ফেসবুক টিপস

মেসেঞ্জারের নতুন নিরাপত্তা কি এবং ব্যবহার করার নিয়ম

ফেসবুক মেসেঞ্জার এ নতুন প্রাইভেসি ফিচার হিসেবে যুক্ত হয়েছে এন্ড-টু-এন্ড এনক্রিপশন। কী কাজে আসবে এই নতুন গোপনীয়তা বা নিরাপত্তামূলক সুবিধা? এন্ড-টু-এন্ড এনক্রিপশন আসলে কি বা কি কাজে লাগে, এই বিষয়ে কমবেশি সবার মনে প্রশ্ন রয়েছে। এই পোস্টে প্রথমে আমরা জানবো এন্ড-টু-এন্ড এনক্রিপশন সম্পর্কে, এরপর মেসেঞ্জারে এই ফিচার কিভাবে ব্যবহৃত হবে তা জানবো।

এন্ড-টু-এন্ড এনক্রিপশন কি?

মেসেঞ্জারের এন্ড-টু-এন্ড এনক্রিপশন সম্পর্কে জানার আগে এই ধারণার মূল বিষয় কি সেটা জানা জরুরি। এন্ড-টু-এন্ড এনক্রিপশন হলো মূলত ডাটা তে এপ্লাই করা এনক্রিপশন ব্যবস্থা, যা ডাটা এক ডিভাইস থেকে কাঙ্ক্ষিত অন্য ডিভাইসে পৌঁছানো পর্যন্ত এনক্রিপটেড থাকে। এই এন্ড-টু-এন্ড এনক্রিপশন ব্যবস্থার মাধ্যমে পাঠানো তথ্য এতোটাই নিরাপদ যে ব্যবহৃত মাধ্যম নিজেই উক্ত ডাটা দেখতে পারেনা।

শুধুমাত্র যে ডিভাইস বা ডিভাইসসমূহের মধ্যে তথ্য আদান-প্রদান হচ্ছে, উক্ত ডিভাইস বা ডিভাইসসমূহ উক্ত ডাটা ডিক্রিপ্ট করার ক্ষমতা রাখে। আর্থিক আলাপ আলোচনা কিংবা ব্যবসার গুরুত্বপূর্ণ আলোচনার ক্ষেত্রে এন্ড-টু-এন্ড এনক্রিপশন ব্যবস্থা সাধারণ টেক্সটিং ব্যবস্থা থেকে অনেক বেশি নিরাপত্তা প্রদান করে।

এনক্রিপটেড ডাটা অত্যন্ত নিরাপদ। যেখানে উক্ত ডাটা পাঠানোর মাধ্যমই তা দেখার ক্ষমতা রাখেনা, সুতরাং থার্ড পার্টির সুযোগ নেই উক্ত ডাটা হ্যাক বা চুরি করার। অর্থাৎ ডাটা বা তথ্য আদান-প্রদানের ক্ষেত্রে এন্ড-টু-এন্ড এনক্রিপশন ব্যবস্থা সর্বোচ্চ নিরাপত্তা প্রদান করে।

আবার এন্ড-টু-এন্ড এনক্রিপশন ব্যবস্থার কিছু সাধারণ সমস্যা রয়েছে। যেমনঃ ডাটা এনক্রিপটেড হওয়ার কারণে ডাটা-নির্ভর সাজেশন পাওয়া সম্ভব হয়না। ডাটা আদান-প্রদানের মধ্যে থার্ড-পার্টি যদি যেকোনো একটি ডিভাইসের ফিজিক্যাল অ্যাকসেস পায়, তবে নিরাপত্তা ও গোপনীয়তা নষ্ট হয়ে যায়।

মেসেঞ্জার এন্ড-টু-এন্ড এনক্রিপশন

ফেসবুক মেসেঞ্জারের জন্য এন্ড-টু-এন্ড এনক্রিপশন ফিচার ডিফল্টভাবে সম্পূর্ণরূপে ব্যবহার শুরু হয়েছে ২০২৩ সাল থেকে সম্প্রতি মেসেঞ্জার এর প্যারেন্ট কোম্পানি, মেটা জানায় যে এন্ড-টু-এন্ড এনক্রিপটেড গ্রুপ চ্যাট ও কল ফিচার ইতিমধ্যে মেসেঞ্জারে যুক্ত হয়েছে। বর্তমানে এটি ঐচ্ছিক একটি সুবিধা।

পাশাপাশি আরো একটি সিকিউরিটি ফিচার যুক্ত হচ্ছে মেসেঞ্জারে যার মাধ্যমে মেসেঞ্জার এর ডিসঅ্যাপিয়ারিং মেসেজ বা ভ্যানিশ মোড চালু থাকা কেউ স্ক্রিনশট নিলে তার নোটিফিকেশন পাবেন উক্ত চ্যাটে থাকা ব্যাক্তিগণ।

অনেকটা স্ন্যাপচ্যাটে যেমন কেউ স্ক্রিনশট নিলে তা চ্যাটে নোটিফিকেশনের মাধ্যমে প্রদর্শিত হয়, মেসেঞ্জারেও ঠিক এমন একটি ফিচার যুক্ত হয়েছে ভ্যানিশ মোড এর চ্যাট এর জন্য। এছাড়াও এখন থেকে ভ্যানিশ মোড, অর্থাৎ এন্ড-টু-এন্ড এনক্রিপটেড চ্যাটে গিফ (GIF), স্টিকার ও রিয়েকশন ব্যবহার কর যাবে, যা আগে সম্ভব ছিলোনা।

মেসেঞ্জার এন্ড-টু-এন্ড এনক্রিপশন ফিচার দুটি উপায়

মেসেঞ্জার এন্ড-টু-এন্ড এনক্রিপশন ফিচার ব্যবহার করার জন্য দুটি উপায় রয়েছে।

প্রথমত আপনি মেসেঞ্জারের ভ্যানিশ মোড চালু করতে পারেন (মেসেঞ্জারের নিচ থেকে উপরের দিকে সোয়াইপ করে)।

দ্বিতীয়ত, আপনি মেসেঞ্জারের সিক্রেট কনভার্সেশন ফিচারের মাধ্যমেও এনক্রিপশন ফিচারটি ব্যবহার করতে পারবেন। সিক্রেট কনভার্সেশন চালু করতে কারও সাথে চ্যাট করার সময় মেসেঞ্জারের উপরের দিকে দেখানো তার নামের উপর ক্লিক করুন। পরের স্ক্রিনে অন্যান্য ফিচারের সাথে সিক্রেট কনভার্সেশন চালুর অপশন পাবেন।

মেসেঞ্জারে ব্যক্তিগত কথাবার্তার আরো নিরাপত্তা ও গোপনীয়তা প্রদান করার লক্ষ্যে ২০২১ সালের আগস্ট মাসে এন্ড-টু-এন্ড এনক্রিপটেড গ্রুপ চ্যাট ও কল ফিচার ঘোষণা করা হয়। তবে অনেকে এই এন্ড-টু-এন্ড এনক্রিপশন ব্যবস্থার ব্যক্তিগত ব্যবহারে খুশি নয়, কেননা অপরাধ তদন্ত করতে বাধা প্রদান করতে পারে এই এনক্রিপশন ব্যবস্থা।

আরও পড়ুনঃ ফেসবুকে গোপনীয়তা বজায় রাখতে আপনার করনীয়

হোয়াটসঅ্যাপে এন্ড-টু-এন্ড এনক্রিপশন ব্যবহার

ইতিমধ্যে মেটা’র অন্য অ্যাপ, হোয়াটসঅ্যাপে এন্ড-টু-এন্ড এনক্রিপশন ব্যবহার হচ্ছে, আর তাই ফেসবুক মেসেঞ্জারের ক্ষেত্রে কোনোরকম আপোশ করতে রাজি নয় মেটা।

গতবছর ঘোষণা করলেও গ্রুপ কল ও চ্যাট এর জন্য এন্ড-টু-এন্ড এনক্রিপশন ব্যবস্থা তখন থেকে কার্যকর হয়নি। মেটা জানায় যে, ইতিমধ্যে থাকা চ্যাটে এই ফিচারটি পরীক্ষা চালানো হবে। এছাড়াও এন্ড-টু-এন্ড এনক্রিপটেড চ্যাটের ডেলিভারি কন্ট্রোলস নিয়ে পরীক্ষা চালানো হবে বলে জানায়। অর্থাৎ ব্যবহারকারীগণ নিজের পছন্দমত কন্ট্রোলস নির্বাচন করতে পারবেন।

অবশেষে গ্লোবালি মেসেঞ্জারের সকল ব্যবহারকারীর জন্য এন্ড-টু-এন্ড এনক্রিপশন চ্যাট ও কল ব্যবস্থা কার্যকর হবে। ব্যবহারকারীগণ নিজের ইচ্ছামত প্রাইভেট কনভার্সেশনের জন্য এন্ড-টু-এন্ড এনক্রিপশন ব্যবহার করতে পারবেন।

মেসেঞ্জারের ডিসঅ্যাপিয়ারিং মোড

আরেকটি নতুন ফিচার হলো মেসেঞ্জারের ডিসঅ্যাপিয়ারিং মোড এর স্ক্রিনশট নোটিফিকেশন। অর্থাৎ চ্যাটের কোনো স্ক্রিনশট নেওয়া হলে তার নোটিফিকেশন দেখানো হবে। এই ধরনের ইভেন্টের ক্ষেত্রে উক্ত চ্যাট ব্লক বা রিপোর্ট করার সুযোগ রয়েছে। মেটা জানিয়েছে আসন্ন কয়েক সপ্তাহের মত মেসেঞ্জারে এসব নতুন ফিচার যুক্ত হয়ে যাবে।

আবার এন্ড-টু-এন্ড এনক্রিপটেড চ্যাটে এতোদিন অনেক ফিচার ছিলোনা, যেগুলো সাধারণ চ্যাটে ছিলো। এন্ড-টু-এন্ড এনক্রিপটেড চ্যাটের অনুপস্থিত উক্ত ফিচারসমূহ অবশেষে যুক্ত হতে চলেছে। এখন থেকে এন্ড-টু-এন্ড এনক্রিপটেড চ্যাটেও গিফ, স্টিকার, রিয়েকশন, নির্দিষ্ট মেসেজের রিপ্লাই, টাইপিং ইন্ডিকেটর ইত্যাদি ফিচার ব্যবহার করা যাবে। অর্থাৎ সাধারণ চ্যাট ও এন্ড-টু-এন্ড এনক্রিপটেড চ্যাটের মধ্যে ফিচারের দিক দিয়ে কোনো বৈষম্য আর থাকছেনা।

জেনে নিনঃ ফেসবুক আসক্তি থেকে মুক্তির উপায়

শেষ কথা

মেটা জানিয়েছে মোবাইল ও ওয়েব সহ সকল ব্যবহারকারীর জন্য উল্লেখিত ফিচারগুলো মেসেঞ্জারে যুক্ত হবে। এই ফিচার যুক্ত হওয়ার প্রক্রিয়া চলমান, সুতরাং সকল ব্যবহারকারী একই সাথে সকল নতুন ফিচার মেসেঞ্জারে দেখতে পাবেন না। নতুন ফিচারসমূহ সকল ব্যবহারকারীর কাছে পৌছাতে কিছুদিন অপেক্ষা করতে হবে।

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button
error: Content is protected !!