প্রযুক্তির খবরসেরা ১০

সেরা ১০ টি সোশ্যাল মিডিয়া প্ল্যাটফর্ম

সেরা ১০ টি সোশ্যাল মিডিয়া প্ল্যাটফর্ম এর তথ্যমূলক আলোচনা নিয়ে আজকের ব্লগ।

সোশ্যাল মিডিয়া কী ? 

সোশ্যাল মিডিয়া একটি ইংরেজি শব্দ, যার অর্থ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম। ইন্টারনেটের মাধ্যমে তথ্য, ছবি, ভিডিও এবং কন্টেন্ট শেয়ারের মাধ্যমকে সোশ্যাল মিডিয়া বলে। সোশ্যাল মিডিয়ার মাধ্যমে একজন ব্যবহারকারী নিজের মতামত, ছবি, ভিডিও, লিঙ্ক ইত্যাদি শেয়ার এবং অন্য ব্যবহারকারীদের সাথে যোগাযোগ করতে পারে।

বর্তমান জীবনের অবিচ্ছেদ্য অংশ সোশ্যাল মিডিয়া। এটি একটি বড় সামাজিকীকরণের মাধ্যম। বিভিন্ন ধরনের সোশ্যাল নেটওয়ার্ক, ব্লগিং প্ল্যাটফর্ম, ফোরাম, মাইক্রোব্লগিং, ভিডিও শেয়ারিং এবং সামাজিক মিডিয়া অ্যাপ আছে। যা ব্যক্তিগত ও পেশাগত জীবনে প্রযুক্তির ক্রোমাগত বিকাশের প্রতিনিধিত্ব করে। 

সেরা ১০ টি সোশ্যাল মিডিয়া প্ল্যাটফর্ম

ব্যবহারকারী সংখ্যা, জনপ্রিয়তার উপর ভিত্তি করে শীর্ষে থাকা ১০ টি সোশ্যাল মিডিয়া প্ল্যাটফর্ম গুলো হলঃ

আরও জানুনঃ ২০২৪ সালের ৫টি সেরা ফ্রি AI ভিডিও Editing টুলস

1. Facebook:

ফেসবুক বর্তমান দুনিয়ার সবচেয়ে বৃহত্তম সোশ্যাল মিডিয়া প্ল্যাটফর্ম। ২০০৪ সালে ফেসবুক প্রতিষ্ঠিত হয়। প্রায় ২.৯১ বিলিয়ন সক্রিয় ইউজার আছে। প্রায় ২ বিলিয়নের বেশি মানুষ দৈনিক প্ল্যাটফর্মটি ব্যবহার করছে। যা পৃথিবীর মোট জনসংখ্যার তিন ভাগের এক ভাগ। ফেসবুক রিলিস দিয়েও ইনকাম করা যায়। শুধু ব্যক্তি নয়, প্রায় ৬৫ মিলিয়নেরও বেশি বিজনেস ফেসবুকের মেটা বিজনেস ব্যবহার করছে। এর মধ্যে ৬ মিলিয়নেরও বেশি বিজনেস ফেসবুক অ্যাডভারটাইজিং সার্ভিস ব্যবহার করছে।

2. YouTube:

ইউটিউব ২০০৫ সালে প্রতিষ্ঠিত হয়। ইউটিউব-এর প্যারেন্ট কোম্পানি গুগলের পর দ্বিতীয় বৃহত্তম সার্চ ইঞ্জিন। এর সক্রিয় ব্যবহারকারী ২.৫৬ বিলিয়ন। দৈনিক প্রায় ২ বিলিয়ন ব্যবহারকারী ১ বিলিয়ন ঘণ্টারও বেশি সময়ের ভিডিও দেখছেন। যা ইউটিউবকে পৃথিবীর দ্বিতীয় বৃহত্তম সোশ্যাল মিডিয়া প্ল্যাটফর্মের মর্যাদা দিয়েছে। তাই যেকোনো ব্র্যান্ডের ভিডিও মার্কেটিং করার জন্য এই প্ল্যাটফর্ম অতি উত্তম। নতুন ইউটিউবারদের জন্য পাঁচটি সেরা কনটেন্ট আইডিয়া।

3. WhatsApp:

হোয়াটসঅ্যাপ একটি ম্যাসেজিং অ্যাপ্লিকেশন। যা ফেসবুকের মালিকানাধীন। ২০০৯ সালে প্রতিষ্ঠিত হয়। পৃথিবীর ১৮০ টিরও বেশি দেশের প্রায় ২ বিলিয়ন ব্যবহারকারী রয়েছে। হোয়াটসঅ্যাপ ব্যবহারকারীকে তার পরিচিত মানুষদের সাথে যোগাযোগ করার সুযোগ করে দেয়। 

হোয়াটসঅ্যাপ বিজনেস অ্যাপ নামে একটি ডেডিকেটেড বিজনেস সার্ভিস প্রদান করে। এই অ্যাপ ব্যবসায়ীদের বিজনেস প্রোফাইল খোলার সুযোগ করে দেয়। যার মাধ্যমে তারা কাস্টমারদের বিজনেস সাপোর্ট, বিজনেস সম্পর্কিত আপডেট দিতে পারে।

4. Instagram:

ইনস্টাগ্রাম ফেসবুকের মালিকানাধীন একটি মাল্টিমিডিয়া সোশ্যাল মিডিয়া প্ল্যাটফর্ম। যা ২০১০ সালে প্রতিষ্ঠিত হয়। আকর্ষণীয় ফটো ফিল্টারের জন্য ইনস্টাগ্রাম অনন্য। ইনস্টাগ্রাম বর্তমান সময়ে স্টোরিজ, ইনস্টাগ্রাম লাইভ, IGTV (দীর্ঘ ভিডিও কনটেন্ট) সহ বিভিন্ন সেবা প্রদান করে।

প্রায় ১.৪ বিলিয়ন মানুষ ইনস্টাগ্রাম ব্যবহার করেন। ইনস্টাগ্রাম বিজনেসের জন্য ও সার্ভিস প্রদান করে । ইনস্টাগ্রাম বিজনেস পেজ খুলে ব্যবহারকারী পাবেন বেশ কিছু ফিচার। যার মধ্যে ইনস্টাগ্রাম ইনসাইট এবং ইনস্টাগ্রাম শপিং অন্যতম। এছাড়া ইনস্টাগ্রামে শিডিউল পোস্ট করার সুযোগ আছে। যা প্রোডাক্টিভিটি অনেক বাড়িয়ে দেবে। জনপ্রিয়তার শীর্ষে থাকা সোশ্যাল মিডিয়ার লিস্টে ইনস্টাগ্রাম উপরের দিকের জায়গা দখল করেছে।

5. TikTok:

২০১৬ সালে প্রতিষ্ঠিত হয় টিকটক। ফেসবুক, ইনস্টাগ্রামকে পিছনে ফেলে ২০১৮ সালে এটা সর্বোচ্চ ডাউনলোডেড অ্যাপের স্বীকৃতি পেয়েছিলো। টিকটক জনপ্রিয় হওয়ার আরেকটা কারণ টিক টক তার প্রতিদ্বন্দ্বী musical.ly কে কিনে নিজেদের সাথে জুড়ে নিয়েছে।

টিকটকে প্রায় ১ বিলিয়ন সক্রিয় ব্যবহারকারী রয়েছে। এখানে ব্যবহারকারীরা ৬০ সেকেন্ডের শর্ট ভিডিও তৈরি করতে পারে। এছাড়াও ব্যাকগ্রাউন্ডে গানের সাথে নিজের ঠোঁট মিলিয়ে ভিডিও তৈরি করতে পারে। টিকটক টিনএজারদের মধ্যে তুমুল জনপ্রিয়। যা প্রতি বছর ৩২৫% হারে বাড়ছে। গবেষণায় দেখা গেছে, টিক টকের এনগেজড ব্যবহারকারীরা ফেসবুক থেকেও বেশি সময় টিক টকে দিয়ে থাকে। বহির্বিশ্বে  টিকটক খুব জনপ্রিয় মার্কেটিং প্ল্যাটফর্ম হয়ে উঠেছে।

6. Twitter:

টুইটারের প্রতিষ্ঠাকাল ২০০৬ সাল। এটি একটি মাইক্রো ব্লগিং সোশ্যাল মিডিয়া সাইট। টুইটার প্ল্যাটফর্ম এর মাধ্যমে রিয়েল টাইম নিউজ শেয়ার করা যায়। এই প্ল্যাটফর্মে বড় বড় কর্পোরেট এক্সিকিউটিভ, রাজনীতিবীদ, অভিনেতা সহ বড় ব্যক্তিত্বদের সাথে সংযোগ স্থাপন করা যায়। 

প্রায় ৪৩৬ মিলিয়ন সক্রিয় ব্যবহারকারী রয়েছে টুইটারে। টুইটারের বিশেষ দিক হচ্ছে এটি সাম্প্রতিক তথ্য ও বিনোদনকে বেশি গুরুত্ব দেয়। প্রতিদিন লক্ষ্য লক্ষ্য মানুষ টুইটারে হ্যাশট্যাগ (#) ব্যবহার করে টুইট করে। টুইট বা পোস্ট ২৮০ শব্দে করতে হয়। ব্র্যান্ডের ফলোয়ার তৈরি করে ব্র্যান্ডের প্রমোশন, আপডেট, কাস্টমার রিলেশনশিপ এবং বিজ্ঞাপনের জন্য টুইটার ব্যবহার করা যায়। তাছাড়া টুইটারের অ্যানালিটিকস, অ্যাডভান্সড সার্চ বিজনেসের জন্য কার্যকরী টুল

7. Pinterest:

পিন্টারেস্ট একটি ডিজিটাল পিনবোর্ড সোস্যাল মিডিয়া প্ল্যাটফর্ম। যা ২০১০ সালে প্রতিষ্ঠিত হয়। এর সক্রিয় ব্যবহারকারীর সংখ্যা প্রায় ৪৩১ মিলিয়ন।

কাঙ্খিত আইডিয়া বা কনটেন্ট ছবি, লিংকস, GIFS এবং ভিডিও ভার্চুয়াল পিন বোর্ডে পাওয়া যায়। নিজের পিন তৈরি করে শেয়ার করা যায়। নিজের ওয়েবসাইটের লিংকড করা যায়, ফলে নিজের সাইটে ভাল ট্রাফিক পাওয়া সম্ভব। পিন্টারেস্টের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, ৭৮% ব্যবহারকারী মনে করেন পিন্টারেস্ট এ পাওয়া কনটেন্ট দরকারি। তাই কনটেন্ট মার্কেটিং কৌশল হিসেবে পিন্টারেস্ট কে তালিকায় রাখতে পারেন।

8. Snapchat:

স্নাপচ্যাট একটি মাল্টিমিডিয়া ম্যাসেজিং সোশ্যাল মিডিয়া প্ল্যাটফর্ম। যা ২০১১ সালে প্রতিষ্ঠিত হয়। স্নাপ চ্যাট ফটো শেয়ার করার জন্য জনপ্রিয় ব্যক্তিগত ম্যাসেঞ্জার অ্যাপ। এর সক্রিয় ব্যবহারকারীর সংখ্যা প্রায় ৪৯৮ মিলিয়ন এর থেকেও বেশি।

স্নাপে লাইভ ভিডিওর মাধ্যমে বন্ধুদের সাথে যোগাযোগ করা যায়। এই ছবি এবং ভিডিওগুলো কাস্টোমাইজ করার জন্য স্নাপ চ্যাট বিভিন্ন টুলস প্রদান করে। যেমনঃ Emojis, Stickers, Filters, Draw tools ইত্যাদি। ফেসবুক বা ইনস্টাগ্রামে যে স্টোরিজ ফিচার আছে সেটা মূলত স্নাপ চ্যাটে সর্বপ্রথম চালু করা হয়।

9. WeChat:

হোয়াটসঅ্যাপ ও ম্যাসেঞ্জার এর মতো ম্যাসেজিং প্ল্যাটফর্ম হিসেবে উই চ্যাট এর যাত্রা শুরু। কিন্তু উই চ্যাট ম্যাসেজিং এবং কলিং ছাড়াও ব্যবহারকারীরা অনলাইন শপিং, পেমেন্ট, টাকা ট্রান্সফার, টিকিট রিজার্ভ, ট্যাক্সি বুক করা সহ আরো অনেক সার্ভিস প্রদান করে।

২০১১ সালে উই চ্যাট প্রতিষ্ঠিত হয়। চায়না এবং এশিয়ার বিভিন্ন অংশে উই চ্যাট খুবই জনপ্রিয়। এটার মালিকানাধীন প্রতিষ্ঠানের নাম টেনসেন্ট। বর্তমানে এর সক্রিয় ব্যবহারকারীর সংখ্যা প্রায় ১২১৩ মিলিয়ন। চায়নাতে ফেসবুক, ইউটিউব এবং ইনস্টাগ্রাম এর মত সোশ্যাল মিডিয়া গুলো নিষিদ্ধ। তাই সেখানে উই চ্যাট আপনাকে বিশেষ সুবিধা দিতে পারে।

10. LinkedIn:

লিংকডইন একটি প্রফেশনাল সোশ্যাল মিডিয়া প্ল্যাটফর্ম, যা ২০০৩ সালে  প্রতিষ্ঠিত হয়। এর মালিকানাধীন প্রতিষ্ঠানের নাম মাইক্রোসফট। প্রফেশনাল নেটওয়ার্ক বৃদ্ধি এবং ব্যক্তিগত ব্র্যান্ড সম্প্রসারিত করার সুযোগ থাকে লিংকডইনে। 

বিজনেস টু বিজনেস (B2B) মার্কেটিংয়ের জন্য লিংকডইন সবথেকে কার্যকরী। প্রায় ৮০ শতাংশ B2B বিজনেস লিডস লিংকডইন থেকে আসে। প্রায় ৯২ শতাংশ B2B মার্কেটার অন্য যেকোন প্ল্যাটফর্ম থেকে লিংকডইন বেশি পছন্দ করেন। বর্তমানে এর সক্রিয় ব্যবহারকারীর সংখ্যা প্রায় ৩০৪ মিলিয়ন। ব্যক্তিগত তথ্যের পরিবর্তে লিংকডইন ব্যবহারকারীরা প্রফেশনালরা তাদের ক্যারিয়ার কিংবা ইন্ডাস্ট্রি সম্পর্কিত তথ্য শেয়ার করে থাকেন।

পরিশেষে

সোশ্যাল মিডিয়া প্ল্যাটফর্ম ব্যবহারে সতর্কতা অবলম্বন করা গুরুত্বপূর্ণ। সোশ্যাল মিডিয়া জনজীবনে ওতপ্রোত ভাবে জড়িয়ে আছে। এর মাধ্যমে সংবাদ, প্রবৃদ্ধি, ব্যক্তিগত জীবন এবং পেশাদার জীবন উন্নত হচ্ছে। তবে ব্যক্তিজীবনের অধিক বিষয় শেয়ার না করাই ভাল।

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button
error: Content is protected !!