ই-সেবাঅন্যান্য

ঘরে বসেই বিকাশ এজেন্ট রেজিস্ট্রেশন করুন!

বর্তমানে বিকাশ বাংলাদেশের অন্যতম একটি জনপ্রিয় মোবাইল ফিন্যানন্সিয়াল সার্ভিস প্রদানকারী প্রতিষ্ঠান হিসেবে পরিচিতি লাভ করেছে। ব্যাংকিং থেকে শুরু করে বিল পেমেন্ট, রেমিটেন্স, অনলাইন শপিং এমন কি মোবাইল রিচার্জসহ নানা ধরনের আর্থিক আদান প্রদান সেবার জন্য মানুষ বিকাশকে স্বতঃস্ফূর্তভাবে ব্যবহার করছে। তাই বিকাশ এজেন্ট হয়ে ব্যবসা করা সময়উপযোগী একটি লাভজনক ব্যবসা হয়ে দাড়িয়েছে। আপনিও যদি একজন বিকাশ এজেন্ট হয়ে ব্যবসা করতে চান তবে এই আর্টিকেলটি আপনার জন্য। আজকের আর্টিকেলে আমরা বিকাশ এজেন্ট রেজিস্ট্রেশন করার নিয়ম পূঙ্খানুপূঙ্খভাবে শিখিয়ে দিব।

বিকাশ এজেন্ট হওয়ার শর্তাবলী

বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় এজেন্ট ব্যাংকিং ব্যবসার মধ্যে একটি বিকাশ। অন্যান্য ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের মতোই বিকাশেরও এজেন্ট হওয়ার জন্য কিছু শর্ত রয়েছে। এসব শর্ত পূরণ করলেই কেবল আপনি একজন এজেন্ট হতে পারবেন।সেগুলো হলো:

বয়স: আবেদনকারীর বয়স কমপক্ষে ১৮ বছর হতে হবে।

শিক্ষাগত যোগ্যতা: ন্যূনতম এসএসসি পাশ হতে হবে।

ব্যবসায়িক অভিজ্ঞতা: আবেদনকারীর ব্যবসায়িক ক্ষেত্রে কিছু অভিজ্ঞতা থাকা উচিত।

ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠান: আবেদনকারীর নিজস্ব একটি স্থায়ী ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠান থাকতে হবে। অর্থাৎ, যেখানে বিকাশ গ্রাহক সেবা প্রদান করা যাবে এমন দোকান বা ব্যবসা প্রতিষ্ঠান। আবার, প্রতিষ্ঠানটির লোকেশন এমন স্থানে হওয়া উচিত যেখানে পর্যাপ্ত পরিমাণ লোকের সমাগম আছে। সবচেয়ে ভালো হয় হাট-বাজার, চৌরাস্তার মোড় বা যেখানে অন্য কোন এজেন্ট নেই এমন গ্রাম/এলাকা, বাসস্ট্যান্ড ইত্যাদি স্থানে।
নিয়মিত ইন্টারনেট সংযোগ: বিকাশ সেবা প্রদান করতে ইন্টারনেট সংযোগ প্রয়োজন হবে।

ট্রেড লাইসেন্স: যেকোনো বৈধ ব্যবসা পরিচালনার জন্য ট্রেড লাইসেন্স অপরিহার্য। বিকাশ এজেন্টশিপ আইন অনুযায়ী, বিকাশ এজেন্ট হতে এবং বৈধভাবে ব্যবসা করতে আপনার দোকানটি অবশ্যই বৈধ হতে হবে। তাই ট্রেড লাইসেন্স থাকা আবশ্যক। ট্রেড লাইসেন্সর জন্য আপনার দোকানের উপযুক্ত নাম নির্ধারণ করতে হবে। এবং প্রয়োজনীয় কাগজপত্র সংগ্রহ করে ট্রেড লাইসেন্স করতে হবে।

টিন সার্টিফিকেট: আপনার প্রতিষ্ঠানের জন্য টিন (TIN) সার্টিফিকেট বা ট্যাক্স-পেয়ার আইডেন্টিফিকেশন নাম্বার করতে হবে। এটি সাধারনত কর প্রদানকারীদের সনাক্তকরণের জন্য সরকার কর্তৃক আরোপকৃত সনদ। তাই বিকাশ এজেন্ট হয়ে ব্যবসা করার জন্যও দেশের একজন নিয়মিত করদাতা হিসেবে এই প্রমাণ পত্র বা টিন সার্টিফিকেট লাগবে। আপনি চাইলে অনলাইন থেকে নিজে নিজেই টিন সার্টিফিকেট ডাউনলোড করে নিতে পারেন।

বিকাশ এজেন্ট সিম কার্ড: সর্বশেষ যেটি লাগবে তা হলো একটি ইউনিট পোস্টপেইড সিম কার্ড। এক্ষেত্রে আপনাকে আপনার এলাকায় নিকটস্থ সিম কার্ডের দোকান থেকে একটি পোস্টপেইড সিম সংগ্রহ করতে হবে। এবং সেখান থেকে একটি ইউনিক নাম্বার বাছায় করে নিতে হবে। সহজ এবং সহজে মনে রাখার মতো এমন একটি নাম্বার সিলেক্ট করবেন। এতে করে গ্রাহকের সাথে লেনদেনের সময় উভয়েরই সুবিধা হবে। তবে একটা বিষয় খেয়াল রাখবেন, ঐ সিম দিয়ে যেন কোন পার্সোনাল বিকাশ একাউন্ট খোলা না হয়।

এছাড়া এজেন্ট হওয়ার পর আরো কিছু শর্ত আছে। যেগুলো আপনাকে মেনে চলতে হবে। যেমন:

  • সবসময় একাউন্টে সর্বনিম্ন ৭,০০০ টাকা ব্যালেন্স রাখতে হবে।
  • প্রতিদিন কমপক্ষে ২,০০০ টাকা বিকাশে লেনদেন করতে হবে।
  • নতুন গ্রাহকদের রেফার করতে হবে। এবং বিকাশ পার্সোনাল একাউন্ট খুলে দিতে হবে।

বিকাশ এজেন্ট হতে কি কি প্রয়োজন হয়?

উপরোক্ত শর্তাবলী গুলো পূরণ হলে নিম্নোক্ত ডকুমেন্টগুলো প্রয়োজন হবে। সেগুলো হলোঃ

  1. সদ্য ওঠানো ৩ কপি স্ট্যাম্প ও ৩ কপি পাসপোর্ট সাইজের রঙ্গিন ছবি।
  2. জাতীয় পরিচয় পত্রের রঙিন ফটোকপি।
  3. ট্রেড লাইসেন্স এর ফটোকপি।
  4. টিন সার্টিফিকেটের ফটোকপি।

এগুলোর কোনটি যদি আপনার না থাকে তবে তাড়াতাড়ি এগুলো সংগ্রহ করুন। অন্যথায়, আপনি এজেন্ট একাউন্ট রেজিস্ট্রেশন করতে পারবনে না।

বিকাশ এজেন্ট রেজিস্ট্রেশন করার নিয়ম

অনান্য বড় বড় ব্যাংকিং ব্যবসায়ীদের মতো বিকাশেরও নিজস্ব কিছু সেলস রিপ্রেজেন্টেটিভ বা SR রয়েছে। বিকাশ এজেন্ট একাউন্ট রেজিস্ট্রেশন করার জন্য অবশ্যই তাদের সাথে যোগাযোগ করতে হবে। তাদের সাথে কথা বলার মাধ্যমে খুব সহজেই রেজিস্ট্রেশন সম্পন্ন করা যায়। আবার আপনি চাইলে, অনলাইনে রেজিস্ট্রেশন করেও আবেদন করতে পারবেন। অনলাইন আবেদনের প্রক্রিয়াটি নিম্নরূপ:

অনলাইনে বিকাশ এজেন্ট রেজিস্ট্রেশন ফরম পূরণ করার নিয়ম

অনলাইনে বিকাশ এজেন্ট রেজিস্ট্রেশন করার জন্য, একটি ফরম পূরণ করে আবেদন করতে হয়। রেজিস্ট্রেশন ফর্মটির লিংক- এজেন্ট | বিকাশ (bkash.com)। তারপর ফরমটি স্ক্রিনে আসলে তা সতর্কতার সাথে সঠিক পূরণ করুন।

  1. ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের নাম লিখুন।
  2. ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের অবস্থান অনুযায়ী জেলার ও এলাকার নাম সিলেক্ট করুন।
  3. যেই SR এর সাথে যোগাযোগ করতে চান তার নাম দিন।
  4. আপনার একটি সক্রিয়/সচল মোবাইল নাম্বার দিন।
  5. আপনার মোবাইলে ব্যবহৃত ইমেইল এড্রেস দিন।
  6. অতিরিক্ত কোন তথ্য বা প্রমাণপত্র সংযুক্ত করতে হলে। সেটির নাম লিখুন।
  7. আপনার কি জাতীয় পরিচয়পত্র আছে? এর নিচে হ্যাঁ সিলেক্ট করুন। তবে পাসপোর্ট বা ড্রাইভিং লাইসেন্স দিয়েও রেজিস্টার করা যায়।
  8. বৈধ ট্রেড লাইসেন্স আছে? এর নিচে হ্যাঁ সিলেক্ট করুন।
  9. আপনার ট্রেড লাইসেন্স এর নাম্বারটি সতর্কতার সাথে লিখে দিন।
  10. লাইসেন্সের মেয়াদোত্তীর্ণের তারিখ লিখুন।
  11. সর্বশেষে, ‘আমি রোবট নই’ লেখার পাশে চেকবক্সে ক্লিক করে ক্যাপচা পূরণ করুন।
    এবার আপনার সাইন আপ অ্যাপ্লিকেশনটি জমা দিন এ ক্লিক করলেই ফর্ম ফিল আপ হয়ে যাবে।

ফরমটি পুরন করে সাবমিট করলে বিকাশ অফিস থেকে আপনাকে কল করবে। তারা সচরাচর অফিসিয়াল ভাবে আপনার ব্যবসার প্রতিষ্ঠান, এলাকা এবং এজেন্ট হতে চাওয়ার কারণসহ যাবতীয় কিছু প্রশ্ন করবে। সবকিছু ঠিক ঠাক ভাবে উত্তর দিলে তথ্যগুলো বিকাশ জেলা অফিসে পাঠাবে। এই সময়ের মধ্যে একজন SR সরাসরি আপনার সাথে যোগাযোগ করে আপনার যাবতীয় কার্যক্রম পরিচালনা করবে।

পার্সোনাল বিকাশ একাউন্ট দিয়ে কি ব্যবসা করা যায়?

স্পষ্টভাবে বললে উত্তর হবে, না। পার্সোনাল বিকাশ একাউন্ট ব্যবহার করে ব্যবসা করা যায় না। এখন বলতে পারেন, অনেকেই তো পার্সোনাল একাউন্ট দিয়ে ‘সেন্ড মানি’ করে অর্থ লেনদেন করে। এবং সেখান থেকে উপার্জন করেছে। হ্যা, করছে। কিন্তু এটি বে-আইনি। কেননা, বাংলাদেশ ব্যাংক ও বিকাশ কর্তৃপক্ষের পক্ষ থেকে এসব একাউন্ট দিয়ে ব্যবসা করার কোন বৈধতা জারি করা হয়নি।

যে সকল ব্যক্তি এই ধরনের কাজ করছে তাদের চিহ্নিত করা গেলে আইনি পদক্ষেপ নেওয়া সম্ভব। তাই আপনি যদি একান্তই ব্যবসা করতে চান। তবে অবশ্যই উপর বর্ণিত উপায়ে এজেন্ট একাউন্ট খুলে ব্যবসা করুন।

বিকাশ এজেন্ট হওয়ার সুবিধা কি কি?

  • অন্যান্য ব্যবসার পাশাপাশি বাড়তি আয় করা যায়।
  • প্রতিবার বিকাশে লেনদেনের পর নির্দিষ্ট পরিমাণ কমিশন আসে।
  • প্রতিবার নতুন গ্রাহককে পার্সোনাল একাউন্ট খুলে দেওয়ার মাধ্যমে ৫০ টাকা ইন্সেন্টিভ পাওয়া যায়।
  • বিদ্যুৎ বিল পে করে দিলেও কমিশন আসে।
  • প্রত্যেক মাসে, এজেন্ট অ্যাপ ব্যবহার করে লেনদেনের টার্গেট পূরণ করতে পারলে অতিরিক্ত ইন্সেন্টিভ আসে।

বিকাশ এজেন্টদের কমিশন কেমন?

একজন বিকাশ এজেন্ট সাধারণত কোড ডায়াল করে এবং অ্যাপস ব্যবহার করে লেনদেন করতে পারেন। সেক্ষেত্রে দুইভাবে লেনদেনের জন্য আলাদা আলাদা পরিমানের কমিশন পেয়ে থাকেন।

(১) *২৪৭# কোড ডায়াল করলে কমিশনের পরিমাণ

  • ১,০০০ টাকায় ৪.১০ টাকা,
  • ১০,০০০ টাকায় ৪১ টাকা এবং
  • ১,০০,০০০ টাকায় ৪১০ টাকা।

(২) বিকাশ এজেন্ট অ্যাপস ব্যবহার করলে কমিশনের পরিমাণ

  • ১,০০০ টাকায় ৪.৩০ টাকা,
  • ১০,০০০ টাকায় ৪৩ টাকা,
  • ১,০০,০০০ টাকায় ৪৩০ টাকা করে পেয়ে থাকেন।

ইদানিং বিকাশ এজেন্ট হওয়া একটি লাভজনক এবং সম্মানজনক ব্যবসা হয়ে দাড়িয়েছে। সঠিক নিয়ম অনুসরণ করে এবং প্রয়োজনীয় ডকুমেন্টস জমা দিয়ে আপনি খুব সহজেই বিকাশের একজন এজেন্ট হয়ে উঠতে পারেন। যা এতোমধ্যে এই আর্টিকেলেই দেখানো হয়েছে। আশা করি, বিকাশ এজেন্ট রেজিস্ট্রেশন করার নিময় সম্পূর্ণ রূপ জানাতে ও বোঝাতে পেরেছি। পরিশেষে একটাই পরামর্শ দিব, একজন বিকাশ এজেন্ট হিসাবে সফল হতে হলে আপনাকে নিয়মিত প্রশিক্ষণ গ্রহণ করতে হবে। এবং গ্রাহকদের সাথে ভালো ব্যবহার করতে হবে।

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button
error: Content is protected !!