শিক্ষা

প্রযুক্তি কী? প্রযুক্তির উপকারিতা ও অপকারিতা

প্রযুক্তির বদৌলতে জীবনযাত্রার মান উন্নত হয়েছে। দৈনন্দিন জীবনের বিভিন্ন কাজে আমরা  প্রযুক্তির ব্যবহার করি। শিক্ষা, সামাজিকীকরণ, ব্যবসা, চিকিৎসাসহ জীবনের প্রতিটি জরুরি ক্ষেত্রে তথ্যপ্রযুক্তির এই ব্যবহার অনস্বীকার্য। প্রযুক্তি পৃথিবীকে হাতের মুঠোয় এনে দিয়েছে। এই প্রযুক্তির উপকারিতা বেশি হওয়ায় দিন দিন এর ব্যবহার বেড়েই চলেছে। সাথে বেড়েছে প্রযুক্তির অপব্যবহার। আজকের ব্লগটি সম্পূর্ণ পড়লে, প্রযুক্তির উপকারিতা এবং অপকারিতা সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে পারবেন।

প্রযুক্তি কী?

বৈজ্ঞানিক জ্ঞানকে কাজে লাগিয়ে যেকোনো যন্ত্র বা প্রাকৃতিক উপাদানের সমন্বয়ে গঠিত দক্ষতাকে ব্যবহার করে দৈনন্দিন জীবনকে সহজীকরণের মাধ্যমকে প্রযুক্তি বলে। বিভিন্ন প্রযুক্তির সম্মিলিত রূপ জেনেটিক ইঞ্জিনিয়ারিং (Genetic Engineering)

প্রযুক্তির উপকারিতা

প্রযুক্তি আমাদের জীবনে স্বাচ্ছন্দময় এবং সেই সাথে গতিময় করে তুলেছে। প্রযুক্তির হাজারও উপকারিতার মধ্যে কিছু উপকারিতা নিচে উল্লেখ করা হলো-

১। চিকিৎসা ক্ষেত্রেঃ

চিকিৎসক এবং চিকিৎসা গবেষণা রোগ নির্ণয় ও রোগ নিরাময়ের পাশাপাশি নতুনত্ব ঔষধ তৈরিতে প্রযুক্তির হাড় অনস্বীকার্য। চিকিৎসায় গবেষণা প্রযুক্তি ব্যবহার করে, বিজ্ঞানীরা সেলুলার স্তরে রোগ নির্ণয় এবং রোগের বিরুদ্ধে অ্যান্টিবডি উৎপাদনে সক্ষম হচ্ছে। স্বাস্থ্য সেবায় প্রযুক্তি ব্যবহার করে টিকা আবিষ্কার করে বিশ্বজুড়ে হাজার হাজার মানুষের প্রান বাঁচায়।

২। কৃষি ক্ষেত্রেঃ

আধুনিক প্রযুক্তি বা যন্ত্রপাতি ব্যবহারে কৃষিতে বৈপ্লবিক পরিবর্তন এসেছে। উন্নত প্রযুক্তির ব্যবহারের ফলে কয়েকগুণ বেড়েছে উৎপাদন। আধুনিক প্রযুক্তির ট্রাক্টর ও পাওয়ার টিলার, জমি আবাদ, নিড়ানি হতে শুরু করে জমিতে সেচ, সবকিছুতেই চলছে আধুনিক যন্ত্রের ব্যবহার। এসব যন্ত্রের ব্যবহারের ফলে কৃষকের কমেছে শ্রম ও উৎপাদন ব্যয়।

৩। শিক্ষা ক্ষেত্রেঃ

শিক্ষা ব্যবস্থা একটি দেশের ভবিষ্যত নির্ধারণ করে। প্রযুক্তির অগ্রগতি শিক্ষা ব্যবস্থাকে ব্যাপকভাবে প্রভাবিত করছে। প্রযুক্তি শিক্ষাদানকে আরও সহজ, আকর্ষণীয় এবং কার্যকর করে তুলছে। ভার্চুয়াল ক্লাসরুমে, ই-লার্নিং প্ল্যাটফর্মগুলো শিক্ষার্থীদের জ্ঞানের পরিধিকে বাড়িয়েছে। ডিজিটাল প্রশিক্ষণ সরঞ্জামগুলি শিক্ষকদেরকে তাদের পাঠদান দক্ষতা উন্নত করতে সহায়তা করে।

৪। তথ্য সংগ্রহঃ

প্রযুক্তির সাহায্যে বড় পরিমাণের তথ্য সহজেই সংগ্রহ করা সম্ভব। ইন্টারনেটে বিভিন্ন ওয়েবসাইট, ডেটাবেস, ইনফরমেশন সার্ভিস প্রদানকারী সংস্থা থেকে প্রযুক্তির মাধ্যমে বিশ্বব্যাপী তথ্যের অ্যাক্সেস পাওয়া যায়।

৫। যোগাযোগঃ

প্রযুক্তির গুরুত্বপূর্ণ বৈশিষ্ট্য হচ্ছে এটি আমাদের যোগাযোগ মাধ্যমকে সহজ করেছে। দ্রুত যান সহ, অনলাইন যোগাযোগ ব্যবস্থা উন্নত করেছে। মুহূর্তেই বিশ্বের এক প্রান্ত থেকে আরেক প্রান্তে যোগাযোগ করা যায়। যোগাযোগ ব্যবস্থা হয়েছে সহজ, আরযবস্থ এবং আনন্দদায়ক।

৬। সময় সংরক্ষণঃ

প্রযুক্তি ব্যবহার করে বিভিন্ন কাজ দ্রুত ও সহজে সম্পাদন করা সম্ভব হয়। উদাহরণস্বরূপ, ইমেল বা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে মেসেজ পাঠানো, ইন্টারনেটে তথ্য খুঁজে পাওয়া, ইনভেস্টমেন্ট প্রশিক্ষণ গ্রহণ করা ইত্যাদি।

৭। সমস্যা সমাধানঃ

প্রযুক্তির মাধ্যমে সমস্যা সমাধান করা সহজ হয়ে যায়। প্রযুক্তিতে রয়েছে বিভিন্ন সফটওয়্যার এবং অ্যাপ্লিকেশন যা প্রশিক্ষণ, প্রশ্নোত্তর, ডিজিটাল সেবা ইত্যাদি প্রদান করে। সাইবার নিরাপত্তা, হাইব্রিড মেডিকেল চেকআপ সিস্টেম, স্বাস্থ্যসেবা সংক্রান্ত অ্যাপ্লিকেশন ইত্যাদি প্রযুক্তির মাধ্যমে পুরো বিশ্বের মানুষকে সমস্যা সমাধানে সহায়তা করেছে।

৮। ব্যবসায়িক উন্নতিঃ

প্রযুক্তি ব্যবহার করে ব্যবসায়ের কাজ প্রশাসন করা সহজ হয়ে যায়। ক্যাশ ম্যানেজমেন্ট, ইনভেন্টরি ম্যানেজমেন্ট, সংস্থার ব্যবস্থাপনা, ডিজিটাল মার্কেটিং ইত্যাদি প্রযুক্তির মাধ্যমে উন্নত হয়ে থাকে।

৯। সংযোগবিধান ও সামাজিক সম্পর্ক: 

প্রযুক্তি সামগ্রী মাধ্যমে মানসম্পন্ন সংস্থান স্থাপন এবং বিভিন্ন অংশের মধ্যে সংযোগ স্থাপন করা সহজ হয়ে থাকে। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ব্যবহার করে মানুষেরা একে অপরের সাথে সংযোগ রাখতে পারে এবং নতুন সম্পর্ক স্থাপন করতে পারে।

প্রযুক্তির অপকারিতা

প্রযুক্তির নানবিধ সুবিধা থাকা স্বত্ত্বেও এর কিছু অসুবিধা রয়েছে। যেমন-

১। নিরাপত্তা ঝুঁকিঃ

প্রযুক্তির ব্যবহার করলে নিরাপত্তা ঝুঁকি বৃদ্ধি পায়। সাইবার নেটওয়ার্ক অ্যাটাক, হ্যাকিং, ম্যালওয়্যার আক্রমণ ইত্যাদি ঘটতে পারে। এসব সমস্যা নিরাপত্তা ব্যবস্থা না থাকলে ব্যবহারকারীদের তথ্য চুরি হতে পারে এবং সংস্থা বা সরকারের ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ তথ্য নিরাপত্তার ঝুঁকিতে পড়তে পারে।

২। সাময়িক পরিবেশে প্রভাব

প্রযুক্তির ব্যবহারের সাথে সাথে কম্পিউটার এবং ইলেকট্রনিক উপাদানগুলির বিপণন, ব্যবহার ও নিষ্ক্রিয়করণের ফলে পরিবেশের উপর ক্রমাগত প্রভাব পড়েছে। ইলেকট্রনিক পণ্য নির্মাণের জন্য উপাদান সংগ্রহের জন্য অসংখ্য খনিজ এবং অন্যান্য প্রাকৃতিক সম্পদের উপযোগীতা কমে গেছে। সাথে সাথে প্রযুক্তির ব্যবহার আরও বিতর্কিত হয়ে এসেছে পরিবেশের ক্ষেত্রে।

৩। অতিরিক্ত সময় ব্যয়

আমাদের প্রয়োজনীয় সময়গুলোর একটি বিরাট অংশ ইন্টারনেটে ঘুরে বেড়াতে, ভিডিও গেম খেলতে এবং সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে সময় কাটাতেই শেষ হয়ে যায়। যা আমাদের জন্য নেগেটিভ প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করতে পারে।

৪। অতিরিক্ত খরচ

অনেক ক্ষেত্রে প্রযুক্তির ব্যবহার ব্যয় বহুল। এর ফলে অর্থনৈতিক সংকট দেখা দিতে পারে।

৫। কর্মক্ষমতা হ্রাস

প্রযুক্তির ব্যবহার বাড়াইয় মানুষ দিন দিন অলস হচ্ছে। যার ফলে দিন দিন মানুষের কর্মক্ষমতা হ্রাস পাচ্ছে।

পরিশেষে

প্রযুক্তির সঠিক ব্যবহার করে আমাদের জীবনকে আরও সহজ এবং গতিশীল করতে এর সঠিক ব্যবহার করতে হবে। প্রযুক্তির অপব্যবহার করা যাবে না। প্রযুক্তি ব্যবহার করে পরিবেশের ক্ষতি প্রতিরোধ করতে হবে।

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button
error: Content is protected !!