বাংলাদেশে 5G ইন্টারনেট: সুবিধা, চ্যালেঞ্জ এবং ভবিষ্যতের দ্রুতগতি

বর্তমানে বিশ্বজুড়ে 5G ইন্টারনেট প্রযুক্তি অত্যন্ত দ্রুত জনপ্রিয় হয়ে উঠছে, এবং এটি অন্যান্য প্রযুক্তিগত খাতের মতো বাংলাদেশের জন্যও একটি গুরুত্বপূর্ণ মাইলফলক হতে চলেছে। ডিজিটাল যুগে, 5G প্রযুক্তি অত্যন্ত দ্রুত ইন্টারনেট গতি, কম বিলম্ব (latency), এবং উচ্চমানের কানেক্টিভিটির প্রতিশ্রুতি দেয়, যা নানা দিক থেকে বাংলাদেশের বিকাশকে ত্বরান্বিত করতে সহায়তা করবে।
বিশ্বের অন্যান্য দেশের মতো, বাংলাদেশও এই প্রযুক্তির দিকে দ্রুত পদক্ষেপ নিচ্ছে। বিশেষত, সরকারের ‘ডিজিটাল বাংলাদেশ’ উদ্যোগের সঙ্গে সঙ্গতি রেখে, 5G প্রযুক্তি দেশের ইন্টারনেট অবকাঠামোতে বিপ্লব ঘটাতে সক্ষম হবে। বাংলাদেশের প্রযুক্তি উন্নয়ন, ই-কমার্স, স্বাস্থ্য, শিক্ষা এবং অন্যান্য সেক্টরে 5G প্রযুক্তির ব্যাপক প্রভাব পড়বে। এই ব্লগে আমরা বাংলাদেশে 5G নেটওয়ার্কের বর্তমান অবস্থা, এর সুবিধা ও অসুবিধা, এবং ভবিষ্যতে এর সম্ভাবনা নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করব।
বাংলাদেশে 5G নেটওয়ার্কের আগমন (The Arrival of 5G Network in Bangladesh)
বাংলাদেশে 5G নেটওয়ার্কের আগমন একটি উত্তেজনাপূর্ণ বিষয়, যেহেতু এটি বাংলাদেশে ইন্টারনেটের গতি ও সেবা মানকে অনেক এগিয়ে নিয়ে যাবে। ২০২১ সালে সরকারের তরফ থেকে 5G নেটওয়ার্কের পরীক্ষামূলক সেবা শুরু করা হয় এবং তখন থেকেই অনেকেই ধারণা করছেন যে, আগামী কয়েক বছরের মধ্যে 5G সেবা পুরোপুরি চালু হবে। ২০২৩ সালের শেষের দিকে 5G নেটওয়ার্কের প্রবর্তন প্রত্যাশিত হলেও, নির্দিষ্ট সময়সীমা এখনও সম্পূর্ণ নিশ্চিত নয়।
পাইলট প্রকল্পের অংশ হিসেবে কিছু শহরে 5G পরীক্ষামূলকভাবে চালু করা হয়েছিল, যা গ্রাহকদের জন্য নতুন অভিজ্ঞতা তৈরি করেছে। বর্তমানে, গ্রামাঞ্চলে 5G কভারেজের মাধ্যমে ডিজিটাল বিভাজন কমানোর লক্ষ্যেও কাজ হচ্ছে। তবে, দেশের ইন্টারনেট অবকাঠামো এবং উন্নয়নশীল বাজারের কারণে সম্পূর্ণ 5G নেটওয়ার্কের জন্য যথেষ্ট সময় এবং বিনিয়োগ প্রয়োজন।
5G নেটওয়ার্কের সুবিধা ও অসুবিধা (Advantages and Disadvantages of 5G in Bangladesh)
সুবিধা (Advantages)
5G প্রযুক্তির সবচেয়ে বড় সুবিধা হল এর উচ্চ গতি এবং কম লেটেন্সি। বর্তমান 4G নেটওয়ার্কের তুলনায় 5G গতি ১০০ গুণ বেশি এবং লেটেন্সি অনেক কম, যা লম্বা ভিডিও কনফারেন্স, ভার্চুয়াল রিয়ালিটি (VR), অটোনমাস গাড়ি, এবং অন্যান্য সময়বদ্ধ প্রযুক্তি ব্যবহারে অত্যন্ত কার্যকরী। এর মাধ্যমে ব্যবসায়িক কার্যক্রম, স্বাস্থসেবা, শিক্ষা এবং ই-কমার্স খাতে ব্যাপক পরিবর্তন আসবে।
এছাড়া, 5G নেটওয়ার্কের মাধ্যমে দেশে আরও উন্নত এবং সাশ্রয়ী স্মার্ট সিটি ব্যবস্থা গড়ে তোলা সম্ভব হবে। এর মাধ্যমে বাংলাদেশের ডিজিটাল বাংলাদেশ কাঠামো আরও শক্তিশালী হবে এবং দ্রুত ডিজিটাল রূপান্তর সম্ভব হবে।
অসুবিধা (Disadvantages)
তবে, 5G প্রযুক্তির কিছু অসুবিধাও রয়েছে। প্রথমত, 5G প্রযুক্তি স্থাপন ও বাস্তবায়নে ব্যয়বহুল এবং সময়সাপেক্ষ। দেশের ইন্টারনেট অবকাঠামো শক্তিশালী করার জন্য প্রচুর বিনিয়োগ প্রয়োজন। দ্বিতীয়ত, 5G নেটওয়ার্কের জন্য প্রয়োজনীয় ইনফ্রাস্ট্রাকচার যেমন নতুন টাওয়ার এবং সিগন্যাল রিসিভারের স্থাপন, এটা শহরাঞ্চলে সহজ হলেও গ্রামাঞ্চলে চ্যালেঞ্জিং হতে পারে।
আরেকটি সমস্যা হলো 5G সেবার সীমিত কভারেজ, যা সার্বিকভাবে দেশের সব এলাকাকে আওতায় আনতে সময় নিবে। এছাড়া, 5G ব্যবহারকারীদের জন্য উচ্চতর মূল্য এবং সেবার নিরাপত্তার বিষয়ও যথেষ্ট উদ্বেগের কারণ হতে পারে।
বাংলাদেশে 5G নেটওয়ার্কের সম্ভাবনা (The Future Potential of 5G in Bangladesh)
5G নেটওয়ার্কের সুবিধা এবং অসুবিধা পর্যালোচনা করার পর, বাংলাদেশের জন্য এর সম্ভাবনা বিশাল। দেশের ব্যবসায়িক খাত যেমন ই-কমার্স, ব্যাংকিং, এবং ফিনটেক খাতগুলি 5G সেবা চালু হলে আরও আধুনিক এবং দ্রুততর হবে। বাংলাদেশের স্বাস্থ্যখাতেও 5G প্রযুক্তির মাধ্যমে দূরবর্তী চিকিৎসা (telemedicine) সেবা প্রসারিত হবে, যা চিকিৎসা সেবা প্রসারিত করতে সহায়তা করবে।
এছাড়া, 5G ইন্টারনেটের মাধ্যমে বাংলাদেশের শিল্পখাত এবং উৎপাদন খাতেও নতুন সুযোগ সৃষ্টি হবে। ফ্যাক্টরি অটোমেশন, স্মার্ট ম্যানুফ্যাকচারিং, এবং অন্যান্য আধুনিক প্রযুক্তির মাধ্যমে উৎপাদন ক্ষমতা বৃদ্ধি পাবে। সরকারের ডিজিটাল বাংলাদেশ প্রকল্পের লক্ষ্য, 5G প্রযুক্তি বাস্তবায়ন হলে আরও দৃশ্যমান হতে পারে।
5G vs 4G: বাংলাদেশে কোনটি ভালো? (5G vs 4G in Bangladesh)
বর্তমানে বাংলাদেশে 4G নেটওয়ার্ক অধিকাংশ জায়গায় ব্যবহৃত হলেও, 5G নেটওয়ার্কের সম্ভাবনা এবং তার সুবিধাগুলো দিন দিন স্পষ্ট হয়ে উঠছে। কিন্তু, বাংলাদেশে 5G প্রযুক্তি চালু হলে, 4G এবং 5G নেটওয়ার্কের মধ্যে কি পার্থক্য হবে? আসুন এক নজরে দেখে নেওয়া যাক:
4G নেটওয়ার্কের সুবিধা
বাংলাদেশে বর্তমানে 4G ইন্টারনেট ব্যবহৃত হয় এবং এটি অনেকটা জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে, কারণ 4G নেটওয়ার্কের মাধ্যমে গ্রাহকরা খুব দ্রুত ডেটা ট্রান্সফার করতে পারেন। এটি ভিডিও স্ট্রিমিং, ওয়েব ব্রাউজিং, এবং সোশ্যাল মিডিয়া ব্যবহারের জন্য উপযুক্ত। তবে, এর সীমাবদ্ধতা হলো 4G এর গতি 5G এর তুলনায় অনেক কম এবং লেটেন্সিও বেশি থাকে, যা কিছু সময় সমস্যার সৃষ্টি করতে পারে, বিশেষ করে ভার্চুয়াল রিয়ালিটি বা অত্যাধুনিক গেমিংয়ের ক্ষেত্রে।
5G নেটওয়ার্কের সুবিধা
5G ইন্টারনেটের গতি 4G এর তুলনায় অনেক বেশি। একদিকে যেখানে 4G গতি প্রায় ১০০ এমবিপিএস থাকে, 5G তা বাড়িয়ে ১০ গুণ পর্যন্ত দ্রুত পৌঁছাতে পারে, অর্থাৎ প্রায় ১০ গিগাবিট/সেকেন্ড। এছাড়াও, 5G এর কম লেটেন্সি সময়ের ফলে অ্যাপ্লিকেশনগুলো দ্রুত এবং আরও দক্ষতার সাথে কাজ করতে পারবে, যা প্রযুক্তিগত কাজ এবং পরিষেবাগুলোর গতি বাড়াবে।
ফলে, 5G নেটওয়ার্ক 4G এর তুলনায় একটি উন্নত ও দ্রুততর নেটওয়ার্ক পরিষেবা প্রদান করতে পারবে। তবে, এক্ষেত্রে 5G এর পূর্ণাঙ্গ বাস্তবায়ন এবং কভারেজ পুরো দেশে না আসা পর্যন্ত, 4G ব্যবহারকারীদের জন্য এটি একটি দীর্ঘস্থায়ী সমাধান হিসেবে কাজ করবে।
Starlink vs 5G বাংলাদেশ: কোনটি ভালো? (Starlink vs 5G in Bangladesh)
বর্তমানে বাংলাদেশের ইন্টারনেট সেবা বাড়ানোর জন্য 5G প্রযুক্তি একদিকে যেমন জনপ্রিয় হয়ে উঠছে, তেমনি অন্যদিকে Starlink, একটি স্যাটেলাইট ইন্টারনেট সেবা, বাংলাদেশে তার সম্ভাবনা দেখাচ্ছে। তবে, দুটি সিস্টেমের মধ্যে কি পার্থক্য রয়েছে? চলুন এক নজরে দেখে নেয়া যাক:
Starlink: স্যাটেলাইট ইন্টারনেট
Starlink, স্পেসএক্সের অধীনে একটি স্যাটেলাইট ইন্টারনেট সিস্টেম, যা পৃথিবীজুড়ে দ্রুত এবং সাশ্রয়ী ইন্টারনেট পরিষেবা প্রদান করছে। এটি স্যাটেলাইটের মাধ্যমে ইন্টারনেট কানেক্টিভিটি প্রদান করে, যা শহরের বাইরেও গ্রামাঞ্চলে কার্যকরী হতে পারে। Starlink বাংলাদেশের দূর্গম অঞ্চলে ইন্টারনেট পরিষেবা প্রদান করতে সক্ষম, যেখানে অন্যান্য ব্রডব্যান্ড সেবা পৌঁছাতে সক্ষম হয় না। তবে, Starlink এর প্রতি মাসে খরচ তুলনামূলকভাবে বেশি এবং এটি একটি স্যাটেলাইট সিস্টেম হওয়ায় আবহাওয়া বা অন্যান্য পরিবেশগত কারণে সংযোগের সমস্যা সৃষ্টি হতে পারে।
5G: সেলুলার কানেক্টিভিটি
অপরদিকে, 5G ইন্টারনেট একটি সেলুলার নেটওয়ার্ক ভিত্তিক প্রযুক্তি। এর সুবিধা হলো, এটি পৃথিবীর অধিকাংশ শহর এবং শহরতলীতে কার্যকরী, এবং 5G সিস্টেমটি অপেক্ষাকৃত দ্রুত এবং স্থিতিশীল। 5G এর মাধ্যমে আপনি ভিডিও স্ট্রিমিং, ভার্চুয়াল রিয়ালিটি, এবং গেমিংয়ের মতো আধুনিক পরিষেবাগুলির সুবিধা নিতে পারবেন। তবে, 5G শুধুমাত্র শহরাঞ্চলে এবং নির্দিষ্ট কিছু অঞ্চলে ব্যবহারযোগ্য, এবং এর জন্য উপযুক্ত পরিকাঠামো প্রয়োজন।
Starlink vs 5G: কোনটি ভালো?
যতটা সুবিধা Starlink গ্রামাঞ্চলের জন্য প্রদান করতে পারে, 5G তার গতি এবং ইন্টারনেট পরিষেবার ক্ষেত্রে শহরাঞ্চলে অনেক বেশি কার্যকরী। বাংলাদেশের জন্য, 5G প্রথমত শহরাঞ্চলে কার্যকরী হবে, তবে Starlink গ্রামাঞ্চলে যেখানে অন্যান্য সেবা পৌঁছাতে পারে না, সেখানে ভালো সমাধান হতে পারে। তবে, দুটির মধ্যে তুলনা করতে গেলে, 5G ইন্টারনেটের দ্রুতগতি এবং উন্নত সেবা বৈশিষ্ট্যগুলি বাংলাদেশের ভবিষ্যত প্রযুক্তি খাতের জন্য অনেক বেশি উপযোগী হতে পারে।
বাংলাদেশে 5G ইন্টারনেটের সম্ভাবনা (The Future Potential of 5G Internet in Bangladesh)
বাংলাদেশে 5G নেটওয়ার্কের ভবিষ্যত সম্ভাবনা অত্যন্ত উজ্জ্বল। 5G প্রযুক্তি দেশে ব্যবসা, শিক্ষা, চিকিৎসা, এবং অন্যান্য সেক্টরে বিপ্লব ঘটাবে। বর্তমানে বাংলাদেশে 5G প্রযুক্তির শুরু হতে চলেছে এবং এটি দেশের প্রযুক্তিগত এবং অর্থনৈতিক উন্নয়নকে ত্বরান্বিত করতে সহায়তা করবে।
ব্যবসায়িক খাতে 5G এর প্রভাব
5G প্রযুক্তি ব্যবসায়িক খাতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে, বিশেষ করে ই-কমার্স এবং ফিনটেক সেক্টরে। উচ্চ গতির ইন্টারনেটের মাধ্যমে ব্যবসা প্রতিষ্ঠানগুলি দ্রুত সেবা প্রদান করতে পারবে, যার ফলে গ্রাহক সন্তুষ্টি বৃদ্ধি পাবে। 5G এর মাধ্যমে ডিজিটাল লেনদেন, স্মার্ট পেমেন্ট সিস্টেম, এবং ব্লকচেইন প্রযুক্তি আরও নিরাপদ এবং দ্রুত হবে।
শিক্ষা খাতে 5G এর সুবিধা
5G ইন্টারনেট শিক্ষাখাতে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে। ভার্চুয়াল ক্লাসরুম, অনলাইন শিক্ষণ, এবং দূরবর্তী শিক্ষার মাধ্যমে ছাত্রছাত্রীরা বাড়িতে বসেই উন্নত শিক্ষার সুবিধা নিতে পারবে। এটি দেশের বিভিন্ন প্রান্তে শিক্ষা ব্যবস্থার উন্নয়ন ঘটাবে এবং ডিজিটাল শিক্ষা ব্যবস্থা আরও শক্তিশালী হবে।
স্বাস্থ্য খাতে 5G এর ভূমিকা
স্বাস্থ্য সেবায় 5G এর মাধ্যমে দূরবর্তী চিকিৎসা বা টেলিমেডিসিন সেবা আরও উন্নত হবে। রোগীরা তাদের বাড়ি থেকেই চিকিৎসকের সাথে ভিডিও কনফারেন্স করতে পারবে, যা গ্রামাঞ্চলের মানুষের জন্য একটি বড় সুযোগ হবে। 5G এর কম লেটেন্সি এবং দ্রুত কানেক্টিভিটি সেবা আরও দক্ষতার সঙ্গে প্রদান করতে সাহায্য করবে।
ডিজিটাল বাংলাদেশে 5G এর ভূমিকা (Role of 5G in Digital Bangladesh)
বাংলাদেশ সরকারের “ডিজিটাল বাংলাদেশ” উদ্যোগ ২০০৯ সালে শুরু হয়েছিল এবং এই প্রকল্পের আওতায় দেশের প্রযুক্তিগত উন্নয়ন, ইন্টারনেট সেবা, এবং ডিজিটাল অবকাঠামো বৃদ্ধি পেয়েছে। ডিজিটাল বাংলাদেশের লক্ষ্য হল দেশের সমস্ত নাগরিকের জন্য উন্নত তথ্যপ্রযুক্তির সেবা প্রদান। এই লক্ষ্য অর্জনে 5G প্রযুক্তি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে।
5G প্রযুক্তি দেশের ডিজিটাল অর্থনীতি, স্মার্ট সিটি এবং ই-গভর্নমেন্ট সিস্টেমকে আরও ত্বরান্বিত করবে। 5G নেটওয়ার্কের মাধ্যমে দেশের শহরগুলো স্মার্ট সিটিতে পরিণত হতে পারে, যেখানে উন্নত প্রযুক্তির মাধ্যমে ট্রাফিক নিয়ন্ত্রণ, পাবলিক সার্ভিস, এবং সিকিউরিটি সিস্টেম আরও কার্যকরী হবে। এটি দেশের ব্যবসা, শিক্ষা, স্বাস্থ্য, এবং অন্যান্য খাতে উন্নতি আনবে, যেহেতু সকল সেক্টরই উচ্চগতির ইন্টারনেট পরিষেবা এবং উন্নত প্রযুক্তি থেকে উপকৃত হবে।
ডিজিটাল বাংলাদেশে 5G এর সম্ভাবনা
বাংলাদেশে 5G প্রযুক্তি ঢুকে গেলে, সরকার এবং ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে কাজের ধরন এবং সেবা প্রদানে ব্যাপক পরিবর্তন আসবে। যেমন, ভার্চুয়াল রিয়ালিটি (VR) এবং অগমেন্টেড রিয়ালিটি (AR) এর মতো আধুনিক প্রযুক্তিগুলো 5G নেটওয়ার্কের মাধ্যমে সহজে প্রয়োগ করা যাবে, যা শিক্ষা এবং স্বাস্থ্যখাতে উন্নতি করবে। একই সঙ্গে, সেলফ-ড্রাইভিং গাড়ি এবং স্মার্ট ট্রাফিক সিস্টেমের মতো নতুন প্রযুক্তি চালু হবে, যা দেশের শহরগুলোর উন্নত ব্যবস্থাপনা নিশ্চিত করবে।
বাংলাদেশে 5G ইন্টারনেটের ভবিষ্যত এবং সম্ভাবনা
5G প্রযুক্তি বাংলাদেশের ভবিষ্যত উন্নয়নে বিশাল ভূমিকা রাখতে চলেছে। দেশের বিভিন্ন খাতে এর প্রভাব ইতিমধ্যে অনুভূত হচ্ছে এবং দ্রুত সময়ের মধ্যে আরও দৃশ্যমান হবে। ভবিষ্যতে, এই প্রযুক্তি দেশের গ্রামীণ এবং শহুরে এলাকার মধ্যে প্রযুক্তিগত সমতা এনে দেবে এবং দেশের প্রতিযোগিতা সক্ষমতা বাড়াবে।
অর্থনৈতিক সম্ভাবনা
5G প্রযুক্তি বাংলাদেশের অর্থনীতিকে আরো গতিশীল করে তুলবে। এতে নতুন ব্যবসায়িক মডেল তৈরি হবে এবং বিভিন্ন শিল্প খাতে প্রযুক্তিগত উদ্ভাবন আসবে। নতুন কর্মসংস্থান সৃষ্টি হবে, বিশেষত আইটি, টেলিকম, এবং ডিজিটাল মার্কেটিং খাতে। 5G এর মাধ্যমে রপ্তানি খাতে ই-কমার্স এবং ডিজিটাল পেমেন্ট সিস্টেমের সুবিধা বাড়বে, যা দেশের অর্থনীতিতে ইতিবাচক প্রভাব ফেলবে।
সামাজিক পরিবর্তন
5G প্রযুক্তি দেশে সমাজের প্রতিটি স্তরের মানুষের জন্য সুবিধা নিয়ে আসবে। গ্রামীণ এলাকায় যেখানে ইন্টারনেট সেবা সীমিত, সেখানে 5G নেটওয়ার্ক চালু হলে, দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলের মানুষও উন্নত প্রযুক্তি সুবিধা পাবেন। শিক্ষা, স্বাস্থ্য, এবং সরকারি সেবা আরও দ্রুত ও সহজ হবে, যা সারা দেশে সমান সুযোগ সৃষ্টি করবে।
FAQ (Frequently Asked Questions)
১. বাংলাদেশে 5G ইন্টারনেট কবে আসবে?
বাংলাদেশে 5G ইন্টারনেট সেবা ২০২৩ সালের শেষের দিকে পরীক্ষামূলকভাবে চালু হওয়ার কথা ছিল, তবে পুরোপুরি বাণিজ্যিকভাবে চালু হতে আরও কিছু সময় লাগবে।
২. 5G নেটওয়ার্কের সুবিধা কি?
5G এর সবচেয়ে বড় সুবিধা হলো এর উচ্চ গতি, কম লেটেন্সি, এবং বিপুল পরিমাণ ডিভাইস একযোগে কানেক্ট করার ক্ষমতা। এটি প্রযুক্তির বিভিন্ন ক্ষেত্রে যেমন স্বয়ংক্রিয় গাড়ি, ভার্চুয়াল রিয়ালিটি, এবং স্বাস্থ্যখাতে উন্নতি আনবে।
৩. Starlink এবং 5G এর মধ্যে পার্থক্য কী?
Starlink একটি স্যাটেলাইট ইন্টারনেট সিস্টেম, যা গ্রামাঞ্চলে ইন্টারনেট পরিষেবা প্রদান করতে সহায়তা করে, তবে এর খরচ বেশি। 5G একটি সেলুলার নেটওয়ার্ক সিস্টেম, যা শহরাঞ্চলে দ্রুতগতি এবং স্থিতিশীল ইন্টারনেট পরিষেবা প্রদান করে।
৪. বাংলাদেশে 5G নেটওয়ার্কের কতটা প্রস্তুতি আছে?
5G নেটওয়ার্ক বাস্তবায়নে বাংলাদেশে কিছু শহরে পরীক্ষামূলক সেবা চালু হয়েছে, তবে পুরো দেশে এর প্রচলন চালু করতে আরও সময় এবং বিনিয়োগ প্রয়োজন।
৫. ৫জি নেটওয়ার্কের ব্যবহার বাংলাদেশে কিভাবে সহজ হবে?
5G নেটওয়ার্কের মাধ্যমে উচ্চগতির ইন্টারনেট এবং উন্নত সেবা প্রদান করা হবে, যা গ্রাহকদের জন্য সহজ এবং সুবিধাজনক হবে। তবে, সেবাটি সবার জন্য সহজলভ্য হতে কিছু সময় এবং প্রযুক্তিগত উন্নয়ন প্রয়োজন।
উপসংহার (Conclusion)
বাংলাদেশে 5G ইন্টারনেটের আগমন একটি যুগান্তকারী পরিবর্তন হতে চলেছে। এটি দেশের ডিজিটাল প্রেক্ষাপটকে আরও শক্তিশালী করবে এবং ব্যবসা, শিক্ষা, স্বাস্থ্য এবং অন্যান্য খাতে বিশাল উন্নতি আনবে। যদিও এখনও কিছু চ্যালেঞ্জ রয়েছে, তবে সরকার এবং টেলিকম কোম্পানিগুলির যৌথ উদ্যোগে 5G দ্রুত বাংলাদেশের প্রতিটি অঞ্চলে পৌঁছাবে। ভবিষ্যতে, 5G দেশের প্রযুক্তিগত এবং অর্থনৈতিক উন্নয়নের অন্যতম প্রধান হাতিয়ার হয়ে উঠবে।
5G এর সম্ভাবনা অত্যন্ত ব্যাপক এবং এটি বাংলাদেশের প্রযুক্তিগত উৎকর্ষে সহায়তা করবে, যার ফলে দেশ বিশ্বমানের ডিজিটাল প্ল্যাটফর্মে পৌঁছাতে সক্ষম হবে।