কম্পিউটার টিপস

ট্রাবলশুটিং কী? কিভাবে করতে হয়?

ট্রাবলশুটিং, কম্পিউটার ট্রাবলশুটিং, ট্রাবলশুটিং-এর ধাপ সহ কম্পিউটার ট্রাবলশুটিং সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করা হবে এই ব্লগে। 

Contents hide

ট্রাবলশুটিং

ট্রাবল অর্থ সমস্যা। ট্রাবলশুটিং হল সমস্যার উৎস বা উৎপত্তিস্থল নির্ণয় প্রক্রিয়া। এই প্রক্রিয়ায় সাধারণত কিছু প্রশ্ন উপস্থাপন করা হয় এবং পাশাপাশি সমাধান দেওয়া থাকে। ব্যাবহারকারি তার সমস্যার প্রকৃতি অনুযায়ী সমাধান অনুসরণের মাধ্যমে বেশির ভাগ ক্ষেত্রে সমস্যাটি সমাধান করতে পারে।

ট্রাবলশুটিং-এর ধাপ

ট্রাবলশুটিং প্রক্রিয়াটি ৬টি ধাপে সংঘটিত হয়। ধাপ গুলো হলঃ

১. সমস্যা চিহ্নিত করা।

২. সম্ভাব্য সমস্যার জন্য একটি তত্ব স্থাপন করে।

৩. তত্বটিকে যাচাই করে নির্দিষ্ট সমস্যা নির্ধারণের জন্য।

৪. সমস্যাটি সমাধানের জন্য কাজের একটি প্ল্যান তৈরি করে এবং তা বাস্তবায়ন করে।

৫. পুরো সিস্টেমের ফাংশনগুলো পরীক্ষণ করে। যদি প্রতিরোধের ব্যবস্থা নেওয়া যায় তাহলে তা বাস্তবায়ন করে।

৬. অনুসন্ধানকৃত তথ্য, কাজ এবং ফলাফলগুলো প্রমাণপত্র হিসেবে রেখে দেয়।

কম্পিউটার ট্রাবলশুটিং কী?

কম্পিউটারের বিভিন্ন সমস্যা চিহ্নিত করা, সমস্যাগুলো সমাধানের কার্যকরী ব্যবস্থা প্রয়োগ এবং সর্বশেষে সমস্যা থেকে উত্তরণ হওয়ার প্রক্রিয়াই হল কম্পিউটার ট্রাবলশুটিং। 

কম্পিউটার ট্রাবলশুটিং কয় ধরনের?

কম্পিউটার ট্রাবলশুটিং প্রধানত ২ ধরণের। সেগুলো হল-

১। কম্পিউটার সফটওয়্যার ট্রাবলশুটিং, ২।কম্পিউটার হার্ডওয়্যার ট্রাবলশুটিং।

১। কম্পিউটার সফটওয়্যার ট্রাবলশুটিংঃ 

কম্পিউটারের অভ্যন্তরীণ প্রাণ বা চালিকা শক্তি হলো কম্পিউটারের সফটওয়্যার। কম্পিউটারের হার্ডওয়্যারকে যথাযথভাবে কর্মক্ষম করতে বিশেষ নির্দেশনা বা প্রোগ্রামই হল কম্পিউটার সফটওয়্যার। একে স্পর্শ করা না গেলেও কর্ম সম্পাদনের গুরুত্বপূর্ণ কাজ করে থাকে সফটওয়্যার। আর এ সকল সফটওয়্যারের ত্রুটি নির্ণয় ও সমাধান প্রক্রিয়া হল কম্পিউটার সফটওয়্যার ট্রাবলশুটিং। 

২। কম্পিউটার হার্ডওয়্যার ট্রাবলশুটিংঃ

কম্পিউটারের বাহ্যিক অবকাঠামো তৈরির জন্য ব্যবহৃত যন্ত্র সামগ্রীকে হার্ডওয়্যার বলে। সহজ ভাষায় বলতে গেলে কম্পিউটারের যে সকল অংশ ধরা, ছোঁয়া বা স্পর্শ করা যায় তাদেরকে হার্ডওয়্যার বলে। কম্পিউটারের হার্ডওয়্যার সামগ্রীর মধ্যে ইনপুট ডিভাইস, আউটপুট ডিভাইস, প্রসেসর, র‍্যাম ইত্যাদি উল্লেখযোগ্য। আর এ সকল হার্ডওয়্যারের ত্রুটি নির্ণয় ও সমাধান প্রক্রিয়া হল কম্পিউটার সফটওয়্যার ট্রাবলশুটিং। 

আরও পড়ুনঃ কম্পিউটার ভাইরাস প্রতিরোধের উপায়

কম্পিউটার ট্রাবলশুটিং এর কিছু উদাহরণ 

১। সিস্টেম On না হওয়াঃ 

  • মেইন পাওয়ার ক্যাবলের সংযােগটি loose বা ঢিলে কিনা দেখতে হবে।
  • মেইন বাের্ডে পাওয়ার আসছে কিনা দেখতে হবে।
  • মেইন বাের্ডে যদি পাওয়ার না আসে পাওয়ার সাপ্লাই ইউনিট পরিবর্তন করতে হবে।

২। ডিসপ্লেতে বিপ সাউন্ড না আসাঃ

অনেক সময় ডেস্কটপ কম্পিউটারের মাদারবোর্ড নষ্ট হলে এমন সমস্যা দেখা দিতে পারে। তবে এজন্য অন্য একটি মাদারবোর্ড লাগিয়ে পরীক্ষা করতে হবে। বিদ্যমান মাদারবোর্ডটি সমস্যাযুক্ত হলে নতুন একটি মাদারবোর্ড কিনতে হবে। 

৩। ডেস্কটপ কম্পিউটার অন-এ বুট না হয়ে Wait ম্যাসেজ দেখানো এবং বিপ শব্দ না হওয়াঃ

সাধারণত মাদারবোর্ডের সাথে সংযুক্ত ক্যাবলগুলোর সংযোগ ঢিলা থাকলে কিংবা মাদারবোর্ডে সমস্যা থাকলে এমন হয়। এই সমস্যা দেখা দিলে মাদারবোর্ডের সাথে সংযোজিত ক্যাবলগুলোর কানেকশন পরীক্ষা করতে হবে। কোনো ক্যাবল ঢিলা থাকলে সেগুলো যথাযথভাবে লাগিয়ে দিতে হবে। এছাড়া মাদারবোর্ডের সমস্যা খোঁজার জন্য অন্য একটি ভালো মাদারবোর্ড লাগিয়ে দেখা যেতে পারে। সমস্যা পেলে মাদারবোর্ড পরিবর্তন করে নিতে হবে।

৪। কীবোর্ড কাজ না করাঃ

কীবোর্ড কাজ না করা মোটামুটি কম্পিউটার ব্যবহারকারীদের কাছে খুবই সাধারন একটি সমস্যা। বেশিরভাগ ক্ষেত্রে কীবোর্ডের ক্যাবলটি যথাযথ ভাবে সংযুক্ত না থাকার কারণে এই সমস্যাটি দেখা দেয়। এই সমস্যার সমাধানের ক্ষেত্রে কীবোর্ডের ক্যাবলটি খুলে সঠিকভাবে পোর্টে পুনরায় লাগাতে হবে। এছাড়া কম্পিউটার রিস্টার্ট করে দেখা যেতে পারে। তবে এসব কিছুর পর ও যদি কাজ না করে তাহলে বুঝতে হবে কী বোর্ডটি নষ্ট। সেক্ষেত্রে কীবোর্ড কিনতে হবে।

৫। মাউস কাজ না করাঃ

মাউসের ক্যাবল সঠিকভাবে সংযুক্ত না থাকলে অথবা মাউস নষ্ট হয়ে গেলেও কাজ করে না। এক্ষেত্রে মাউসটি খুলে পুনরায় লাগিয়ে নিতে হবে। এরপর ও যদি কাজ না হয় তাহলে নতুন একটি মাউস লাগিয়ে নিতে হবে।

৬। কম্পিউটার ঘন ঘন রিস্টার্ট হওয়াঃ

কম্পিউটার ঘনঘন রিস্টার্ট হওয়া খুবই সাধারণ একটি সমস্যা। অতিরিক্ত গরমের কারনে কিংবা প্রসেসরের কুলিং ফ্যান না ঘুরলে এই সমস্যা হয়। ডিসপ্লে বা অন্যান্য ব্যবহৃত কোনো কার্ডের হিট স্কিল খুলে গেলে অথবা অপারেটিং সিস্টেম বা কোনো সফটওয়্যারের সমস্যা থাকলে এই সমস্যা হয়। এই সমস্যা হলে মাদারবোর্ডের সাথে লাগানো প্রসেসরের ফ্যানটি পরীক্ষা করতে হবে। কুলিং ফ্যান ঠিকমতো ভালো স্পিডে ঘুরছে কি না দেখতে হবে। প্রয়োজনে ময়লা পরিষ্কার করতে হবে। ফ্যান নষ্ট থাকলে ভালো একটি ফ্যান লাগিয়ে নিতে হবে। পাওয়ার সাপ্লাই এর ফ্যান ও পরীক্ষা করতে হবে।

৭। Insert system disk and Press any key to Continue ম্যাসেজ দেখানোঃ

হার্ডডিস্ক থেকে সিস্টেম ফাইল মুছে গেলে বা হার্ডডিস্ক নষ্ট হয়ে গেলে এই সমস্যা হয়। আবার অনেক সময় পাওয়ার কানেকশন ঠিকভাবে না থাকলেও এই সমস্য হতে পারে। এর সমাধান করার জন্য Setup Utility থেকে IDE/SATA HDD Auto Detection চেপে দেখতে হবে। এরপরে হার্ডডিস্ক ডিটেক্ট করা সম্ভব হলে বুঝতে হবে হার্ডডিস্ক ঠিক আছে। এক্ষেত্রে একটি বুটেবল ডিস্ক থেকে কম্পিউটার বুট করতে হবে। এছাড়াও হার্ডডিস্ক এর সাথে মাদারবোর্ড এর ক্যাবল খুলে লাগিয়ে দেখতে হবে। তারপর ও কাজ না হলে নতুন হার্ডডিস্ক লাগিয়ে নিতে হবে।

৮। CKSUM ERROR ম্যাসেজ দেখানোঃ

বায়োস চিপ মাদারবোর্ডের সাথে সঠিকভাবে বসানো না হলে এ সমস্যাটি দেখা দিতে পারে। এ সমস্যা থেকে পরিত্রাণের জন্য বায়োস বসানোর সময় ঠিক মতো সকেটে বায়োস চিপটি বসাতে হবে। 

৯। কম্পিউটারে অডিও ড্রাইভার ইন্সটল থাকলেও সাউন্ড না আসাঃ

অনেক সময় দেখা যায় যে কম্পিউটারে অডিও ড্রাইভার ইন্সটল করা থাকলেও ঠিকমতো সাউন্ড আসে না। সিস্টেমের পেছনের দিকে সঠিকভাবে জ্যাক লাগানো না থাকলে বা স্পিকার অথবা স্পিকারের ক্যাবলে সমস্যা থাকলে এরকম হতে পারে। এই সমস্যা থেকে উত্তরনের জন্য সিস্টেমের পেছনের দিকের জ্যাকটি সঠিকভাবে লাগান আছে কি না পরীক্ষা করতে হবে। এছাড়াও স্পিকার এবং স্পিকারের ক্যাবল পরিবর্তন করে দেখতে হবে।

১০। প্রোগ্রাম বা ফাইল Run করার সময় Out of Memory ম্যাসেজঃ

একসাথে একাধিক ডকুমেন্ট বা প্রোগ্রাম ওপেন করা থাকলে এমন সমস্যা হতে পারে। এজন্য একাধিক ডকুমেন্ট বা প্রোগ্রাম একসাথে ওপেন করা থাকলে যেগুলোর প্রয়োজন নেই সেগুলো বন্ধ করে দিতে হবে। আবার অনেক ক্ষেত্রে দেখা যায় ফাইলটি বা প্রোগ্রামটি ওপেন করতে হবে তার ধারনক্ষমতার মতো র‍্যাম কম্পিউটারে না থাকলেও এই সমস্যাটি হয়। কম্পিউটারের র‍্যামের পরিমাণ কম হলে তা অবিলম্বে বাড়িয়ে নিতে হবে। এতে যে কোনো কাজ আরো দ্রুত করতে হবে। 

১১। Boot Disk Failure ম্যাসেজঃ

IDE বা SATA ক্যাবল লুজ থাকলে কিংবা হার্ডডিস্ক নষ্ট থাকলে এই সমস্যা হয়। এর জন্য IDE বা শাটা ক্যাবল ঢিলা থাকলে সেটি যথাযথ ভাবে লাগাতে হবে। এরপর কম্পিউটার চালু করতে হবে। আশা করা যায় যে অন্য কোনো সমস্যা না থাকলে কম্পিউটারটি চালু হয়ে যাবে।

ট্রাবল এর হাত থেকে রক্ষা পাবার নিয়ম

কম্পিউটারকে সমস্যা বা ট্রাবল থেকে রক্ষা করার জন্য নিম্নে বর্ণিত পদক্ষেপগুলো অনুসরণ করতে হবে।

১। কম্পিউটার রুমের তাপমাত্রা স্বাভাবিক রাখার ব্যবস্থা করতে হবে। 

২। প্রয়োজনীয় ফাইল কিংবা সফটওয়্যার বা ডাটার ব্যাকআপ রাখতে হবে। 

৩। হার্ডডিস্ককে সব সময় কিছু জায়গা খালি রাখতে হবে। 

৪। মাঝে মাঝে ডিস্ক ডিফ্র্যাগমেন্টেশন করতে হবে। 

৫। ভাইরাসের সমস্যা এড়াতে ভালো মানের এন্টিভাইরাস সফটওয়্যার ব্যবহার করতে হবে।

৬। অপ্রয়োজনীয় সকল সফটওয়্যার আন ইন্সটল করতে হবে।

৭। কম্পিউটার ব্যবহার করার পরে ঢেকে রাখতে হবে এবং নিয়মিত ধুলাবালি পরিষ্কার করতে হবে।

৮। যদি সম্ভব হয় তাহলে ইউপিএস ব্যবহার করতে হবে। 

৯। নির্দিষ্ট সময় পর পর কম্পিউটারের বিভিন্ন যন্ত্রাংশ এবং আনুষাঙ্গিক যন্ত্রাংশ পরীক্ষা নিরীক্ষার মাধ্যমে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। 

১০। সিপিইউ কিংবা মনিটরের বাইরের আবরণ খুলে ভিতরের ময়লা ভ্যাকিউম ক্লিনার অথবা ব্লোয়ার দ্বারা পরিষ্কার করতে হবে 

পরিশেষে

কম্পিউটার ব্যবহারকারীদের প্রতিনিয়তই কোন না কোন সমস্যায় পরতে হয়। তাই সহজ সমস্যাগুলোর সমাধান আগে থেকে জেনে নিলে ব্যবহারকারী নিজেই সেই সমস্যার সমাধান করতে পারবে। ইলেকট্রনিক যন্ত্রের সাথে একটি ব্যবহার নির্দেশিকা বা ম্যানুয়াল দেওয়া থাকে। এই ম্যানুয়াল দেখে খুব সহজেই ছোটো খাটো সমস্যা সমাধান করা সম্ভব। এই ব্লগে ট্রাবলশুটিং, ট্রাবলশুটিং-এর ধাপ সহ কম্পিউটার ট্রাবলশুটিং সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য উপস্থাপন করার চেষ্টা করেছি।  কম্পিউটার ট্রাবলশুটিং সম্পর্কিত কোন প্রশ্ন থাকলে কমেন্ট করুন।

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button
error: Content is protected !!