কম্পিউটার কিভাবে কাজ করে ?
কার্য পদ্ধতি
একুশ শতকের বিষ্ময়কর আবিষ্কার গুলোর মধ্যে অন্যতম একটি হলো কম্পিউটার। যা দ্বারা আশ্চার্যজনক অনেক কাজ করা সম্ভব এবং যেকোনো কাজ দ্রুত ও সহজভাবে করা যায়। কম্পিউটার কাজ করে বাইনারি সংখ্যা পদ্ধতিতে ।কম্পিউটার বোঝে শুধু ০,১ বাইনারি সংখ্যা। ‘১” বলতে বুঝাই হ্যা আর “০” বলতে বুঝাই না । আমরা কম্পিউটারের মনিটরে যা দেখি সবই এই বাইনারি পদ্ধতিতে হয়ে থাকে অর্থাৎ আমরা যা ইনপুট করি তা অক্ষর > বিদ্যুৎ > বাইনারী সংখ্যা > অক্ষর, এই পদ্ধতিতে আউটপুট হিসাবে ঠিক একই ভাবে আমাদের সামনে তুলে ধরে ।
কম্পিউটারের কাজ করার জন্য নিজস্ব কোন বুদ্ধি নাই। কম্পিউটারকে কাজ করার জন্য যে সমস্ত তথ্য দেয়া হয় তা তার মেমোরিতে সেভ করে রাখে এবং পরবর্তীতে নির্দেশ অনুযায়ী সেই সমস্ত তথ্য প্রক্রিয়াকরণের মাধ্যমে নির্ভূলভাবে উপস্থাপন করে থাকে। যে তথ্য বা ডাটা কাজ করার জন্য কম্পিউটারে দেয়া হয় সেই কাজটিকে বলা হয় কম্পিউটারে ইনপুট (Input) দেয়া। ইনপুট দেয়ার পর কম্পিউটারের নিয়ন্ত্রণ অংশ প্রক্রিয়াকরণের মাধ্যমে যে ফলাফল উপস্থাপন করে তাকে বলে আউটপুট (Output)
বাইনারী পদ্ধতি ও সংখ্যা গণনাঃ
সাধারণত: অংক শাস্ত্রে যেসব সংখ্যা অহরহ ব্যবহার করা হয় তাকে চলতি ভাষায় দশমিক সংখ্যা বলে।এই দশমিক সংখ্যা পদ্ধতিতে আছে দশটি সংখ্যা। দশের উপর ভিত্তি করেই এই সংখ্যাগুলোর একটা দল গড়ে উঠেছে। অংকের যাবতীয় সমাধান এই দশটি সংখ্যা দিয়েই হয়। যেমন ৫০ এবং ৬০ অংকটিকেই ধরা যাক। এখানে ৫এর ১০গুণ হচ্ছে ৫০ এবং ৬এর ১০গুণ হচ্ছে ৬০। এখানে ০ থেকে ৯ পর্যন্ত সংখ্যা দিয়ে দশমিক সংখ্যা গঠিত।
এখানে ৯০৪১ এই অংকটি লিখতে আমরা ৯, ০, ৪, ১ সংখ্যা ব্যবহার করেছি। এখানে অন্যভাবেও কিন্তু এটাকে লেখা যায়। যেমন ৯´১০০০+০´১০০+৪´১০+১´০=৯০৪১। অর্থাৎ আমাদের দশমিক পদ্ধতির হিসাবের রূপটা এমন যে, একক=১, দশক=১০, শতক=১০০, সহস্র=১০০০। এগুলো হলো আমাদের সৃষ্ট দশমিক হিসাব পদ্ধতি। কম্পিউটার আমাদের এই দশমিক পদ্ধতি বোঝে না। সে বোঝে বাইনারী সংখ্যা। এই বাইনারী সংখ্যা গুনতে কম্পিউটারও তার নিজের পদ্ধতি অনুসরণ করে। অবশ্য তার আছেতো মাত্র দু’টো সংখ্যা ০ এবং ১। এরমধ্যে বড় সংখ্যা হচ্ছে ১। কিন্তু কম্পিউটারকে যদি ১ থেকে কোন বড় সংখ্যা হিসেব করতে হয় সেক্ষেত্রে সে ১ এর পাশে একটি ০ বসিয়ে নেয় অর্থাৎ ১০। তার থেকেও কোন বড় সংখ্যা হিসেব করতে ১০ এর জায়গায় ১১ ধরবে। অতএব তার কাছে-
শূন্য=০, এক=১, দুই=১০, তিন=১১, চার=১০০, পাঁচ=১০১, ছয়=১১০, সাত=১১১, আট=১০০০ইত্যাদি।
এই হিসেবে বাইনারী পদ্ধতির কোন সংখ্যাকে যদি পাশাপাশি সাজিয়ে একক, দশক, শতক, সহস্র ইত্যাদি হিসেবে গণনা করা হয় তাহলে দেখা যাবে-বাইনারী একক=১(কারণ এক=১), দশক=২(কারণ দশ=২), শতক=৪(কারণ ১০০=৪), সহস্র=৮(কারণ ১০০০=৮)ইত্যাদি।
ধরা যাক বাইনারী ১১১১ সংখ্যাটিকে সাধারণ দশমিক সংখ্যার পদ্ধতিতে বদলে দিতে হবে। তাহলে প্রথমেই সহস্র, শতক, দশক, একক হিসেবে সাজিয়ে নিতে হবে সংখ্যাটিকে। তাহলে এমনটি দাড়ায়-
একক ১=১, দশক ১=২, শতক ১=৪, সহস্র ১=৮। এদের প্রত্যেকের মান হিসেব করলে পাওয়া যাবে-
১´৮+১´৪+১´২+১´১=১৫। তার মানে ১১১১বাইনারী সংখ্যার দশমিক মান ১৫।
এসকি বা এসকাই কোড কি?
সব ধরণের কম্পিউটারে যে কমন বা সাধারণ কোড ব্যবহার করা হয়ে থাকে তাকে এসকি বা এসকাই কোড বলে।কম্পিউটার যখন সবেমাত্র তৈরি হয়েছে সেই প্রথমদিকের কথা, তখন তাদের নির্মাতারা নিজেদের সুবিধামত এই এসকি কোড তৈরি করে নিতেন।ফলে তাদের এই কোড বাইরের কেউ সহজে পড়তে পারতো না। এতে করে বিপাকে পড়ে যেত সাধারণ ব্যবহারকারিরা।একটি নির্দিষ্ট কোন কোম্পানীর সিষ্টেমের সাথে অন্য কোম্পানীর সিষ্টেম মিলতো না।একারণে কম্পিউটারও ঠিকমতো কাজ করতে পারতো না। কম্পিউটার নির্মাণের ক্ষেত্রেও যখন এই ধরণের সমস্যা সৃষ্টি হলো, তখন নির্মাতা প্রতিষ্ঠানগুলো সবাই মিলে একটি আন্তর্জাতিক কোড তৈরি করে নিলেন।যার সাহায্যে আমেরিকার কম্পিউটারে বসে ব্যবহারকারী যা বুঝবে, বাংলাদেশের অজ পাড়াগায়ের ব্যবহারকারীও তাই বুঝবে।এই কোডকেই বলা হয় এসকি বা এসকাই কোড।তারপর থেকে পৃথিবীর সব কম্পিউটার নির্মাতারা তাদের কম্পিউটারে এই আন্তর্জাতিক এসকি কোড ব্যবহার করে আসছেন।এসকি কোডে প্রত্যেক অক্ষর বা সংখ্যার জন্য ৭টি বিট ব্যবহৃত হয়। এতে বামদিকের ৩টি বিটকে বলা হয় জোন এবং ডানদিকের ৪টি বিটকে বলা হয় নিউমেরিক, এগুলোর সাথে আরও একটি প্যারিটি বিট যোগ করা হয়। এভাবেই ৮টি বিটের সমন্বয়ে গড়ে তোলা হয় একটি বাইট বা একটি অক্ষর।
কম্পিউটারে কোড ব্যবহারঃ
পূর্বেই আলোচনা করা হয়েছে কম্পিউটার অফ আর অন পদ্ধাততে কাজ করে। অফ অর্থাৎ ০, আর অন অর্থাৎ ১, এর বাইরে বা মাঝামাঝি কোন কিছুই বোঝে না আমাদের কম্পিউটার। কম্পিউটারের মধ্যকার ইন্টিগেট সার্কিটের মধ্যদিয়ে যখন উচ্চমাত্রার বিদ্যুৎ প্রবাহিত হয় তখন সেই বিদ্যুৎকে বেশ কিছু ট্রানজিষ্টর সুইচের মতো কাজ করে। তারা সেই বিদ্যুৎকে অফ আর অন এর মাধ্যমে নিয়ন্ত্রণ করে। ট্রানজিষ্টরগুলো এই বিদ্যুৎ স্পন্দন বা পালসকে কখনো ঘুরিয়ে দেয় আবার কখনো পিছনে ধরে রাখে। এইসব ট্রানজিষ্টর সুইচকে গেট বলা হয়। একটা সাধারণ গেটের থাকে দুটো করে পয়েন্ট। এই পয়েন্টকে বলা হয় টার্মিনাল। এখান থেকেই গেট পালস সংগ্রহ করে।তবে সেই পালস সার্কিটে পাঠাবে কি পাঠাবে না সেটা কিন্তু নির্ভর করে পালসের ধরণের উপর। এক ধরণের গেট আছে যারা দুটো টার্মিনাল দিয়ে পালস গ্রহণ করে এবং সেই পালস পুরো সার্কিটে ছড়িয়ে দেয়- এর নাম ‘এন্ড গেট’।আর এক ধরণের গেট আছে একটা বা দুটো টার্মিনাল দিয়ে পালস গ্রহণ করে-এর নাম ‘অর গেট’।‘নর গেট’ নামের আর একটা গেট আছে যার মাধ্যমে পালস ছড়িয়ে পড়ে সার্কিটে। এইরকম হাজার হাজার গেট পুরো সার্কিটে সাজানো থাকে। এর মধ্যদিয়ে ছুটোছুটি করে পালস বা স্পন্দন। এইসব পালস কখনো যোগ, কখনো বিয়োগ, কখনো তুলনা, কখনো স্মৃতি থেকে তথ্য উদ্ধার, কখনো স্মৃতিতে নতুন কোন তথ্য যোগ করে। এভাবে তাদের অক্লান্ত পরিশ্রমের ফলেই আমরা কম্পিউটারের পর্দায় ফুটিয়ে তোলা অক্ষর বা সংখ্যা দেখতে পাই।
কম্পিউটারের বাসঃ
কম্পিউটারে প্রবেশ করানো তথ্য থেকে সৃষ্টি পালসগুলোকে জটিল গেটগুলোর মধ্যদিয়ে প্রবাহিত করতে যে মাধ্যমের প্রয়োজন হয় তাকেই কম্পিউটারের ‘বাস’ বলে।এই বাসকেই ‘ডাটা বাস’ বলা হয়।এই বাসের সাহায্যে সিপিইউ-এ তথ্য বা নির্দেশ দেয়া, সিপিইউ থেকে তথ্য বা নির্দেশ নিয়ে আউটপুটে সেটাকে প্রদর্শণ করা ইত্যাদি গুরুত্বপূর্ণ কাজগুলো করে থাকে কম্পিউটার।বিভিন্ন জটিল গেট এর মধ্যদিয়ে পালস বা স্পন্দন চলাচলের কাজটিও মহান দায়িত্বের সাথে পালন করে এই ডাটা বাস। এই ডাটা বাস চলাচলের জন্য সিপিইউ এর সাথে কম্পিউটারের অন্যান্য অংশ অসংখ্য তার দিয়ে সংযুক্ত করা থাকে। এগুলোকে ইনপুট-আউটপুট পোর্ট বা আই.ও পোর্ট বলে। কম্পিউটারে এই ধরণের বাস বেশ কয়েকটি থাকে। সেগুলোর মধ্যে কম্পিউটারকে নির্দেশ প্রদাণের জন্য যে বাস ব্যবহার করা হয় তাকে বলে ‘কন্ট্রোল বাস’।আবার যে বাসের সাহায্যে কম্পিউটারের ভেতরের স্মৃতির তথ্য পড়া হয় তাকে বা সেই বাসকে বলে ‘এ্যাড্রেস বাস’ ইত্যাদি উল্লেখযোগ্য।