মোবাইল ফোন থেকে দূরে থাকার উপায়
আজকাল মোবাইল ফোন ব্যবহার করে না এমন মানুষ খুজে পাওয়া বিরল। আর যত দিন যাচ্ছে মানুষ ততো নির্ভরশীল হচ্ছে ।এটি আমাদের ইন্টারনেট সুবিধা সহজ করে দেওয়ার সাথে সাথে এটি আমাদের অনেক কাজে সাহায্যও করে থাকে। এটি আমাদের নানান কাজ সহজ করে দেয়। কিন্তু এটি বিপদজ্জনক হয়ে ওঠে তখনি যখন এটার নেতিবাচক ব্যবহার করা হয়। আমরা দিন দিন স্মার্ট ফোন আসক্তি তে ডুবে যাচ্ছি।
এক্ষেত্রে নেতিবাচক অর্থাৎ ক্ষতিকর দিকটি হলো এটির মাত্রাতিরিক্ত ব্যবহার। এবং অনেক চেষ্টা করা সত্বেও ফোন থেকে দূরে থাকতে না পারা। তখন এটি আসক্তির রূপ নেয়। আর যাকে বলা হয় স্মার্ট ফোন আসক্তি। অন্যান্য আসক্তির মতো এটিও আমাদের শারিরীক ও মানসিক ক্ষতি সাধন করে। এমনকি এটি আমাদের মূল্যবান অনেক সময় নষ্ট করে।
একটি নোটিফিকেশনের শব্দ শুনে ফোন হাতে নিলেই কতটা সময় যে কিভাবে কোন দিক দিয়ে চলে যায় তা টেরও পাওয়া যায় না। আপনিও কি এই সমস্যাই ভুগছেন? আপনিও কি স্মার্ট ফোনে আসক্ত হয়ে পরেছেন? চিন্তার কোন কারণ নেই সমস্যা যতই বড় হোক না কেন সমাধান তো আছেই। এই আসক্তি থেকে আপনি কিভাবে খুব শীঘ্রই মুক্তি পেতে পারেন বা পাওয়ার জন্য আপনার কি করণীয় তাই এই আর্টিকেলের আলোচ্য বিষয়। তো প্রথমেই আসক্তিটির কারণ জেনে নেয়া যাক,
স্মার্ট ফোন আসক্তির কারণ কি?
প্রথমদিকে আমরা যখন স্মার্ট ফোনে ইন্টারনেটে বিশেষ করে গেমস বা সোসাল মিডিয়ায় সময় দিই তখন আমাদের ব্রেইন থেকে ডোপামিন নিস্বরণ হয়। তখন আমাদের মনে একধরনের আনন্দ বা খুশি কাজ করে। আর এরপর আমরা পুনরাই সেই কাজটি করতে চাই। বারবার কাজটি করার ফলে আমাদের এটির প্রতি আসক্তি চলে আসে। আর তারপর আমরা আমাদের আনিচ্ছা সত্বেও কাজ টা করতে থাকি। এক পর্যায়ে দেখা যায় আমরা স্মার্ট ফোনের প্রতি প্রবল ভাবে নির্ভরশীল হয়ে পরি।স্মার্ট ফোনের প্রতি এই মাত্রাতিরিক্ত নেশা বা আসক্তি যাকে বিশেষজ্ঞরা নোমোফোবিয়া বলে থাকে।
চিকিৎসা মনোবিজ্ঞানী Catherine Steiner-Adair বলেন, “অনেক মানুষেরই কিছুক্ষণ পরপর স্মার্টফোন চেক করার অভ্যাস আছে। প্রতিটি নোটিফিকেশন, লাইক, কমেন্ট এসব যেন তাঁদের মস্তিষ্কে একটা আনন্দ সংবাদের মতো প্রতিক্রিয়া করে এবং তাঁরা উদগ্রীব হয়ে ফোন দেখতে শুরু করেন।”
এটি থেকে পরিত্রাণের জন্য কিছু বৈজ্ঞানিক কৌশল রয়েছে। যা নিয়মিত অনুসরণ করলে এটি থেকে স্বল্প কিছু দিনের মধ্যেই মুক্তি পাওয়া সম্ভব। কৌশল গুলো হলো,
স্মার্ট ফোন আসক্তি পরিত্রাণের জন্য নিয়মিত কিছু কৌশলঃ
-
প্রথমেই মনোস্থির করুন
আপনিই শুধু পারেন আপনার এই আসক্তি প্রতিরোধ করতে। এই আসক্তি কাটাতে হলে সর্বপ্রথম দরকার আত্ম-উপলব্ধি ও ইচ্ছাশক্তি। এর ক্ষতিকর দিক গুলো চিন্তা করে এটি থেকে বেরিয়ে আসার প্রবল ইচ্ছা পোষণ করতে হবে। নিজের ইচ্ছার উপর অটল থাকতে হবে এবং সে অনুযায়ি কাজ করতে হবে। স্মার্ট ফোনের ব্যবহারে নিজেই নিজের উপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করুন।
-
ঘুম থেকে উঠেই স্মার্ট ফোনের ব্যবহার করা থেকে বিরত থাকুন
সকাল বেলা ঘুম থেকে উঠে কম পক্ষে এক ঘন্টা ফোনের সংস্পর্শে আসবেন না। কেননা, আমাদের সারাদিন কেমন করে কাটবে তা অনেকাংশে নির্ভরকরে সকাল বেলার উপর। দিনের শুরুই যদি হয় স্মার্ট ফোন দ্বারা তবে সারাদিন স্মার্ট ফোন থেকে দূরে থাকবেন কিভাবে? তাই সকাল বেলা ফোন ব্যবহারের পরিবর্তে কিছুটা সময় শরীরচর্চা করতে পারেন।
-
কিছু নির্দিষ্ট সময়ের জন্য ফোন সরে রাখুন
খাওয়ার সময় ফোন ব্যবহার করবেন না। তাতে করে আপনি মনোযোগের সাথে খারার খেতে পারবেন। ফোন কল ছাড়া কোন আড্ডা-সভাতে ফোন হাতে নিবেন না। কেননা, বিশেষজ্ঞরা বলছেন, স্মার্টফোনের আসক্তি অনেকটাই সংক্রামক। কোনো ঘরে বা কোনো আড্ডায় কেউ একজন হাতে স্মার্টফোন তুলে নিলে দ্রুতই অন্যরাও একে একে হাতে নিয়ে তাতে নজর বুলাতে শুরু করেন।
-
শুধুমাত্র প্রয়োজনীয় কাজে স্মার্টফোন ব্যবহার করা
প্রয়োজন ছাড়া স্মার্ট ফোন ব্যবহার করবেন না। যখন ফোনের খুবই প্রয়োজন তখনই শুধু ফোন ব্যবহার করুন। আর যতটুকু প্রয়োজন ততক্ষণই ফোন ব্যবহার করুন। অপ্রয়োজনীয় অ্যাপ বা সফটওয়ার ব্যবহার হতে বিরত থাকুন। অপ্রয়োজনীয় অ্যাপ বা সফটওয়ারগুলো আজই আনস্টল করুন।
-
ফোনের নোটিফিকেশন বন্ধ করে রাখুন
ফোনের কোন অ্যাপ এর নোটিফিকেশন বেল সাইলেন্ট করে রাখুন। কেননা, একটা নোটিফিকেশন বেল আপনার মনযোগ কারার জন্য যথেষ্ট। সেটা আপনিও ভালোভাবে জানেন। নোটিফিকেশন চেক করতে গিয়েই আমরা সোসাল মিডিয়া বা অন্যান্য প্লাটফ্রমে ঘন্টার পর ঘন্টা শেষ করে ফেলি। তাই সব সময় নোটিফিকেশন বেল সাইলেন্ট করে রাখুন।
-
সোশ্যাল অ্যাপের ব্যবহার কমিয়ে দিন
আমরা ফোনে অধিকাংশ সময় ব্যয় করি সাধারনত সোশ্যাল প্লাটফর্মেই। সুতরাং, এগুলোর ব্যবহা্র আমরা ভারসাম্য করতে পারলে ফোনের আসক্তিও কমে যাবে। তাই যতটা সম্ভব প্রয়োজন ছাড়া সোশ্যাল প্লাটফর্মে সময় দেওয়া বন্ধ করুন।
-
গেমস খেলা থেকে বিরত থাকুন
অনলাইন বা অফলাইন দুই ধরনের গেমস থেকেই বিরত থাকুন। কোন মতেই গেমস খেলা যাবে না। অবসর সময়ে হঠাৎ দু-এক বার সেটা আলাদা বিষয়। কিন্তু নিয়মিত বা প্রতিদিন দু-এক বারও খেলা যাবে।আর যদি গেমসের প্রতি আপনার আসক্তি থাকে তবে তো কোন মতেই গেমস ইনস্টল ও করা যাবে না। যদি ফোনে ইনস্টল করাও থাকে তবে আজ এইমুহুর্তেই আনস্টল করে ফেলুন।
-
অন্যান্য কাজে নিজেকে ব্যস্ত রাখুন
নিজেকে সবসময় কাজে ব্যস্ত রাখুন। সবচেয়ে ভালো হয় নিজের পরিবারের সাথে সময় কাটালে। পরিবারকে সময় দিলে মন এমনিতেই ভালো থাকে। তাই নিজের পরিবারকে যথেষ্ট্য সময় দিন। এর পাশাপাশি বই পড়া বা খেলা ধুলায় নিজেকে নিয়োজিত করুন। সৃজনশীল বিভিন্ন কাজে অংশ গ্রহণ করুন।
-
ঘুমানোর আগে ফোন বন্ধ রাখুন
সাম্প্রতিককালে ঘুম কম হওয়া বা অনিদ্রার অন্যতম একটি কারণ হলো স্মার্টফোন আসক্তি। তাই চেষ্টা করুন বিছানায় শুতে যাওয়ার সময় স্মার্টফোন সঙ্গে না রাখার। পারলে ফোন টি বন্ধ করে রাখতে পারেন। এক্ষেত্রে ফোনে এলার্মও দেওয়ার পরিবর্তে ঘড়িতে এলার্ম দেওয়া যাবে। কেননা ফোনের এলার্ম বন্ধ করতে গিয়ে ও আমরা অনেক সময় সোশ্যাল মিডিয়া থেকে ঘুরে আসি। আর যাতে করে দেখা যায় সোশ্যাল মিডিয়াতে কিছুটা সময় দিতে গিয়ে আমাদের সকাল বেলার পরিকল্পনাটাও নষ্ট হয়ে যায়।
উপরিউক্ত পয়েন্ট গুলো অনুসরণ করলে আপনি স্মার্ট ফোন আসক্তি থেকে সম্পূর্ণ মুক্তি পেতে পারেন। তবুও কোন আসক্তি থেকে মুক্তি পেতে হলে আপনাকে প্রথমে যা করতে হবে তা হলো, নিজের প্রতি প্রতিজ্ঞা বদ্ধ থাকা। আপনি যদি নিজের প্রতি নিজের দেওয়া কথা রাখেন তবেই আপনি এই স্মার্ট ফোন আসক্তি থেকে মুক্তি পাবেন। নয়তো এটি আপনার আসক্তিই থেকে যাবে। স্মার্ট ফোনকে নিজের আয়ত্বে রাখুন। সবসময় চেষ্টা করবেন প্রযুক্তিকে নিজের নিয়ন্ত্রণে রাখার নতুবা, প্রযুক্তিই আপনাকে নিয়ন্ত্রণ করবে।
-
বেশি বেশি বই পড়ার অভ্যাস গড়ে তোলা
সারাদিনের কিছু সময় বই পড়ার জন্য রেখে দিতে হবে যত কাজই থাকুক না কেন খাওয়া, শোয়ার মতো বই পড়াতেও অভ্যাসের মধ্যে নিয়ে আসতে হবে। কোথাও যাতায়াতের সময়ে সঙ্গে যে কোনও একটি বই রাখা যেতে পারে। সময়-সুযোগ বুঝে পড়ার অভ্যাস জারি রাখতে পারেন। এতে স্মার্ট ফোন ব্যবহার কমে যাবে।