সেরা ১০

বিশ্বের শীর্ষ ১০ টি সবচেয়ে বিপজ্জনক প্রাণী

আচ্ছা, আপনি কি জানেন বাস্তবে পৃথিবীর সবচেয়ে হিংস্র প্রাণী কোনটি? কারা বিশ্বের শীর্ষ বিষাক্ত প্রাণী হিসেবে পরিচিত। আপনার কাছে যদি জানতে চাওয়া হয় পৃথিবীর সবচেয়ে হিংস্র প্রাণির নাম কী, তাহলে কি আপনি বলতে পারবেন

আপনি নিশ্চয়ই বলবেন বাঘ বা সিংহ হল সবচেয়ে হিংস্র প্রাণী। কিন্তু সত্যিই কি তাই? আমরা যদি এই প্রশ্নের উত্তরে বলে থাকি বাঘ অথবা সিংহের কথা, উত্তরটা হবে সম্পূর্ণ ভুল। মূলত হিংস্র প্রাণির কথা বললেই আমাদের চোখের সামনে উঠে আসে এই দুই প্রাণির কথা। কিন্তু বাস্তবে পৃথিবীর ১০ হিংস্র প্রাণির তালিকায় কিন্তু তারা নেই।

আপনি কি জানতে চান কে বা কারা এই জায়গা দখল করে আছে? যদি তাই হয়ে থাকে তাহলে আমাদের এই লেখাটি আপনার জন্য।

নাম্বার ১০. স্টোন ফিশ

এই প্রাণিটি পৃথিবী নামক গ্রহের সবচেয়ে হিংস্র আর বিষধর প্রাণিদের মধ্যে একটি। এদের দেখা মেলে সমুদ্রের তলদেশে। এরা মূলত সমুদ্রের তলদেশে থাকা নানা রকম পাথরের মাঝে নিজেকে খুবই নিপুণভাবে আড়াল করে রাখার জন্য পারদর্শী। তাইতো যে কেউ তাদেরকে দেখে মনে করবে পাথর। খুব ভালো পাথরের ছদ্মবেশ ধারণ করে আপনার চোখকে ফাঁকি দিতে সক্ষম হবে এই প্রাণী। মূলত পাথর মাছ অর্থাৎ স্টোন ফিশ দুইটি কারণে ভয়ঙ্কর প্রাণির তালিকায় জায়গা করে নিয়েছে। সেগুলো হলো-

  • এরা সবচেয়ে বিষাক্ত মাছ;
  • আরেকটি হলো পাথরে আবরণ যা ক্যামোফ্লেজের জন্য খুবই সাংঘাতিক কাজের।

আসলে অনেক অভিজ্ঞ মানুষদেরও খুব সহজেই এরা বোকা বানাতে সক্ষম হয়। স্বাভাবিকভাবে এই প্রাণী আপনাকে কিছুই বলবে না কিন্তু যদি আপনি তার কুশলাদি জানতে চান, তবে সেও কিন্তু আপনাকে কুশলাদি জানতে মিস করবে না। সে আপনার কষ্টিপাথর যাচাই করে ছাড়বে। হ্যাঁ, আমি যেটা বললাম এটাই সত্যি। তাই ব্যাপারটা হয়তো আপনার কাছে হাসির মনে হতে পারে। কিন্তু এই সাধু প্রাণিটি সত্যিই এতটা ভয়ঙ্কর। যদি কখনো এর কাটার আঘাত কেউ পেয়ে থাকে তাহলে হৃদপিন্ডের কার্য ক্ষমতা লোপ পায় এবং শরীর দ্রুত নিস্তেজ হয়ে আসে, এমনকি সঙ্গেসঙ্গে মৃত্যুও হতে পারে। তাই যদি কখনও ভুলেও এই প্রাণির দেহকে পাথর মনে করে পা রাখেন তাহলে আপনার মৃত্যু অবধারিত।

নাম্বার ০৯. সাইফু পিঁপড়া

এরা খেয়ে ফেলে যেকোনো প্রাণিকে। এমনই এক প্রজাতির পিঁপড়া এরা। যাদের ক্ষমতা রয়েছে খুব সহজেই অন্য প্রাণীদের গ্রাস করে ফেলা। পিঁপড়াকে আমরা অনেকেই পরিশ্রমী প্রাণী বলে জানি। তাদের কামড়ও আমরা হরহামেশাই খেয়ে থাকি। কিন্তু কখনও কি আপনি ভেবেছেন যে, একটা সামান্য পিঁপড়েও আপনার জীবনের জন্য প্রাণঘাতী হতে পারে? যদি এমনটা কখনই না ভেবে থাকেন তাহলে আমরা বলবো আজ থেকে ভাবুন। কারণ, এই সাইফু পিঁপড়া জীব জগতের প্রাণিদের কাল হয়ে এসেছে। যারা সবসময়ই ঝাঁকেঝাঁকে চলাফেরা করে আর প্রতিটি ঝাঁকে থাকে প্রায় পাঁচ কোটি পিঁপড়া! আজ থেকে প্রায় ৫ কোটি বছর আগে পৃথিবীতে এই ধরনের পিঁপড়ের অস্তিত্বের প্রমাণ মিলেছে। যাদের দেখা মেলে দক্ষিণ আমেরিকা ও আফ্রিকার বিভিন্ন অঞ্চলে। এই সাইফু পিঁপড়া ড্রাইভার অ্যান্ট এবং সাফারি অ্যান্ট নামেও পরিচিত। এরা মূলত মাটিতে, পাথরের নিচে অথবা মাটির উপরে নির্মিত ঘরে বসবাস করে। এছাড়াও মাটির উপরে অবস্থিত গাছের ডাল, নুরি, বালি ইত্যাদিতেও আবাসস্থল তৈরি করে থাকে।

নাম্বার ০৮. কেপ বাফেলো

এরা মূলত আফ্রিকান মহিষ। যারা পৃথিবীর বুকে বুনো মহিষ হিসেবে তৃণভূমি প্রান্তরে রাজস্ব করে। জানলে অবাক হবেন, নানা ভুল বলে ফেললাম, জানলে আপনি ভয়ে আঁতকে উঠবেন যে, এই প্রাণি হলো সাক্ষাৎ যমদূত। এরা ওজনের দিক দিয়ে প্রায় ২০০০ পাউন্ড এরও বেশি। বেশ কিছুদিন আগে শোনা যায় যে, একবার একদল শিকারি একটি বন্য মহিষকে গুলি করলে সেই গুলিটি গিয়ে লাগে কেপ বাফেলো’র পাঁজরে। আর সেই মহিষটি সঙ্গে সঙ্গে পালিয়ে যায়। কিন্তু যে তাঁকে গুলি করেছিল পরে ফিরে এসে তাকে মেরে ফেলে সেই মহিষটিই। তবে হিংস্র প্রাণিদের কথা বললে আফ্রিকান সিংহের কথা উঠে আসে ঠিকই। কিন্তু ভয়ঙ্কর প্রাণী হিসেবে সিংহের অনেক আগে রয়েছে এরা।

নাম্বার ০৭. হায়না

তালিকার সাত নম্বরে রয়েছে এই প্রাণী। যারা এক ধরনের বন্য মাংসাশী প্রাণী হিসেবে জীব বৈচিত্র্যে পরিচিত। এদেরকে মূলত এশিয়া ও আফ্রিকার মহাদেশে দেখা যায়। এরা এতটাই ভয়ংকর যে মাঝেমাঝে বাঘকেও স্বীকার করে ফেলে!

নাম্বার ০৬. ব্ল্যাক মাম্বা

সাপ দেখে ভয় পায় না এমন মানুষ হয়ত নেই বললেই চলে। তবে আমাদের মধ্যে আমরা অনেকেই বলে থাকি সাপ দেখলে আমার এতটুকুও ভয় লাগে না। কখনও যদি সাপ আমার কাছে আসে আমি তাকে ধরে ফেলব। আবার বন্ধু বান্ধবীদের মধ্যে এমনও কথা হয় যে, কখনও যদি কোনো সাপ আমার সামনে মানুষের রূপ ধারণ করে তাহলে আমি তাকে বন্ধু বানিয়ে নেব। এমন হাজারো জল্পনা-কল্পনা রয়েছে মানুষের মনে। কিন্তু হিংস্র বিষধর প্রাণির তালিকায় এদেরও অবস্থান রয়েছে। পৃথিবীর সবচেয়ে মারাত্মক বিষধর সাপ হলো ব্ল্যাক মাম্বা। যখন প্রচণ্ড ভয় পেয়ে যায় এরা তখন সাংঘাতিক আক্রমণাত্মক হয়ে পড়ে। দক্ষিণ ও পূর্ব আফ্রিকার শক্ত পাথরে পাহাড়ি অঞ্চলের মূলত এই সাপের বসবাস। এদের গতিবেগ ঘন্টায় ২০ কিলোমিটার বা ১২.৫ মাইল।

নাম্বার ০৫. ক্যাসোয়ারি

পৃথিবীর সবচেয়ে ভয়ঙ্কর প্রাণী বা পাখি যাই বলুন না কেন, ক্যাসোয়ারি অন্যতম। নিউ গিনির এমু জাতীয় বিশাল আকৃতির এই পাখি হিংস্র হলে আর রক্ষা নেই। অবশ্য এ পর্যন্ত কোনো মানুষের প্রাণ সংহার করার রেকর্ড নেই এই প্রাণির। তবে সবদিক বিবেচনা করে হিংস্র প্রাণীদের তালিকার পাঁচ নম্বরে রয়েছে এরা। জানা যায়, অতীতে মানুষের উপর ভয়ানক আক্রমণ চালানোর নজির রয়েছে। আর মানুষের খুনের যে রেকর্ড এই প্রাণিটির রয়েছে তাও আবার সেটা ঘটেছিল ১৯২৬ সালের দিকে। তাহলে বুঝতেই পারছেন হিংস্রতার দিক দিয়ে এরা কতটা হিংস্র প্রাণী।

আরও জানুনঃ শীর্ষস্থানীয় ১০ টি ল্যাপটপ

নাম্বার ০৪. জাগুয়ার

সবচেয়ে বিপজ্জনক প্রাণী এর ৪র্থ স্থানে আছে বাঘ, সিংহ, চিতা আর জাগুয়ার চার ভাই। অর্থাৎ এরা হলো চারটি বর্তমান বাঘ জাতীয় বড় বিড়াল। এদের দেখা মেলে আমেরিকা মহাদেশের ভূখণ্ডের অর্থাৎ দক্ষিণ আমেরিকা, মধ্য আমেরিকা ও মেক্সিকোতে। তবে এই প্রাণিরা হিংস্র প্রাণির তালিকায় অবস্থান করলেও এরা কিন্তু অনেকটাই সাধু প্রাণী। কথাটা শুনে হয়তো আপনার কাছে একটু আতঙ্কের মনে হচ্ছে আবার হাসিরও লাগছে। আসলে এদের সাধু বলার কারণ হলো, এরা শুধুমাত্র তাদের ক্ষুধা লাগলে অন্য প্রাণিকে হত্যা করে তার আগে নয়। মানে যখন ক্ষুধার জ্বালা কুলিয়ে উঠতে পারে না, তখন হয়ে ওঠে হিংস্র। তবে এরা যদি একবার হিংস্র হয়ে ওঠে তাহলে খুবই ভয়ঙ্কর। এ পর্যন্ত মানুষের ওপর আক্রমণের নজির রয়েছে। তাই সবদিক বিবেচনা করে তালিকার চার নম্বরে অবস্থান করছে এরা।

নাম্বার ০৩. কোন শামুক

সবচেয়ে বিপজ্জনক প্রাণীর ৩য় স্থানে আছে কোন শ্মুক পথে-ঘাটে বা জমির আলে সবখানেই আমাদের সঙ্গে দেখা মেলে শামুক নামের এই প্রাণিটির সঙ্গে। তাই আমাদের এমনটা মনে হতেই পারে এই প্রাণী আবার কীভাবে হিংস্র প্রাণিদের তালিকায় রয়েছে। আসলে সাধারণ শামুক কিন্তু বিষাক্ত নয় কিন্তু এই শামুকগুলো খুবই বিষাক্ত আর হিংস্র।  এরা দেখতে কোন আইসক্রিমের মতো। হুট করে দেখলে আপনি হয়তো আনন্দে আত্মহারা হয়ে সেটা হাতে তুলে নেবেন। কিন্তু এটাই যে আপনার কাল হয়ে দাঁড়াতে পারে, তা আপনার জানা নেই। আইসক্রিম আকৃতির এই শামুক বড্ড হিংস্র। আর অবরণকিত এদের খোলসটা দেখে মনে হয় মার্বেল পাথর দিয়ে মোজাইক করা। তাই মূলত এদের নাম কোন আইসক্রিম। সত্যি বলতে এরা দেখতে খুবই সুন্দর। কিন্তু অতিরিক্ত বিষধর প্রাণী হওয়ার কারণে এরা তিন নম্বরে অবস্থান করছে।

নাম্বার ২. বক্স জেলিফিশ

সবচেয়ে বিপজ্জনক প্রাণী বক্স জেলিফিশ খুব সম্প্রতি একটি গবেষণায় দেখা গিয়েছে পৃথিবীর সবচেয়ে হিংস্র প্রাণিদের মধ্যে অন্যতম একটি প্রাণী হলো অস্ট্রেলিয়ান বক্স জেলিফিশ। এটি সম্ভবত জেলিফিশের সকল প্রজাতির মধ্যে সবচেয়ে সুন্দর। এরা মূলত ১৫ ফুট পর্যন্ত লম্বা হয়। এ পর্যন্ত জানা যায়, এই প্রজাতির একেকটি জেলিফিশে যে পরিমাণ বিষ থাকে তা ৬০ জন মানুষের মৃত্যুর জন্য যথেষ্ট। তাহলে বুঝতেই পারছেন এরা কতটা ভয়ংকর।

নাম্বার ০১. মানুষ

সবচেয়ে বিপজ্জনক প্রাণী এর মধ্যে মানুষের নাম প্রথমে আসে শুনতে অবাক লাগলেও সত্য। এমন উত্তরে অস্বাভাবিক হলেও মানুষের নাম আসাটা কিন্তু বিচিত্র নয়। সত্যি বলতে এমন অনেক সময় মানুষের হিংস্রতা কখনও কখনও পশুকেও হার মানায়। যদিও বা মানুষের শরীরে বিষাক্ত পদার্থ নেই কিন্তু তারা যে সবচেয়ে বুদ্ধিমান প্রাণী আর পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ জীব। সেই তকমাকে গায়ে লাগিয়ে নিজেদের বুদ্ধি দিয়ে তৈরি করেছে বোমা, গোলা, বারুদ, বন্দুক, উড়োজাহাজ, জাহাজ, মিসাইল বিচিত্র ধরনের বিপদজনক জিনিস। যে কারণে পৃথিবীর কোনো প্রাণী মানুষের কাছে নিরাপদ নয়। তাই হিংস্র প্রাণিদের তালিকার এক নম্বরে রয়েছে মানুষ।

তো বন্ধুরা এই ছিল আমাদের আজকের হিংস্র প্রাণির আলোচিত পর্ব। পরবর্তীতে আরও লেখা নিয়ে আমরা হাজির হব।

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button
error: Content is protected !!