ই-সেবাঅন্যান্য

ইন্টারন্যাশনাল রোমিং কি? কিভাবে রোমিং চালু করতে হয়?

আজকের দ্রুত গতির বিশ্বে, দেশ-বিদেশ ভ্রমণ করা একটি সাধারণ ঘটনা হয়ে উঠেছে। ব্যবসা, ছুটি বা শুধুমাত্র নতুন নতুন সংস্কৃতি অন্বেষণের জন্য, আমরা অনেকেই নিয়মিত আমাদের দেশের বাইরে ভ্রমণ করি। যখন আমরা ভ্রমণ করি, তখন পরিবার এবং বন্ধুদের সাথে যোগাযোগ রাখা জরুরি হয়ে পরে। তাদের সাথে সংযুক্ত থাকার মাধ্যমে জরুরী পরিস্থিতিতে সহায়তা পেতে পারি। এ সেবাটি ইন্টারন্যাশনাল রোমিং এর মাধ্যমে সম্ভব হয়েছে।

ইন্টারন্যাশনাল রোমিং কি?

ইন্টারন্যাশনাল রোমিং কি বিষয়টা জানার আগে আমরা জানব রোমিং কি। রোমিং হলো একধরনের ডাটা সার্ভিস সিস্টেম। ধরুন, আপনি যখন আপনার মোবাইল অপারেটরের নেটওয়ার্ক ব্যবহার করেন এবং কভারেজ এরিয়ার বাইরে যান। এমতাবস্থায় দেখা যায়, বাইরে যাওয়ার পরও আনবরত ডেটা সার্ভিস পাচ্ছেন। এর পেছনের কারণ, হলো ডাটা রোমিং। এখন প্রশ্ন হলো ইন্টারন্যাশনাল রোমিং কি?

সহজ কথায় বলতে গেলে, ইন্টারন্যাশনাল রোমিং হলো একটি সেবা যা আপনাকে আপনার নিজস্ব মোবাইল ফোন ব্যবহার করে আপনার মোবাইল অপারেটরের নেটওয়ার্কের বাইরে, অন্য দেশে কল করতে, এসএমএস পাঠাতে এবং ইন্টারনেট ব্যবহার করতে দেয়। যখন আপনি বিদেশ ভ্রমণ করেন, তখন আপনার ফোন স্বয়ংক্রিয়ভাবে বেস্ট নেটওয়ার্কের সাথে সংযোগ স্থাপন করে থাকে।

ইন্টারন্যাশনাল রোমিং ব্যবহারের সুবিধাঃ

যোগাযোগের ক্ষেত্রেঃ ইন্টারন্যাশনাল রোমিং আপনাকে বিদেশ ভ্রমণের সময় পরিবার, বন্ধু এবং সহকর্মীদের সাথে যোগাযোগে রাখতে ব্যাপক ভূমিকা পালন করে। আপনি ইমেইল পাঠাতে এবং রিসিভ করতে, সোশ্যাল মিডিয়া ব্যবহার করতে এবং ভয়েস এবং ভিডিও কল করতে পারেন এই ইন্টারন্যাশনাল রোমিং এর কারনেই।
ডেটা অ্যাক্সেসঃ এটি আপনাকে মানচিত্র দেখতে, দিকনির্দেশনা পেতে, ট্রেন এবং বিমানের ফ্লাইটের সময়সূচী পরীক্ষা করতে এবং আরও অনেক কিছু ইন্টারনেটের মাধ্যমে করতে দেয়।
জরুরী পরিস্থিতিতেঃ আপনি যদি বিদেশে কোন জরুরী পরিস্থিতির সম্মুখীন হন, তাহলে আপনি ইন্টারন্যাশনাল রোমিং ব্যবহার করে সাহায্যের জন্য ইমার্জেন্সি কল করতে পারবেন।

ইন্টারন্যাশনাল রোমিং ব্যবহারের খরচঃ

ইন্টারন্যাশনাল রোমিং ব্যবহার করা ব্যয়বহুল হয়ে থাকে। আপনার মোবাইল অপারেটর আপনাকে দুটি চার্জ করবে:

কল, এসএমএস এবং ডেটা ব্যবহারের জন্যঃ আপনি যে পরিমাণ কল করবেন, এসএমএস পাঠাবেন এবং ডেটা ব্যবহার করবেন তার জন্য আপনাকে চার্জ করা হবে। এই হার সাধারণত আপনার হোম প্যাকেজের চেয়ে অনেক বেশি হয়।
রোমিং চার্জঃ আপনি যে অপারেটরের নেটওয়ার্ক ব্যবহার করবেন তারা আপনার মোবাইল অপারেটরকে একটি চার্জ প্রদান করবে। এই চার্জটি আপনার কাছ থেকে রোমিং চার্জ হিসেবে আদায় করা হবে।

ইন্টারন্যাশনাল রোমিং ব্যবহার করার আগে টিপস:

বিদেশ ভ্রমণের সময় আপনার মোবাইল ফোন ব্যবহার করার জন্য অতিরিক্ত খরচ এড়াতে এই টিপসগুলো মেনে চলুনঃ

  • রোমিং চার্জ এবং হার সম্পর্কে জেনে নিনঃ আপনার মোবাইল অপারেটরের সাথে যোগাযোগ করুন। কেননা, বিভিন্ন দেশে এবং বিভিন্ন অপারেটরের জন্য রোমিং চার্জ এবং হার ভিন্ন হতে পারে। আপনার ভ্রমণের আগে আপনার মোবাইল অপারেটরের সাথে যোগাযোগ করে নির্দিষ্ট চার্জ এবং হার সম্পর্কে জেনে নিন।
  • রোমিং প্যাকেজ সম্পর্কে জেনে নিন: অনেক মোবাইল অপারেটর বিভিন্ন দেশের জন্য রোমিং প্যাকেজ অফার করে। এই প্যাকেজগুলো সাধারণত নির্দিষ্ট পরিমাণ কল, এসএমএস এবং ডেটা ব্যবহারের জন্য একটি নির্দিষ্ট মূল্য প্রদান করে। আপনার ভ্রমণের চাহিদার জন্য কোন প্যাকেজটি সবচেয়ে উপযুক্ত তা জানতে আপনার অপারেটরের সাথে কথা বলুন।
  • রোমিং এক্টিভ করুন: আপনার ভ্রমণের আগে রোমিং সার্ভিসটি সক্রিয় করতে ভুলবেন না। অনেক ক্ষেত্রে, আপনি এটি অনলাইনে বা আপনার মোবাইল অপারেটরের অ্যাপের মাধ্যমে করতে পারেন।
  • ডেটা ব্যবহার কমান।
  • Wi-Fi ব্যবহার করুনঃ হোটেল, ক্যাফে, বিমানবন্দর এবং অন্যান্য পাবলিক স্থানে প্রায়শই বিনামূল্যে Wi-Fi থাকে। তাই যখনই সম্ভব, Wi-Fi ব্যবহার করুন।
  • ডেটা সেভার মোড ব্যবহার করুনঃ যখন আপনি Wi-Fi নেটওয়ার্কের বাইরে থাকবেন তখন অবশ্যই আপনার ফোনের ডেটা সেভার মোড চালু রাখবেন। এটি ব্যাকগ্রাউন্ড অ্যাপ্লিকেশনগুলিকে ডেটা ব্যবহার করা থেকে বিরত রাখবে।
  • ডেটা-সাশ্রয়ী অ্যাপ ব্যবহার করুনঃ ডেটা-সাশ্রয়ী বিকল্প মেসেঞ্জার এবং ম্যাপের মতো অ্যাপগুলির জন্য বিকল্প খুঁজুন।
  • কল এবং এসএমএস কমান।
  • ঐদেশের সিম কার্ড কিনুনঃ আপনি যদি দীর্ঘ সময়ের জন্য ভ্রমণ করেন বা প্রচুর কল করার প্রয়োজন হয় তবে একটি স্থানীয় সিম কার্ড কেনার কথা বিবেচনা করুন। এটি সাধারণত আপনার নিজের মোবাইল অপারেটরের চেয়ে অনেক কম খরচে হবে।
  • ইন্টারনেট-ভিত্তিক কমিউনিকেশন করুনঃ যেমন, ওয়াটসঅ্যাপ, ভাইবার এবং স্কাইপের মতো ইন্টারনেট-ভিত্তিক অ্যাপ্লিকেশনগুলি ব্যবহার করে বিনামূল্যে বা কম খরচে কল বা মেসেজ করতে পারেন।

বিভিন্ন অপারেটরে রোমিং চালু করার পদ্ধতিঃ

রোমিং চালু করার পদ্ধতি আপনার মোবাইল অপারেটরের উপর নির্ভর করে। তবে, সাধারণত নিম্নলিখিত পদ্ধতিগুলোর মধ্যে একটি ব্যবহার করে আপনি রোমিং চালু করতে পারবেন।

1. মোবাইল অপারেটরের ওয়েবসাইট বা অ্যাপ ব্যবহার করুন:

অনেক মোবাইল অপারেটরের ওয়েবসাইট এবং অ্যাপ রয়েছে যেখানে আপনি আপনার অ্যাকাউন্ট পরিচালনা করতে পারেন এবং রোমিং সার্ভিস সহ বিভিন্ন সেবা সক্রিয় করতে পারেন।
আপনার অপারেটরের ওয়েবসাইট বা অ্যাপে লগ ইন করুন এবং “রোমিং” বা “আন্তর্জাতিক সেবা” অপশনটি খুঁজুন।
নির্দেশাবলী অনুসরণ করুন এবং রোমিং সার্ভিসটি সক্রিয় করুন।

2. USSD কোড ব্যবহার করুন:

কিছু মোবাইল অপারেটর USSD কোড প্রদান করে যা ব্যবহার করে আপনি রোমিং সার্ভিসটি সক্রিয় করতে পারেন।
আপনার ফোনে *#…# (আপনার অপারেটরের নির্দিষ্ট কোড) ডায়াল করুন।
নির্দেশাবলী অনুসরণ করুন এবং রোমিং সার্ভিসটি সক্রিয় করুন।

3. গ্রাহক পরিসেবায় যোগাযোগ করুন:

আপনি যদি অনলাইনে রোমিং সার্ভিসটি সক্রিয় করতে না পারেন তবে আপনার মোবাইল অপারেটরের গ্রাহক পরিষেবায় যোগাযোগ করতে পারেন।
তাদের আপনার ভ্রমণের দেশ এবং আপনি কতদিন রোমিং ব্যবহার করতে চান তা জানান।
তারা আপনার জন্য রোমিং সার্ভিসটি সক্রিয় করবে।

বাংলাদেশে বর্তমানে মোট চারটি মোবাইল অপারেটর রয়েছে যারা প্রত্যেকেই রোমিং সেবা দিয়ে থাকে। প্রতিটি অপারেটরে কীভাবে এই সেবা দিয়ে থাকে তা নিচে বিস্তারিত আলোচনা করা হয়েছে।

গ্রামীণফোন

বিশ্বের কম-বেশি প্রায় সকল দেশেই গ্রামীণফোন রোমিং সেবা দিয়ে থাকে। গ্রামীণফোনের রোমিং সেবার বিস্তারিত পেয়ে যাবেন তাদের ওয়েবসাইট হতে। তিনটি পদ্ধতিতে আপনি গ্রামীণফোনে রোমিং সার্ভিস অ্যাক্টিভ করে নিতে পারেন। এজেন্টের সাহায্য নিয়ে, অনলাইনে ফর্ম পূরণ করে নিজে নিজে কিংবা গ্রামীণফোনের যে কোন সার্ভিস সেন্টারে গিয়ে।

  • গ্রামীণফোনের রোমিং সেবা চালু করতে হলে, আপনাকে তাদের ওয়েবসাইটের অ্যাক্টিভেশন পেজে গিয়ে আপনার নম্বর দিতে হবে। এরপর, একজন গ্রামীণফোন এজেন্ট শীঘ্রই আপনাকে ফোন করে সকল প্রয়োজনীয় সাহায্য প্রদান করবেন এবং রোমিং সেবা সক্রিয় করে দেবেন।
  • অনলাইনে অ্যাক্টিভেশনের জন্য, আপনাকে রেজিস্ট্রেশন পেইজে যেতে হবে। সেখান থেকে ফর্ম ডাউনলোড করে, পূরণ করে ওয়েবসাইটে জমা দিতে হবে। তারপর, আপনার ক্রেডিট বা ডেবিট কার্ডের উভয় পাশের ছবি স্ক্যান করে আপলোড করতে হবে। রোমিং সক্রিয় করতে গেলে ডুয়াল কারেন্সি ক্রেডিট বা ডেবিট কার্ড ব্যবহার করার কোন বিকল্প নেই। কার্ডের স্ক্যান করা কপি জমা দেওয়ার সময়, কার্ডে আপনার স্বাক্ষর থাকতে হবে এবং সিভিসি নম্বর ঢেকে তারপর আপলোড করতে হবে। সব তথ্য যদি সঠিক হয়, তাহলে আপনার রোমিং দ্রুতই সক্রিয় হবে।
  • অফলাইনে জিপি সেন্টারে গিয়ে আপনি এজেন্টের সাহায্যে সহজেই রোমিং সেবা চালু করতে পারবেন। গ্রামীণফোন ওয়েবসাইট থেকে আপনার এলাকার জিপি পয়েন্টের ঠিকানা জানতে পারেন।

বাংলালিংক

  • বাংলালিংক গ্রাহকদের জন্য ১০০টিরও অধিক দেশে রোমিং সেবা প্রদান করছে। এই রোমিং সেবা মাত্র ১০০ টাকা থেকে শুরু হয়েছে। বাংলালিংকের রোমিং সেবা সক্রিয় করার জন্য অনলাইন ব্যবস্থা নেই, তাই আপনাকে বাংলালিংক কাস্টমার কেয়ারে যেতে হবে, যেখানে এজেন্টের সাহায্যে রোমিং সেবা চালু করা যাবে।

রবি/এয়ারটেল

  • রবি এবং এয়ারটেল এখন একীভূত হওয়াতে তাদের রোমিং সেবাগুলোও একই ধরনের সুবিধা প্রদান করে।
  • রবি অনলাইনে রোমিং সেবা চালুর ব্যবস্থা রয়েছে। অতএব, নির্ধারিত ফর্ম পূরণ করে কিছু নথির কপি অনলাইনে ইমেইলের মাধ্যমে রবির কাছে পাঠাতে হবে। ডুয়াল কারেন্সি ক্রেডিট বা ডেবিট কার্ড, পাসপোর্ট কপি ছবি দিতে হবে। বিস্তারিত তথ্য ও অ্যাক্টিভেশনের জন্য রবির ওয়েবসাইট ভিজিট করতে পারেন। এছাড়া মাই রবি অ্যাপেও রোমিং অ্যাক্টিভ করা যায়। এয়ারটেলের জন্যও প্রক্রিয়াটি হবহু একই স্টেপ ফলো করতে হবে।

টেলিটক

  • অন্যান্য সিম কোম্পানির মতো টেলিটক ও বিভিন্ন দেশে রোমিং সেবা দিচ্ছে। তবে টেলিটক এখনও প্রিপেইডে রোমিং সেবা চালু করেনি। সেক্ষেত্রে আপনাকে টেলিটক পোস্টপেইডে রোমিং চালু করতে হবে। আপনাকে একটি ফর্ম সংগ্রহ করে, তা পূরণ করে জমা দেওয়ার জন্য সরাসরি টেলিটক কাস্টমার কেয়ারে যোগাযোগ করতে হবে।

আপনি আপনার মোবাইল অপারেটরের ওয়েবসাইটে অথবা গ্রাহক সেবা কেন্দ্রে যোগাযোগ করে রোমিং সেবা সক্রিয় করার বিষয়ে আরো যাবতীয় তথ্যগুলো বিস্তারিত পেয়ে যাবেন।

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button
error: Content is protected !!