যুক্তরাজ্যে UK স্টুডেন্ট ভিসার জন্যে আবেদনের নিয়ম

দেশের বাইরের কোন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান থেকে অন্তত একটি ডিগ্রি গ্রহণের ইচ্ছা আমাদের দেশের অনেক মেধাবী শিক্ষার্থীদেরই আছে। বিশেষ করে যুক্তরাজ্য বা UK( United Kingdom) এর কোন কলেজ বা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে একটি ডিগ্রি অর্জন মানে তো সোনার হরিণ হাতে পাওয়া। কিন্তু কেবল ইচ্ছা থাকলেই কি এই সোনার হরিণ পাওয়া যায়? না, এর জন্যে আপনাকে বেশ কিছু শর্ত পূরণ করে যথাযথ নিয়মে আবেদন করতে হবে। তবেই সুযোগ হবে পৃথিবী বিখ্যাত কোন এক কলেজ বা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র হওয়ার।
আজকে আমরা UK তে কোনো বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়তে চাইলে কিভাবে স্টুডেন্ট ভিসার আবেদন করবেন তা জানাব। সেইসাথে জানাব যুক্তরাজ্যে পড়াশোনা করার খরচ এবং প্রয়োজনীয় আরও অনেক তথ্য।
পড়াশোনার জন্যে কেন বেছে নিবেন UK কে?
যুক্তরাজ্যে বাংলাদেশসহ পৃথিবীর প্রায় ৬০ টি দেশ থেকে ছাত্রছাত্রীরা পড়তে আসে। এদেশের বেশ কয়েকটি বিশ্ববিদ্যালয়ের পড়াশোনার মান পুরো পৃথিবীতে স্বীকৃত এবং সেরা। সারাবিশ্বের সেরা প্রথম ছয়টি বিশ্ববিদ্যালয়ের মধ্যে চারটি ইউকে তে অবস্থিত। তাই এই বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর পড়ালেখার মান নিসন্দেহে অসাধারণ।
এছাড়া আরও একটি বড় কারণ হলো এদেশের বিশ্ববিদ্যালয়ের ডিগ্রির মূল্য বিশ্বের যেকোনো দেশের যেকোনো প্রতিষ্ঠানে স্বীকৃত। তাই ইউকে তে পড়াশোনা করতে পারলে ভালো প্রতিষ্ঠানে চাকরি পাওয়া আপনার জন্যে সহজতর হবে।
আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন যেসব বিশ্ববিদ্যালয় রয়েছে তার মধ্যে যুক্তরাজ্যের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে টিউশন ফি সহ অন্যান্য খরচ তুলনামূলক কম। তাই যাদের সাশ্রয়ী বাজেটে ভালো মানের কলেজ বা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার ইচ্ছা রয়েছে তারা যুক্তরাজ্যকে পছন্দের শীর্ষে রেখে আবেদনের চেষ্টা করতে পারেন।
যুক্তরাজ্যে UK পড়াশোনার খরচ
ইউকে তে যেকোনো ধরনের পড়াশোনার খরচ নির্ভর করে আপনি কোন বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হচ্ছেন এবং কোন কোর্সে ভর্তি হচ্ছেন তার উপর। তবে সাধারণত বাংলাদেশি একজন ছাত্রের যুক্তরাজ্যে পড়াশোনা করতে টিউশন ফি বাবদ বছরে প্রায় ৯ হাজার পাউন্ড থেকে ১৩ হাজার পাউন্ড দিতে হয়। অর্থাৎ প্রায় ১১ লাখ টাকা থেকে ১৫ লাখ টাকা পর্যন্ত খরচ হয়। এছাড়া থাকা খাওয়ার খরচ ব্যক্তির নিজের উপর নির্ভর করে।
তাছাড়া লন্ডন শহরের ভিতরে এবং বাইরে স্থানভেদে টিউশন ফি এর তারতম্য হয়। লন্ডন শহরের ভিতরের কলেজ বা বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্যে প্রায় ৯ হাজার পাউন্ড এবং লন্ডন শহরের বাইরের বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্যে প্রায় ৭ হাজার পাউনন্ডের মতো টিউশন ফি দিতে হয় বছরে।
UK এর বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির যোগ্যতা
যুক্তরাজ্যে স্টুডেন্ট ভিসার পদ্ধতিকে পিবিএস বা পয়েন্ট বেইসড সিস্টেম টায়ার ফর জেনারেল স্টুডেন্ট ভিসা হিসেবে বলা হয়। এই সিস্টেমে মোট ৪০ পয়েন্ট থাকে। এর মধ্যে আপনার পছন্দের বিশ্ববিদ্যালয়ের পড়ার সুযোগ পাওয়ার যোগ্যতার জন্যে ৩০ পয়েন্ট এবং আর্থিক সামর্থ্যের জন্যে ১০ পয়েন্ট নির্ধারণ করা হয়েছে। কোন ছাত্রছাত্রী ৪০ পয়েন্ট পেলেই কেবল ইউকে তে স্টুডেন্ট ভিসার আবেদন করতে পারবে।
এখানে আরেকটি বিষয় লক্ষ্যনীয় তা হলো যে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের জন্যে স্টুডেন্ট ভিসার আবেদন করতে চাচ্ছেন তা অবশ্যই র্যাংকিং এ উপরের দিকে থাকতে হবে এবং সরকার পরিচালিত শিক্ষা প্রতিষ্ঠান হতে হবে।
ইউকে তে পড়তে যেতে হলে আপনার শিক্ষাগত যোগ্যতা এস.এস.সি এবং এইচ.এস.সি অথবা সমমানের হতে হবে। তবে অবশ্যই রেজাল্ট ডি গ্রেডের উপরে থাকতে হবে। পাশাপাশি IELTS অথবা সমমানের সার্টিফিকেট থাকতে হবে। IELTS এর জন্যে প্রতি ব্যান্ডে ৫.৫ করে মোট ৬ পয়েন্ট থাকলে আপনি আন্ডার গ্রেজুয়েশন বা পোস্ট গ্রেজুয়েশনের জন্যে আবেদন করতে পারবেন। আর IELTS এ ৪.৫ করে প্রতি ব্যান্ডে ৫ পয়েন্ট থাকলে কোন ফাউন্ডেশন কোর্স বা ডিপ্লোমা কোর্সের জন্যে আবেদনের সুযোগ পাবেন।
আপনার আর্থিক স্বচ্ছলতার প্রমাণ হিসেবে জমা দিতে হবে টিউশন ফি পাঠানোর ২৮ দিন পরের ব্যাংক স্টেটমেন্ট এবং সার্টিফিকেট।
UK এর বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির আবেদনের জন্যে যা যা প্রয়োজন
ইউকে এর কলেজ বা বিশ্ববিদ্যালয়ে আবেদনের জন্যে নিচে উল্লেখ করা নথিপত্রগুলো প্রয়োজন।
- এস.এস.সি এবং এইচ.এস.সি বা সমমানের সার্টিফিকেট, IELTS বা সমমানের সার্টিফিকেট, মার্কশীট এবং সেই শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোর প্রধানের প্রশংসা পত্রের মূলকপি এবং সত্যায়িত ফটোকপি।
- পাসপোর্ট। পাসপোর্টের মেয়াদ অন্তত এক বছর থাকতে হবে। আপনার এস.এস.সি এর সার্টিফিকেটের এবং পাসপোর্টের তথ্যে মিল থাকতে হবে।
- আর্থিক সামর্থ্যের প্রমাণপত্র বা ব্যাংক স্টেটমেন্ট।
- সদ্যতোলা ছবি।
- আপনার ইংরেজিতে পারদর্শিতার প্রামাণপত্র।
- আপনার এলাকার থানায় যোগাযোগ করে নির্দিষ্ট একটি ফি দিয়ে পুলিশ ছাড়পত্র নিয়ে তা জমা দিতে হবে
ইউকে তে স্টুডেন্ট ভিসার জন্যে কিভাবে আবেদন করবেন?
ইউকে তে পড়ালেখার জন্যে শিক্ষার্থীদের আগ্রহের কারণে প্রতি সেশনেই ভর্তির প্রচুর চাপ থাকে। তাই এখানকার বিশ্ববিদ্যালয়গুলো থেকে বলা হয় apply early fly early। অর্থাৎ আগে আসলে আগে সুযোগ পাবেন। তাই সেশন শুরুর অন্তত দুই মাস আগে থেকেই আবেদনের প্রস্তুতি শুরু করা উচিত। কেননা এটি একটি জটিল প্রক্রিয়া। একটু ভুলের জন্যে সুবর্ণ সুযোগটি হাতছাড়া হয়ে যেতে পারে।
আবেদনের প্রক্রিয়াটি জেনে নেই চলুন।
- প্রথমেই দেশের বাহিরে যাওয়ার জন্যে যেসব মেডিকেল প্রয়োজনীয় পরীক্ষাগুলো করে দেয় সেরকম একটি মেডিকেলে গিয়ে পরীক্ষা করিয়ে মেডিকেল সার্টিফিকেট তৈরি করতে হবে। এজন্যে ৫ হাজার বা এর চেয়ে কিছু বেশি টাকা খরচ হতে পারে।
- ব্যাংকে প্রয়োজনীয় টাকা জমা দেয়া।
- আপনার রেজাল্ট এবং পছন্দের সমন্বয় করে কোন কলেজ বা বিশ্ববিদ্যালয়ের অফার লেটারের জন্যে আবেদন করা।
- সেই কলেজ বা বিশ্ববিদ্যালয়ের নির্ধারিত টিউশন ফি ব্যাংক ড্রাফট অথবা টিটি করে পাঠানো। টিউশন ফি পাঠানোর পরবর্তী সাত কর্মদিবসের মধ্যে কনফারমেশন অফ এক্সেপ্টেন্স ফর স্টাডিজ বা আবেদন গ্রহণের বিষয়টি আপনাকে জানানো হবে।
- ইউকে অ্যাম্বাসির ইমেইল এড্রেসে কনফারমেশনের ডিটেইলস মেইল করে এপয়েনমেন্ট নিতে হবে।
- অনলাইন বা ভিএএফ ফর্ম নং ৯ এবং এপেনডিক্স ৮ সঠিকভাবে পূরণ করে এর সাথে ১ কপি সদ্যতোলা রঙিন ছবি, ব্যাংক স্টেটমেন্ট এবং সকল সার্টিফিকেটের মূলকপি এবং ফটোকপি নির্দিষ্ট সময়ে ঢাকা বা সিলেটের ভিসা আবেদন অফিসে জমা দিতে হবে আবেদন ফি সহ।
সাধারণত ১৫ থেকে ২৫ দিনের মধ্যেই ফাইল রেডি হয়ে যায়। এরপর নির্দিষ্ট দিনে দূতাবাসে গিয়ে ইন্টারভিউ দিয়ে ভিসা সংগ্রহ করতে হয়।
যে কলেজ বা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির সুযোগ পেয়েছেন তাদের অফার লেটারে দেয়া ডেডলাইনের মধ্যেই সেখানে পৌছাতে হবে। তা নাহলে ভর্তি বাতিল হয়ে যাবে। তাই হাতে যথেষ্ট সময় রেখে ভিসার আবেদন করতে হবে এবং ভিসা সংগ্রহ করতে হবে। অনেক সময় শিক্ষা প্রতিষ্ঠান থেকেই ভিসার আবেদন সরবরাহ করা হয়। তবে সব প্রতিষ্ঠান এই সুযোগ দেয় না। সেক্ষেত্রে যুক্তরাজ্যের দূতাবাসে গিয়ে ভিসার আবেদন করে ভিসা সংগ্রহ করে নিতে হবে। তবে খেয়াল রাখতে হবে সমস্ত তথ্য যেন নির্ভুল হয়। এবং প্রয়োজনীয় কোন কাগজপত্র যেন বাদ না পড়ে। এভাবে সঠিক তথ্য ও নিয়ম অনুসরণ করে সহজেই ইউকে তে স্টুডেন্ট ভিসার আবেদন করে ভিসা সংগ্রহ করতে পারবেন। আশাকরি, উপরের তথ্যগুলো আপনাদের উপকারে আসবে।