যাকে কম্পিউটারের মস্তিষ্ক বলা হয়। এটি সকল নির্দেশনা প্রসেস করে এবং কম্পিউটারের সব কাজ নিয়ন্ত্রণ করে। সিপিইউ ছাড়া কম্পিউটার কোনো কাজ করতে পারে না এবং এটি মাদারবোর্ডের সাথে সংযুক্ত থেকে র্যাম, হার্ডডিস্ক এবং অন্যান্য যন্ত্রাংশ পরিচালনা করে।
মাদারবোর্ড কাকে বলে এবং এর কাজ কি?
মাদারবোর্ড হলো কম্পিউটারের মূল সার্কিট বোর্ড যার মাধ্যমে সকল হার্ডওয়্যার যন্ত্রাংশ পরস্পরের সাথে সংযুক্ত থাকে। মাদারবোর্ডের কাজ হলো সিপিইউ, র্যাম, হার্ডডিস্ক, পাওয়ার সাপ্লাই এবং অন্যান্য সব ডিভাইসকে একসাথে সংযুক্ত করা এবং তাদের মধ্যে তথ্য আদান-প্রদানের পথ তৈরি করা। মাদারবোর্ড ছাড়া কম্পিউটার সম্পূর্ণ অচল এবং এটি কম্পিউটারের স্ট্রাকচারাল গঠনের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।
হার্ডওয়্যার ও সফটওয়্যারের মধ্যে পার্থক্য কি?
হার্ডওয়্যার হলো কম্পিউটারের ভৌত বা বস্তুগত অংশ যা আমরা স্পর্শ করতে ও দেখতে পারি যেমন মনিটর, কিবোর্ড, মাউস, মাদারবোর্ড, সিপিইউ ইত্যাদি। অন্যদিকে সফটওয়্যার হলো কম্পিউটারের প্রোগ্রাম বা নির্দেশাবলীর সমষ্টি যা হার্ডওয়্যারকে কাজ করতে নির্দেশ দেয়। সফটওয়্যার স্পর্শ করা যায় না এবং হার্ডওয়্যার ছাড়া সফটওয়্যার চলতে পারে না, আবার সফটওয়্যার ছাড়া হার্ডওয়্যার কাজ করতে পারে না।
র্যাম এবং হার্ডডিস্কের মধ্যে পার্থক্য কি?
র্যাম (RAM) হলো অস্থায়ী বা সাময়িক মেমরি যা কম্পিউটার চালু থাকাকালীন তথ্য ধরে রাখে এবং কম্পিউটার বন্ধ করলে র্যামের সব তথ্য মুছে যায়। র্যাম অত্যন্ত দ্রুতগতিসম্পন্ন। অন্যদিকে হার্ডডিস্ক হলো স্থায়ী স্টোরেজ ডিভাইস যেখানে ডেটা স্থায়ীভাবে সংরক্ষিত থাকে এবং কম্পিউটার বন্ধ করলেও তথ্য থেকে যায়। র্যাম হার্ডডিস্ক থেকে তথ্য নিয়ে প্রসেস করে এবং হার্ডডিস্ক র্যামের চেয়ে ধীরগতি সম্পন্ন কিন্তু অনেক বেশি স্টোরেজ ক্ষমতাসম্পন্ন।
কম্পিউটারের ইনপুট ও আউটপুট ডিভাইস কি কি?
ইনপুট ডিভাইস হলো যেসব যন্ত্র দিয়ে কম্পিউটারে তথ্য ও নির্দেশ প্রবেশ করানো হয় যেমন কিবোর্ড, মাউস, স্ক্যানার, মাইক্রোফোন, ওয়েবক্যাম ইত্যাদি। অন্যদিকে আউটপুট ডিভাইস হলো যেসব যন্ত্র দিয়ে কম্পিউটার থেকে কাজের ফলাফল পাওয়া যায় যেমন মনিটর, প্রিন্টার, স্পিকার, প্রজেক্টর ইত্যাদি। কিছু ডিভাইস যেমন টাচস্ক্রিন মনিটর একই সাথে ইনপুট ও আউটপুট উভয় কাজ করতে পারে।
সিপিইউ কি এবং এর কাজ কি?
সিপিইউ (CPU) বা সেন্ট্রাল প্রসেসিং ইউনিট হলো কম্পিউটারের মস্তিষ্ক যা কম্পিউটারের সকল ধরনের নির্দেশনা প্রক্রিয়া করে এবং সব কাজ নিয়ন্ত্রণ করে। সিপিইউর কাজ হলো গাণিতিক হিসাব-নিকাশ করা, যৌক্তিক সিদ্ধান্ত নেওয়া এবং কম্পিউটারের সকল হার্ডওয়্যার ও সফটওয়্যার পরিচালনা করা। সিপিইউ মাদারবোর্ডের সাথে সংযুক্ত থাকে এবং এর গতি গিগাহার্জে (GHz) পরিমাপ করা হয়।




