SSD এবং HDD কি,কোনটি আপনার জন্য উত্তম হবে?

শুধু জায়গা এবং দামের ভিত্তিতে এই দুটি ডিভাইসের তুলনা বা বাছাই করা ঠিক না। সব দিক বিবেচনা করে বাছাই করাই বুদ্ধিমানের কাজ। আপনার কম্পিউটারের ধরণ নির্ভরকরে কার্যক্ষমতা, বিদ্যুতের ব্যবহার, ধারন ক্ষমতা ও গতির উপর। আর এগুলো অনেকাংশে নির্ভরকরে আপনার কম্পিউটারে ব্যবহৃত ডিভাইস তথা SSD (Solid state drives ) অথবা HDD (hard disk drives) এর উপরে। তাই এগুলোর সুবিধা-অসুবিধা কিংবা কোনটি ভালো হবে তা নিয়ে আলোচনা করা হবে। তো শুরু করা যাক,
HDD কি?
HDD এর পূর্ণরূপ হলো Hard Disk Drives। এটি মূলত কম্পিউটারের ভেতরেই থাকে কিন্তু বর্তমানে বাজারে কিছু এক্সটারনাল HDD পাওয়া যায়। এখানে কম্পিউটারের ডাটা বা তথ্য সংরক্ষিত থাকে। এটি একধরনের মেকানিকাল ড্রাইভ, যাতে ঘুরন্ত ডিস্ক বা চাকতির ন্যয় বস্তু থাকে যা ঘোরার ফলে কম্পিউটারে ডাটা রিড বা রাইটের মাধ্যমে তথ্য সংরক্ষিত হয়। এই ডিস্কটি যতো তারা তারি ঘুরবে তত দ্রুততার সাথে ডাটা রিড বা রাইট হয়। HDD এর স্প্রিট সাধারণত ৫৪০০ rpm থেকে ৭২০০ rpm পর্যন্ত হয়ে থাকে। তবে সার্ভারের স্প্রিট একটু বেশি ১৫০০ rpm। আকৃতির দিক থেকে কম্পিউটারের ৩.২ ইঞ্ছি এবং ল্যাপটপ এর ২.৫ ইঞ্ছি হার্ড ডিস্ক রয়েছে। আজ থেকে প্রায় ৬৫ বছর আগে ১৯৫৬ সালে IBM কম্পানি এই ডিভাইসের সাথে আমাদের প্রথম পরিচয় করিয়ে দেয়।
HDD এর সুবিধা ও অসুবিধা :
প্রত্যেকটি জিনিসেরই সুবিধা এবং অসুবিধা রয়েছে। এসব ডিভাইসের ও সুবিধা-অসুবিধা আছে। এক্ষেত্রে হার্ড ডিস্ক এর সুবিধাগুলো হলো,
হার্ড ডিস্ক বাজার মূল্য কম তাই কিছু টাকার বিনিময়ে এটি ক্রয় করা যায়। বর্তমানে একটি ১ টেরাবাইট বা ১০২৪ গিগাবাইট হার্ড ড্রাইভের দাম ৩৫০০টাকার আশেপাশে হয়ে থকে। এটি ক্রয় করার সময় অনিক ধরনের ভেরিয়েন্টে পাওয়া যায়, যেমন ২tv, ৫tv, ১০tv ইত্যাদি। এটা খুব সহজেই পাওয়া যায় আর্থাৎ যেকোন কম্পিউটার ডিভাইস মার্কেটে পাওয়া যায়। এছাড়াও আর কিছু সুবিধা রয়েছে।
এবার জানা যাক অসুবিধা নিয়ে। হার্ড ডিস্ক এর অসুবিধার মধ্যে প্রথম অসুবিধা হলো এটিতে কিছু মভিং পারটস্ থাকার কারনে এটা খুব সামান্য আঘাতে নষ্ট হয়ে যেতে পারে এমন কি এটি হাত থেকে পড়ে গেলে ডেমেজ হয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা খুব বেশি। এমন অবস্থায় এটিতে থাকা তথ্য গুলো মুছেও যেতে পারে। দ্বিতীয়ত এটির লাইফ টাইম কম থাকায় ৪ থেকে ৫ বছর পরপর এটি চেঞ্জ করতে হয়। কিন্তু ৪-৫ বছর এটি ভালোভাবেই ব্যবহার করা যায়। আর মূভিং পার্টস থাকায় বা এতে যেহেতু ডিস্ক ঘোরার মাধ্যমে ডাটা সেভ হয় তাই এটিতে খুব একটা বেশি স্প্রিট পাওয়া যায় না বললেই চলে। তাছাড়াও মূভিং পার্টস থাকার কারণেই এটি বেশি পাওয়ারের প্রয়োজন হয়।
SSD কি?
SSD এর পূর্ণরূপ হলো Solid State Drive। এই নাম হওয়ার কারণ হলো এতে কোনো মূভিং পার্টস থাকে না। মুভিং পার্টস না থাকাতে এর মধ্যে থাকে ন্যান্ড ফ্ল্যাশ মেমরী যা নন ভোলটাইল বা ভুলে যাবে না এমন ধরনের ফ্ল্যাশ মেমরী। এতে ডাটা সেভ হয় সার্কিটের মাধ্যমে, মেমরি বা পেইন্ড্রাইভের ন্যয়। SSD তে ডাটা সংরক্ষণ করার জন্য কন্ট্রোলার ইউনিট থাকে যেটি খুব দ্রুততার সাথে ডাটা প্রসেসিং করে SSD ন্যান্ড ফ্ল্যাশ মেমরীতে ডাটা সংরক্ষন করে থাকে। রিড এবং রাইটের গতি নির্ভর করে এই কন্ট্রোলার ইউনিটের উপরেই SSD ৩ ধরনের হয়ে থাকে SATA,mSATA এবং M.2। SATA SSD সাধারণত ২.৫ ইঞ্চি হার্ড ড্রাইভ আকারে হয়ে থাকে। mSATA ছোট বোর্ড আকারে হয়ে থাকে। অন্যদিকে M.2লম্বাই পিসিবি বোড আকারে হয়ে থাকে। সাধারন SATA ইন্সটলেশনের নিয়ম হার্ড ড্রাইভ ইন্সটলেশন মতই। কিন্তু mSATA এবং M.2 এর ক্ষেত্রে মাদারবোর্ডে আলাদা স্লট থাকে।
SSD এর সুবিধা ও অসুবিধা :
SSD এরও কিছু সুবিধা ও অসুবিধা আছে। প্রথমে আলোচনা করা যাক এটির সুবিধা নিয়ে। সুবিধা গুলো হলো,
SSD এর স্প্রিট অনেক ভালো হওয়ার কারণে এর পার্ফারমেন্সও অনেকটাই সন্তসজনক হয়ে থাকে। এটিতে ডিজিটাল সার্কিট সিস্টেম থাকাই সামান্য কোনো আঘাতে বা হাত থেকে পরে গেলে ডেমেজ হয়ে যাওয়ার আশঙ্খাও কম বা নেয় বললেই চলে। এটি অনেক কম পাওয়ার ব্যবহার করে ফলে অনেকটাই বিদ্যুৎ সাশ্রয়ী ফলে আপনার খরচ কম হবে বা অল্প পরিমাণ খরচ হবে। ডিজিটাল সার্কিট সিস্টেম থাকাই লাইফ টাইমও অনেক বেশি হয়ে থাকে।
সুবিধার পাশাপাশি এটির কিছু অসুবিধাও আছে। অসুবিধাগুলোর মধ্যে অন্যতম অসুবিধা হলো এটির দামে। এটির দাম তুলনামূলক একটু বেশি। নতুন টেকনোলজি হওয়ায় সব মার্কেটেও পাওয়া যায় না এটি এবং এটির কেপাসিটিও কম। এটি ২৫৬gb, ৫১২gbএবং ১tv এই তিন সাইজের হয়ে থাকে। এজন্যই এটির দাম এতো বেশি।
SSD ও HDD এর পার্থক্যঃ
SSD ও HDD এই দুইটির কাজ ডাটা সংরক্ষণ করা হলেও এই দুইটি ডিভাইস এক নয়, রয়েছে অনেকটাই পার্থক্য। পার্থক্য গুলো নিচে আলোচনা করা হলো;
HDD
- হার্ড ড্রাইভে কম দামে বেশি স্পেস বা জায়গা পাওয়া যায় যা তথ্য সংরক্ষনের জন্য ভালো।
- সাধারন হার্ড ড্রাইভ ৫০-১২০ মেগাবাইট পার সেকেন্ড রিড এবং রাইট করতে পারে।
- হার্ড ড্রাইভে স্পিনিং প্লেট থাকার কারণে CPU এ শব্দ, কম্পন ও গরমের মুখোমুখি হতে হয়।
- হার্ড ড্রাইভ যুক্ত PC তে Bootup হতে সময় লাগে ৩০-৪০ সেকেন্ড।
- হার্ড ড্রাইভ যুক্ত PC তে ফাইল ওপেন হতে ৩০% বেশি সময় লাগে।
- পাওয়ার বেশি ব্যবহার হয় ফলে অধিক বিদ্যুৎ অপচয় হয়।
- হার্ড ওয়ারের সব মার্কেটেই পাওয়া যায় বা সহজ লভ্য।
SDD
- সলিড স্টেট ড্রাইভ দামে বেশি হলেও ডাটা প্রসেসর জন্য অত্যান্ত কার্যকরি।
- সলিড স্টেট ড্রাইভ ২০০-৫০০ মেগাবাইট পার সেকেন্ড রিড এবং রাইট করতে পারে PCIE/M.2 এ ১.৪ জিবি পার সেকেন্ড রিড এবং রাইট করতে পারে।
- সলিড স্টেট ড্রাইভে সার্কিট থাকায় CPU এ শব্দ, কম্পন ও গরমের মুখোমুখি হতে হয় না।
- সলিড স্টেট ড্রাইভ যুক্ত PC তে Bootup হতে সময় লাগে ১০-১৩ সেকেন্ড।
- সলিড স্টেট ড্রাইভ যুক্ত PC তে ফাইল ওপেন হতে ৩০% কম সময় লাগে।
- পাওয়ার কম ব্যবহার হয় ফলে বিদ্যুৎ সাশ্রয়ি।
- হার্ড ওয়ারের সব মার্কেটে পাওয়া যায় না বা দুর্লভ্য।
কোনটি আপনার জন্য উত্তম?
HDD বা SSD কেনার আগে অবশ্যই ভাল ব্রান্ড চয়েজ করাটা গুরুত্তপুর্ণ। কারণ ভালো ব্রান্ডের প্রোডাক্ট আপনি ভাল সার্ভিস, ওয়ারেন্টি পাবেন নি:সন্দেহে। আপনি কোনটি কিনবেন তা পুরপুরি নির্ভর করে আপনার বাজেট এর উপর। আপনার বাজেট যদি কম হ্য় তবে হার্ড ডিস্ক কেনাটাই আপনার জন্য ভালো আর বাজেট যদি বেশি হ্য় তাহলে আপনি সলিড স্টেট ড্রাইভ কিনতে পারেন। আর আপনার বাজেট যদি মিডিয়াম হয় তবে একটি হার্ড ডিস্কের পাশাপাশি আপনার সামর্থ্য অনুযায়ী ২৫৬ গিগাবাইট বা ৫১২ গিগাবাইট এর যেকোনো একটি লাগিয়ে নিতে পারেন।
আরো জানুন কম্পিউটার শর্টকাট টিপস এবং কৌশল আপনার জানা উচিত