উইন্ডোজ ১০ এবং উইন্ডোজ ১১ এর মধ্যে কোনটি আপনার জন্য ভালো হবে
উইন্ডোজ ১০ এবং উইন্ডোজ ১১ মাইক্রোসফট এর অপারেটিং সিস্টেম উইন্ডোজ এর সর্বশেষ দুইটি সংস্করণ । ডিজাইনের দিক দিয়ে কিছুটা নতুনত্ব এলেও এই দুইটি অপারেটিং সিস্টেমকে আলাদা করা তেমন কঠিন কোনো কাজ না। তবে ভিজ্যুয়াল পরিবর্তন এর চেয়ে বেশি পরিবর্তন এসেছে পারফরম্যান্স ও কোর ফিচারসমুহে।
পূর্বে উইন্ডোজ ৭ ও উইন্ডোজ ৮.১ ব্যবহারকারীগণ বিনামূল্যে উইন্ডোজ ১০ এ আপগ্রেড করার সুবিধা পেয়েছিলেন। বর্তমানে উইন্ডোজ ১০ ব্যবহারকারীগণও ফ্রি-তে উইন্ডোজ ১১ তে আপগ্রেড করতে পারবেন। এখন প্রশ্ন হচ্ছে – উইন্ডোজ ১১ তে আপগ্রেড করা উচিত কি না? তাছাড়া উইন্ডোজ ১০ ও উইন্ডোজ ১১ এর মধ্যে পার্থক্যসমুহ কি কি? চলুন জেনে নেওয়া যাক উইন্ডোজ ১০ ও উইন্ডোজ ১১ এর মধ্যে পার্থক্যসমূহ সম্পর্কে বিস্তারিত।
উইন্ডোজ ১০ vs উইন্ডোজ ১১ – পারফরম্যান্স ও নিরাপত্তা
স্পিড বিবেচনায় উন্নয়ন এসেছে উইন্ডোজ ১১ তে। অফিসিয়াল ভিডিওতে উইন্ডোজ ১১ এর পারফরম্যান্স ও অপটিমাইজেশনের উন্নতি সম্পর্কে জানিয়েছে মাইক্রোসফট। উইন্ডোজ ১০ এর চেয়ে উইন্ডোজ ১১ এর টাস্ক হ্যান্ডেল করার ক্যাপাসিটি বেশি বলে দেখা গিয়েছে।
মাইক্রোসফট এর ভাষ্যমতে, উইন্ডোজ ১১ এর মেমোরি ম্যানেজমেন্টে ব্যাপক উন্নতি লক্ষণীয় হতে যাচ্ছে। ওপেন থাকা অ্যাপ যাতে সিপিউ ভালোভাবে ব্যবহার করতে পারে, তা নিশ্চিত করবে উইন্ডোজ ১১। মাইক্রোসফট এর উদাহরণ হিসেবে একটি ভিডিও প্রদর্শন করে, যেখানে সিপিউ ৯০% লোড থাকার পরও এক্সেল অ্যাপ খুব দ্রুত ওপেন হয়।
উইন্ডোজ ১১ চালিত কম্পিউটার স্লিপ (Sleep) থেকে স্ট্যান্ডবাই মোডে আসার টাইমে এসেছে ব্যাপক উন্নতি। মূলত উইন্ডোজ ১১ তে স্লিপিং মোডেও র্যাম একটিভ থাকবে, যার ফলে স্লিপ থেকে ২৫% দ্রুত চালু হবে কম্পিউটার।
উইন্ডোজ ১১ তেও ডিফল্ট ব্রাউজার থাকছে মাইক্রোসফট এজ। উইন্ডোজ ১১ তে এজ এর পারফরম্যান্সে উইন্ডোজ ১০ এর চেয়ে বাড়তি সুবিধা পাওয়া যাবে। মাইক্রোসফট এর তথ্যমতে, স্লিপিং ট্যাব ফিচার ব্যবহার করে ৩২% মেমোরি ও ৩৭% সিপিইউ ব্যবহার কমানো যাবে উইন্ডোজ ১১ এর এজ ব্রাউজারে।
কমপ্রেশন প্রযুক্তির উল্লেখযোগ্য ব্যবহার চোখে পড়বে উইন্ডোজ ১১ তে। ডিস্ক ইউসেজ ও ব্রাউজার ক্যাশ হ্যান্ডেলিংয়ে উন্নতি চোখে পড়বে। উদাহরণস্বরূপঃ স্টিকি নোটস এর মতো অ্যাপ অপেক্ষাকৃত কম র্যাম ও স্টোরেজ ব্যবহার করে চলতে পারবে। এছাড়াও ব্রাউজার ক্যাশ আগের চেয়ে কম ডিস্ক স্পেস গ্রহণ করবে
উইন্ডোজ এক্সপ্লোরার, ম্যাথ ইনপুট প্যানেল এর মতো আরো কিছু অ্যাপ রিমুভ করা হয়েছে উইন্ডোজ ১১ তে। এসব অ্যাপ হলোঃ ৩ডি ভিউয়ার, পেইন্ড ৩ডি, ওয়াননোট ফর উইন্ডোজ ১০, স্কাইপ, ইত্যাদি। তবে চাইলে মাইক্রোসফট স্টোর থেকে এসব অ্যাপ ডাউনলোড করা যাবে। গেমারদের জন্য উইন্ডোজ ১১ সেরা কারন গেমিংইয়ের জন্য বিশেষ কিছু ফিচার দেয়া আছে।
টাস্কবার ও স্টার্ট মেন্যু
চোখের দেখায় উইন্ডোজ ১০ ও উইন্ডোজ ১১ কে আলাদা করার দ্রুততর উপায় হচ্ছে উইন্ডোজ ১১ এর স্টার্ট মেন্যু ও টাস্কবার। উইন্ডোজ ১১ তে টাস্কবার ও স্টার্ট মেন্যু স্ক্রিনের নিচের দিকে মাঝখানে রাখা হয়েছে। এর ফলে কারো কারো কাছে উইন্ডোজ ১১ কে দেখতে কিছুটা ম্যাক ওএস ও ক্রোম ওএস এর মত লাগতে পারে। তবে চাইলে উইন্ডোজ ১০ এর মত স্ক্রিনের বামদিকেও টাস্কবার ও স্টার্ট মেন্যু রাখা সম্ভব।
উইন্ডোজ ১০ এর চেয়ে উইন্ডোজ ১১ এর স্টার্ট মেন্যু অধিক সিম্পল লাগে দেখতে। কিছু স্ট্যাটিক অ্যাপ ও সম্প্রতি অধিকবার ওপেন করা ডকুমেন্ট চোখে পড়বে উইন্ডোজ ১১ এর স্টার্ট মেন্যুতে। এছাড়াও টাস্কবারে স্ক্রল করা যাবে ও পছন্দের অ্যাপ পিন ও করা যাবে উইন্ডোজ ১১ তে। উইন্ডোজ ১০ এ থাকা লাইভ টাইলস ফিচার সরিয়ে দেওয়া হয়েছে উইন্ডোজ ১১ তে। যারা এক দেখায় সম্পূর্ণ স্টার্ট মেন্যু দেখতে পছন্দ করেন, তাদের কাছে উইন্ডোজ ১০ অধিক সুবিধাজনক মনে হবে।
উইন্ডোজ ১০ এর টাইমলাইন ফিচার বাদ পড়েছে উইমডোজ ১১ তে। মাইক্রোসফট এজ এর সিন্ক ফিচারের জন্য টাইমলাইন ফিচারটি উইন্ডোজ ১১ থেকে বাদ দেওয়া হয়েছে। এর পরিবর্তে ভার্চুয়াল ডেস্কটপস ফিচার যুক্ত হয়েছে, যার মাধ্যমে একাধিক পরিস্থিতিতে আলাদা আলাদা ডেস্কটপ সেটাপ ব্যবহারের সুযোগ থাকছে।
যারা টাস্কবারকে নিজের মত সাজিয়ে নিয়ে কম্পিউটার কাস্টমাইজেশনকে নেক্সট লেভেলে নিতে পছন্দ করেন, তাদের উইন্ডোজ ১১ পছন্দ না হতে পারে। উইন্ডোজ ১১ এর টাস্কবার এখন সবসময় বোটম অর্থাৎ নিচে থাকবে। টাস্কবার উপরে বা পাশাপাশি রাখার ফিচার বাদ পড়েছে উইন্ডোজ ১১ তে। এছাড়াও থার্ড পার্টি টুল দ্বারা টাস্কবার কাস্টমাইজ করা যাবেনা উইন্ডোজ ১১ তে।
জেনে নিনঃ কম্পিউটার বিষয়ক ৪০০ টি প্রশ্নোত্তর
মাল্টিটাস্কিং ও এক্সটারনাল মনিটর সাপোর্ট
প্রোডাক্টিভিটিকে গুরুত্ব দিয়ে মাল্টিটাস্কিংয়ে বেশ উন্নতি চোখে পড়বে উইন্ডোজ ১১ তে। উইন্ডোজ ১১ এর স্ন্যাপ লেআউটস ফিচার ব্যবহার করে উইন্ডোসমূহ গ্রুপ করা ও টাস্কবারে সেভ করা যাবে। উইন্ডোজ ১০ এ গ্রিডে উইন্ডো স্ন্যাপ করা গেলেও উইন্ডোজ ১১ তে এই ফিচারকে আরো সহজ করা হয়েছে।
উইন্ডোজ ১১ তে ম্যাক্সিমাইজ বাটনে মাউস পয়েন্টার রাখলে বিভিন্ন উইন্ডো সাইজের স্ন্যাপ লেআউট চোখে পড়বে। তবে উইন্ডোজ ১০ এ এই ফিচারটি আপডেটের মাধ্যমে আসবে কিনা, তা জানায়নি মাইক্রোসফট। উইন্ডোজ ১০ এ কিবোর্ড শর্টকার্ট ব্যবহার করে গ্রিডে স্ন্যাপ করা যায়।
উইন্ডোজ ১১ এর এক্সটার্নাল মনিটরে অসাধারণ সাপোর্ট যুক্ত হয়েছে। উইন্ডোজ ১১ এর এক্সটার্নাল মনিটর এর স্ট্যাটাস সেভ করা থাকবে, যার ফলে পরেরবার কানেক্ট করলে একই অ্যাপ আবার চালু হবে। এক্সটার্নাল মনিটর সম্পর্কিত উইন্ডোজ ১০ এর এই সমস্যা অবশেষে সমাধান হতে চলেছে উইন্ডোজ ১১ তে।
উইন্ডোজ ১০ vs উইন্ডোজ ১১ – ট্যাবলেট মোড
উইন্ডোজ ১০ এ আলাদা ট্যাবলেট মোড ফিচার ছিলো যা স্টার্ট মেন্যু ফুলস্ক্রিনে ওপেন করত। এই ফিচারটি বাদ পড়েছে উইন্ডোজ ১১ তে।
উইন্ডোজ ১১ অনেকটা আইপ্যাড এর মতো কাজ করে। উইন্ডো ওপেন ও ক্লোজ করা, ডেস্কটপ সুইচ করা, ইত্যাদি ফিচার এর জন্য আলাদা টাচ জেশ্চার যুক্ত হয়েছে উইন্ডোজ ১১ তে। যারা উইন্ডোজ ১০ এর ট্যাবলেট মোড বেশি ব্যবহার করেন, তাদের জন্য উইন্ডোজ ১১ বেশ অসুবিধার মনে হতে পারে।
মাইক্রোসফট স্টোর
উইন্ডোজ ১০ এবং উইন্ডোজ ১১ এর অ্যাপ স্টোর প্রায় একই হলেও উইন্ডোজ ১১ তে থাকছে গুরুত্বপূর্ণ সংযোজন। অ্যামাজন অ্যাপ স্টোর দ্বারা উইন্ডোজ ১১ এর অ্যাপস্টোরে যুক্ত হয়েছে অ্যান্ড্রয়েড অ্যাপ ব্যবহারের সুবিধা। তবে আপডেটের মাধ্যমে উইন্ডোজ ১০ এ এই ফিচারটি আসবে কিনা তা জানায়নি মাইক্রোসফট। অ্যান্ড্রয়েড সাবসিস্টেম ফর উইন্ডোজ ব্যবহার করে উইন্ডোজ ১১ তে অ্যান্ড্রয়েড অ্যাপ ন্যাটিভলি ব্যবহার করা যাবে।
সাপোর্ট ও আপডেট সাইকেল
উইন্ডোজ ১০ এ সেমি-অ্যানুয়াল আপডেট পাওয়া যেতো। তবে উইন্ডোজ ১১ তে অ্যানুয়ালি শুধুমাত্র একটি আপডেট পাওয়া যাবে। এটা অনেকটা ম্যাক ওএস এর আপডেট সাইকেল অনুসরণ করছে। ২০২৫ সাল পর্যন্ত উইন্ডোজ ১০ এর সাপোর্ট ও আপডেট কন্টিনিউ করবে বলে জানিয়েছে মাইক্রোসফট।
পরিশেষে বলা যায় উইন্ডোজ ১১ হবে উইন্ডোজ ১০ এর চেয়ে বেশি দ্রুতগতির, এবং আশা করা যায় বেশি সুবিধাজনক। মাইক্রোসফট এজন্য অনেক কাজ করেছে। ডিজাইনেও যা পরিবর্তন এসেছে তা পছন্দের ভার ব্যবহারকারীদের উপরই ছেড়ে দিতে হবে! উইন্ডোজ ১০ ও উইন্ডোজ ১১ এর মধ্যে আপনার কাছে কোনটি সেরা মনে হয়? আমাদের জানান কমেন্ট সেকশনে।