ক্লাউড স্টোরেজ vs এক্সটার্নাল হার্ডড্রাইভ: ২০২৫ সালে কোনটি ভালো ও নিরাপদ?

বর্তমান ডিজিটাল যুগে আমাদের জীবনের প্রতিটি খুঁটিনাটি এখন সংরক্ষিত হয় বিভিন্ন ধরনের ডেটা আকারে। ব্যক্তিগত ছবি, ভিডিও, ব্যবসার হিসাব-নিকাশ, গুরুত্বপূর্ণ নথি থেকে শুরু করে শিক্ষা ও স্বাস্থ্য সংক্রান্ত তথ্য—সবই এখন আমরা ডিজিটালি স্টোর করি। কিন্তু এই গুরুত্বপূর্ণ ডেটা যদি এক মুহূর্তেই হারিয়ে যায়?
কম্পিউটার নষ্ট হয়ে গেলে, হার্ডড্রাইভ নষ্ট হলে, ফোন চুরি হয়ে গেলে, কিংবা ভাইরাস আক্রমণ করলে—ডেটা হারিয়ে যেতে পারে। আর এই কারণেই ডেটা ব্যাকআপ এবং নিরাপদে সংরক্ষণ আজকের দিনে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একটি বিষয়।
এই প্রয়োজনীয়তার কারণে বর্তমানে বাজারে দুইটি মূলধারার ডেটা স্টোরেজ সমাধান বেশ জনপ্রিয়:
- ক্লাউড স্টোরেজ
- এক্সটার্নাল হার্ডড্রাইভ
অনেকে দ্বিধায় পড়েন—কোনটি ভালো? কোনটিতে থাকবে আপনার ডেটা সবচেয়ে নিরাপদ ও সহজলভ্য?
ক্লাউড স্টোরেজ কী?
ক্লাউড স্টোরেজ হলো এমন একটি ডিজিটাল স্টোরেজ সেবা, যেখানে আপনি আপনার ডেটা ইন্টারনেটের মাধ্যমে দূরবর্তী সার্ভারে সংরক্ষণ করতে পারেন। আপনি যে তথ্যই এখানে সংরক্ষণ করেন, তা আপনি বিশ্বের যেকোনো জায়গা থেকে ইন্টারনেট সংযুক্ত ডিভাইসের মাধ্যমে দেখতে বা ব্যবহার করতে পারবেন।
উদাহরণস্বরূপ কিছু জনপ্রিয় ক্লাউড স্টোরেজ প্ল্যাটফর্ম:
- Google Drive
- Dropbox
- OneDrive (Microsoft)
- Mega
- iCloud (Apple)
এই সব সেবা আপনার ডেটাকে ভার্চুয়ালভাবে সংরক্ষণ করে এবং অধিকাংশই ফ্রি স্পেস দিয়ে শুরু হয়, পরে প্রয়োজন অনুযায়ী পেইড সাবস্ক্রিপশন নিতে হয়।
ক্লাউড স্টোরেজের প্রধান বৈশিষ্ট্যগুলো:
- অনলাইন ব্যাকআপ সুবিধা: ডেটা স্বয়ংক্রিয়ভাবে ক্লাউডে সেভ হয়।
- যেকোনো জায়গা থেকে অ্যাক্সেস: মোবাইল, ট্যাব, ল্যাপটপ—যেকোনো ডিভাইস থেকে অ্যাক্সেসযোগ্য।
- দলগত কাজের জন্য উপযুক্ত: ফাইল শেয়ারিং, কমেন্ট, রিয়েলটাইম এডিটিং সুবিধা।
- সিঙ্ক ফিচার: এক ডিভাইসে পরিবর্তন করলে অন্য ডিভাইসেও অটো আপডেট হয়।
- ডেটা এনক্রিপশন ও সিকিউরিটি: অধিকাংশ সার্ভিসে AES-256 এনক্রিপশন ব্যবহার হয়, যা হ্যাকিং থেকে রক্ষা করে।
বাস্তব জীবনের প্রয়োগ:
- আপনি যদি একজন কনটেন্ট ক্রিয়েটর হন, তাহলে গুগল ড্রাইভে আপনার সমস্ত ভিডিও স্ক্রিপ্ট, রিসোর্স এবং রেফারেন্স ডেটা সেভ করে রাখতে পারবেন।
- ব্যবসার ক্ষেত্রে দলীয় কাজের ফাইল একাধিক সদস্য সহজেই একসাথে ব্যবহার করতে পারে।
এক্সটার্নাল হার্ডড্রাইভ কী?
এক্সটার্নাল হার্ডড্রাইভ হলো একটি বহনযোগ্য ফিজিক্যাল স্টোরেজ ডিভাইস, যা আপনি USB বা টাইপ-C পোর্টের মাধ্যমে কম্পিউটারের সঙ্গে সংযুক্ত করে ব্যবহার করতে পারেন। এটি আপনার নিজস্ব নিয়ন্ত্রণাধীন একটি স্টোরেজ ব্যবস্থা।
প্রধান ধরণের এক্সটার্নাল হার্ডড্রাইভ:
- HDD (Hard Disk Drive): প্রচলিত এবং সস্তা, কিন্তু একটু ধীর গতি।
- SSD (Solid State Drive): অনেক দ্রুত, হালকা ও কম ক্ষতিগ্রস্ত হয়, তবে তুলনামূলকভাবে দামী।
এর কিছু মূল সুবিধা:
- ইন্টারনেট ছাড়াই ব্যবহারযোগ্য: কোনো অনলাইন সংযোগের প্রয়োজন নেই।
- ডেটা ট্রান্সফার স্পিড বেশি: USB 3.0 বা টাইপ-C এর মাধ্যমে দ্রুত রিড/রাইট।
- ডেটা আপনার কন্ট্রোলে থাকে: আপনার নিজস্ব হাতে ডেটা স্টোর থাকায় নিরাপত্তা অনেকটা আপনার নিয়ন্ত্রণে।
- সাশ্রয়ী: একবার কিনলে অনেক বছর ব্যবহার করা যায়, কোনো মাসিক খরচ নেই।
কিছু সীমাবদ্ধতা:
- হার্ডড্রাইভ যদি পড়ে যায় বা ক্ষতিগ্রস্ত হয়, তাহলে ডেটা হারানোর সম্ভাবনা থাকে।
- হারিয়ে গেলে বা চুরি হলে ডেটা ফিরে পাওয়ার সম্ভাবনা প্রায় শূন্য।
- শেয়ারিং বা অনলাইনে একাধিক ডিভাইসে কাজ করার জন্য ঝামেলা।
বাস্তব জীবনের প্রয়োগ:
- যদি আপনি একজন ভিডিও এডিটর হন এবং ১০০ জিবির উপরে ভিডিও ফুটেজ নিয়ে কাজ করেন, তাহলে SSD ধরনের এক্সটার্নাল হার্ডড্রাইভ আপনার জন্য কার্যকর সমাধান।
প্রথম ধারণায় তুলনা: ক্লাউড বনাম এক্সটার্নাল
বিষয় |
ক্লাউড স্টোরেজ |
এক্সটার্নাল হার্ডড্রাইভ |
অ্যাক্সেসযোগ্যতা | যেকোনো জায়গা থেকে | নির্দিষ্ট ডিভাইস ও ক্যাবল দরকার |
ব্যাকআপ সুবিধা | অটোমেটিক ও সিঙ্ক সুবিধা | ম্যানুয়ালভাবে করতে হয় |
সুরক্ষা | এনক্রিপ্টেড সার্ভার, কিন্তু হ্যাকিং সম্ভব | হ্যাকার-প্রুফ, কিন্তু হারানো বা ক্ষতি হতে পারে |
খরচ | ফ্রি প্ল্যান আছে, কিন্তু স্পেস বাড়ালে সাবস্ক্রিপশন লাগে | একবার কিনে অনেক বছর ব্যবহার করা যায় |
পরিবহনযোগ্যতা | ভার্চুয়াল, ইন্টারনেট লাগবে | ফিজিক্যাল, সঙ্গে করে নিতে হয় |
ডেটা সংরক্ষণের ক্ষেত্রে আপনি শুধু কোন মাধ্যমটি ব্যবহার করবেন তা জানলেই হবে না—বুঝতে হবে কোন মাধ্যম কেন, কোথায়, কার জন্য উপযুক্ত। তাই চলুন এবার ক্লাউড স্টোরেজ ও এক্সটার্নাল হার্ডড্রাইভের সুবিধা-অসুবিধা বিস্তারিতভাবে বিশ্লেষণ করি, বাস্তব জীবনের চাহিদার ভিত্তিতে।
ক্লাউড স্টোরেজের সুবিধা (Advantages of Cloud Storage)
১. রিয়েল-টাইম ব্যাকআপ ও অটো-সিঙ্ক
ক্লাউড স্টোরেজের সবচেয়ে বড় সুবিধা হচ্ছে আপনি যদি কোনো ফাইল সংরক্ষণ করেন বা আপডেট করেন, সেটি অটোমেটিকলি সিঙ্ক হয়ে যায় আপনার সকল ডিভাইসে। যেমন, আপনি ল্যাপটপে একটি ফাইল সম্পাদনা করলে সেটি আপনার ফোনেও একইভাবে আপডেট হয়ে যাবে।
২. রিমোট অ্যাক্সেস – পৃথিবীর যেকোনো প্রান্ত থেকে
আপনি দেশে থাকুন বা বিদেশে—যদি ইন্টারনেট থাকে, তাহলে আপনার ফাইল অ্যাক্সেস করতে পারবেন। যেকোনো ব্রাউজার বা মোবাইল অ্যাপে লগইন করলেই হলো।
৩. টিম ওয়ার্ক ও শেয়ারিং সুবিধা
গুগল ড্রাইভ, ড্রপবক্স বা ওয়ানড্রাইভের মতো প্ল্যাটফর্মে আপনি সহজেই একাধিক ইউজারের সঙ্গে ফাইল শেয়ার করতে পারেন, কমেন্ট করতে পারেন, এমনকি একই ফাইল একসাথে এডিটও করতে পারেন।
৪. ব্যাকআপ ও রিকভারি সিস্টেম
আপনার ল্যাপটপ চুরি হয়ে গেলে বা হার্ডড্রাইভ নষ্ট হয়ে গেলেও চিন্তা নেই—সব ফাইল ক্লাউডে সেভ থাকায় সহজেই আবার রিকভারি করা যায়।
৫. আপগ্রেড সুবিধা
আপনার প্রয়োজন বাড়লে সহজেই স্পেস বাড়াতে পারেন। চাইলে মাসিক বা বাৎসরিক সাবস্ক্রিপশন নিয়ে ১০০ জিবি থেকে শুরু করে ২ টেরাবাইট পর্যন্ত নিতে পারবেন।
ক্লাউড স্টোরেজের অসুবিধা (Disadvantages of Cloud Storage)
১. ইন্টারনেট ছাড়া ডেটা অ্যাক্সেস সম্ভব নয়
ক্লাউড-ভিত্তিক স্টোরেজ ১০০% ইন্টারনেট নির্ভর। যদি আপনি কোনো জায়গায় ইন্টারনেট ছাড়া থাকেন, তাহলে ফাইল অ্যাক্সেস করা যাবে না (যদি না আগে অফলাইনে সেভ করা থাকে)।
২. নিরাপত্তা ঝুঁকি
যদিও ডেটা এনক্রিপ্টেড থাকে, তবুও অনলাইন ফিশিং, পাসওয়ার্ড চুরি, অথবা দুর্বল নিরাপত্তার কারণে ডেটা হ্যাক হওয়ার সম্ভাবনা থাকে।
৩. সাবস্ক্রিপশন খরচ
ফ্রি স্টোরেজ সাধারণত সীমিত। বড় ফাইল বা দীর্ঘমেয়াদি ব্যবহারের জন্য আপনাকে মাসিক বা বাৎসরিক ফি গুনতে হতে পারে, যা দীর্ঘমেয়াদে ব্যয়বহুল হতে পারে।
এক্সটার্নাল হার্ডড্রাইভের সুবিধা (Advantages of External Hard Drive)
১. ইন্টারনেট ছাড়াও ব্যবহারযোগ্য
আপনার কম্পিউটার বা ল্যাপটপে শুধু কেবল সংযুক্ত করলেই কাজ শুরু! কোনো ইন্টারনেট সংযোগের প্রয়োজন নেই।
২. দ্রুত ডেটা ট্রান্সফার
এক্সটার্নাল হার্ডড্রাইভ, বিশেষ করে SSD হলে, খুব দ্রুত ফাইল কপি ও ট্রান্সফার করা যায়। বিশেষ করে বড় ভিডিও বা গ্রাফিক ফাইলের জন্য এটি আদর্শ।
৩. একবার কিনলে বহু বছর ব্যবহার
SSD বা HDD একবার কিনলে ৫-৭ বছর ব্যবহার করা যায়। কোনো মাসিক বা বাৎসরিক খরচ নেই, যা দীর্ঘমেয়াদে সাশ্রয়ী।
৪. সম্পূর্ণ নিজস্ব কন্ট্রোল
আপনার ডেটা আপনার ডিভাইসে—আপনি যেভাবে চান, যেভাবে সুরক্ষা দিতে চান, সেটা আপনার হাতে। কোনো থার্ড-পার্টি কোম্পানির ওপর নির্ভর করতে হয় না।
এক্সটার্নাল হার্ডড্রাইভের অসুবিধা (Disadvantages of External Hard Drive)
১. হারিয়ে গেলে বা ক্ষতি হলে ডেটা চলে যেতে পারে
এক্সটার্নাল হার্ডড্রাইভ ভেঙে গেলে বা পানিতে ভিজে গেলে ডেটা রিকভারি অনেক সময় অসম্ভব হয়ে যায়। একইভাবে হারিয়ে গেলে ডেটা একেবারেই চলে যেতে পারে।
২. শেয়ারিং জটিল ও সময়সাপেক্ষ
একাধিক ইউজার যদি একই ফাইলে কাজ করতে চান, তাহলে প্রতিবার ফাইল কপি করে দিতে হবে, যা সময়সাপেক্ষ ও জটিল।
৩. প্রযুক্তিগত সমস্যা
অনেক পুরনো হার্ডড্রাইভে সমস্যা হতে পারে যেমন, কম স্পিড, নোইজি অপারেশন বা হার্ডওয়্যার ড্যামেজ। এবং এই সমস্যাগুলো সাধারণত হঠাৎ করেই ঘটে, কোনো পূর্বাভাস ছাড়াই।
বাস্তব জীবনের ব্যবহার পরিস্থিতি অনুযায়ী কোনটি বেছে নিবেন?
ছাত্র বা শিক্ষার্থী:
যারা লেকচার, নোট, PDF বা Google Docs ব্যবহার করেন, তাদের জন্য ক্লাউড স্টোরেজ সেরা—ফাইল হারানোর ভয় নেই, যেকোনো ডিভাইসে অ্যাক্সেসযোগ্য।
ফ্রিল্যান্সার বা কনটেন্ট ক্রিয়েটর:
যাদের বড় বড় ভিডিও, ডিজাইন ফাইল বা গ্রাফিক্স নিয়ে কাজ করতে হয়, তাদের জন্য এক্সটার্নাল SSD হার্ডড্রাইভ খুব কার্যকর।
ব্যবসায়িক দল বা রিমোট টিম:
অনলাইন শেয়ারিং, ফোল্ডার কন্ট্রোল, একাধিক ইউজারের অ্যাক্সেস দরকার হলে ক্লাউড স্টোরেজ আদর্শ সমাধান।
দীর্ঘমেয়াদি আর্কাইভ:
ডেটা লস রোধে সবচেয়ে ভালো পদ্ধতি হলো—দুই মাধ্যম একসাথে ব্যবহার করা। যেমন:
- এক কপি ক্লাউডে
- আরেক কপি এক্সটার্নাল ড্রাইভে রাখা
জনপ্রিয় ক্লাউড স্টোরেজ সার্ভিসগুলোর তুলনা
ক্লাউড স্টোরেজ ব্যবহারের জন্য বাজারে অনেক সার্ভিস আছে, তবে নিচের প্ল্যাটফর্মগুলো সবচেয়ে জনপ্রিয় ও বিশ্বাসযোগ্য:
প্ল্যাটফর্ম |
ফ্রি-স্পেস |
পেইড সাবস্ক্রিপশন |
বিশেষ বৈশিষ্ট্য |
Google Drive | ১৫ GB | $1.99/মাস (100GB), $9.99/মাস (2TB) | Google Docs, Gmail Integration, AI Search |
Dropbox | ২ GB | $9.99/মাস (2TB) | স্মার্ট সিঙ্ক, ফাইল রিকভারি, ভার্সন হিস্ট্রি |
OneDrive (Microsoft) | ৫ GB | $1.99/মাস (100GB), $6.99/মাস (1TB + Office 365) | Microsoft Office Integration |
Mega | ২০ GB | $5.69/মাস (400GB), $11.38/মাস (2TB) | End-to-End Encryption, Secure Chat |
iCloud (Apple) | ৫ GB | $0.99/মাস (50GB), $9.99/মাস (2TB) | iOS & macOS Deep Integration |
- আপনি যদি Android ব্যবহারকারী হন, Google Drive উপযুক্ত।
- Windows বা Microsoft Office ব্যবহারকারীদের জন্য OneDrive লাভজনক।
- Security প্রাধান্য হলে Mega ভালো অপশন।
হাইব্রিড স্টোরেজ সমাধান: ক্লাউড + এক্সটার্নাল ড্রাইভ
অনেকেই শুধুমাত্র এক মাধ্যম ব্যবহার করেন। কিন্তু বাস্তব অভিজ্ঞতায় দেখা গেছে, দুটি মাধ্যম একসাথে ব্যবহার করাই সবচেয়ে নিরাপদ ও কার্যকর। এটাকেই বলে Hybrid Backup Strategy।
কেন হাইব্রিড স্টোরেজ সেরা:
- যদি আপনার হার্ডড্রাইভ নষ্ট হয়, ক্লাউডে ব্যাকআপ থাকবে।
- যদি ক্লাউড অ্যাকাউন্ট হ্যাক বা বন্ধ হয়ে যায়, হার্ডড্রাইভে ব্যাকআপ থাকবে।
- গুরুত্বপূর্ণ ফাইল দুই জায়গাতেই থাকলে, ঝুঁকি কমে যায় প্রায় ৯০%।
বাস্তব উদাহরণ:
- একজন ভিডিও এডিটর প্রতিদিন ৪০-৫০ GB ফাইল তৈরি করেন। তিনি কাজ শেষে সব কিছু SSD ড্রাইভে রাখেন এবং প্রতি ৩ দিন পর Google Drive-এ ব্যাকআপ নেন। এতে তিনি হার্ডড্রাইভ নষ্ট হলেও বা ভাইরাস এলেও ফাইল হারান না।
ভবিষ্যতের স্টোরেজ প্রযুক্তির ট্রেন্ড
AI-Powered Storage Management
ফাইল অর্গানাইজ, স্বয়ংক্রিয় ডুপ্লিকেট ক্লিনিং, এবং স্মার্ট রিকমেন্ডেশন—AI দ্বারা পরিচালিত ক্লাউড স্টোরেজ এখন আরও স্মার্ট হচ্ছে।
Blockchain-backed Storage
Blockchain টেকনোলজির মাধ্যমে আরও সুরক্ষিত ও ভেরিফায়েবল ক্লাউড সলিউশন আসছে, যেখানে ইউজার প্রাইভেসি থাকবে সর্বোচ্চ স্তরে।
Faster & Lighter SSDs
নতুন জেনারেশনের SSD এখন আরও ছোট, দ্রুত ও কম খরচে পাওয়া যাচ্ছে—যা এক্সটার্নাল হার্ডড্রাইভের জনপ্রিয়তা আরও বাড়াবে।
Integrated Ecosystems
Google, Apple, Microsoft সহ বড় বড় কোম্পানিগুলো এমন ইকোসিস্টেম তৈরি করছে যেখানে ক্লাউড স্টোরেজ আপনার ডিভাইস ও অ্যাপের সঙ্গে স্বয়ংক্রিয়ভাবে সংযুক্ত থাকবে।
কোনটা আপনার জন্য?
আপনি যদি হন… |
সেরা সমাধান |
সাধারণ ব্যবহারকারী | Google Drive + Pendrive |
ভিডিও এডিটর / ফটোগ্রাফার | SSD হার্ডড্রাইভ + Cloud Backup |
ব্যবসা প্রতিষ্ঠান | Cloud Storage (Google Workspace/Dropbox Business) |
নিরাপত্তা সচেতন | Mega + Offline Encrypted Drive |
শিক্ষার্থী | OneDrive (Microsoft 365 Free) |
চূড়ান্ত সুপারিশ: সর্বোত্তম রেজাল্ট পেতে হলে শুধু ক্লাউড নয়, শুধু হার্ডড্রাইভ নয়—দুইটি মাধ্যম একসঙ্গে ব্যবহার করুন। ব্যাকআপ রাখা মানে নিরাপদ থাকা।
উপসংহার
আজকের ডিজিটাল যুগে ডেটা আমাদের জীবনের এক অঙ্গসংস্থান হয়ে গেছে। তাই ডেটা নিরাপদে সংরক্ষণ এবং সঠিক সময়ে সহজে অ্যাক্সেস করা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। ক্লাউড স্টোরেজ এবং এক্সটার্নাল হার্ডড্রাইভ—দুটি মাধ্যমেরই নিজস্ব সুবিধা ও সীমাবদ্ধতা আছে। ক্লাউড স্টোরেজে যেকোনো জায়গা থেকে দ্রুত, সহজে এবং সিঙ্ক সুবিধাসহ ফাইল ব্যবস্থাপনা করা যায়, যা টিমওয়ার্কের জন্য বিশেষ উপযোগী। অন্যদিকে, এক্সটার্নাল হার্ডড্রাইভ ইন্টারনেটের প্রয়োজন ছাড়াই দ্রুত ডেটা ট্রান্সফার এবং দীর্ঘমেয়াদি ব্যবহারের জন্য উপযোগী।
সুতরাং, একক মাধ্যম হিসেবে কোনোটিই পুরোপুরি পরিপূর্ণ নয়। তাই সেরা এবং নিরাপদ উপায় হলো—হাইব্রিড ব্যাকআপ স্ট্র্যাটেজি, যেখানে গুরুত্বপূর্ণ ফাইলগুলো একই সঙ্গে ক্লাউড ও এক্সটার্নাল হার্ডড্রাইভে সংরক্ষণ করা হয়। এতে করে হার্ডড্রাইভ নষ্ট বা হারিয়ে গেলেও আপনার ডেটা ক্লাউডে থাকবে এবং ক্লাউড সেবা কোনো কারণে ব্যাহত হলে আপনার কাছে ফিজিক্যাল ব্যাকআপ থাকবে।
আপনার প্রয়োজনে ও ব্যবহারিক চাহিদার উপর ভিত্তি করে সঠিক স্টোরেজ মাধ্যম নির্বাচন করুন। একজন শিক্ষার্থী, ফ্রিল্যান্সার, ব্যবসায়ী কিংবা নিরাপত্তা সচেতন ব্যবহারকারী—প্রত্যেকের জন্য এই সমন্বিত পদ্ধতিই হবে সর্বোত্তম।
সর্বোপরি, সময়ের সঙ্গে সঙ্গে প্রযুক্তি উন্নতির সাথে তাল মিলিয়ে আপনার ডেটা সংরক্ষণের উপায়গুলো নিয়মিত পর্যালোচনা করে আপডেট রাখুন। কারণ, তথ্যের নিরাপত্তা ও অ্যাক্সেসিবিলিটি নিশ্চিত করাই আজকের ডিজিটাল জীবনের মূল চ্যালেঞ্জ এবং দায়িত্ব।
সাধারণ প্রশ্নোত্তর (FAQs)
১. ক্লাউড স্টোরেজ কি নিরাপদ?
হ্যাঁ, যদি আপনি শক্তিশালী পাসওয়ার্ড ব্যবহার করেন এবং 2FA চালু রাখেন।
২. এক্সটার্নাল হার্ডড্রাইভ কতদিন টিকে থাকে?
সাধারণত ৩–৭ বছর পর্যন্ত, তবে ব্যবহারের ধরন ও যত্নের উপর নির্ভর করে।
৩. ফ্রি ক্লাউড স্টোরেজে কতটা স্পেস পাওয়া যায়?
Google Drive – ১৫ GB, OneDrive – ৫ GB, Dropbox – ২ GB, iCloud – ৫ GB, Mega – ২০ GB।
৪. একসাথে ক্লাউড ও হার্ডড্রাইভ ব্যবহার করলে সমস্যা হবে না তো?
না বরং এটিই সবচেয়ে নিরাপদ ব্যাকআপ স্ট্র্যাটেজি।
৫. কোনটা বেশি সাশ্রয়ী—ক্লাউড না হার্ডড্রাইভ?
দীর্ঘমেয়াদে হার্ডড্রাইভ একবার কিনে বেশি সাশ্রয়ী, তবে ক্লাউডের সুবিধা ও স্কেলেবিলিটি বেশি।